অণুগল্প -
নেলোর বিভ্রান্তি
রাজকুমার ঘোষ
গুচ্ছের বিভ্রান্তি নিয়ে নেলোর মত একটা মানুষ এই জগতে থাকতে পারে, তা ওকে দেখে বোঝা যায় না । রোগা-পটকা চেহারার নেলো মনে–প্রাণে ছুকছুক বাই গ্রস্ত পাবলিক, সেটা কিন্তু কেউ বুঝতে পারে না বা কাউকে বুঝতে দেয় না । তার যে কিসের দুঃখ, কিসের হতাশা আবার তার যে
আনন্দ কখন আসে সে নিজেও জানেনা । তার নাম নিলমণী পাত্র, কিন্তু বন্ধুদের সৌজন্যে
সেটা নেলোতে এসে দাঁড়িয়েছে ।
এই নেলো বিভ্রান্ত লগ্নেই জন্মেছে মনে হয়, তার জীবনের প্রথম চুলকানি, দুঃখিত বিভ্রান্তি ………… সবে সে স্কুল গন্ডি পার করে কলেজে এন্ট্রি নিয়েছে, সেখানে গিয়েই একজন মেয়েকে দেখে নেলোর চুলকানি শুরু । যেই দেখা,
ব্যাস গড় গড় করে একটা লাভ লেটার লিখে প্রোপোজের জন্য বাস স্ট্যান্ডের দিকে গেছিল, মেয়েটি বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল । মেয়েটির কাছে গিয়ে নেলো নাচতে শুরু করে দিল । দেখা গেলো, পকেট থেকে চিঠি বার করার বদলে বেরিয়ে এল সালিকল মলম ! বিভ্রান্তির সেই শুরু, মেয়েটি ঠাস করে একটা চড় কষিয়ে দিল ।……
পরে জানা গেল,
পানুর চুলকানি শুধু মনের নয় অন্য চুলকানিও আছে যার জন্য মলমের দরকার হয় । টেনশনে নাকি নেলোর দ্বিতীয় চুলকানিটা প্রকট হয়ে যায় এবং তা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায় । সেদিনও তাই হয়েছিল । টেনশনে চুলকানি শুরু আর চিঠির বদলে মলম আর সেই সাথে নাচানাচি ।
… আহারে নেলো, জ্বালার চেয়ে যন্ত্রনা বেশি, সেই বিভ্রান্তির শুরু আর কি
!
এইরকম বিভ্রান্তির কেশ আরো আছে । ইতিহাস কোচিং-এ নেলোর সাথে এক সুন্দরীর আলাপ হয়েছিল, নেলো তো অস্থির । না চাইলেও সে বিভিন্ন ভাবে মেয়েটিকে সাহায্য করতো , ফুচকা খাওয়াতো, সিনেমা দেখাতে নিয়ে যেত অথচ নেলো নিজের মনের কথা কিছুতেই জানাতে পারতো না, ভয় একটাই,
যদি চড় খেয়ে পিরিত চটকে যায় ।
… কিন্তু নেলো স্থির করে সে প্রোপোজ করেই ছাড়বে । একদিন নেলো একটা চিঠি নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে, সেদিনই মেয়েটি তাকে ২টো সিনেমার টিকিট কাটতে বলে, মেঘ না চাইতেই জল…!
ভীষণ বিগলিত হয়ে সে যথাসময়ে টিকিট নিয়ে হাজির । মেয়েটি ওর বিভ্রান্তি বাড়িয়ে টিকিট ২টো হাতে নিয়ে ‘থ্যাঙ্ক য়্যু’
জানিয়ে চলে গেল । পর দিন জানতে পারলো মেয়েটি তার বিশেষ লোকের সাথে সিনেমা দেখতে গিয়েছিল । নেলো কার্যতঃ খুবই হতাশ । এরপরও নেলো অনেক মেয়েকে তার হৃদয়ে আশ্র্য় দেবার জন্য পিড়াপিড়ি করেছিল, কিন্তু কেউ
সাড়া দেয়নি । কেউ তাকে ভাই,
কেউ দাদা বা কেউ বন্ধু বানিয়ে ফেলছে কিন্তু প্রেমিক হিসাবে কারোর মনে ধরছে না । মনের মধ্যে সেই বিভ্রান্তি নিয়েই নেলো তার পুরো কলেজ লাইফটা কাটিয়ে দিল।
নেলো একটা ভালো চাকরী পায় । বিয়ে করার জন্য মেয়ে দেখতে থাকে । কিন্তু সেখানেও শান্তি নেই,
কিছুতেই মেয়েরা পছন্দ করতে চায় না । বিভ্রান্তি বাড়তেই থাকে । তার সাথে চুলকানিও থামেনি, বরং মিড্নাইট ইংলিশ মুভি দেখে আরো বেড়ে গেছিল । এইভাবে চলতে চলতে একদিন নেলোর চোখ চলে গেল পাড়ার বিখ্যাত হট মেয়ে টুম্পার দিকে । যার হাজারখানেক বয়ফ্রেন্ড । টুম্পা নেলোর থেকে বয়ষে অনেকটাই ছোট । সে যাই হোক, টুম্পাকে নেলোর সেই মিড্নাইট ইংলিশ মুভির হট নায়িকা মনে হতে লাগল । যথারীতি বিয়ের প্রস্তাব । টুম্পা ও টুম্পার পরিবারও তাতে সায় দিল । বেশ ঘটা করে নেলো-টুম্পার বিয়ে হয়ে গেল । বিয়ের এক বছর পর একটা ফুটফুটে মেয়ে হল । চুলকানিটা কমলেও কিন্তু নেলোর বিভ্রান্তিটা থেকেই গেল । তবে এবারের কেশটা অন্যরকম । নেলো ভাবতে লাগল সদ্যোজাত মেয়েটি আদৌ তার তো ?
----------------------------------------
রামরাজাতলা, হাওড়া
----------------------------------------
রামরাজাতলা, হাওড়া