Sunday, March 1, 2020

আমাদের পদক্ষেপ পত্রিকা নিয়ে পাঠ প্রতিক্রিয়া - অর্ণব গড়াই


আমাদের পদক্ষেপ, সত্যিই এ যেন আমাদের জন্যই একটা আপাদমস্তক সবুজপত্র । প্রতিটি সংখ্যার মতো এইবারের বইমেলা সংখ্য্য ( কবিতা সংখ্যা ) স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় । আমি পত্রিকা রিভিউ এর ব্যাপারে একেবারেই অপটু তাই এটা রিভিউ না বলে ভালোলাগা বা খারাপলাগা আলোচনা বলা যেতে পারে ।

আলোচনাই যখন করবো তখন তা ধাপে ধাপে হওয়াই শ্রেয় বলে মনে করি । প্রথমেই আসি অজিতেশদার সাথে পত্রিকার কথোপকথন প্রসঙ্গে । অজিতেশদার প্রতিটা বক্তব্যর সাথেই আমরা কমবেশি সকলেই এই পরিবারের ওয়াকিবহাল । সবুজপত্রগুলোর প্রতি ওনার ঔদার্য্য এককথায় অনস্বীকার্য্য । উনি বরাবরই পত্রিকা কিনে পড়ার উপরই জোর দেন এবং সেটা নিজেও করেন । অজিতেশদার আর একটা বক্তব্যও বেশ জোরালো, ফেসবুকে বা হোয়াটসআপে যেহুতু সম্পাদক থাকেনা তাই সেই লেখার লাইক বা কমেন্টের তারতম্য দেখে কখনই একজন লেখককে বিচার করা উচিৎ নয় । ফেসবুকে অবশ্যই বেশ কিছু ভালো লেখক বা কবি আছেন যাদের মাঝেমধ্যে ফেসবুকিয়া কবি বলতেও কেউ কেউ দ্বিধা করেন না কিন্তু বেশ কিছু কবি আছেন যারা আবোলতাবোল লিখে মুড়ি মুড়কির মতো সার্টিফিকেট বা প্রশংসাপত্র পেয়ে থাকেন ।এক্ষেত্রে আমার মতে ভালো যারা লেখেন তাদের নতুন কিছু করা সম্ভব কিনা একবার ভেবে দেখতে পারেন । যদিও আমি ব্যাক্তিগতভাবে কিছু ভালো লেখক লেখিকাদের নিয়ে একটা প্রচেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সেভাবে সাড়া পায়নি । তার একটা অবশ্যই কারন অপরিচিতি । আর একটা কারনও অবশ্য আছে, অনেকেই নিজের লেখার সমালোচনা শুনতে চাননা । আমার মতে যারা কবিতা যাপন করেন অর্থ্যাৎ কবিতাই যাদের ধ্যানজ্ঞান তারা একটা সাধু চেষ্টা করে দেখুননা যদি কিছুজনকেউ তাদের ভুল ধরিয়ে কিছু নতুন শেখানো যায়। অনেকেই হয়তো বলবেন কবিতা আবার শেখানো যায় নাকি? আমি বলবো যায়, আমাদের মধ্যে আনেকেই আছেন যারা উদোরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে কিছু একটা লিখে কবিতা বলে চালিয়ে দেন । তাদের জন্য তো অন্তত একটা অনলাইন টিউটোরিয়াল গোছের কিছু ভাবাই যেতে পারে । তাহলে আর আগামীদিনে কেউ বলতে পারবেনা ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে সম্পাদক বলে কিছু থাকেনা ।

এবার আসি কবিতার কথায়, বেশ কিছু কবিতা এককথায় অপূর্ব । ভিন্ন স্বাদের কবিতা, ভিন্ন স্বাদের লেখা উঠে এসেছে গুনীজনদের হাত দিয়ে । কার লেখা ভালো লেগেছে না বলে আমি এই বিভাগ নিয়ে একটি বিষয় সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় । আর্যদা বা দেবব্রতদা এনাদের কবিতায় কমেন্ট করবো এমন স্পর্ধা আমার নেই তবে এনাদের কবিতা আমি বা আমারা অনেকেই এই গ্রপে বহুপূর্বে পড়েছি আবারও পড়লাম ছাপার অক্ষরে । আমার বক্তব্যও ঠিক এখানেই । শুধু এনাদের কেন তমোঘ্ন চট্টোপাধ্যায় বা কুনাল গোস্বামীর কবিতাও আগে পড়েছি বলেই মনে হয় । যখন একটা পত্রিকা পড়বো সেখানের লেখা যদি অপ্রকাশিত হয় তাহলে সেটার মাধুর্য্য বা চমৎকারিতা পত্রিকাটির পক্ষে মঙ্গলজনক বলেই আমার মত । জানি এটা দেশ বা কৃত্তিবাস নয় তবুও এই ছোট ছোট সবুজপত্রগুলিই বা কম যায় কিসে । হতে পারে এরা বানিজ্যিক নয়, কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস যদি সম্পাদক একটু এব্যাপারে খুঁতখুতে হোন তাহলে আখেরে সবার লাভ । এতে যেমন পাঠকের আগ্রহ বাড়বে তেমনই একদিন বানিজ্যিক স্বার্থও কায়েম হবে । কে বলতে পারে এই পদক্ষেপই আগামীদিনে দেশ বা কৃত্তিবাসের পাশে জায়গা করে নেবেনা ।
এই বিভাগে দেবযানী গাঙ্গুলী, মানবেশ মিদ্দা, স্বদেশ তখন মন্ডল, দিয়া মিত্র, সুমন দিন্ডা, রাজকুমার ঘোষ সহ অনেকের কবিতায় বেশ ভালো লেগেছে ।

পুস্তক আলোচনা তেমনভাবে বুঝিনা, তবে কবিতা বোঝার চেষ্টা করে যায় । মৃগাঙ্ক চক্রবর্তীর কবিতা ও কবি জয়দীপ মৈত্রর কবিতায় বেশ সুখপাঠ্যের রেশ লেগে থাকবে । আলোচকরা নিজ নিজ ভাবে কবিতার আলোচনা করেছেন আর সেখানে আমার কিছু না বলায় শ্রেয় ।

অনুকবিতা সবসময় সুখপাঠ্য । দীর্ঘ কবিতা পড়তে পড়তে একচিলতে হিমেল বাতাসের খোঁজ মেলে অনুকবিতায় । যেভাবে হিমেল হাওয়ায় দুলিয়ে দিলেন কবি মামনি দত্ত তার "হিমেল হাওয়া" কবিতার মাধ্যমে । আর্য্য ঘোষের "পাখনা দাও পিঠে " পড়তে পড়তে সত্যিই মনে হচ্ছিল আকাশে উড়ে খুঁজে নিই মুক্তির পথ । কিন্তু তা আর হলো কই? ঘোর ভাঙলো একটা স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে । কল্লোল দত্তগুপ্তের "রোদ আর আদরের খেলায়" নীল ছায়া এসে দাঁড়ালো স্তম্ভিত হয়ে । সেই মহুর্তেই কবি রহিমা খাতুন স্বয়ং খুলে দিলেন "জ্ঞানচক্ষু" । ঠিক মনে হলো একটু আগেই যেখানে নীল আকর্শ স্তম্ভিত হয়ে ছিল সেখানে একপশলা বৃষ্টির দেখা তো মিলবেই যা দিয়ে কবি তার অসামন্য সৃষ্টিতে গড়ে নিতে চাই এক মহাসমুদ্র । যেখানেই সমুদ্র সেখানেই তো অনিকেত প্রেমের দেখা মিলবেই । তারা গোপনে নেমে আসতে চাই কবি বিদর্শী চক্রবর্তীর "কোজাগর" কবিতার উঠোনে । এমন ভাবনা তো কবিকেই মানায় ।
এতকিছু ভালোলাগার মধ্যেও যেন একটু কোথাও কিন্তু কিন্তু থেকে যাচ্ছে । মাথুর দাসের "হালচাল কবিতাটি খুব সুন্দর । ছড়ার ছলে কবি সুন্দর বর্ণনা করেছেন কলি কালের যেমন কর্ম তেমন ফলের । কিন্তু এটা কি আদও অনুকবিতা । আমার যেটুকু দৌড় তাতে এটি পঞ্চপদী বা লিমেরিক বলেই জানি । আমার মনে হয় পঞ্চপদী বা লিমেরিকের জন্য সম্পাদক একটি আলাদা বিভাগ করতেই পারতেন ( যদি সম্ভব হয় ) । কিন্তু অনুকবিতায় লিমেরিক বড় বেমানান লাগছে ।

এতক্ষন যা বকবক করলাম এ নেহাৎই আমার ব্যক্তিগত ধ্যানধারনা । এরসাথে পত্রিকা বা অন্যকারোর কোন সম্পর্ক নেই । কিছু জনের নাম বললাম আর কিছু জনের নিলামনা মানে এই নয় যে তাদের লেখা খারাপ লেগেছে । যে কটি লেখা মনে দাগ কেটেছে আমি তাদের নাম শুধু নিলাম । বাকি সবাই এককথায় অপূর্ব ।

No comments:

Post a Comment