পাঠ প্রতিক্রিয়া: আমাদের পদক্ষেপ // দীপক আঢ্য
চার ফর্মার প্রথম বর্ষের প্রথম সংখ্যা ‘আমাদের পদক্ষেপ’ হাতে পেয়ে অতি উৎসাহে পাঠ শেষ করার পর খুব যে আহ্লাদিত হলাম, তেমন না হলেও ভালো লাগার রেশ এখনও বর্তমান। পত্রিকার শুরুতেই প্রখ্যাত সাহিত্যিক শ্রী অজিতেশ নাগের অতি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার (পত্রিকার প্রায় এক-চতুর্থাংশ জুড়ে) সুপাঠ্য সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রায় ব্যক্তিগত আলাপচারিতা পত্রিকার শ্রী-বৃদ্ধিতে কি সত্যিই সাহায্য করল, এই বিষয়ে পত্রিকার সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি মাত্র। কবিতা বিভাগের শুরুতেই সুজন ভট্টাচার্যের কবিতা (এই শিরোনামেই) মনে করিয়ে দিল একটা সময় বিশেষ ক’রে বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে ‘সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা’ এই ক্যাপশনে বড় বড় পোস্টার সাঁটা হতো। রায় মহাশয়ের সিনেমা একটা ভিন্নতর স্বাদ যোগাতো দর্শককে। তাই সে সময় তাঁর ওই স্ব-ঘোষিত বিজ্ঞাপনে কখনোই বিচলিত হয়নি দর্শককুল। কিন্তু এখানে সুজন বাবুর আপাত নামহীন কবিতায় সেই ভিন্নতর আস্বাদ পেলাম কোথায়? (যদিও কবিতার শিরোনাম থাকতেই হবে, সে বাধ্যতা নেই কোথাও)। কবি আর্যতীর্থর ‘আসামী’ কবিতার বিষয় মন কাড়লেও কবিতাটি কবিতা হয়ে ওঠার থেকে কিঞ্চিৎ সরে গিয়েছে বলেই মনে হলো। একই কথা তমোঘ্ন চট্টোপাধ্যায়ের ‘ধন্যবাদ’ কবিতার ক্ষেত্রেও। এতো ইলাবোরেশনের কি সত্যিই দরকার ছিল? পাঠককে কবি ভাবতে দিলেন কই? ভাল লেগেছে স্বদেশ রঞ্জন মণ্ডলের কবিতা ‘দ্বিখণ্ডিত’। রাজকুমার ঘোষের সনেটটিতে সনেটের শর্তাবলী বজায় থাকলেও কবিতার ঘ্রাণ একটু হলেও শুকিয়ে গিয়েছে ছন্দে। ‘কিছু ছাই কিছু মাটি’ কবিতায় কবি অমিতাভ দাসের ‘খুন’ এবং ‘ভ্রূণ’ শব্দদুটিকে জোর ক’রে অন্ত্যমিল করার যে প্রচেষ্টা তা (ফোনেটিক্যালি) বড়ই শিথিল।
‘জিরো বাউন্ডারির ভবিষ্যৎ’ প্রবন্ধে , “কারো সমালোচনা না করেই বলছি, হাংরি আন্দোলনের ক্ষেত্রে মাত্র দশ পনেরো পাতার ইস্তেহার লিখে কীরকম আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। একটা মিথ পর্যায় পর্যন্ত গড়িয়ে গেল। আর আমি ২০০০০ শব্দ লিখলাম। তুলনা করলাম না। উল্লেখ করলাম মাত্র।” কথাগুলো না লেখা হলেই মনে হয় অধিক ভাল হতো। কবিতার জগতে কম ‘ইসম’ বা ‘বাদ’ আসেনি। সময়ের কষ্টি পাথরে তাদের বিচার হয়েছে বা হবেও। এতো তাড়া কিসের? তাছাড়া এটাও ভেবে দেখার আছে, সত্যিই ‘জিরো বাউন্ডারি’ এই ভাবনাটাকি একদমই নতুন – স্বতন্ত্র? নাকি এই শব্দবন্ধটুকু ঘুরে ফিরে এসেছে কবিতার দোরগোড়ায়। প্রসঙ্গক্রমে একটা পুরনো কথার রেশ। কবীর সুমন বা নচিকেতা তাদের জীবনমুখী গানের ডালি নিয়ে যখন বাংলা গানের নতুন জোয়ার আনেন, তখনও কিন্তু এই কথাটাই শুনতে হয়েছিল, এঁদের গান জীবনমুখী হলে, ভূপেন হাজারিকার’ ‘মানুষ মানুষের জন্যে...’ এই ধরণের গানগুলোকে কি তাহলে মরণমুখী বলতে হবে?
অপর একটা প্রবন্ধ ‘মিল, ঘাড়ে যখন হাতি’-তে নতুন বিশেষ কোনও তথ্য খুঁজে পেলাম না। পরের কবিতা গুচ্ছে অনেকগুলো কবিতা ভালো লাগাকে অতিক্রম ক’রে গিয়েছে তা বলাই বাহুল্য। ‘প্রার্থিত’ কবিতায় দেবযানী গাঙ্গুলীর প্রথম লাইন, ‘দেবে যদি একান্ত কিছুই – তবে কথা দিও’ কিছু পাঠকের অবসরে অনুরণন জাগাবে তাতে সন্দেহ নেই। ভালো লেগেছে প্রসেনজিৎ মণ্ডলের ‘হাওয়ায় ভাসছে পালক’ কিংবা কৌশিক দে বা মানবেশ মিদ্দার কবিতাও। ভালো লেগেছে রবীন বসু , রবীন পার্থ মণ্ডলের কবিতাও।
ভালো প্রচেষ্টা ‘আমার চোখে তোমার কবিতা’ বিভাগটি। তবে ‘অণুকবিতা’ বিভাগটি সত্যিই কতটা ‘অণু’ হয়ে উঠেছে বা আদৌ হয়েছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা করা যেতেই পারে।
No comments:
Post a Comment