Sunday, August 14, 2022

আমাদের পদক্ষেপ পরিবার আয়োজিত বিশেষ ইভেন্ট "স্বাধীনতা"


*আজ ছিয়াত্তরতম স্বাধীনতা দিবস ৷ ১৯৪৭ সালে বহু রক্তক্ষয়ের পর স্বাধীনতা পেয়েছিলাম আমরা ৷ ঘটেছিল দেশ বিভাজন ৷ রাজনীতির পাশাখেলায় তারপর থেকে আমরা অর্থাৎ আম জনতা নানাভাবে পিষ্ট হতে হতে হয়তো আজ 'স্বাদহীন'ভাবে স্বাধীন রয়েছি ৷ এই স্বাধীনতা কতখানি পরাধীনতা থেকে মুক্তি আর কতখানি ক্ষমতার হস্তান্তর তা নিয়েও রয়ে গেছে বিতর্ক ৷ তবু আজকের দিনটা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ৷ তাই এই দিনটাকে উদযাপন করতে দেশজুড়ে গৃহীত হচ্ছে নানা কর্মসূচি ৷*

*আমাদের পদক্ষেপ পরিবারের পক্ষ থেকে আজকের দিনে পরিবারের সকলকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা ৷ পূর্বঘোঘণা অনুযায়ী আজ আমাদের এই পরিবারের যৌথ দেওয়ালে আয়োজিত হবে বিশেষ ইভেন্ট— "স্বাধীনতা" ৷ ইতিমধ্যে আপনাদের পাঠানো লেখাগুলো আমরা একে একে পোস্ট করব এখানে ৷ সেই ধারাবাহিকতা যেন ক্ষুণ্ণ না হয়, সেজন্য ইভেন্ট চলাকালীন গ্রুপটি অনলি অ্যাডমিন করে রাখা হবে ৷ আপনাদের অনুরোধ, ধৈর্য রাখবেন ৷ সাথে থাকুন ৷*

স্বাধীনতা ১ 
ব্রজেশ নন্দী, কে.জি 
---------
*স্বাধীনতা- ২*

স্বাধীনতা
আর্যতীর্থ

স্বাধীনতা। বাতাসের মতো অদৃশ্য, অক্সিজেনের মতো দরকারি।
স্বাধীনতা। নিজের বাড়িতে নিজের রোজগারে ভরপেট ভাত রুটি তরকারি।
স্বাধীনতা। বন্দেমাতরম না বলে জয় হিন্দ বললে যার তফাত হয়না।
স্বাধীনতা। শুধু গেরুয়া নয়, সাদা আর সবুজও যে পতাকার গয়না।
স্বাধীনতা। এল ও সি'র ওপারের গুলিতে ঝাঁঝরা হওয়া সৈনিকের শেষ নিঃশ্বাস।
স্বাধীনতা। পালটাবে একদিন , সোনার স্বপ্ন দেখা কিছু মনে আজও বেঁচে থাকা বিশ্বাস।
স্বাধীনতা। জন গণ মন শুনে বাড়িতে সোফার থেকে সটান দাঁড়ানো।
স্বাধীনতা। কোহলি ,বিজেন্দর, মেরি কম ,দীপাতে আবেগের উচ্ছ্বাসে তেরঙ্গা ওড়ানো।
স্বাধীনতা। এখনো বলতে পারা গর্বিত প্রেম নিয়ে এই কাজ হচ্ছে না ভালো।
স্বাধীনতা। চারিদিক আঁধারেও ভরসা করার মতো জাগরুক আলো।


নাগরিক কি খাবে শাসকের বেঁধে দেওয়া মাংস আইনে। স্বাধীনতা নয়।
বাড়িতে আনাজ নেই, পাঁচশো হাজার নিয়ে আবালবৃদ্ধ সব দাঁড়ানো লাইনে। স্বাধীনতা নয়।
শিখণ্ডীর মতো ধর্ম সামনে রাখা গণতান্ত্রিক বিবেচনার     ময়দানে।
স্বাধীনতা নয়।
পঁচাত্তর  সাল গেলো, এখনো হয়নি মিল পুজো ও আজানে।
স্বাধীনতা নয়।
ফেসবুকে ওগড়ানো আনাপসানাপ যত বিদ্বেষবমি। 
স্বাধীনতা নয়।
ফিসফিস গুজবের বিষ কানে ঢেলে দিয়ে যত্নে তৈরী করা দাঙ্গার জমি। 
স্বাধীনতা নয়।
ঋণদুখী কৃষকের জীবন ফুরিয়ে যাওয়া আজও ফলিডলে।
স্বাধীনতা নয়।
ধর্ষিতা রমণীর চরিতমানস ঘাঁটা জেরা করা ছলে। স্বাধীনতা নয়।
দেশ জুড়ে লকডাউন, হাজার মাইল হাঁটে নাগরিক পরিযায়ী।
স্বাধীনতা নয়।
ভারত ব্রাত্য করে প্রাদেশিকতার ভূত আজও দেশে স্থায়ী।
স্বাধীনতা নয়।


স্বাধীনতা। কিছুটা এসেছো পথ , আরো যে হাঁটতে হবে, জানো নিশ্চয়।
সকালে পতাকা তুলে বিকেলে ফূর্তি করা দস্তুর হতে পারে। স্বাধীনতা নয়।
_______

*স্বাধীনতা-৩*

স্বাধীনতা
দেবযানী মহাপাত্র

সকাল সকাল মাথাটা গরম হয়ে গেল।ভেবেছিলাম এমন একটা দিন।কত সুন্দর ভাবে শুরু করব।কোথায় কী!ঢের লোক আছে বানা বানায়া কাজ বিগড়ে দেওয়ার।এই যেমন পূজা।এত দেরি করে এল যে কী বলব।অথচ কাল ওর কান কামড়ে বলে দিয়েছিলাম তাড়াতাড়ি আসিস তো কাজে।স্বাধীনতা দিবস।আবাসনের সবাই মিলে একটা প্রোগ্রাম রেখেছে।আমার মিনি তাতে অংশ নিয়েছে,আমিও একটা গান গাইব।সকাল সকাল আমাদের তৈরি হতে হবে।তুই কাজ সেরে মিনিকে তৈরি করিস। তা না,সব ভুলে গেল!এখন মুখ নামিয়ে চোরের মতো ঢুকছে।

-এ্যাই এত দেরি করলি কেন রে? 
-মেয়ের স্কুলে অনুষ্ঠান আছে।ওকে তার জন্য সাজিয়ে দিতে দেরি হয়ে গেল। 
- আমি যে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছিলাম তার বেলা?
-একটু দেরি হয়ে গেছে ম্যাডাম।এক্ষুনি কাজ করে নিয়ে মিনি মামনিকে তৈরি করে দিচ্ছি। 

আমি রেগে ঘরে ঢুকলাম। যা খুশি করুক। দায়িত্ববোধ বলে যদি কিছু থাকে এদের!সময় মতো মিনিকে সাজিয়ে দিলেই হল।ওর ওপর  মুখ খারাপ করে সময় নষ্ট করলে চলবে না।আমার নিজস্ব সাজগোজ আছে।ন'টার মধ্যে নিচের হলে পৌঁছে না গেলে বাকিরা কথা শোনাতে ছাড়বেনা।

ওমা!আমার মিনিকে কী সুন্দর সাজিয়েছে পূজা।
-এ্যাই পূজা মিনিকে এখানে নিয়ে আয়। বোস।ওর প্রোগ্রাম শেষ হওয়া পর্যন্ত থাকবি।ওর কখন কি লাগবে।আমি তো ব্যস্ত থাকব।

স্টেজে কবিতা বলছে ছোট্ট মিনি।আমি লিখে দিয়েছি।

আমার স্বাধীনতা,
আমি ফুলের মতো
শক্ত নই
নগণ্য প্রাণ
তবু এ মন থেকে
মুক্ত করেছি মনের দাসত্ব। 
পৃথিবীর সব ভয়কে
রাঙিয়েছি চোখ
দ্বিধা, দৈন্য ঘুচিয়েছি
একটু একটু করে
তোমায় ভালোবাসি বলে। 

স্বাধীনতা, 
কতটা মুক্ত তুমি
কতটা কেটেছ বন্ধন

আমার মায়েরা
সন্তানের ভাতের জন্য 
নির্লজ্জ বেঁচে আছে
 তাদের পেট ভরাও
লাজুক ওরাও হাসুক। 
হাত ধরো
বলো,ভালোবাসি 
সমান,সমান।

 মিনির আবৃত্তি শুনে সবাই হাততালি দিচ্ছে। আনন্দে  চোখে জল আসছে।আমিও দারুণ গেয়েছি। অন্তত কান ফাটানো হাততালি সে কথাই বলছে।পূজাকে বাড়ি  যেতে বললাম।যাহ আজকের দিনে ওকে একটু মিষ্টি দেওয়া হলনা।এতক্ষণ রইল।আমি ছুটে ব্যালকনিতে গেলাম।

কখন বৃষ্টি শুরু গেছে।আবাসনের সামনে টাঙানো বিরাট পতাকা ভিজছে।ভিজে ভিজে বেশ খানিকটা দূরে চলে গেছে পূজা।আমার আওয়াজ ও শুনতে পাবে না।
_______
*স্বাধীনতা- ৪*

স্বাধীনতার মানে
রাজশ্রী রাহা চক্রবর্তী


পঁচাত্তর বছর পেরিয়ে এলাম দেখতে দেখতে ।
আমরা এখন স্বাধীন ।
কিন্তু সত্যিই কতটা স্বাধীন ? 
এ দেশে এখনও সব মানুষ দু'বেলা পেট ভরে ন্যূনতম ডাল ভাতটুকু পায় না । কাজ করে , টাকা চাওয়ার অধিকার নেই । 
দরিদ্র মানুষের শ্রমের টাকা কোথায় যায় কে জানে ! রাঘব বোয়ালের কাছে পৌঁছয় , কিন্তু প্রথম হাতসাফাই করে চুনোপুঁটিরা । পরে এসময়ে রাঘব বোয়াল হয়ে ওঠে তারাই , কারণ ততদিনে তারা মানুষকে ঠকানোর সুলুক সন্ধান জেনে গেছে। 
তাই এই নিয়ম ( অনিয়ম ) তখনও চলতে থাকবে ।
তাই ভালোমানুষ , বিশ্বাস করে আবারও ঠকবে ।
এটা শুধু পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা নয় । ইন্টারনেট খুঁজলে সারা দেশেই এই সমস্যার হদিশ পাওয়া যায় । 
     একে কার স্বাধীনতা বলা যাবে ?
     এবার আসা যাক বাক স্বাধীনতার কথায় ।
মানুষ একমাত্র প্রাণী ( এখনও অবধি জানা ) যারা নির্দিষ্ট শব্দ প্রয়োগে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে । মানে কথা বলতে পারে ।
ভালো কথা ।
কিন্তু, তার নিজের মনের কথা বলার স্বাধীনতা নেই । শেখানো কথা না বললে জীবন হয়ে উঠবে সঙ্গীন । প্রমাণ দেওয়া বাহুল্য । অর্থাৎ , বাক স্বাধীনতা, সেখানেও বাধা । এমনকি , প্রাণনাশের ভয় ।
   ‌দেশের নাগরিক হয়েও কেউ কাকে পুজো করবে , মানে ধর্ম কী হবে, এটা তার নিজের পরিবার ঠিক করতে পারবে না । ঠিক করে দেবে অন্য লোক। যেন তার পূর্বপুরুষ সেই অন্য লোকটি বা লোকদের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন এটা শিখিয়ে দিতে। 
আশ্চর্য ! এসব তো ' প্রিমিটিভ এরা ' এ হত । এখনও সেই ' ট্র্যাডিশন ' চলছে ?
   ‌  মানুষকে কাজ দিতে হবে । তাই বলে , মাথায় করে ইঁট বহন ? এখনও পিরামিডের যুগে থাকব ? 
ক্রেন ,কপিকল এসব এখনও ব্যবহার হচ্ছে না ? 
বহুতল তৈরি হওয়ার সময় সামনে থেকে যতটা দেখেছি , ব্যবহার হয় না। তবে , অনেক ক্ষেত্রেই এত ছোট জায়গার মধ্যে তৈরি হয় , যে ক্রেন ঢুকবে কোথা দিয়ে ? বড় জায়গা থাকলেও তফাৎ কিছু হয়না । তবু , কোনোভাবে যদি অন্য কোনো ভাবনা ভাবা যেত ?
     ‌  ‌ যারা মাথায় করে বহন করে , তাদের যদি ছেলেবেলার মতো চেন লাগানো চাকা গাড়ি দেওয়া যায় ! তাহলে , খুব বেশি খরচ বাড়বে কি ?
      ‌ ‌প্রত্যেক মানুষের প্রাণের দাম পরিবারের কাছে সকলের ক্ষেত্রেই সমান । মা'র কাছে , স্ত্রীর কাছে , সন্তানের কাছে । তাই বাঁচবার অধিকার সবার আছে । টাকা দিয়ে সে ক্ষতি সবক্ষেত্রে পূর্ণ হয় না । তাই , বহুতল তৈরির সময়ে বা বহুতলে কাজের সময়ে নিচে একটা জাল টাঙিয়ে দেওয়াটা মিস্ত্রীদের জন্য নাগরিক অধিকার বলেই আমার মনে হয় । আজও সবসময়ে সে ব্যবস্থা থাকেনা । এটা তাদেরও দুর্ভাগ্য , আমাদেরও, যাদের কানে কোনো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হাওয়ায় বা সংবাদ মাধ্যমে ভেসে আসে ।
    ‌    আজও রাস্তায় চন্দ্রাহত মানুষকে ঘুরতে দেখা যায় । যথেষ্ট এ্যাসাইলাম হয়তো এখনও তৈরি হয়নি । স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পরেও ।
  ‌‌    ‌‌  নারীদের প্রতি অন্যায় আচরণ । এ বিষয়ে অনেক অনেক লেখা হয় , হচ্ছে , হবে । 
কিন্তু নারীরা , আমরা কি সম্পূর্ণ ঠিক ? 
আচ্ছা , ভাবা যাক , বাড়িতে একজন ভালোমানুষ কর্তামশাই আছেন , অথবা বধূমাতা । গিন্নীমা তার সুযোগ কি কখনোই নেন না ? বাঁকা কথা , বিদ্রূপ অথবা চিৎকার করে শাসন ?
     ‌‌   তার প্রভাব কি শুধু কর্তামশাইয়ের ওপর পড়ে ? 
     তা নয় কিন্তু, বাড়ির শিশু বা কিশোর, কিশোরীদের ওপরেও পড়ে । বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় তাদের মনে । তারা অবাধ্য ও দুর্বিনীত হয়ে উঠতে পারে । 
     এটাও ছোট্ট করে এক ধরণের ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স। যা নারীরাই করে থাকে , বা থাকেন ।
     এর ফলে বাড়ির ছোট্ট সদস্যটি ভয় পায় । প্রতিবাদ করতে গিয়ে শাসন পায় , অথবা , প্রতিবাদ না করে ঘরের কোণে লুকিয়ে পড়ে । দুটোই খারাপ । বড় হয়ে নিজে ভায়োলেন্ট হয়ে পড়ে । অথবা তার ব্যক্তিত্বের ওপরে এই ভায়োলেন্সের প্রভাব পড়ে । আবার এই অস্বাভাবিক ব্যক্তিত্বের  প্রভাব পড়ে সমাজের ওপরে । 
     যেহেতু বাড়িতে মহিলার হাতে নিগৃহীত হতে হয়েছে, তাই বাইরে আপাত নিরীহ মেয়েরাই হয় অত্যাচারের শিকার । 
   ‌  ডিসিপ্লিন অতি অবশ্যই সবচেয়ে আগে প্রয়োজন। কী নারী ,কী পুরুষ সবার কাছে অনুরোধ ,  ডিসিপ্লিনের ধ্বজা ধরে অত্যাচার করবেন না । ফলাফলটা শাস্তিযোগ্য অপরাধের দিকে চলে যেতে পারে ।
     আমি চারটে ঘটনা জানি , খুব কাছ থেকে , যেসব শিশুরা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে । একজন অসফল হয়েছে। বাকি তিনজন কিন্তু সফল ।
     একটু স্বাধীনতা দিলে , একটু নিজের মতো হতে দিলে ,  ওরা সবাই বেঁচে থাকত । 
   ‌‌  স্বাধীনতার মানে  যে আনন্দ , স্বাধীনতার মানে যে বয়ে চলা খুশির হাওয়া , তা কী করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বুঝবে যদি না নিজে কোনো ক্ষেত্রেই স্বাধীনতার সুখ একটু হলেও পায় ।
   ‌‌       আমরাই বা কী করে বুঝব স্বাধীনতার সুখ কী , যদি প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যমে জানানো হয় , এটা ভুল , ওটা ভুল , সেটা ভুল। 
     ‌‌     যেদিন কোথাও , খুন হবে না , কেউ অত্যাচারিত হবে না , কোথাও যুদ্ধ হবে না , কোনো চন্দ্রাহত কোরপান প্রাণ দেবে না  এমনকি অসহায় কুকুর ছানারাও ভায়োলেন্সের শিকার হয়ে প্রাণ দেবে না , সেদিন সত্যিকারের মানবতার স্বাদ পাব ।
     ‌    যেদিন সবাই খোলা হাওয়ায় খুশির গান গেয়ে নিশ্চিন্তে বাঁচতে পারব , সেদিনই সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ পাব ।
সেদিনই জানব মানবতা কাকে বলে , স্বাধীনতা কাকে বলে ।
__________
*স্বাধীনতা- ৫*

স্বাধীনতার মানে
ঈশিতা পাল

রাস্তার পাশে স্কুলের স্বাধীনতা দিবস--
কুচকাওয়াজ
পতাকা উত্তোলন
দেশাত্মবোধক গান
Main attraction-
কমলা লজেন্স
বিস্কুট
বেলুন
ছোটদের স্বাধীনতা।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে স্বাধীনতার অর্থ -'ছুটি',
রোজকার ব্যস্ততা--
বসের বাঁজখাই গলা--
ইগোর লড়াই--
Jet speed life--
সব কিছুর থেকে ক্ষণিক মুক্তি।
দিন গড়ায় গুটিগুটি পায়ে
বেড়ালের মত আদুরে সুখ--
হ্যাঁ কথা হচ্ছিল স্বাধীনতার
আসলে হাত ফসকে ভাবনারা ফানুস আকাশে।
লং উইকএণ্ডে শহরময় ছুটোছুটি,
ট্রাফিক জ্যামেও বিরক্তি নেই আজ।
মনে পড়েছে কি বীর শহীদ ভাইবোনদের কথা?
যাদের জন্য এই দিনটা উজ্জ্বল?
হ্যাঁ মনে পড়ছে
আবার ভুলেও যাচ্ছি।
ছুটির দিন--
কেউ স্বাধীনতার মানে খোঁজে না।
গা ভাসিয়ে দেয় খুশির সাগরে নাকি সুখের খোঁজে?
-----------
*স্বাধীনতা- ৬*

স্বাধীনতা
ভাগ্যধর মল্লিক


সুদূর থেকে আসছে ভেসে বেদনভরা  তোমার সুর ,
 এটাই না কি দেশজননীর সাধের গড়া অন্তঃপুর !
হায় জননী , দেখছি এ কী , স্বাধীনতার মুকুর 'পর !
ভায়ে ভায়ে রক্ত মাখে , ভেদ করে না আত্মপর ।
মাস্তানরা ঝাণ্ডা ওড়ায় , দেখিয়ে বেড়ায় পেশীর বল ,
ঝাঁপিয়ে পড়ে ভোটের খেলায় , ছাপ্পা মেরে জেতায় দল ।
স্বাধীন স্বাদের বাছাই বুলি সমাজটাকে দেখায় খেল্ ,
বাড়তি কিছু পাওয়ার আশায় নেতার পায়ে দিচ্ছে তেল ।
নেতা আবার পাইয়ে দিতে ইচ্ছেমতো নিচ্ছে ঘুষ ,
দামি গাড়ি , সঙ্গে নারী , রঙিন স্রোতে ডোবায় হুঁশ ।
বিদ্যেবোঝা শিকেয় তুলে বিবেকটাকে পাড়ায় ঘুম ,
ইজ্জতটা ধূলায় লোটে , নেশায় নিলাজ নাচের ধুম ।
তোষামোদের মালা পরে ছোটায় বুলি মূল্যবান ,
পিতা মাতা গুরুজনে দেয় না ওরা উচিত মান ।

রক্তের যোগ দেয় ভুলিয়ে যুগ বদলের মোহন ফাঁদ ,
একই মায়ের দুগ্ধ পিয়ে ভায়ে ভায়ে দিচ্ছে বাঁধ ।
ছেলে থাকে মস্ত ফ্ল্যাটে , বাবা মায়ের জায়গা নাই ,
চোখের জলে ভেসে ওরা বৃদ্ধাবাসে পাচ্ছে ঠাঁই ।
হায় রে কপাল , নাতনী নাতির  , পিঠে তাদের বোঝার ভার ,
হারিয়ে গেছে ঠাম্মাদাদুর গল্প শোনা রূপকথার ।
ইংরেজকে তাড়িয়ে দিয়ে ইংরেজিতে দেখায় খেল্ ,
ইজ্জতটা রাখতে গিয়ে
মাতৃভাষায় ডাহা ফেল ।

বেদন-ঘরে ভাবছো কবি স্বাধীনতার এই কি দান ,
ভাঙাগড়ার এই খেলাতে ধূলায় লুটায় দেশের মান ।
দেশের ভাঙন রুখতে চেয়ে রাখীর ডোরে বাঁধলে হাত ,
দেশকে ভেঙে স্বাধীন হয়ে করলো ওরা কিস্তিমাত ।
বণিক রাজার খেতাবটাকে ফেরায় তোমার বিবেক-বোধ ,
উঁচু মাথা নামিয়ে নীচে দিল ওরা ঋণের শোধ ।

ঝাণ্ডাধারীর তাণ্ডবেতে লণ্ডভণ্ড শান্তি-বন ,
এই ভেবে কি চেয়েছিলে জুড়তে বিশ্ব-মানব-মন ?
বাঘের ঘরে ঘোঘের হাতে হাপিশ আমার নোবেল-ধন ,
নকল পাওয়ার বদান্যতায় ভরছে না যে বিবেক মন ।

স্বাধীনতার এ রূপ দেখে কাঁদছি মা গো পরম লাজে ,
এখান থেকেই দুহাত জুড়ে প্রণাম জানাই স্বাধীন মাকে ।

****************************************

স্বাধীন হওয়ার শুভ দিনে রবি ঠাকুর ভাবেন আবার -
কিসের ঘোরে এ সব কথা আজকে  মাথায় এল আমার ?
চশমা আমার নাকের ডগায় , সবই কি তাই দেখছি ভুল ,
হতেও পারে ,  দুঃস্বপনে দেখছি আমি এসব ভুল ।
যা দেখেছি , যা বলেছি সবই আমার চোখের ভুল ,
আজ সকালে প্রথম আলোয় করছি স্বীকার আমার ভুল ।

স্বাধীন মা গো , স্বাধীন তুমি , দাও গো ভেঙে সবার ভুল ,
রক্ত যারা ঢাললো পায়ে তাদের কোন হয়নি ভুল ।
ভাঙবেই ঠিক , ভাঙবেই ঠিক , একদিন ঠিক ভাঙবেই ভুল ,
আসবে সেদিন , যে দিন ওরা শুধরে নেবে সমস্ত ভুল ।

সেদিন আবার সোনার আলোয় 
ফুটবে সত্য স্বাধীন ফুল ,
স্বাধীন মায়ের শুভ্র গলায় দুলবে সে ফুল দোদুল দুল ।
________
*স্বাধীনতা- ৭*
স্বাধীনতা কী ?
   অগ্নিমিত্র 

স্বাধীনতার মানে কী ? এটা বোঝা দরকার। স্বাধীনতার মানে যা খুশি তাই করা নয়। স্বেচ্ছাচারিতা নয়। কোনো দেশ নিজের সিদ্ধান্ত নিজের মতো করে নিতে যখন পারে তখনই সিদ্ধান্ত স্বাধীন হয়। যখন দেশবাসী নিজের মতো করে জীবন যাপন করতে পারবে ও সবার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান হবে, তখনই স্বাধীনতা সার্থক হবে।
  আমাদের দেশের লোকে অনেক বিষয়ে এগুলো পেরেছে। আবার অনেক বিষয়ে পারেনি। সেই দিক থেকে দেখলে আমরা এখনো পুরোপুরি স্বাধীন হইনি। এখনো বহু বহু জিনিস বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় আমাদের।  রপ্তানির ভাগ বেশি নয়। বহু লোক কর্মহীন। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। দুর্নীতি ও চৌর্যবৃত্তির অভাব নেই। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছে। এমতাবস্থায় ' মেরা ভারত মহান ' বললেও সেটি সম্পূর্ণ ঠিক কথা হবে না মনে হয়। 
  তাই আমাদের সবাইকে মিলে তৈরী করতে হবে আদর্শ ভারত, যেখানে হিংসা, দারিদ্র্য, জাতিবিদ্বেষ থাকবে না। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।
--------------
*স্বাধীনতা- ৮*
আদৌ স্বাধীনতা
রিক্তা দত্ত

আপাত স্বাধীন হয়েছি দুশো বছরে
ইচ্ছেমতন করছি যাচ্ছেতাই
ফারাক কী আর রইল পঁচাত্তরে
স্বাধীনতা তুমি হয়ে আছো বনসাই ৷

এখনও আমরা জীবনের ক্রীতদাস
রাজা আজও উলঙ্গ এ নিখিলে
লড়াই রক্ত বীরত্বের ইতিহাস 
মূল্যবোধের অপচয়ের ফসিলে ৷

আজো কী পেরেছি শিশুকে নির্ভেজাল
নূন্যতম দুধেভাতে ডুবিয়ে দিতে?
দিতে দূষণহীন স্বাধীন সকাল
বাক্ -স্বাধীনতায় দুনিয়া ভরাতে ?

নিশুত রাতে চলতে পারে নারী
সন্তান হিসেবে মেয়েকেই চায়
আমি নারী—সবটাই একা পারি -
বলতে পারি কী এখনও নির্দ্ধিধায়?

পঁচাত্তরে কেন তবে নাচানাচি
দিবস নিয়ে কেন এ উন্মাদনা?
নিজে তো আগে সঠিকপথে বাঁচি?
তবেই লড়াই রক্তের শোধে স্বাধীনতা হবে কেনা ৷
_________
*স্বাধীনতা- ৯*
স্বাধীনতা
নীরেশ দেবনাথ

আজ পনেরো, আগস্ট মাস;
সবার কাছেই দিনটা বড় খাস ।
সকাল থেকেই সবাই বড় ব্যস্ত ।
স্নান সেরে, সাজগোজ করে
পার্কে এসে সবাই হল জড়ো।
বালক-বালিকা, কিশোর-কিশোরী,
যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা
পরিচ্ছন্ন হয়ে সব
পার্কে এসে করছে কলরব।
সবুজ সাদা গেরুয়াতে
সেজেছে সব নিজের মতে।
কারো হাতে ফুল
কারো হাতে কাগজী পতাকা;
কেউ আবার রং তুলিতে
গালে এঁকে দিচ্ছে তিরঙা।
মায়েরা সব গেরুয়া পেড়ে শাড়ি,
আর মেয়েরা সবুজ সাদা গেরুয়াতে
লাগছে ভালো ভারী।
ছেলেরা সব সাদা সাজে
গেরুয়া পাগড়ি শিরে।

ছোটোদের  ছোট্ট একটা দল
জটলা করে করছে কোলাহল।
দেশাত্মবোধক গান গাইবে তাই
তাদের খুশির সীমা নাই

ছোট ছোট দলে আলোচনা চলছে বেশ,
কত জন যে জানে কত কথা,
সক্কলেই বলছে কিছু না কিছু -
কেমন করে স্বাধীন হলো দেশ;
সংগ্রামেরই কত গল্প গাথা
শহীদদের বলিদানের কথা।

কত কিছু -
নেতাজি আজ থাকতো যদি -
ক্ষুদিরাম বসু, ভগৎ সিং,
চন্দ্রশেখর আজাদ, রাজগুরু
এখান থেকে শুরু -
মাস্টারদা সূর্য সেন, মাতঙ্গিনী হাজরা
আরো কত শহীদদের নাম যে এরা জানে!
কী করলে কী হতো সব্বাই এরা বোঝে,
তবে কেবল সমাধানের সূত্রই শুধু খোঁজে।

সবাই যখন ব্যস্ত ভীষণ - বিনা কাজের মাঝেই -
ছোট একটি ছেলে তখন
এগিয়ে গেলো পার্কেরই এক কোণে।
দেখে  - বৃদ্ধ এক সৌম্যকান্তি  -
তবে মুখটা যেন বড়ই গম্ভীর ,
সবুজ পায়জামা, সাদা পাঞ্জাবি
আর গেরুয়া পাগড়ি মাথায়
হাতে একটি ছড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বেশ।
পায়ের কাছে ফুল সাজানো
আলপনা যে বড়ই সুন্দর এঁকেছে কেউ বেশ।
ধূপকাঠি কারা জ্বালিয়ে গেছে।
সুগন্ধে ভরা - খুশির পরিবেশ।
সে বলল, Hi, তুমি একলা কেন
দাঁড়িয়ে আছো?
অতি মিষ্টি হেসে তিনি হাত বাড়িয়ে
ডাকেন তারে কাছে।
প্রশ্ন করেন, কী নাম তোমার ভাই?
সে এগিয়ে আসে  - বলে, শহীদ আমার নাম।
- শহীদ! বাঃ, কী সুন্দর নামটি তোমার!
কে রেখেছে এমন প্রিয় নাম?
আমার ঠাকুরদা; স্বাধীনতা সংগ্রামী ।
- বাঃ, বেশ, বেশ।
এবার সেও প্রশ্ন করে, তোমার কী নাম দাদু?
হেসে তিনি বলেন, স্বাধীনতা।
- স্বাধীনতা! কী সুন্দর নাম গো তোমার!
জানো, আজ আমাদেরও স্বাধীনতা  দিবস।
আচ্ছা, তুমি তো বুড়ো মানুষ
তোমার জন্মদিন কবে মনে আছে?
মুচকি হেসে বলেন তিনি,
হ্যাঁ, - পনেরোই আগস্ট, ১৯৪৭ সাল।
- তাই! জানো, আমদের দেশও
স্বাধীন হয়েছে ঐ পনেরোই আগস্ট, ১৯৪৭ সালে।
দেখো, আমাদের দেশের আর তোমার
জন্মদিনটি একই। কী মজা! না?


ঠিক তখনই ওদিক থেকে
কেউ উঠল ডেকে,
বাচ্চারা সবাই এসো, লাইনে দাঁড়াও।
Flag hoisting হবে।
স্বাধীনতা দাদু বললেন, okay,
যাও, তোমায় ডাকছে, bye!
প্রধান অতিথি flag hoisting করলেন।

শহীদ দিব্য চক্ষে দেখলো -
স্বাধীনতা দাদুকে ওপরে তুলে
বেঁধে দিলেন প্রধান অতিথি।
স্বাধীনতা দাদু তিরঙা পতাকার মত হয়ে
উড়তে লাগলেন পত পত করে।
সকলে হাততালি দিল।
দেখাদেখি শহীদও দিলো তালি ।
স্বাধীনতা দাদু হাসছেন
আর হাত নাড়ছেন।
শহীদ স্পষ্ট যেন দেখতে পাচ্ছে।

অঙ্ক কষে দেখে শহীদ -
আজ হতেই ভোর,
আমাদের দেশের স্বাধীনতার মতই,
স্বাধীনতা দাদুরও বয়স হলো ৭৫ ।

ওদিকে -
সম্মিলিত কণ্ঠে শুরু হলো জাতীয় সঙ্গীত।
___________
 *স্বাধীনতা- ১০*
স্বাধীনতা সংগ্রামী সেই দুই নারী ও আমরা
 ডঃ রমলা মুখার্জী

ভারতের স্বাধীনতা-আন্দোলনে  পুরুষের সাথে নারীদেরও বিশেষ অবদান ছিল। কিন্তু অনেক নারীর কথাই ইতিহাসে লেখা নেই।
    চট্টগ্রামের রায়বাহাদুর পরিবারের মেয়ে কল্পনা দত্ত কলকাতা বেথুন কলেজের বিজ্ঞানের ছাত্রী থাকাকালীন স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যখন তিনি বাড়িতে আসতেন বোমা তৈরীর মশলা নিয়ে এসে তাই দিয়ে বোমা তৈরী করতেন। পুলিশের সন্দেহে বিপ্লবী পুরুষের সাথে বাইরে থাকতেও তিনি পিছপা হন নি। কিন্তু নাদিরা গ্রামে ধরা পড়ে তিনি ছ'বছর কারাবন্দী ছিলেন।
       আর একজন বীরভূমের স্বাধীনতা সংগ্রামী দুকড়ি বালা দেবী ছিলেন বিপ্লবী নিবারণ ঘটকের মাসিমা। বোনপোর দলে যোগদান করতে তিনি ইচ্ছুক হলে নিবারণ ঘটক বিপদের কথা ভেবে বারণ করলে তাঁর মাসিমা বলেছিলেন, "সন্তান যদি পারে তো মাও পারবে"। তিনি বিপ্লবে যোগদান করলেন। ১৯১৭ সালের ৮ই জানুয়ারি পিস্তল লুকিয়ে রাখার অপরাধে দুকড়ি বালাদেবীকে শিশুপুত্রকে ফেলে দুবছর সশ্রম কারাবাসে থাকতে হয়। জেলে অসীম নির্যাতন ও অমানুষিক পরিশ্রম সহ্য করেও তিনি বাড়িতে ভালো আছেন বলে চিঠি পাঠাতেন।
 স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়  নারীরাও এইভাবে নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে দেশমাতার মুক্তিতে অগ্রণী হয়েছিলেন।
   কিন্তু আমরা নারীরা আজ কি সেভাবে দেশের কাজে এইভাবে আত্মনিবেদন করছি! আর করলেও সেই সংখ্যা খুবই কম। সব পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, হানাহানি, হিংসা ভুলে আমরা নারী-পুরুষ মিলিতভাবে যদি দেশসেবার ব্রত নিই তবেই দেশের উন্নতি সম্ভব। দেশবাসীকে পথ দেখানোর সৎ অভিভাবকের আজ বড় প্রয়োজন। ফিরে আসুক সোনা-ঝরা দিন। স্বাধীনতা তোমাকে সেলাম। অনেকে রক্তে-রাঙা স্বাধীনতা ৭৫ তুমি স্বমহিমায় বিরাজ কর এই ভারতবর্ষে, তোমার বেদীতলে আভূমি প্রণতি।
_________
*স্বাধীনতা- ১১*
স্বাধীনতা
আর্যতীর্থ

স্বাধীনতা মানে প্রশ্ন করতে পারা,জবাব পাওয়াটা অতটা জরুরী নয়,
ভিড়ে মিশে যাওয়া দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব ছাড়া, স্বাধীনতা মানে শ্বাস নেওয়া নির্ভয়।

নিজের পছন্দে খাওয়া মানে স্বাধীনতা,আমিষ অথবা নিরামিষ ইচ্ছেতে
অমুক খাবারে শুরু হলে কটু কথা,তবে বাকি আছে স্বাধীনতা খুঁজে পেতে।

স্বাধীনতা মানে যাকে খুশী ভালোবাসা ,সাথীটি কেবল রাজি থাকলেই হবে
ধর্ম বর্ণ কাড়লে প্রেমের ভাষা, চুপ করে ভেবো, স্বাধীনতা পাবে কবে।

স্বাধীনতা মানে মায়ের ভাষার অভ্যেস, রোজনামচায় কুন্ঠাবিহীন রোজদিন
এমন আগামী ভাগ্যে আমার লোভ বেশ,কবে ও কোথায় শুধু সেটুকুর খোঁজ দিন।

যেসব বিষয় রাজার চোখের বালি,সেই সবও যদি বলা যায় নিশ্চিন্তে,
লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়া নয় খালি,স্বাধীনতা আমি সে সময় পারি চিনতে।

বসে আছি কবে আসবে আগামী দিন সে।
__________
*স্বাধীনতা- ১২*
স্বাধীনতা
রমিতা মজুমদার 

"স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়  রে 
কে বাঁচিতে চায়"।
কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় লিখে গেছেন।
কবি বাস করেছেন  পরাধীন ভারতে। মর্মে  উপলব্ধি  করেছেন পরাধীনতার  জ্বালা যন্ত্রণা। 

বাণিজ্য করতে এসেছিল ওরা। 
এসে দেখলো ধন সম্পদে অতিরিক্ত মাপের সম্পদশালিনী এক রমণী। তাঁর  দেহটি বিপুলকায়। অত্যন্ত রূপসী। স্নিগ্ধ সবুজ তাঁর গাত্রবর্ণ। 
তাঁর পরিধানের শাড়ির পাড় নদীর মত।
তাঁর অসংখ্য  সন্তান। 
তারা ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলে।
ভিন্ন রকম  পোষাক  পরে।
খাদ্যাভ্যাস ও তাদের ভিন্ন।

"কিন্তু উৎসবে ব্যাসনে চৈব",,,,আনন্দে দুঃখে সবাই একজন আরেকজনের পাশে থাকে।
তখন সমস্বরে চিৎকার করে, আমরা  ভারতীয় 
 We are Indian...

বাণিজ্য করতে এসে বিদেশী বণিকরা প্রেমে পড়ে গেল সেই সুন্দরী নারীর।

এত সম্পত্তি,  এত সুখ এখানে!
লুটে পুটে নিতে নিতে দেখল এদেশের লোকগুলো নিরীহ,  শান্তিপ্রিয়। 
বেনের জাত। বুদ্ধি তার পেটে পেটে।
বোকা লোকগুলোকে "দাস" বানানো শুরু করলো। জমি জমা কেড়ে নিয়ে ভুখা ভিখারী বানাল।
দেশের চতুর্দিকে শুরু হলো বিদেশী বেনের অত্যাচার, শনির্যাতন, নারী ধর্ষণ, শিশু কিশোরকে চাকর খাটানো। 
যার যা পৈতৃক সম্পত্তি আছে জমা করো। নইলে বিপদ।
এভাবে অত্যাচারিত হতে হতে সেই নিরীহ  মানুষগুলোর  হুঁশ ফিরতে লাগল।
আরে ! একি কাণ্ড! 
এরা কারা ! বাইরে থেকে এসে আমাদেরই ঘর ভাঙছে, ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই  করে দিচ্ছে!
আমাদের ঘর থেকে  সম্পত্তি  উজাড়  করে নিয়ে  তার ঘরে পাঠাচ্ছে!!!
না এমন তো চলবে না সাহেব। 
প্রস্তুত হতে লাগলো দেশের কিছু বীর সন্তান। 
এসো দেখি তুমি  কত মার মারতে পার।
আমরাও প্রস্তুত। 
আমার দেশের ধন রত্ন কত নেবে। তবে আর পারবে না।
এবার আমরা প্রস্তুত। 

সাড়া পড়ে গেল। আসমুদ্র  হিমাচল কেঁপে উঠলো।
তারা যে ভরসা করার  মত কাউকে  পাচ্ছিল না।
কে বাঁচাতে পারে  তাদের জীবন, তাদের সম্মান। 

এসেছেন  সেই কাণ্ডারী।  তাঁর  সাথে অনেকেই নেমে পড়েছে পরাধীনতার  গ্লানি থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করতে।
নেমে এলো হাজারে হাজারে ছেলেমেয়ে দল।
আমরা  প্রস্তুত। 
করেঙে  ইয়ে মরেঙে। 

ঘর ছেড়ে  বৈভব ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন সেসব বীর সন্তানগণ।

আর নয়।। অনেক করেছ। এবার গুটোও দেখি তোমার হাত। 
তোমার লোভে চকচক করা দুটি চোখ কিন্তু প্রয়োজনে আমরাও উপড়ে নিতে পারি।

শুরু হলো আন্দোলন। 
বৃটিশ রাজ যুদ্ধ করতে করতে পর্যুদস্ত। 
ঐ নিরীহ  মানুষ গুলি এত শক্তি ধরে।
উঃ, ক্ষতবিক্ষত করে দিলো যে!
হ্যাঁ, পালাও পালাও।।
নাহলে বাবামায়ের দেওয়া প্রাণটুকু আর রাখা যাবেনা।

পালালো।। সত্যিই ওরা  পালিয়ে গেল।

এলো  স্ব অধীন ভারতবর্ষ।
ভারতবর্ষ  সূর্যের এক নাম।

"উঠো গো ভারতলক্ষ্মী,  উঠো জগৎ জন পূজ্যা।"  

নূতন দেশ, নূতন সমাজ। নূতন সব কিছু।

বিভেদের মাঝে দেখ মিলন মহান
Unity in diversity
ভিন্ন ভিন্ন ভাষা, খাদ্য, পোষাক থাকলে কি হবে আমরা সবাই "এক"। 
আমরা  ভারতীয় ।
We are Indian

কিন্তু নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেল।
সাগরে  মিলে  গেল কত নদী।
ভারতবর্ষ নিজ অঙ্গ ছেদ করতে করতে এতদূর চলে এসেছে। 
আজ তাঁর  বয়স হলো পঁচাত্তর বছর।
খুব কি বেশি ?
না একেবারে কম তো নয় !

কিন্তু মুস্কিল হলো, এখন যে  তার সন্তানরা নিজেরাই  খেয়োখেয়ি করছে। এখনো  তার ধন সম্পত্তি গুছিয়ে নিচ্ছে তারই সন্তান!

কারো কারো সম্পত্তির হিসাব নেই আর কারো মুখে অন্ন জোটেনা।

এখনো কেউ কেউ নিজেকে রাজা মনে করে কাঙালের ধন হরণ করে।

চুরি করে, প্রতারণা করে, আরো যত খারাপ কাজ আছে সবই করে।
স্বাধীনতার মানে ওদের কাছে শুধু কাঙালকে কাঙাল করা আর চোরকে মদত দেওয়া। 

এ নয় সর্বজনীন স্বাধীনতা। 
মানুষ স্বাধীন ভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেনা।
নিজের কথা বলতে পারে না।
পরের হিত করতে গেলে জোটে লাঞ্চনা।
এসব কি স্বাধীনতার অর্থ?

এখনো জোর যার  মুলুক তার।
এখনো অন্ন বস্ত্র শিক্ষা স্বাস্থ্যর কিছুই  নেই সুব্যবস্থা ।

এসব স্বাধীনতা নয়।
এসবই তো পরাধীনতার লক্ষণ

এই স্বাধীনতা তো পরাধীন দেশের নেতা মন্ত্রী সাধারণ মানুষ চায়নি !
তবে কবে হবে সঠিক স্বাধীনতা দেশের, মানুষের!! 
কি জানি কি হবে
জানি না কিছুই ।
________

No comments:

Post a Comment