বহু রক্তক্ষয়ের পর স্বাধীনতা পেয়েছিলাম আমরা ৷ ঘটেছিল দেশ বিভাজন ৷ রাজনীতির পাশাখেলায় তারপর থেকে আমরা অর্থাৎ আম জনতা নানাভাবে পিষ্ট হতে হতে হয়তো আজ 'স্বাদহীন'ভাবে স্বাধীন রয়েছি ৷ এই স্বাধীনতা কতখানি পরাধীনতা থেকে মুক্তি আর কতখানি ক্ষমতার হস্তান্তর তা নিয়েও রয়ে গেছে বিতর্ক ৷ তবু আজকের দিনটা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ৷ তাই এই দিনটাকে উদযাপন করতে দেশজুড়ে গৃহীত হচ্ছে নানা কর্মসূচি ৷*
*আমাদের পদক্ষেপ পরিবারের পক্ষ থেকে আজকের দিনে পরিবারের সকলকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা ৷ পূর্বঘোঘণা অনুযায়ী আজ আমাদের এই পরিবারের যৌথ দেওয়ালে আয়োজিত হবে বিশেষ ইভেন্ট— "স্বাধীনতা" ৷ ইতিমধ্যে আপনাদের পাঠানো লেখাগুলো আমরা একে একে পোস্ট করব এখানে ৷ সেই ধারাবাহিকতা যেন ক্ষুণ্ণ না হয়, সেজন্য ইভেন্ট চলাকালীন গ্রুপটি অনলি অ্যাডমিন করে রাখা হবে ৷ আপনাদের অনুরোধ, ধৈর্য রাখবেন ৷ সাথে থাকুন ৷*
----+++---
স্বাধীনতা- ৪৯
আমরা স্বাধীন
নবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
আমরা স্বাধীন আঁধার রাতে,চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে।
ঘুমিয়ে সুখের স্বপন্ দেখি, দরজা জানলা বন্ধ রেখে।
দিনের আলোয় চোখ ঢেকে যায়, সানগ্লাসের কালো কাঁচে।
পাইনা দেখা যাদের জীবন, ফুটপাত আর গলির মাঝে।
আমরা স্বাধীন বেশ খেয়ালে, বৌ ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে।
যাত্রা নাটক থিয়েটারে, আয়েশ করি গোয়ায় গিয়ে।
চড়ছি দামী এ.সি গাড়ী, গরম শীতে আরাম করে।
হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে যারা, থাকনা তাঁরা পথেই পড়ে।
আমরা স্বাধীন রান্নাশালে, চিংড়ি ইলিশ মাংস ভাতে।
দুধের পায়েশ আর পোলাও, টাটকা আসল ঘিয়ের সাথে।
পায়না যারা এতটুকু ভাত, তাদের ভেবে কি লাভ হবে?
আমরা তো বেশ সুখেই আছি, জীবন গড়ি অবাধ ভাবে।
আমরা স্বাধীন ধর্ম নিয়ে, কর্মগুলো যাক রসাতল।
অর্থ আছে কষ্ট কিসের? পুষ্ট দেহ দুই বাহুবল।
অন্ধ পথিক মরছে মরুক, বাঁচবে তারা কোন অধিকার?
আবর্জনা সব ধুয়ে যাক, সমাজ বুকে কমুক না ভার।
আমরা স্বাধীন সাজ পোশাকে, সভ্যতা হোক নগ্ন খোঁড়া।
ভগ্ন হয়ে পড়ুক সমাজ, থাকনা তবু এমন ধারা।
তেরঙ্গা ঠিক একই আছে, রঙের মানে বদলেছে আজ।
নিঃশ্বাসে বয় বিষের বায়ু,মানবতায় পড়েছে বাজ।
------------------------
স্বাধীনতা- ৫০
স্বাধীনতার পতাকা
সুভাষচন্দ্র ঘোষ
শহরের ময়লাফেলা ছেলেটা স্বাধীনতা দিবসের জমকালো
প্রভাতফেরীর কাদামাখানো
জাতীয় পতাকাটা রাস্তা থেকে
তুলে,জলে ধুয়ে ল্যাম্পপোষ্টে
ঝুলিয়ে দিল। পতাকাটা সবচেয়ে
সুন্দর ভাবে উড়ছে।
----------------
স্বাধীনতা- ৫১
স্বাধীনতা
নারায়ণ চন্দ্র মজুমদার
ভারতবর্ষ ৭৫ তম স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করতে চলেছে। স্বাধীনতার ৭৫ তম বছরে পতাকা ঘরে ঘরে উদিত করে দেশ গড়ার মন্ত্রে নিজেকে উৎসর্গ এবং ত্রি- রঞ্জিত পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে, একজন ভারতীয় হিসেবে নিজেকে গর্বের সহিত গড়ে তুলতে চাই।
যাঁহারা দেশমাতৃকাকে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে পরাস্ত করে বুকের রক্তের বিনিময়ে হৃত গৌরবকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন , তাঁদেরকে জানাই আমার শতকোটি প্রণাম। সেই সব দামাল বীর সন্তান , স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষপূর্তি উদযাপনের পূর্ব লগ্নে, আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, নেতাজির সেই উদ্যত কন্ঠের আহ্বান," তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব" । মনে পড়ে সেইসব শত শত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাঁরা হাসতে হাসতে ফাঁসির দড়ি গলায় পড়েছিল।
হে স্বাধীনতা, আজ তোমার অলক্ষ্যে শতকোটি ভারতবাসী তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, তুমি কি আদর্শহীন মানবতাবাদ থেকে মুক্ত হতে পেরেছো? আজ মাতৃভূমি এক সৃষ্টি ছাড়া পরাধীনতার জাঁতাকলে পিষ্ট। দেশবাসী এক পংকিল আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে। নেতাজী সুভাষ, মাস্টারদা সূর্যসেন, বিনয় বাদল দিনেশ, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মাতঙিগনী হাজরা সবাই প্রশ্ন করছে !
সঙ্কীর্ণতা যেখানে সবকিছুর উর্ধ্বে ; - নারী নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ যেখানে পত্র পত্রিকার হেডলাইন , স্বাধীনতা সেখানে একটি প্রহসন মাত্র।
শিশু ভূমিষ্ঠ হয়ে তোমাকে যদি জিজ্ঞেস করে স্বাধীনতভাবে বেঁচে থাকার জন্য অবশিষ্ট কিছু রেখেছো কি? জানি, তুমি রবে নীরবে। কেননা তুমি নির্বাক, শুধু একটি শব্দ মাত্র- " স্বাধীনতা" । "যাহা পেয়েছি তাহা চাইনি, আর যাহা চেয়েছি তাহা চাইনি।"
আজ দেশমাতৃকাকে স্মরন করে সমস্ত দেশবাসী মন্ত্র মুগ্ধের মত তাকিয়ে আছে ঐ ত্রি- রঞ্জিত স্বাধীন দেশের পতাকার দিকে , আর বলছে বন্দে মাতরম ,জয় হিন্দ, জয় ভারত।
------------------
স্বাধীনতা-৫২
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর সাধারণ মানুষের চোখে দেশের অবস্থা
নরেন্দ্রনাথ নস্কর
ভারতের স্বাধীনতা পাবার পর প্রায় ৭৫ বছর কেটে গেছে। সেদিক দিয়ে এই বার ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস বলা যায়।
স্বাধীন ভারতের নাগরিক হিসাবে কি পেয়েছি বা কি পাইনি তার চুলচেরা বিশ্লেষন করতে এই লেখা নয়।
তবে রেডিও, টিভি, সংবাদপত্র ইত্যাদি দেখে ও পড়ে যা প্রতিফলিত হচ্ছে সেই নিয়ে কিছু কথা এখানে বলার চেষ্টা করব।
স্বাধীনতার বেশ কিছু বছর পর জন্ম এই পৃথিবীতে।
ছোটবেলায় দেখেছি স্বাধীনতা সম্পর্কে কি গভীর দেশাত্মবোধ মনে জেগে উঠত।
সিনেমার শেষেও দেখেছি জাতীয় পতাকা পর্দায় উড়ত। তখন দর্শকরা স্বতস্ফূর্তভাবে সবাই উঠে দাঁড়াত।
মানুষের মধ্যে বেশ মূল্যবোধ বিদ্যমান ছিল।
ছোটরা বড়দের যথা যোগ্য সম্মান করত।
তখনও মানুষের মধ্যে কিছু ভাল ও অনেক খারাপ মানুষ থাকত।
কিন্তু দিনের পর দিন ক্রমশ এই মুল্যবোধের অবনতি হতে থাকল।
খবর পড়ে যা দেখতাম, তখনও নেতাদের মধ্যে খারাপ ও ভাল দুটোই ছিল।
এখন এমন অবস্থায় পৌঁচেছে যে, দুর্নীতি যেন হয়ে থাকে, এই মনোভাব সহে গেছে।
টিভিতে দেখতে দেখতে মন খারাপ লাগে।
টিভি দেখলে, শাসন ব্যবস্থায় সাধারণের মনে বিতৃষ্ণা আসছে।
ভাল সত নেতা খুঁজতে, ঠগ বাছতে যেন গাঁ উজাড় হয়ে লাগছে মনে হয় ।
স্বাধীনতার জন্যে দেশপ্রেমিক যোদ্ধারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছিল, সেগুলো যেন কিছুটা হলেও ব্যর্থ মাঝে মাঝে মনে হয়।
নামেই স্বাধীনতা দিবস পালিত হচ্ছে।
কিন্তু সেই দেশপ্রেম, দেশাত্মবোধ আর তো সত্যি দেখিনা কার্যক্ষেত্রে।
দেখানোর মত, উদাহরণ দেবার মতো সত, ত্যাগী, সাহসী নেতাও এখন যেন বিরল।
ভাল মানুষদের অযথা হয়রানি অনেক সময় করা হচ্ছে।
দুষ্ট মানুষের দমন ও শিষ্ট নরনারীদের পালন এখন কথার কথা যেন।
খারাপ কাজের প্রতিবাদ করা এখন যেন অন্যায় মনে হয়।
তার পিছনেই নেতাদের রুষ্ট চক্ষু।
তাই প্রতিবাদ তার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
বেশিরভাগ শান্তিপ্রিয় মানুষ চুপচাপ থাকাই শ্রেয় মনে করছে।কারণ তাকে রক্ষা করার লোক খুব কম।
প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ না থাকায় দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
যার প্রাপ্য সে না পেলেও, কোথাও বলার বা শোনার মানুষ কম।
কত মানুষ যে বঞ্চিত হচ্ছে তার হিসাব পাওয়া মুশকিল।
বিনা প্রতিরোধে, ও প্রায় বিনা বাধায়, যেন দিনের পর দিন সমাজের অবস্থা খারাপ ও নিম্নগামী মনে হচ্ছে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও সাধারণের,বিশেষ করে সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র সত মানুষদের অবস্থা ও প্রাত্যহিক জীবন যাত্রা কেমন যেন সহ্যের বাইরে মনে হয়।
ইচ্ছা থাকলেও কিছু বলার উপায় ও জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না।
স্বাধীনতার প্রাপ্তি যেন, শুধু শাসন ক্ষমতার পরিবর্তন।
নামে একটা আইন বা সংবিধান আছে। সাধারণের জন্য তার সঠিক প্রয়োগ বা প্রতিফলন কোথায়?
জিনিস পত্রের দাম উর্দ্ধমুখি।
ক্রয় ক্ষমতা হয়ত আগের থেকে বেশ কিছু বেড়েছে।
কিন্তু মূল্য সাধারণের আয়ত্বের থেকে সরে যাচ্ছে।
সংবিধানে থাকলেও বাক স্বাধীনতা কোথায়?
মৌলিক অধিকার কি সত্যি বাস্তবে প্রতিফলিত হয় ?
একতা বাদ দিয়ে চারিদিকে কেমন যেন প্রাদেশিকতা, বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথা চাড়া দিচ্ছে।
এর কারণ কি?
ধর্ম ভাষা নিয়ে কেন এত বিভেদ, বিদ্বেষ? এর সমাধান কোথায়?
অখণ্ড ভারতবর্ষ সেই ভাবনা যেন শুধু সংবিধানে।
বিদেশী শাসকদের থেকে মুক্ত হয়ে এ কোন নতুন সমস্যা?
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বাসস্থানের অধিকার থাকলেও তার সত্যি মিলছে কতটা, তার পরিসংখ্যান কতটা বিশ্বাস যোগ্য, তার সঠিক মূল্যায়ন কে করবে?
শিক্ষিত বেকারদের কর্ম সংস্থানের নিশ্চয়তা কোথায়?
শোনা যায় ভারতের যা প্রাকৃতিক সম্পদ, তার সদব্যবহার হলে, দেশে দারিদ্রতা থাকার কথা নয়।
কিন্তু বাস্তবে কি হচ্ছে, কে বলবে?
সবার থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল দেশের মানুষের, ও শাসন ব্যবস্থার সততার সূচক।
উন্নত দেশগুলোর তুলনায়, ভারতের সূচক অনেক নিচে।
এই সূচক নাগরিক ও শাসন ব্যবস্থ্যার সততার মূল্যায়ন অনেকটা প্রতিফলিত হয়।
স্বাধীনতার এত বছর পরেও ভারত কেন উন্নত দেশ গুলোর কাছাকাছি যেতে ব্যর্থ?
তার উত্তর কোথায়?
মানুষ আশাবাদী।
তবুও হয়ত এমন এক দিন আসবে, যখন ভারতের সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে সবাই সত পথে চলবে।
শাসকরা সেবা, সততা দিয়ে নাগরিকদের সেবার সত্যি চেষ্টা করে যাবে।
দেখা যাক কি হয়?
সেদিন সত্যি হয়ত দেশপ্রেমিক স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্ন কিছুটা হলেও বাস্তবায়িত হবে।
----------------------
স্বাধীনতা- ৫৩
বিপন্ন স্বাধীনতা
আখতারি খাতুন
আজ ১৫ই আগস্ট আকাশে উড়ছে পতাকা
আজ নাকি স্বাধীনতা?
কোথায় স্বাধীনতা, কেমন স্বাধীনতা উত্তর খুঁজে পাইনি।
গরীবের রক্ত শোষণ করে অট্টালিকা বানায়
যে দেশে জাত-ধর্মের বিচার হয়
এটাই কি স্বাধীনতা?
যে দেশে খুনিরা বুক চিতিয়ে অবাদে ঘুরে বেড়ায়
নির্দোষীদের জেল হয়
চার বছরের শিশু,আশি বছরের বৃদ্ধাও ধর্ষণের হাত থেকে মুক্তি পায় না।
যে দেশে এখনো গ্যাং রেপ হয়
আসিফা কবর, টুইংকেল, নির্ভয়া'দের শ্মশান কাঁদে
ন্যায্য বিচারের আশায়
এটাই কি স্বাধীনতা?
যে দেশে যোগ্যতার বিচার হয় না
টাকার বিনিময়ে অযোগ্য রা যোগ্য হয়।
যোগ্য'রা পথে লুটায়,
ধর্মের দোহায় দিয়ে প্রকাশ্যে রাজ পথে
রক্তের হলি খেলে
মসজিদ ভেঙে মন্দির হয়।
এটাই কি স্বাধীনতা?
যে দেশে আইন নিজের হাতে তৈরী হয়
প্রশাসন খুনের কাজে যুক্ত হয়
আখলাখ,জুনায়েদ,পায়েলু খান,আফরাজুল,আনিস এর আত্মা এখনো কাঁদে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায়।
এটাই কি স্বাধীনতা?
ক্ষমতার অহংকারে অন্ধ হয়ে একদল অমানুষ
পুড়িয়ে মারে মানুষ
প্রতিবাদ করলেই টুটি চেপে ধরে, নয় তো জেলের ঘানি টানতে হয়।
মানুষ, কুকুর ডাসবিনে এক সাথে খাবার খায়
অমানুষ গুলো সিংহাসনে বসে লাল পানি হাতে নারী ভোগ করে।
এটাই কি স্বাধীনতা?
একবিংশ শতাব্দীর বিপ্লবীর
কণ্ঠে,কলমে প্রতিবাদের ভাষা ক্ষীণ হয়ে বের হয়
কিছু এলোমেলো অক্ষর জুড়ে নাম কমানোর চেষ্টা।
শাসকের পদতলে মানুষ পিষ্ট হয়
ধুসর গণতন্ত্র,স্বৈরাচারী হাতে স্বাধীনতা বিপন্ন
এটাই কি স্বাধীনতা?
------------------------
স্বাধীনতা- ৫৪
তিন রঙ
রাজকুমার ঘোষ
তোমরা কি ভাবো?
ভালোবাসার আছে কি অনেক রঙ!
তুমি কি ভালোবাসবে?
তুমি কি ভাবে ভালোবাসবে?
তুমি কাকে ভালোবাসবে?
তুমি কেন ভালোবাসবে?
সবই তো প্রকারভেদ...
তোমার ভালোবাসা একমুখী হবে
তাও তো তুমি নিশ্চিত নও..
মনে করায় গিরগিটিকে!
তবে রঙ দিয়ে বুঝিয়ে দাও
তোমার ভালোবাসার ধরণটি...
চলোনা সবাই মিলে আমরা আগামীকাল
তিন রঙ নিয়ে আগামীর স্বপন দেখি
নতুন রূপে, নতুন আবেগে
নতুন উন্মোচিত মনে
ভোরের মিষ্টি আলোয় নতুন দিন দেখি।
----------------------
স্বাধীনতা- ৫৫
স্বাধীন ভারত
অভিজিৎ দত্ত
স্বাধীন ভারত উচ্চারণ করতে
কার না ভালো লাগে
মনে হয়েছিল ভারত স্বাধীন হলে
দেশে উঠবে উন্নয়নের জোয়ার
থাকবে না বঞ্চনা,শোষণ, দূর্নীতি
বেকারদের হবে কর্মসংস্থান
গরীবেরা পাবে রুটি ও বাসস্থান।
তারপর দেখতে, দেখতে কেটে গেল
স্বাধীনতার পঁচাত্তরটি বছর
আজও কী গরীব মানুষ পেয়েছে
তাদের সব অধিকার?
আজও ভারতবর্ষে
ধনী ও গরীবের
কেন এত ব্যবধান?
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার
এখনও কেন হয়নি মৌলিক অধিকার?
ধর্ম নিয়ে হানাহানি
কেন এখনও বন্ধ হয় নি?
গৌরবজ্জ্বল স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন
কেন এখনও হয় নি পূর্ণ?
--------------------
স্বাধীনতা- ৫৬
স্বাধীনতার অর্থ কি আত্মউল্লাস!
শুভ্রা ভট্টাচাৰ্য
আজি ধ্বংস সুখের বিকৃত উল্লাসে
আমার স্বাধীনতায় সমগ্র বিশ্ব হাসে,
পোড়া বারুদের গন্ধ আকাশে বাতাসে
টাকার দহনেই আনন্দ ফুর্তিতে ভাসে।
তোমার মৃত্যুতেই আমার উৎসব
দেখি মনের অলিন্দে শত শত শব,
ক্ষমতার দাপটে সত্য বড় অসহায়
ন্যায়নীতিরা হলো বুঝি মৃতপ্রায়।
গলে আত্মত্যাগ ফুর্তির ফিউশানে
স্বার্থ বাঁচে উগ্র ঔদ্ধত্বের আস্ফালনে,
পোড়ে প্রেম প্রীতি হিংস্রতার দাবানলে
এ স্বাধীনতা শুধু চক্ষুধোলাইয়ের তালে।
দেশপ্রেমীদের মুখেতেই ফাঁপা বড়াই
পারেনি থামাতে কভু হিংসার লড়াই,
ওরা কখনও লাল কখনও হয় নীল
ওদের গিরগিটির সাথে বড়ো মিল।
ওদের অস্তিত্বে আমিত্বে সদা কলিসন
কক্ষচ্যুত আমিটার দিশাহীন রোটেশন,
তাই আত্মসুখের ওই আদিম উল্লাসে
আমার স্বাধীনতা আজ আমিত্বে ভাসে।
না জানি প্রকৃত স্বাধীনতা কারে কয়!
সে কি শুধুই ন্যায় নীতি ভাঙনময়!
প্রাণ প্রকৃতির কি অমর্যাদা অবক্ষয়!
নাকি স্বার্থ সুখের উল্লাসে আত্মময়!
দিকে দিকে দ্বেষ বিদ্বেষ সন্ত্রাস ভয়
মেকি ভাষণ তোষণে গালভরা বাঙময়,
ইগোর আস্ফালনে ভোগবাদের জয়
স্বেচ্ছাচার স্বৈরাচারে প্রকৃতি দূষণময়।
কিন্তু স্ব-অধীনতা বড়োই শৃঙ্খলাময়
আত্ম অনুশীলনে স্বশাসক হতে হয়,
মননে সততা মানবিকতা উদারতা রয়
তবেই দেশ ও দশ সর্বত্তোম কল্যাণময়।।
---------------
স্বাধীনতা- ৫৭
চিরকাল
মনোজ কুমার রায়
জানি! একদিন আমি হারিয়ে যাব--
চিরকাল থাকব না যে মায়াবী পথ খোঁজে।
সাজানো রঙ্গমঞ্চের স্থিরচিত্র হয়ে থাকব,
হেলায় পড়ে থাকা আসন লাগবে কাজে।
যন্ত্রের মত ইচ্ছের আকাশে উড়ে যাবে,
হয়তো তা জন্মের কোন অভিশাপ হবে।
চিরকাল বেঁচে থাকার স্বপ্ন হবে বৃথা --
সব কিছুই জেনে জীবনের বাস্তবিকতা।
পালিয়ে বেড়ায় যারা গুজব ছড়ায় তাঁরা,
অজানা বিষবাষ্পে ভরা শঙ্কায় দিশেহারা।
চিরকাল বেঁচে থাকার স্বপ্ন হবে বিপন্ন,
অলস মস্তিষ্ক নিয়ে গ্রাস করে যার নবান্ন।
ওদের বুঝিয়ে দাও প্রতিবাদের দরবারে,
চোখে চোখ রেখে যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ঝরে।
বৃথা জন্ম নিলে এই অরুণের বিন্ধ্যাচলে,
লুন্ঠিত রাত্রি মেলে আকাশের মুখ খুলে।
-------------------------
স্বাধীনতা- ৫৮
সত্য
আর্যতীর্থ
স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যে দেশ স্বাধীন করার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন,
সেই দেশ আমরা পাইনি। ইংরেজ বা জিন্নাহ, যেই হোক সে বিভাজনে ভিলেন,
ভারত, ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান, যে নামেই ডাকি, তার বয়েস মেরেকেটে পঁচাত্তর,
আর সিকিমের যোগদান ধরলে আজকের ম্যাপের জন্ম উনিশশো পঁচাত্তরে,
পাঁচ দশক আগে মাত্তর।
আড়াইশো বছর পিছিয়ে সিরাজদ্দৌলা থেকে শুরু যে ব্রিটিশের দখলদারির ইতিহাস
সেখানেও লর্ড ক্লাইভের কল্পনাতে এক আলাদা ভারতবর্ষের বাস,
বাহাদুর শাহ জাফরের ধারণাতে আজকের ভারত আর কি করে থাকতে পারে,
আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাড়ে পাঁচশো ছশো রাজ্য ছিলোই না তাঁর এক্তিয়ারে।
সমকালে দাঁড়িয়ে বোঝা মুশকিল আমাদের আগামীতে জন্মভূমি দাঁড়াবে কেমন।
কিছু আপাত নিরীহ সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে খুবলে নিতে পারে কোনো অঞ্চল যেমন,
তেমনি কিছু বহু সমালোচিত পন্থা মজবুত করতে পারে এখনো নড়বড়ে ভিতের জায়গাগুলোকে,
মোটকথা, ইতিহাসের নিয়ম মেনে ,
আজ থেকে কয়েক দশক পরে দেশটার মানচিত্র এখনকার থেকে আলাদা দেখবে ঠিক লোকে।
ভূখণ্ডের খণ্ড বা বৃদ্ধিতে কোনো সময়েই দেশের ধারণা ধাক্কা খাবে না,
যদি প্রতীক হয়ে ধ্রুবক থাকে জাতীয় সঙ্গীত, সংবিধান অশোক স্তম্ভ আর ত্রিবর্ণ পতাকা,
যাঁরা এতদিন ধরে প্রতিটি প্রজন্মে হয়ে আছে চেনা।
এই চারটি প্রতীক এইদেশে
হিন্দুর কাছে রামমন্দিরের চেয়েও প্রয়োজনীয়,
মুসলমানের কাছে কাবার মতো পবিত্র,
শিখের কাছে পঞ্চ‘ সাহিব’ এর সমান পূজনীয়,
খ্রীস্টানের কাছে ক্রুশের মতো চিরভরসার চিহ্ন
হওয়া চাই,
এঁদের বদলে দিলে আমাদের ইতিহাসও একেবারে ফাঁকা।
যিনিই শাসক হোন, তাঁর উচিৎ এ সত্য মনে গেঁথে রাখা।
---------------------
স্বাধীনতা- ৫৯
স্বাধীনতা
কান্তীশ
১ ।
এখানে ঝিরঝির ব্ঋষ্টিতে
জাতীয় পতাকা ভেজে ,
নাকি কান্নায়!
বছরের বাকি দিনগুলো অল্পাহারে ,অনাহারে ,
অবহেলায় যায়।
২ ।
জাতীয় পতাকা অনেক উঁচুতে ,
পতপত ওড়ে তাই ,
দ্রব্যমূল্য সেও উঁচুতেই ,
অনাহারে কাটে ভাই ।
৩ ।
সাইরেন গাড়ী, নেতা ছুটে যায়,
পথ করা হয় ফাঁকা ,
সাইরেন গাড়ী,রোগী ছটপট ,
গড়ায় না তার চাকা ।
৪ ।
রাষ্ট্রনেতার পেনশন আহা !
সব হয়ে যায় সই ,
রাষ্ট্ররক্ষী পেনশন চায় !
এত এত টাকা কই ?
৫ ।
ছোট ছোট চোর পুলিশেই ধরে ,
চমকায় ধমকায়,
বড় বড় চোর আহা আহা আহা
পুলিশ-সুরক্ষা পায় !
৬ ।
ঘরে ঘরে নাই অন্নবস্ত্র
ঘরে ঘরে কাজহীন ,
ঘরে ঘরে ওড়ে জাতীয় পতাকা
হয়ে গেছি স্বাধীন ।
৭ ।
হরে কেষ্ট হরে কেষ্ট
কেষ্ট কেষ্ট হরে হরে,
গরীবের টাকা লুটপাট হয়ে
জমে নেতাদের ঘরে ।
৮ ।
নেতা বলে ,ঘুষ দাও ,
চাকরি তো বাঁধা ,
যে জন না দিতে পারে
তাকে বলি গাধা ।
৯।
স্বাধীন গাড়ী সে ফুটপাতে ওঠে
ফুটপাতে থাকা দায় ,
ফুটপাতবাসী মরে গাড়ীতলে
ড্রাইভার ছাড়া পায় ।
১০ ।
শাড়ীর ওপরে বুক ছুঁয়ে দিলে
সেটা ঠিক ছোঁয়া নয় ,
শ্লীলতাহানির বিচারে এসব
মনিমাণিক্য কয় ।
---------------------
স্বাধীনতা- ৬০
আমার স্বাধীনতা তোমার স্বাধীনতা
কার্ত্তিক মণ্ডল
আমার স্বাধীনতা-------
ডাস্টবিনে খোঁজে প্রাণ বাঁচানোর খাদ্য
তোমার স্বাধীনতা-------
কাবাব বিরিয়ানী বিদেশের দামি মদ্য ।
আমার স্বাধীনতা-------
লজ্জা সম্ভ্রম ঢাকে শত ছেঁড়া বস্ত্রে
তোমার স্বাধীনতা--------
শান দাও শুধু ফেলে রাখা ভোঁতা অস্ত্রে ।
আমার স্বাধীনতা-------
রোদে পুড়ি জলে ভিজে থাকি দিবারাত্র
তোমার স্বাধীনতা--------
পাথর বিছানো স্বর্গ সুখের গাত্র ।
আমার স্বাধীনতা-------
পরের বাড়ির চাকর ঝি'এর বৃত্তি
তোমার স্বাধীনতা-------
রক্ত শোষক আত্ম সুখের ফুর্তি ।
আমার স্বাধীনতা-----
বিচারের দোরে মাথা কুটে বারবার
তোমার স্বাধীনতা------
বিচারের বাণী নিভৃতে কর চুরমার
আমার স্বাধীনতা-------
ক্ষুদ্র এ বুকে সবারে আপন করে
তোমার স্বাধীনতা------
হিংসা বিবাদ ভ'রে দাও থরে থরে ।
আমার স্বাধীনতা-----
থাকুক এ বুকে সুখে দুখে ভালোবেসে
তোমার স্বাধীনতা-----
লোলুপ কসাই চাই না আমার দেশে ।
----------------------
No comments:
Post a Comment