বহু রক্তক্ষয়ের পর স্বাধীনতা পেয়েছিলাম আমরা ৷ ঘটেছিল দেশ বিভাজন ৷ রাজনীতির পাশাখেলায় তারপর থেকে আমরা অর্থাৎ আম জনতা নানাভাবে পিষ্ট হতে হতে হয়তো আজ 'স্বাদহীন'ভাবে স্বাধীন রয়েছি ৷ এই স্বাধীনতা কতখানি পরাধীনতা থেকে মুক্তি আর কতখানি ক্ষমতার হস্তান্তর তা নিয়েও রয়ে গেছে বিতর্ক ৷ তবু আজকের দিনটা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ৷ তাই এই দিনটাকে উদযাপন করতে দেশজুড়ে গৃহীত হচ্ছে নানা কর্মসূচি ৷*
*আমাদের পদক্ষেপ পরিবারের পক্ষ থেকে আজকের দিনে পরিবারের সকলকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা ৷ পূর্বঘোঘণা অনুযায়ী আজ আমাদের এই পরিবারের যৌথ দেওয়ালে আয়োজিত হবে বিশেষ ইভেন্ট— "স্বাধীনতা" ৷ ইতিমধ্যে আপনাদের পাঠানো লেখাগুলো আমরা একে একে পোস্ট করব এখানে ৷ সেই ধারাবাহিকতা যেন ক্ষুণ্ণ না হয়, সেজন্য ইভেন্ট চলাকালীন গ্রুপটি অনলি অ্যাডমিন করে রাখা হবে ৷ আপনাদের অনুরোধ, ধৈর্য রাখবেন ৷ সাথে থাকুন ৷*
----+++---
স্বাধীনতা- ৩৭
আজাদী কা অমৃত
হাবিবুর রহমান
স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর।
'আজাদিকা অমৃত ' উৎসব পালন হচ্ছে সাড়ম্বরে।
উদ্বাহু ভারতবাসী,আহা কী মজা, কী মজা!
বিশ্বের দরবারে বাড়ছে ইন্ডিয়ার সুনাম।
আমরা এখন বিগ পাওয়ার।
আমি ভারতবাসী,
ফুলছে ছাতি ছত্রিশ ইঞ্চির বেশি।
সাবাস আমার দেশ,'আজাদী অমৃত' বেশ বেশ।
কিন্তু বেসুরো কেন যুবক বৃদ্ধের অধিকাংশ।
দেশের অভ্যন্তরে হতাশার রেশ।
চাকরিনেই,দুর্নীতি,বাজারমন্দা,মূল্য আকাশ ছোঁয়া,
নিত্য ব্যবহার্য-এ সাধারণের হাতে লাগছে সেঁকা।
গোদের ওপর বিষফোঁড়া -
রাম রহিমে ষাঁড়ের লড়াই।
পাশাপাশি বাস,অথচ এসেছে অবিশ্বাস।
জিজ্ঞেস করুন ওমর চাচাকে,পালন জেঠুকে।
শেকল ভাঙার গান গেয়ে,এক চটাইয়ে শুয়ে,
ওরা ছিনিয়েছিল আজাদীকে।
নিশ্চয় এ আজাদী দেখার জন্যে নয়।
ধন ধান্যে পুষ্পেভরা ' ভারত' নামের বসুন্ধরা,
ফিরিয়ে দাও ক্ষমতাধারিরা।
সেটাই হোক আজাদির অমৃত মহোৎসব।
ভেদভাও ভুলে সম্প্রীতির চাদরে মিলিয়ে দাও সকলকে।
---------------
স্বাধীনতা-৩৮
জন্মদিনে স্বাধীনতা
মৌমিতা চ্যাটার্জ্জী
স্বাধীনতা,
আজ তোমার জন্মদিন।
তুমি পা রাখলে শুভক্ষণের দোরে,
স্বাধীনতা!
তুমি সত্যিই হয়েছ স্বাধীন?
স্বীকার করো পঁচাত্তরের ভোরে।
স্বাধীনতা,
তোমায় গর্ভে ধরেছিল যাঁরা,
যাঁদের রক্তে বেড়েছিল তোমার প্রাণ,
মনে রেখেছ, তুমি তাঁদের ইতিহাস?
সম্মান কর? তাঁদের আত্মবলিদান!
স্বাধীনতা,
তোমার শরীরে কেন অত বারুদের গন্ধ?
দেখছ? পথে কেমন ওড়ে
মা-বোনেদের ইজ্জতের ধ্বজা!
ক্লেদাক্ত, রক্তচক্ষুর আস্ফালনে তোমার মুখ কেন বন্ধ?
স্বাধীনতা তুমি বলতো, স্বাধীন হওয়া কি অতই সোজা?
স্বাধীনতা,
তুমি শুনতে পাচ্ছ?
শিক্ষিতের তকমাধারী,
অশিক্ষিত ভ্রষ্টাচারীর
অহংকারী নিনাদ!
শিক্ষার পদদলন,অনায়াসে এড়ায় তোমার চোখ,
তুমি নিশ্চুপ!
গর্জে উঠে করোনা তো প্রতিবাদ,
বৈষম্যের ছুরিকাঘাতে নিহত প্রাণের প্রতি,
তোমার নেই এতটুকু শোক।
স্বাধীনতা,
তোমার রক্তাক্ত শিক্ষাভূমি,
স্বার্থপরতা রন্ধ্রে বেঁধেছে বাসা,
কর্মহীনতার শিকার আজ সজীব উদ্যমী,
প্রায় ধূলিস্যাৎ আগামীর যত আশা।
স্বাধীনতা তোমার অট্টালিকায় বাস,
ক্ষমতার বশে পুঁজিপতিদের মুষ্ঠি,
ভরিয়ে দিচ্ছ,অবাধে কাড়ছ শুধু,
দুঃখিনী মায়ের শেষ অন্ধের যষ্ঠি।
স্বাধীনতা,
তুমি শিখন্ডী প্রতিরূপ,
বাতাস মুখর আত্মপ্রচারী ঢাকে,
অসহায় জাতি-পায়না বিচার সুখ,
লজ্জা লুকায়,প্রহসনেরই ফাঁকে।
স্বাধীনতা,তুমি রাজা ও রানীর দাস,
প্রভাব, মনুষ্যত্বের চেয়েও দামী।
হিংসার আগুন পোড়ায় তোমার লাশ,
তুমি,লক্ষ্যভ্রষ্ট,ভ্রান্ত বিপথগামী।
----------
স্বাধীনতা- ৩৯
অন্তর ও বাইরে স্বাধীন
পারমিতা সরকার
অন্তর থেকে আমরা জন্ম স্বাধীন। কেবল উপলব্ধি করার পথ জানা চাই। একবার যে স্বাধীনতার বোধদয় হলে সেই মানুষটার হাতে পায়ে শেকল পড়ায় সেই সাধ্যি কারোর নেই। মূলত আধ্যাত্মিক চৈতন্য জাগরণের উপর ভিত্তি করে এই বোধদয় আমাদের আসতে পারে। আন্তরিকভাবে স্বাধীনতা বোধ না থাকলে যেকেউ যেকারোকে পরাধীন করে ফেলতে পারে। কারণ স্বাধীনতার দৃঢ় বোধ একমাত্র মানুষকে প্রেরণা দেয় তা যেকোনো মূল্যে অর্জন করতে এবং অন্যের সাতন্ত্রে হস্তক্ষেপ না করতে। ভিত্তিগতভাবে আমি বা আমরা স্বাধীন হলে আমায় বা সামগ্রিক জাতিকে কেউ পরাধীন করে চাবুক চালায় কীভাবে? এই চৈতন্য যখন আসে তখনই স্পর্ধা হয় নিজে হাতে চাবুকটা শোষকের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ফেলে দেবার এবং অবশ্য তা নিজে হাতে তুলে না নেওয়া। ততকালীন ইংরাজ সরকারের কুশাসন কি অধুনা বিচ্ছিন্নতাবাদে দুষ্ট জাতীয়তাবাদ মানুষের অন্তর্জাগরনের অন্তরায় হতে পারেনি ও পারবে না। চেষ্টা করলে স্বাধীনতা বোধ প্রাপ্তি ও তার সামাজিক অর্জন করা অবশ্য সাধ্য।
১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা আজ প্রবীণ। কিন্তু সমসাময়িক বিবিধ পরাধীনতার বন্ধন ভেঙে বেরনোর স্বাধীনতার বয়স কতো? নিজের নিজের ক্ষেত্রে অচলায়তন ভেঙে বেরনোর লড়াইটা সৎ উপায়ে করছি তো? নাকি ৭৫ বছরের এক প্রবীণের জন্মদিনে পায়েস ছেড়ে কেক কাটছি? স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে তার উদযাপন করার সাথে নিজেদের জীবন দশায় যে অসীম সম্ভাবনা আরো অনেক পরাধীনতা থেকে জাতিকে মুক্ত করবার তার দায়িত্ব পালন করছি তো? নিরন্তর নিজেকে তপ্ত করা প্রশ্নের সাথে পাঞ্জা লড়ে স্বাধীনতার উপলব্ধি প্রয়োজন।
ঋষি অরোবিন্দ জেলের কুঠরীতে সেই আধ্যাত্মিক মুক্তি পান ও তার লেখনী বহু যুবককে সক্রিয় স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্ভুদ্ধ করে। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো নিজের স্বরূপ জানলে মানুষ আর নিজেকে প্রকান্ড ভেবে অন্যকে নীচু করবে না আবার নিজেকে কেবল ক্ষুদ্র মনে করে অন্য কারোর কাছে অনবদমিত হয়ে থাকবে না। নিজেকে জানার পর চরম অথবা নরম যেকোনো পন্থায় পরাধীনতার বন্ধন ভেঙে বেরনো অসম্ভাবি। এই সময় সাপেক্ষ লড়াইয়ের অন্তে যে পথ বেরোয় তা দীর্ঘদিন মানুষের মনকে শৃঙ্খল মুক্ত করে রাখতে পারে।
স্বাধীনতা শব্দটির অতিসরলীকৃত একটি কুরূপ হল স্বেচ্ছাচার। আমাদের আচরণের মধ্যে আচার বিচার অনাচার স্বেচ্ছাচার এইগুলোকে চিহ্নিত করে আত্মসংযম করে নিতে পারলে আমরা প্রকৃত স্বাধীনতার সন্ধান পেতে পারি। তখন অন্তর ও বাইরে সর্ব অর্থে আমরা কেবল স্বাধীন মানুষ হব। তখন বৈচিত্রের মধ্যে অনৈক্য নয়, ভেদ নয়, নতুনত্বের আনন্দ খুঁজে পাবো ও তা আলিংগন করার প্রেরণা পাবো।
-------------------
স্বাধীনতা- ৪০
আজাদীর ৭৫ বছরে ও স্বাধীনতার মানে খুঁজে চলেছি
বটু কৃষ্ণ হালদার
ছোট বেলা থেকে ঠাকুরদা নয় তো ঠাকুরমার কাছে ঘুমাতাম। আমি, বোন,দিদি তিন জনেই শুধু মাত্র গল্প শুনবো বলে। স্কুল ছুটির দিন হোক বা রাত্রি তে, ঠাকুমার মুখে ভূতের কিম্বা ঠাকুমার ঝুলি র গল্প না শুনলে ঘুম আসতই না। তবে ঠাকুরদার মুখ থেকে প্রথম শুনি দেশ স্বাধীন হওয়ার কথা। কত দেশ বীরেরা ফাঁসি কাঠে ঝুলেছিল। আন্দোলন করতে গিয়ে রক্তে রঙ্গিন হয়ে উঠেছিল ভারত মায়ের আঁচল। দেশবীর ক্ষুদিরাম এর কাহিনী বলতে বলতে ঠাকুর্দার চোখে জল চলে আসতো। আমি মোহিত হয়ে শুনতাম। স্বাধীনতা দিবসের আগে প্রায় সবার মুখে মুখে"এক বার বিদায় দে মা ঘুরে আসি"গান টা শোনা যেত। বাবা সময় পেলে ওই গান টি গাইতেন। ভগৎ সিং, বিনয়, বাদল, দীনেশ, বাঘা যতীন, প্রফুল্ল চাকী, মাতাঙ্গিনি হাজরা, মাস্টার দা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কানাইলাল প্রমুখ দেশ বীর দের কাহিনী শুনেছিলাম ঠাকুরদার মুখ থেকে। আমার পড়াশুনা ছিল গ্রামের স্কুলে। নাম পাঠান খালি আদর্শ বিদ্যা পিঠ। ফাইভ, সিক্স থেকে পছন্দের বিষয় ছিল ইতিহাস। ক্লাস এইট এর ইতিহাস শিক্ষক ছিলেন সুবল জেঠু, উনি দেশের কথা, বীর সৈনিক দের কাহিনী গুলি খুব সুন্দর ভাবে বলতেন গল্প করে। উনি শিখিয়ে ছিলেন দেশ কে ভালো বাসতে। নীল চাষী দের উপর ব্রিটিশদের অত্যাচারে কাহিনী শুনিয়েছিলেন। কি ভয়ঙ্কর, নিপিড়ন করত তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। উনি যেদিন জলিয়ান ওয়ালা বাগের কাহিনী পড়াচ্ছিলেন সেদিন সারা শরীরের লোম খাড়া হয়ে গিয়েছিল। কিভাবে এত মানুষ কে নিশংস ভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল? সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। ইস যদি সে সময়ে আমার জন্ম হতো আমি ও ইংরেজ দের মেরে দেশের জন্যে নিজেকে উৎসর্গ করতাম। আজও নেতাজি সুভাষ এর কথা খুব মনে পড়ে। যে দেশের জন্যে নিজেদের কে উৎসর্গ করেছিলেন সেই দেশ আজ যোগ্য মর্যাদা টুকু ও দেয়নি। কিছু আদর্শ হীন নেতাদের দৌলতে কনিষ্ঠ দেশ নায়ক ক্ষুদিরাম বসু ইতিহাসে "সন্ত্রাসবাদী" তে আখ্যায়িত হয়েছে। ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছে জাগতিক নিয়মের অনুসারে তার মৃত্যু দিবস পালিত হচ্ছে বটে,কিন্তু কেনো তাকে সন্ত্রাসবাদী তে আখ্যায়িত করা হলো তার প্রতিবাদ কেউ করেনি।
একটু বড় হতে স্বাধীনতা সম্বন্ধে ধারণাটা পাল্টে গেলো।এখন দেখি ১৪ আগস্ট রাত বারোটা পার হতেই অনেক জায়গায় পতাকা উত্তোলন চলে।এর পর শুরু হয় উল্লাস।সকাল হতেই মদ আর মাংসের দোকানে দেদার লাইন।যারা পতাকা উত্তোলন করে তাদের অনেকের হয় তো স্বাধীনতা,শহীদ শব্দটি সম্বন্ধে এতটুকু ধারণা নেই।আমরা কি এমন স্বাধীনতা চেয়েছিলাম?নিঃস্বার্থ ভাবে এক শ্রেণীর জনগন নিজেদের জীবনের বিনিময়ে স্বাধীনতা দিয়ে দেশ কে স্বার্থপর দের হাতে তুলে দিয়ে গেলো। যারা পতাকা উত্তোলন করে তাদের দ্বারা শহীদদের মূর্তি ভাঙা,পতাকা পোড়ানো,ট্র্যাডিশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।দেশের জাতীয় সংগীতের প্রতি অনীহা দেখা দিচ্ছে।দেশ তো স্বাধীনতা পেল,কিন্তু চিন্তা ধারায় কোন পরিবর্তন আসেনি।এসব দেখে মনে হয় ছোট বেলায় স্বাধীনতা পালন ছিল অনেক বেশি আনন্দের।
বর্তমান সময়ে এসে আমরা আজকে যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে সম্মুখীন হচ্ছি,তাতে বলা চলে ব্রিটিশ ফিরে এসো দাসত্ব আমার জন্মগত অধিকার।কারণ স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশরা স্বপ্ন, আশা,ভরসা,স্বাধীনতা,সবকিছু লুট করে নিয়ে গিয়েছিল। স্বাধীনতার পরে আমরা ভারতবাসী হিসাবে দেশকে কি দিয়েছি? ব্রিটিশরা নিয়ে গেছে অনেক কিছুই কিন্তু দিয়ে গেছে জ্ঞানের আলো, সেই শিক্ষা ব্যবস্থাকেও আমরা ধ্বংস করে ফেলেছি।এর পরে ও বলবেন ব্রিটিশরা খুব খারাপ। একটা কথা মাথায় রাখবেন ব্রিটিশরা এসেছিল বলেই ভারতবর্ষের মানুষ সভ্য হতে পেরেছে, প্যান্ট জামা,,শুট, বুট পরতে শিখেছে। নইলে আন্দামানের জারোয়ারদের মতো আজও তারা উলঙ্গ ভাবে বসবাস করত।
আগামীকাল স্বাধীনতা দিবস।স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে আমরা সাধারণ মানুষ যারা, তারা কি প্রকৃতই স্বাধীনতা পেয়েছি?আজ যারা দেশ সেবক তারা কি সত্যিই চায়, সাধারণ মানুষ স্বাধীনতা ভোগ করুক?
না চায় না, সবাই চায় নাম, প্রতিষ্ঠা।চৌদ্দ পুরুষের জন্য কিছু কামিয়ে নেওয়া আর বড় বড় বচন ঝেড়ে নেতা হওয়া।সত্যি কারের কজন দেশ সেবক নেতা আছে, যে সাধারন লোকের পরাধীনতার জ্বালা অনুভব করবে? বর্তমান সময়ে পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক নেতাদের অবস্থা দেখে দেখে উপলব্ধি করা যায় যে,কেন আজও ভারতবর্ষে উলঙ্গ জারোয়া ঘুরে বেড়ায়।আজাদীর ৭৫ বছর পরেও সমাজের একশ্রেণীর মানুষ স্বাধীনতার মানে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কারণ যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি তা দেশবাসীর পক্ষে যথার্থ নয়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা মানে বড়লোকদের কাছে উল্লাস আর গরিবদের কাছেঅত্যন্ত দুঃখের।শুধু তাই নয়,আমরা স্বাধীনতা পাবার সঙ্গে পেয়েছি দেশভাগ।ঠিক তার এক বছর আগে অর্থাৎ ১৯৪৬ সালে পেয়েছি রাজনৈতিক ক্ষমতার লোভে নিরীহ হিন্দুদের বলি হওয়ার যন্ত্রণা।
স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরে চলেছে স্বাধীন ভারত নির্মাণ সঙ্গে সঙ্গে ৭৫ বছর ধরে চলেছে দেশভাগের বলি ছিন্নমূলদের উদ্বাস্তু জীবনসংগ্রাম, নূতন মাটিতে টিকে থাকার লড়াই। বিশেষত উত্তর-পূর্ব ভারতে ছিন্নমূলদের উপর এসেছে রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক আঘাত অভিঘাত,এসব প্রতিকূলতার সাথে মোকাবিলা করে অসম লড়াই করে যাওয়ার ঐতিহ্য নিয়ে ছিন্নমূল জীবনযাপন।
--------------------
স্বাধীনতা- ৪১
হর ঘর
আর্যতীর্থ
হর ঘর কাজ কর , বলো স্বাধীনতা,
সব পেট শিখে নিক স্ব-অধীনতা।
যতদিন অনুদানে মিটে যাবে খিদে
মগজের পরাধীন থাকলে সুবিধে।
হর ঘর অক্ষর, শিক্ষার আলো,
স্বাধীনতা , এসো তুমি সে প্রদীপ জ্বালো।
আলেয়াকে আলো ভেবে ঘুরে মরে যারা
কোন পথে রোদ্দুর বুঝে যাক তারা।
হর ঘর ঈশ্বর হোন ফিস স্বর
ধর্ম চেঁচালে হয় দেশ নিঃস্বর।
মাইক লাগে না কোনো পুজো বা আজানে
ক্ষমতা দেখানো ওটা উপাসনা ভানে।
হর ঘর নারী নর একই মান পাক,
একটি বা দুটি শুধু শিশু জন্মাক।
‘ বেটি সরাও’ থেকে ভাবনা উঠুক,
যে কটি কন্যাভ্রুণ, সবাই ফুটুক।
হর ঘর সব স্বর ভোটে যাক শোনা,
আর নয় হেরোদের ঘরে লাশ গোনা।
স্বাধীনতা ,বলো তুমি নেতাদের গিয়ে
স্বাধীনতা বোঝা যায় বিরোধিতা দিয়ে।
হর ঘর পাক খড় কুটিরের চাল,
রাস্তায় কারো যেন না হয় সকাল।
নিজের ঘরেই পাতা শয্যাতে শুয়ে,
সব লোক ঘুম যাক খেয়ে হাত ধুয়ে।
হর ঘর গড় হোক দেশ-প্রেমীর
চিনে নেবে খালে ভাসা সকল কুমীর।
ধর্মের ভেদে নয় আমি আর তুমি,
সে আমার সাথী যার এ জন্মভূমি।
হর ঘর অ-খবর হোক শুধু ঠোঙা,
যত ফেক টিপ করে ফুঁকে যাক চোঙা।
হর ঘর তবে যাবে এ প্রিয় তেরঙা….
---------------------
স্বাধীনতা- ৪২
প্রজন্মের এ কেমন স্বাধীনতা!
শুভ্রা ভট্টাচার্য
না জানি এ কোন স্বাধীনতার ভোর!
প্রজন্মের চোখে উৎশৃঙ্খলতার ঘোর,
স্বাধীন ডানায় ওড়ার স্বপ্ন দুচোখে ভর
বিবেচনাহীন কর্মে ভূলুণ্ঠিত অতঃপর।
অতি স্বাধীনতায় সবেতেই তড়িঘড়ি
সময়ের পরে ওরা নাহি কিছুই ছাড়ি,
চাহিদা মেটানোতে যত কিছু বাহাদুরি
অবশেষে হতাশা অবসাদে মরি মরি।
কভু না পাওয়াকেও দিতে হয় মান্যতা
তবেই মননের সাথে বাড়ে সু-সখ্যতা,
কিছু ত্যাগ কিছু ছাড়াতে খোঁজ সুখ
নইলে প্রাণে অতৃপ্তি আর অসীম দুখ।।
এ প্রজন্মেরা চটকদারি সুখ অন্বেষণে
তন্ত্র বুজরুকি তাবিজ কবজের শিকার
হাতে রঙের পাথর, পায়ে কালো কার
এরপরও পোশাকে গর্জন স্বাধীনতার!
অতি আধুনিক অশালীন কুরুচিকর
অতি রঞ্জিত বহুরূপীসম তাদের সাজ,
দেখনদারি আলগা চটকে উৎশৃঙ্খলে
সোশ্যাল মিডিয়ায় করছে ভীষণ রাজ!
স্বাধীন চিন্তনে"কি খাই কি পরি"পোস্ট
অভাবীর লালানিঃসরণ হয় নাকো রোধ!
অপরের তরে ভাববার কোথা অবকাশ!
পরিশেষে আত্মমগ্নতায় নিরাশা বোধ।।
হায়রে নব প্রজন্ম! হায় রে যুবশক্তি!
তোমরা স্বাধীনতার মানে বুঝলে না!
আরাম আয়েসে পেতে চাও সব সুখ
জীবনসংগ্রামের ময়দানে নামবে না,
শিক্ষা নম্বর চাকরি রুজি রোজগার
মুফতে পাওয়ার অন্যায্য কত বায়না!
আত্মসুখে ভুলেছো মহতী অমরবাণী
"কষ্ট না করিলে কভু কেষ্ট মেলে না"।
শক্তি ও ভরের মতো জেনো সব নিত্য
জীবন-প্রথমাংশে করো লড়াই সংগ্রাম,
জীবন শেষের পথটি হবে মসৃণ সমান
আত্মশাসনে সংযমতায় সুকর্মের দাম।।
স্বাধীনতার অপব্যবহারে দুঃখ পরাজয়
হৃদয়ে ন্যায় নীতি আদর্শেরা ভাঙনময়!
অধুনা প্রাণ প্রকৃতির অমর্যাদা অবক্ষয়!
আমি তুমি স্বার্থসুখের উল্লাসে আত্মময়!
তাই চারিদিকে দ্বেষ বিদ্বেষ সন্ত্রাস ভয়
মেকি ভাষণ তোষণে গালভরা বাঙময়,
মিছে ইগো আস্ফালনে ভোগবাদের জয়
স্বেচ্ছাচার স্বৈরাচারে প্রকৃতি দূষণময়।।
কিন্তু স্ব-অধীনতা বড়োই শৃঙ্খলাময়
আত্মঅনুশীলনেই স্বশাসক হতে হয়,
মননে সততা মানবিকতা উদারতা রয়
তবেই দেশ ও দশ সর্বত্তোম কল্যাণময়।।
---------------
স্বাধীনতা- ৪৩
আমার বাড়ি
নীপবীথি ভৌমিক
চোখ বন্ধ করে রেখেছি, চোখের আরাম বুঝে।
শব্দ ঢোকে না কানে, সেতো অনেক দিন !
তবে চোখে দেখি। দৃশ্য থেকে নয়!
দৃষ্টি দিয়ে। শব্দ শুনি। আওয়াজ শুনে নয়।
হৃদয় দিয়ে।
আমার মায়ের নাম ভারতী
পিতা রহমত শেখ, ভাই তেনজিং, বোন বর্ষা,
ওকে সবাই বর্ষ নামেই চেনে।
আমার বাড়ির নাম ভারতবর্ষ
আর রক্তের রং ভালোবাসা।
-----------------
স্বাধীনতা- ৪৪
স্বাধীনোত্তর ভারত
মেরী খাতুন
মানুষের জীবনে স্বাধীনতার থেকে বড় কিছু নেই। দেশ স্বাধীন হলেই মানুষের সর্বাধিক উন্নতির পথ প্রশস্ত হয়ে যায়। কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় তাই বলেছেন----- স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়। দাসত্ব শৃংখল বল কে পরিবে পায় হে, কে পরিবে পায়?"
পুরাতনের বিদায়ের মধ্যে দিয়েই ঘটে নবীনের আগমন। পুরনো শতকের সুখ-দুঃখ, জয়-পরাজয়, হাসি-কান্না ভুলে স্বাগত জানাতে হবে নতুন শতকেকে। নতুন শতক নতুন আশা-উদ্দীপনায়, প্রাণ-প্রাচুর্যে মানুষের হৃদয় ভরে তুলবে, না বিংশ শতাব্দীর চেয়েও হতাশার অন্ধকারে ভারতবাসীকে নিক্ষিপ্ত করবে?-- এটাই জিজ্ঞাসা।
ভারতবর্ষের ইতিহাসে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতবাসীর যা-কিছু আশা-আকাঙ্ক্ষা,সংশয় সবই এই প্রথমার্ধ জুড়ে। বিভিন্ন ঘটনায় পূর্ণ এই ভারতবাসীর মনে গভীর দাগ কাটতে সক্ষম হয়েছে। এই শতকের সূচনাতেই লর্ড কার্জনের "বঙ্গভঙ্গ আইন" অবিভক্ত বাংলার মানুষকে প্রতিবাদে সোচ্চার করেছে। সারা ভারত আন্দোলন ও প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছে। ব্রিটিশ শাসনের পীড়ন ও অত্যাচার থেকে মুক্ত হতে চেয়েছে ভারতবর্ষের মানুষ। অসহযোগ ও খিলাফৎ আন্দোলন ইংরেজদের মসনদকে কাঁপিয়ে তুলেছে। পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড দেশের আবালবৃদ্ধবনিতার মনে ইংরেজদের প্রতি ঘৃণা জাগিয়ে তুলেছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথও এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইংরেজ সরকারের দেওয়া 'নাইট' উপাধি পরিত্যাগ করেন। স্বদেশী আন্দোলনের ঢেউ সমগ্র ভারতবর্ষের জনজীবনকে উত্তাল করে তুলেছে।শতশত যুব-প্রাণ নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশের স্বাধীনতার জন্য। এই সময়েই সংঘটিত হয়েছে পরপর দুটি বিশ্বযুদ্ধ। অবশেষে ১৯৪৭ সালে ১৫-ই আগষ্ট দ্বিখন্ডিত হবার ব্যথা বুকে নিয়ে স্বাধীন হয়েছে ভারত।
পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে জনগনতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতবর্ষের মানুষ নতুন আশায় বুক বাঁধল। ১৯৫০ সালে আম্বেদকরের নেতৃত্বে রচিত হল ভারতীয় সংবিধান। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের অগ্রগতি মন্থর গতিতে এগিয়ে চলল। নতুন নতুন কলকারখানা স্থাপিত হল,কৃষি ক্ষেত্রে ঘটল বিপ্লব। খাদ্যেও শিল্পোপযোগী কাঁচামালে স্বনির্ভরতার পথে ভারত এগিয়ে চলল। জন্ম হল শিল্পনগরীর। কিন্তু দেখা দিতে লাগল নানান সমস্যাও। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বেকারি, আবাসন সমস্যা, পরিবহণ সমস্যা,মুদ্রাস্ফীতি দেশের অগ্রগতির পথে বিরাট বাঁধা হয়ে দাঁড়াল। সমস্যা মোকাবিলার জন্য নানা পরিকল্পনা গৃহীত হতে থাকল।এরপর আছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আগ্রাসী মনোভাব। শক্ত হাতে দমন করার প্রচেষ্টা হতে থাকল। হাজার হাজার শরণার্থীর বোঝা,প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত ব্যায় ইত্যাদি সমস্যায় জর্জরিত ভারতবর্ষে দেখা দিল আর্থিক অসাচ্ছল্য, বাড়তে থাকল বৈদেশিক ঋণের বোঝা। তবে শুধুই কি হতাশা? চরম দুঃখের মধ্যেও উন্নতি হয়েছে পরিবহণ ব্যবস্থার। চক্ররেল-পাতালরেলসহ আধুনিক পরিবহণ ব্যবস্থার প্রচলন হয়েছে। অনেক ভারী ও মাঝারি শিল্প রূপায়িত হয়েছে। উন্মেষ ঘটেছে সত্যজিৎ রায়, উদয়শঙ্কর, রবিশঙ্কর, বিদ্রোহী কবি নজরুল,এ.পি.জে আব্দুল কালামের মতো বিশ্ববরেণ্য প্রতিভার। আর সর্বাপেক্ষা লজ্জাজনক ঘটনা হলো বিচ্ছিন্নতাকামী শক্তির হাতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু। আজও সমগ্র ভারত অস্থির। কাশ্মীর, আসাম, পাঞ্জাব---সর্বত্রই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কালো হাত সম্প্রসারিত। আজ একটা চরম সংকটের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে দেশ। সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় সংকটের মধ্য দিয়ে আজ ভারতবর্ষ এসে দাঁড়িয়েছে।
স্বাধীনতার পর ৭৫ বৎসর অতিক্রান্ত। আজও ভারতের অগ্রগতির চিত্র নিতান্তই অস্পষ্ট। ভারতবাসীর মনে অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা জন্মেছে, ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। পরিকল্পনা খাতে হয়েছে অর্থব্যয়,কিন্তু কাজ হয়নি। ভারত পারবে কি তার এই পাহাড়প্রমাণ সমস্যার সমাধান করতে? সমস্যাকন্টকিত ভারতবর্ষ কি পারবে সমাধানের ফুল ফোটাতে? বরং ইতিহাসের ধারা অনুসরণ করলে বলা যেতে পারে সমস্যাবলী আরও ঘনীভূত হবে। জনসংখ্যার হার ক্রমশই বর্ধমান, কাজেই খাদ্যশস্যে ঘটবে ঘাঁটতি। পণপ্রথা,ধর্ষণের প্রকোপে নারী জাতি আজ অসহায়। বেকারত্ব,মুদ্রাস্ফীতি,দারিদ্র্য, অনাহার, মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে। বাড়বে বৈদেশিক ঋণের বোঝা। বিপন্ন হবে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। সাম্প্রদায়িক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। ঘন ঘন রাজনৈতিক পালাবদল দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেবে। প্রকট হবে নৈতিক অবক্ষয়, মানবিক মূল্যবোধের ঘটবে অপমৃত্যু। আশঙ্কা---হয়তো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে ভারত। আগামী হয়তো ভারতবাসীর কাছে চরম অভিশাপ নিয়ে আবির্ভূত হবে।
কিন্তু হাজার সমস্যা থাকলেও নতুন ভাবে, নতুন ভঙ্গিতে বাঁচার আশা ভারতবাসী তো পরিত্যাগ করতে পারেনা। চিরন্তন ঐতিহ্য অনুযায়ী ভারতবর্ষ অন্যায় ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবেই। ঐক্য ও সংহতির সনাতন আদর্শ সমস্যাদীর্ণ ভারতবাসীকে একত্রিত করবে। সুস্থ, সবল, ঐক্যবদ্ধ ভারতবাসী শক্ত হাতে করবে সাম্প্রদায়িকতা দমন। সুন্দর ভারতবর্ষ গড়তে হয়তো প্রয়োজন কোনো যাদুদন্ডের স্পর্শের। তবুও আশাই পারে মানুষকে অভীষ্ট লক্ষে পৌচ্ছতে। সেই আশা বুকে নিয়ে ভারতবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। স্বাধীনতার উৎসবের দিনে আমাদের শপথ গ্রহণ করতে হবে--বহুকষ্টে অর্জিত স্বাধীনতা যেন আমরা ধর্মবিবাদে বিচ্ছিন্নতার উন্মত্ত নেশায় দিকভ্রান্ত হয়ে না হারাই। মনে রাখতে হবে আমরা মিলে-মিশে থাকলেই ভালোভাবে বাঁচতে পারবো। বিচ্ছিন্ন হলে আমাদের ধ্বংসের হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
জয় হিন্দ, বন্দেমাতরম ।
------------------------
স্বাধীনতা- ৪৫
স্বাধীনতা
অভিজিৎ দত্ত
সত্যিই কী আমরা স্বাধীন?
নাকি স্বাধীনতার নামে
মুষ্টিমেয় কিছু লোকের কাছে
আবার হয়েছি পরাধীন?
স্বাধীনতার মানে কী
বিদেশীদের হাত থেকে উদ্ধার হওয়া?
নাকি স্বাধীনতার মানে
ভোট দানের অধিকার পাওয়া?
স্বাধীনতার মানে যদি হয় উন্নয়ন
তাহলে প্রত্যেক ভারতবাসীর
অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থানের চাহিদা
হয়েছে কী পূরণ?
সত্যিকারের স্বাধীনতার মানে
প্রত্যেক মানুষের নূন্যতম চাহিদা পূরণ
রাষ্ট্রের বৃহৎ কর্ম যজ্ঞে
সামিল হবে জনগণ।
প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে
খেয়ে,পড়ে বাঁচবার
যে কোন জীবিকা
গ্রহণ করবার।
স্বাধীন দেশের প্রত্যেক ব্যক্তির
নূন্যতম চাহিদা যদি না হয় পূরণ
তবে স্বাধীনতার নামে
কেন মিথ্যে আস্ফালন?
স্বাধীনতা ,যুগ ,যুগ ধরে
পরাধীন মানুষের তুমি ছিলে
একমাত্র আকাঙ্খা ।
এই স্বাধীনতার জন্যই
কত শহীদের হয়েছে বলিদান
তাদের কথা ভেবে
আজকের নেতাদের আচরণে
লজ্জা পাচ্ছে জনগণ।
স্বাধীনতার সুফল যদি
জনগণের ঘরে,ঘরে
পৌঁছাতে না পারো
স্বাধীনতা দিবস পালন করা
অর্থহীন মনে হবে এবারও।
ভোগ সর্বস্ব নেতারা
একটু বিবেক জাগ্রত করো
জনগণের উন্নতির জন্য
একটু চেষ্টা করো।
---------------
স্বাধীনতা- ৪৬
আজকের স্বাধীনতা
সঞ্জিত ভট্টাচার্য্য
স্বাধীনতা,তুমি তো মুক্তির স্বাদ,কবির প্রেরণা আর তারুণ্যের জয়গান নিয়ে হাজির হয়েছো---
১৫ই আগষ্টের এ নবপ্রভাতে,নবরূপে।
তোমার জয়গান মুখরিত হবে দিকদিগন্তে।
তেরঙ্গা পতাকা উড়বে জ্বালাময়ী ভাষণে।
কিন্তু হে স্বাধীনতা--------
আজকের কারবারি সমাজে তোমার ক্ষমতা,চেতনা,বিবেক---
সব লুটোপুটি খাচ্ছে চোর জোচ্চোরদের ক্ষমতার দম্ভে।
তোমার চেতনাকে ওরা করছে বিকৃত,বিবস্ত্র।
স্বাধীন হয়েও পরাধীনতার মতো ভয়ে কুঁকড়ে থাকে জনগণ।
মা বোন,পিতা-মাতা; এমনকি দুধের বাচ্চাটাও।
স্বাধীনতা মানে এখন ক্ষমতার জোর আর দম্ভের অট্টহাসি,
রাস্তা জুড়ে অশ্লীলতা,মিটিং মিছিলে চোর জোচ্চোরদের বাঁচাতে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা।
স্বাধীনতা মানে,দু'হাতে লুটেপুটে খাওয়া আর গরিবের পেটে লাথি মেরে এগিয়ে চলা।
দায়সারা পতাকা উত্তোলনের বাহানা আর শির ফুলিয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে ঝাঁঝালো মিথ্যে ভাষণে নিত্য নতুন আশ্বাসের বাণী মুখোশ এঁটে।
রাত পোহালেই আবার নতুন প্রতারণার ছক কষা শুরু।
রাজনীতির নোংরা খেলায় শঙ্কাভয়ে আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের পবিত্র স্বাধীনতাকে।
যে নারী হাসিমুখে শুধুমাত্র পেটের জ্বালায় দুধের বাচ্চাকে একলা ফেলে রেখে রোজ রাতে সেজেগুজে দাঁড়িয়ে থাকে খদ্দেরের কামলালসা মেটানোর জন্য মাত্র কয়েকটা টাকার বিনিময়ে---
ওদের স্বপ্নে কি স্বাধীনতা তুমি এখনও বেঁচে আছো?
কবির কলম কি নির্ভয়ে লিখতে পারে,স্বাধীনতার বাস্তব জীবন ছন্দ?
রাজদণ্ডের খাঁড়া ঝোলে তার মাথায়।হয় নির্বাসন,না হয় দেশদ্রোহী।
তবুও হার না মানা কবি ঋজু মেরুদণ্ড নিয়ে লিখে চলে--
"স্বাধীনতার বর্তমান পরিস্থিতি "বা " স্বাধীনতায় পরাধীনতা"।
আর মুষ্টি তুলে বলে--"বন্দেমাতরম, জয়হিন্দ,মেরা ভারত মহান"।
--------------------
স্বাধীনতা- ৪৭
চোখের সামনে ভাসে
দুলাল প্রামানিক
চোখের সামনে ভাসে শুধু
রক্তে রাঙা সেই সে মুখ
স্বাধীন ভারত আমার কাছে
নিয়ে এলো কিসের সুখ
আমরা তো সব বন্দী পাখি
নিয়ম- বাঁধন শৃঙ্খলে
উড়ছে যারা আকাশ জুড়ে
উড়ছে নিয়ম দিক ভুলে
বিনয় বাদল দীনেশ শুধুই
লড়াই লড়াই করে খেলা
ক্ষুদিরাম প্রফুল্ল ভগৎ সিং
ভাসিয়ে নদে প্রাণের মেলা
মাস্টার দা আর প্রীতিলতা
গণেশ বুকে নিল গুলি
কোথায় সেসব সোনার ছেলে
কোথায় গেল তাদের বুলি
আমার বাংলা আমার দেশ
করতে খাঁটি দেশের মাটি
বিদেশ বিভুঁই ঘুরে ঘুরে
সিঙ্গাপুরে গড়লো ঘাঁটি
রক্ত দিয়ে রক্ত ঋণে
বাঁধল সবারে একসুতোয়
তাদের তো আজ ভুলতে নারি
যতই না আমাদের ষাঁড়ে গুঁতোয়
ঘরের ভিতর ঘরের বাইরে
মনোমালিন্য ঝগড়া ঝাটি
আছে ভালো আছেন মন্দ
ছোঁড়ে কী সবাই ঘটিবাটি
পনেরোয় আগস্ট সুখের দিন
সবাই সাজাই স্বপ্ন ঘর
চোর ডাকাত লুটেরাদের
একসাথে সবাই মিলে ধর
আমার সামনে ভাসে শুধু
স্বপ্নের সোনালী আলো
ঘুরে ফিরে আসুক সবার
বিবিধ স্বাধীনতার ভালো
--------------------
স্বাধীনতা- ৪৮
এ কেমন স্বাধীনতা
দীপান্বিতা
এ কেমন স্বাধীনতা বীরশহিদেরা এনেছিল রক্তের বিনিময়ে,
স্বাধীনতাকে স্বৈরতন্ত্রে এনেছিল নামিয়ে দেশের শত্রুরা ৷
এ কেমন স্বাধীনতা পরাধীনতা সব সময় যেখানে,
সবখানে শুধু চুপ হয়ে থাকা স্বাধীনতার নামে ৷
এক এক সময় মনে হয় স্বাধীনতাপ্রেমী বীর শহিদেরা বড় বোকা ছিল মনে হয়,
কত কষ্ট সহ্য করে দেশে এনেছিল স্বাধীনতা প্রানের বিনিময়ে ৷
হায় একি স্বাধীনতা তার গুরুত্ব কে করেছে অপচয় অনাচারে কালিমাময় ৷
আজ দেশে অরাজকতার পরিস্থিতি,
শুধু স্বার্থসিদ্ধির জন্য করেছে মানবতা বিক্রি ৷
নেই মান নেই অপমান শুধু টাকা টায় সব '
এর জন্য যে কোনো মুল্যে হাত বদল সব সময় ৷
দেশের এখন বড়ো প্রয়োজন ভেতরে বাইরে শুদ্ধিকরণ,
তবেই পাবে স্বাধীনতা আসল মুক্তি দেশে দশের জীবনে কলুষমুক্ত জীবন ৷
দুনিযার কাছে মাথা উঁচু করে বলতে পারি মেরা ভারত মহান৷
হিমালয় থেকে কন্যাকুমারীকা য় একই মন্ত্র বন্দেমাতরম ৷
---------------------------
No comments:
Post a Comment