বহু রক্তক্ষয়ের পর স্বাধীনতা পেয়েছিলাম আমরা ৷ ঘটেছিল দেশ বিভাজন ৷ রাজনীতির পাশাখেলায় তারপর থেকে আমরা অর্থাৎ আম জনতা নানাভাবে পিষ্ট হতে হতে হয়তো আজ 'স্বাদহীন'ভাবে স্বাধীন রয়েছি ৷ এই স্বাধীনতা কতখানি পরাধীনতা থেকে মুক্তি আর কতখানি ক্ষমতার হস্তান্তর তা নিয়েও রয়ে গেছে বিতর্ক ৷ তবু আজকের দিনটা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ৷ তাই এই দিনটাকে উদযাপন করতে দেশজুড়ে গৃহীত হচ্ছে নানা কর্মসূচি ৷*
*আমাদের পদক্ষেপ পরিবারের পক্ষ থেকে আজকের দিনে পরিবারের সকলকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা ৷ পূর্বঘোঘণা অনুযায়ী আজ আমাদের এই পরিবারের যৌথ দেওয়ালে আয়োজিত হবে বিশেষ ইভেন্ট— "স্বাধীনতা" ৷ ইতিমধ্যে আপনাদের পাঠানো লেখাগুলো আমরা একে একে পোস্ট করব এখানে ৷ সেই ধারাবাহিকতা যেন ক্ষুণ্ণ না হয়, সেজন্য ইভেন্ট চলাকালীন গ্রুপটি অনলি অ্যাডমিন করে রাখা হবে ৷ আপনাদের অনুরোধ, ধৈর্য রাখবেন ৷ সাথে থাকুন ৷*
----+++---
স্বাধীনতা- ২৫
স্বাধীনতা
অমিত কাশ্যপ
সাধু নামটি জড়িয়ে গেছে জীবনের সঙ্গে
তিনি জানেন না, অদ্ভুতভাবে তিনি মাথা নাড়েন
বয়সের প্রশ্নে, থাকার প্রশ্নে, স্বজনের প্রশ্নে
ভাবলেশ তাকান, যেন কিছুই হয়নি
আশ্চর্য, দূর দেখতে চশমা পড়েন, ওই পযর্ন্ত
দেখা, না দেখার মাঝখানে, তার অবস্থান
পনেরোই আগষ্টে একবার এক স্কুলের সামনে
সেও আজ অনেক বছর আগের কাহিনি
তেরঙা পতাকা তোলার পর গান হয়েছিল
সাধু দাঁড়িয়েছিল, কেউ কানের কাছে মুখ নিয়ে
বলেছিল, কি দেখছ, চশমা খুলেছিল, শূন্য দৃষ্টি
শালপাতায় কিছু খাবার, কেউ দিয়েছিল, শূন্য দৃষ্টি
হেডস্যার বলেছিলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে সব গেছে
ওর নাম জ্যোতির্ময়, স্বাধীনতার জ্যোতি
সাধু নামটা কেমনভাবে জড়িয়ে গেছে
আমরা এমন সাধু কটাকে চিনি যাঁরা হঠাৎই
বলে উঠবে, মেরা ভারত মহান
-------------
স্বাধীনতা-২৬
স্বাধীনতা তুমি
মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় রায়
পঁচাত্তর বছর আগের স্বাধীনতা
বীর দর্পে বেজে ওঠে জয় হিন্দ বন্দেমাতরম
লন বলসে সোনায় সোহাগা ভারতবর্ষ।
তুমি কি স্বাধীন ? আজ কোনো প্রশ্ন নয়।
আজ পঁচাত্তর বছরের স্বাধীনতা উপলব্ধির স্বাধীনতা।
আত্মবলিদান মিশে গেছে টাকা মাটি মাটি টাকাতে।
স্বাধীনতা তুমি হর্ট শর্টসে ককটেলে পার্কস্ট্রিট ।
করুন শিশু খালি গায়ে তাকিয়ে কাঁচের ভিতর ঝাঁ চকচকে পোশাকের দিকে।
এম. এ কিংবা বি .এ, পাশ ম্যানগ্রোভ বাঁচিয়ে জোয়ারে
মশারির জালে ব্যস্ত বাগদা পোনা ।
ন্যায্য অধিকার লুট হয়েছে সিংহাসনে
স্বপ্ন নেমে এসেছে রাজপথে।
কবিতা নয় গল্প নয় জীবন স্মৃতি লেখা হচ্ছে গামছা বাঁধা পেটে।
দেশ মাতৃকা তুমি ধন্য, অবলা জীব মানুষ এখন পণ্য।
এর পরে কি বলে দিতে হবে ছাপোশার কি মাথাব্যথা
কেমন আছো , কেমন ই বা থাকবে তুমি স্বাধীনতা।
------------------
স্বাধীনতা- ২৭
স্বাধীনতা
বনবিহারী কুমার
স্বাধীনতা
স্বাধীনতা মানে স্বৈরাচারের নাম
স্বাধীনতা মানে বেপোরয়া সব কাম
স্বাধীনতা __ স্রেফ স্বাধীনতা ,
সমন্বয়ের নামে ধাপ্পার তোষণতা ।।
স্বাধীনতা মানে অধিকার কেড়ে নেওয়া
স্বাধীনতা মানে প্রাণে মেরে ফেলে দেওয়া ,
স্বাধীনতা __ স্রেফ স্বাধীনতা ,
ধর্মের নামে চলে হিংসার প্রবনতা ।।
স্বাধীনতা মানে মাফিয়াবাজীর মেলা
স্বাধীনতা মানে দখলদারীর খেলা ,
স্বাধীনতা __ স্রেফ স্বাধীনতা ,
একের স্বার্থ খর্ব করার জঘন্য রসিকতা ।।
স্বাধীনতা মানে প্রাচীণতা মুছে ফেলা
স্বাধীনতা মানে জাতীয়তা বেচে ফেলা ,
স্বাধীনতা __ স্রেফ স্বাধীনতা ।
হৃদয়ে হৃদয়ে শুধু ঘোরতর দূষণতা ।।
এরই নাম কি স্বাধীনতা ?
--------------
স্বাধীনতা- ২৮
হকের রাখী
আর্যতীর্থ
স্বাধীনতা, রাখী বাঁধো ভারতের হাতে,
পৃথিবীর শেষ তক থেকো একসাথে।
আমার তেরঙা হোক তোমার তিলক,
ভারতীয় হলে হোক এই রাখী হক।
এখনো তোমার বাসা নেতাদের ঘরে,
আসোনি সময় করে জনতার স্বরে,
বেখাপ্পা কথা হলে খাপ্পা রাজারা,
বিচারের আগে দেন আজীবন কারা।
স্বাধীনতা, তুমি আজও বড় ধনী-ঘেঁষা
গরীবের সাথে নেই মোটে মেলামেশা,
ধনহীন জানে কেউ শুনবে না কথা,
তার বাক-স্বাধীনতা প্রাক-স্বাধীনতা।
তবু ওগো স্বাধীনতা, ছাড়ছি না হাল,
আমার আঙনে তুমি আসবেই কাল।
ভূমিহীন আদিবাসী প্রান্তিক লোক
আশা রাখি একদিন ওঠাবেই চোখ।
আশা রাখি একদিন ভোট এলে দেশে,
ভাষণ হবে না আর শুধু একপেশে।
ফুঁড়ে দিয়ে তোতাবুলি প্রগতির চোথা,
শ্রোতারা আওয়াজ দেবে হাতে কাজ কোথা?
কোনটা দেশপ্রেম কোনটা চালাকি
একদিন জনগণ ধরবে সে ফাঁকি,
স্বাধীনতা, আছি আজও সেই আশা করে
একদিন দেখা দেবে গরীবেরও ঘরে ।
পরাও দেশকে রাখী তার হাত ধরে
ওগো স্বাধীনতা।
আগামীতে চোখ যেন ঠিক দিকে ঘোরে..
------------------
স্বাধীনতা- ২৯
এ কোন স্বাধীনতা।
শিবেশ মুখোপাধ্যায়
সকাল থেকে আজ অন্যরকম
হাওয়া বইছে। মনে প্রাণে শিহরণ
জাগাচ্ছে...
এক অনাবিল আনন্দে ভরে যাচ্ছে
স্বাধীন ভারতবাসীর মন।
আকাশে পতপত করে উড়ছে
তিরঙ্গা পতাকা।
আজ ১৫ই আগষ্ট
ভারতবর্ষের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস।
আকাশে বাতাসে বাজে
'সারে জাঁহাসে আচ্ছা '
নৃত্য, কবিতায় গানে আর ভাষণে
মেতে ওঠে বুড়ো থেকে বাচ্চা।
আজ দিনটা আচ্ছা, বহুত আছে। তবু, আমরা কি স্বাধীন
আমরা কি সাচ্চা??
পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করতে
ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যুবশক্তি।
চেয়েছিল মায়ের সম্মান বাঁচাতে
শৃঙ্খলমুক্ত করতে ভারত মাতাকে।
আজ দিকে দিকে অসহায়
শিশু বৃদ্ধ, মাতা ভগ্নীদের কান্নায়
ভরে উঠেছে সুনীল আকাশ
মেঘমুক্ত শরতের আকাশ
ছেয়ে গেছে বারুদ দূষণে,
বিষবাষ্পে।
তোমার পায়ের নিচে আজও রক্তগঙ্গা। শৃঙ্খল তোমার হাতে পায়ে। রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ভায়ে ভায়ে।
বিনয়- বাদল - দীনেশ - ক্ষুদিরাম
হলদিঘাট,বুড়িবালাম--
তোমার বুকের মধ্যে দুভাগ করা
দু-টুকরো দেশ।
স্বাধীন ভাবে রাস্তায় বেড়ানো
সৎ-চিন্তা,সৎ-বাক্য এখন দুর্বোধ্য।
অফিস -কাচারি, আদালতে
ন্যায়বিচার আজ পর্যুদস্ত।
এত বছর বয়স হ'ল তোমার স্বাধীনতা। তবু আজও তুমি অবগুণ্ঠিতা।তাই আমরা দৃষ্টিহীন
অথচ 'চোখে আঙুল দাদা'।
আমরা তাই আজও পরাধীনতার নাগপাশ মুক্ত হতে পারিনি।
স্বাধীনতা দিবস আজ তাই শুধু
উৎসবের দিন।।
----------------
স্বাধীনতা- ৩০
আমি শহীদের মা
মিতালী মুখার্জী
দেশের মাটির ঋণ বলো শোধ কি করা যাবে?
আমি না পারলে পারবে তুমি , চেষ্টা করতে হবে।
বলিদান চায় আজকের দেশ।
বারবার তারা বদলায় বেশ
পুলমা বা উরি, কেন কারগিল!
আমাদের ছেলে মরে তিল তিল!
নয়নের মনি ঘরে ফেরেনি সে,
নীরব, নিথর প্রিয়া জাগে বসে
ছেলে বলে ,-বাবা ফিরছে না কেন?
মায়ের দুচোখ খুঁজে ফেরে যেন
পরমবীরের মেডেলটা নিয়ে
ছানিপরা তার দুটি চোখ দিয়ে
আতিপাতি খোঁজে খোকার গন্ধ
সরকারি ভাতা হয়েছে বন্ধ।
মেডেলকাগজ কী হবে এ সবে?
কেউ একখানি কাপড় কি দেবে?
বৌমার আমি লজ্জা ঢাকবো,
ছেলেটার মুখে দুটি ভাত দেব।
তিরঙ্গা ঢেকে এনেছিল তারে
অমন ই কাপড় একটা দে না রে,
এসে গেল শীত, পারি না রে আর
বুক ভেঙে শুধু ওঠে হাহাকার।
খোকা বলেছিল ,আসলে এবার
কাশী নিয়ে যাবে, যাবো নারে আর।
শুধু একবার তুই ফিরে আয় ওরে
দেখ খোকা তোর পরে আছে জ্বরে।
নেই তো ওষুধ ,পথ্য ও নাই।
কত কথা বলে মন্ত্রীমশাই,
তুই চলে গেলি চলে গেল সব,
যত কোলাহল হয়েছে নীরব।
তবু হারব না ,আমি বেঁচে রব।
খোকা বড় হলে তাকেও পাঠাবো।
দেশের জন্য সে ও দেবে প্রাণ।
দেশের মাটি যে চায় বলিদান।
আজকের দেশ চায় বলিদান
আজকের দেশ চায় বলিদান।
------------------
স্বাধীনতা-৩১
স্বাধীনতা দিবসের আলোর পথ
নরেন্দ্রনাথ নস্কর
স্বাধীনতা শুধু একটি শব্দ নয়,
স্বাধীনতা মানে মুক্তির বায়ু বয়;
অনেক বাধা অনেক সমালোচনা,
তবু বলব, স্বাধীনতার হোক জয়।
কি পেয়েছি, কি বা পাইনি এ দেশে,
কিছুতো সাদা, বহু কালোর মাঝে;
উপনিবেশের দীর্ঘ শাসন শেষে,
যা পেয়েছি পথে, তাতে আনন্দ রাজে।
দোষ ক্রুটি যত, এই মাটিতেই হোক,
এর অবসান হবে এ আশা পোষণ করি;
কর্মের ফল কেহ খণ্ডাতে নারে,
নতুন আলোতে শুদ্ধ করবেন, শ্রী হরি।
পিছন ফিরে দু:খ পেয়ে লাভ নেই,
যেটুকু ভাল, সেই নিয়ে পথ চল;
খারাপ যত যাবে ধুয়ে একদিন,
স্বাধীন মনে আনন্দ দীপ জ্বাল।
অনেক রক্তে, অনেক দুঃখ ঝরে,
স্বাধীন হয়েছে, ভারতের মাটি, জল;
মাতৃভূমির সম্মানে কিছু করে,
দেশবাসির মুখ কর উজ্জ্বল।
ভাল টুকু নিয়ে, খারাপ ছুড়ে ফেলে,
এগিয়ে চল ভালর পথ ধরে;
ত্রিবর্ণ পতাকা চির উড্ডীন রাখ,
দেশাত্মবোধ জাগাও প্রতি ঘরে।
জয় হোক এই ভারতের, ভাই,
শুভ চেতনা আসুক, প্রতি মনে;
ভারতবর্ষ মোদের মাতৃভূমি,
রক্ষা করা চাই দেশ, মায়ের টানে।
সততার সাথে শপথ করি সবাই,
দেশের ঘরে আছে যত বোন ও ভাই;
ভারত দেশের সম্মান সবার আগে,
মন প্রাণ দিয়ে সেবা করব সবাই।
যাহা আছে ভাগ করে নেব,খুশি মনে,
দুঃখে, সুখে পাশে থাকব সবার;
বঞ্চিত যেন না হয় আর্ত কেহ;
অন্যায়, অবিচার শেষে মানবেই হার।
ভারতকে মোরা এগিয়ে নিয়ে যাব,
বিজ্ঞানে, সাহিত্যে, শিল্পকলা, দর্শনে;
প্রতি নরনারী উপকৃত হবে,
ভারত একদা উন্নত হবে মননে।
খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা
পাবে একদা, আপামর দেশবাসী;
স্বপ্ন সেদিন বাস্তব হবে, এ দেশে,
ভারতমাতার মুখে ফুটবে হাসি।
জয় হোক এই ভারতের ভাই,
সত্যি মোদের একটাই পরিচয়,
বিভেদ আর প্রাদেশিকতা ভুলে;
ভারতবাসি করুক এই বিশ্বজয়।
নতুন দিনে আবার শপথ করি,
মোরা স্বাধীনতার রাখব সম্মান;
সত্যের পথে, সেবার পথ ধরে,
ভারত মায়ের গাইব জয় গান।
রক্ষা করব ভারতের স্বাধীনতা,
বহিশত্রুর করব মোকবিলা;
সুরক্ষিত থাকবে ভারত মাতা,
এই শপথে আনন্দে পথ চলা।
---------------
স্বাধীনতা- ৩২
স্বাধীনতার শপথ
সুভাষচন্দ্র ঘোষ
অনেক বন্ধুর পথ পেরিয়ে
শহীদের তাজা রক্ত ঝরিয়ে
পেয়েছি অমূল্য ধন স্বাধীনতা।
দুশো বছরের পরাধীনতা গ্লানি
সহজে স্বরাজ আসেনি জানি
ক্ষমা কর জাতির এ দূর্বলতা ।।
ভারত আজ হয়েছে স্বাধীন
আজ নই মোরা পরাধীন
পনেরোই আগষ্ট সেই শুভদিন।
ত্রিবর্ণ পতাকা পত্পত্ উড়ে
জাতীয় সঙ্গীতের মধুর সুরে
শোধিতে হবে শহীদ রক্ত-ঋণ।।
আজ নিতে হবে কঠিন শপথ
মসৃণ চলুক গণতন্ত্রের রথ
সম্মুখের বাধা বিপত্তি মাড়িয়ে ।
দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ
সীমান্ত-সৈন্যের আত্ম-বলিদান
দেশরক্ষা করে বহিঃশত্রু হারিয়ে।।
ভারত হোক সবদিকে সেরা
মাতৃভূমি স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা
চিরদিন থাকে যেন উন্নত শির।
থাকবে না কোন অবিচার
জাগ্রত জনতা করবে বিচার
মোর ভারত হোক শান্তির নীড়।।
----------------------
স্বাধীনতা-৩৩
ওপারে ক্ষুদিরাম
তমাল কুন্ডু
স্বাধীন ভারতবর্ষের
স্বপ্নদেখা চোখ দুটো
আজও চেয়ে আছে চাতকের মতো
গলায় দগদগে ফাঁসির ক্ষত
ছড়িয়ে পড়ছে যেন সারা শরীরে
যন্ত্রণাকাতর মুখে তাঁর একটাই প্রার্থনা
অঙ্ক স্যারকে জন্মাতে হবে আর একটিবার
ভারতমায়ের কোলে
তৈরি করে দিতে হবে আবার
কোটি কোটি নির্ভীক ক্ষুদিরাম
যাতে স্বাধীনতা সংকটে না পড়ে
আরেকবার।
-------------
স্বাধীনতা-৩৪
স্বাধীনতার খোঁজে
কান্তীশ
তুমি বলেছিলে নেতাজী ,
আমরা রক্ত তো অনেক দিয়েছি ,
তবু স্বাধীনতা কেন পেলাম না ?
চুপ রও যত বিশ্বাসঘাতক,
কার রণহুঙ্কার শুনতে পেলাম ,
তোমরা ভাইয়ের রক্ত দিয়েছ ,বোনের রক্ত দিয়েছ;
মায়ের রক্ত দিয়েছ ,স্ত্রীর রক্ত এমন কি সন্তানের রক্তও;
নিজের রক্ত দাও নি কেনোদিন ।
ব্যারাকপুরের কারাগারে তোমরা বিশ্বস্ত
সেনানীর গণহত্যা ঘটিয়েছ ,
লালকেল্লায় করেছিলে তাদের বিচার;
তোমরা স্বাধীনতার যোগ্য নও ।
চমকে উঠলাম ।সত্যি তো কোনোদিন নিজের এক ফোঁটা রক্ত দিই নি ।স্বাধীনতাও পাই নি ।
নেতাজী ,ফিরে এসো ,আর একবার -আর
একবার উদাত্ত কণ্ঠে সে ডাক দাও -তোমরা আমাকে রক্ত দাও ,আমি তোমাদের
স্বাধীনতা দেবো।
এবার নিজের রক্ত দেবো ।
স্বাধীনতা আমাদের চাই।
-------------------
স্বাধীনতা- ৩৫
স্বাধীনতা বনাম একটি রাষ্ট্র
শ্রীঅভিষেক অধিকারী
স্বাধীনতা বনাম একটি রাষ্ট্র
শ্রীঅভিষেক অধিকারী
পাথরের দেওয়াল গিলে খেতে চাইছে কাগজের মানুষগুলোকে।
ক্ষমতার দম্ভ গ্রাস করে নিয়েছে টিনের পুতুল খেলার ঘর।
সিরিয়ালের চরিত্রগুলোর অমানবিক আস্ফালন যায়গা করে নিচ্ছে মানব মস্তিষ্কের ধূসরতম অংশে।
রিয়েলিটি শো এর প্রতিভার দম্ভ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে আদিম সরলতা।
স্বাধীনতা আমাদের অধিকার!
শব্দের সরলতম বহিঃপ্রকাশকে টেনে ছিঁড়ে দিচ্ছে শব্দভেদী বান।
বিপ্লবীদের শত শত তাজা রক্ত পান করে চলেছে আধুনিক পাথুরে সভ্যতা।
হ্যাঁ আমরা স্বাধীন!
বিপ্লবীদের স্বপ্নের দেশ আজ পুরাবস্তুর সংগ্রহশালা।
লক্ষ্যহীন মানুষের মুখ দেখে আজ আর জল আসে না
কোন পাথরের দেবতার চোখে।
স্বাধীনতার পতাকাধারীর পতাকা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে উদ্ধত বুলেটের চাপে।
তবুও সব্যসাচীরা আজও আছে
বনজঙ্গল আজও তাদের কাছে রাজপথ।
নদী সাঁতরে তাদের আজও পার হতে হয়।
সব্যসাচীদের কাছে শহর এক নিষিদ্ধ স্থান।
রাষ্ট্র তাদের কাছে চিরাচরিত ব্যঙ্গের পাত্র।
তবুও সব্যসাচীরা লড়ে যাবে,
শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে।
রাষ্ট্র বনাম ব্যক্তি,
স্বাধীনতার উপহারে ভূষিত রাষ্ট্র হেঁটে চলে
ঘন মানব জঙ্গলের উপর দিয়ে।
ব্যক্তি ছুটে চলে রেসের মাঠে,
আরো হাজার হাজার ব্যক্তির শরীক হয়ে।
গর্বিত পেশী হয়ে ওঠে রাষ্ট্রীয় কুচকাওয়াজের শরীক।
আত্মশক্তি হারানো ব্যক্তি বিলাপ করে চলে শূন্য আকাশের নীচে।
একটা স্বাধীনতা বিচার করে চলে রাষ্ট্রের, ব্যক্তির।
সব্যসাচীরা এসে দাঁড়ায় মানবতাবাদের ছায়াতলে।
ব্যক্তির মুক্তি হয়ে ওঠে স্বাধীনতার তপস্যা।
-----------------------
স্বাধীনতা- ৩৬
সবার ঘরে
আর্যতীর্থ
ত্রিবর্ণ যাক ঘরে ঘরে ।
দরজা টোকায় আলতো করে,
সবার কানে বলুক না সে ,
যে দেশ তুমি ভালোবাসো ,
সে দেশ তোমায় ভালোবাসে।
ত্রিবর্ণ যাক সেনার বাড়ি।
পায়নি ছুটি, তবুও ফেরত তাড়াতাড়ি,
চার সাথী তার কাঁধে করে আনলো যেদিন কফিন বয়ে,
সেদিন যেমন জড়িয়েছিলো কৃতজ্ঞতার চাদর হয়ে,
তেমনি স্নেহে, সেই মমতায়,
মা বাবা আর বৌকে যেন ত্রি-রঙ শুধায়,
দেশের জন্য গেছে ছেলে,
সান্ত্বনা তার নয় মেডেলে,
গেলে অমন সোনার বাছা,
তারপরে খুব কঠিন বাঁচা, সেটা জানা।
তবুও শুনি , সুবিধা সব পৌঁছেছে তো এই ঠিকানা,
কমপেনশেসন ও পেনশনে চলছে তো দিন যেমন উচিৎ?
নাকি রাঙা ফিতের ফাঁসে শহীদ-বাড়ির নড়বড়ে ভিত,
বলুন খুলে।
দেখতে হবে, রক্তদানের সে ঋণ যেন সহজে দেশ না যায় ভুলে।
যাক তেরঙা চাষীর কুটির, দাওয়ায় বসুক।
জিগেস করুক কিসের অসুখ,
অন্ন ঘরে রয় না কেন অন্নদাতার ভর-ফসলেও,
জিগেস করুক কর্জ নিলে ঠিক কত তার সুদ প্রদেয়।
চারপায়াতে ছড়িয়ে বসে চুমুক দিয়ে চায়ের গ্লাসে,
জানুক তে-রঙ সময় মতো সরকারি কী সহায় আসে,
দাম কত পায় রক্তকে জল করে ফলা গম বা ধানে,
ত্রিবর্ণ সেই গুপ্তকথা শুনুক কানে,
শোনেননি যা কোনো শাসক গত সাড়ে সাত দশকে,
ফলিডলের খালি শিশির কেবল জানা
মরলো চাষা কিসের শোকে।
যাক পতাকা গাঁয়ের স্কুলে।
ময়লা ছেলে এবং মেয়েরা নামতা পড়ে দুলে দুলে,
শিখছে কী তা কেই বা দেখে।
হদ্দ গরীব ছোট্ট থেকে, খিদের সাথে রোজ সহবাস,
শিশু শ্রমিক কথার মতো নেই উপহাস,
সবাই জানে কোন দোকানে কাদের ঘরে
বারোর কমে, দশের কমে, আটের কমের বালক এবং বালিকাদের খাটায় ধরে,
যাক গে সে সব ছেদো কথা,
পঁচাত্তরে স্বাধীনতা,
ব্যাপার বিশাল, দেড়শো কোটি পা মেলাবে এক মিছিলে,
ত্রিবর্ণ স্রেফ একটা কথাই নিক না জেনে গাঁয়ের স্কুলে..
বল না বাছা, ডিম ছিলো তোর মিড ডে মিলে?
ত্রিবর্ণ যায় , ত্রিবর্ণ যায়,
এইবারে সে চললো কোথায়,
তিনটে রঙের খোঁজ বেদনায়
কোন নাগরিক কাজ হারালো,
চকচকে সব শহর ছেড়ে, বস্তিতে সে পা বাড়ালো।
যাক ওখানে যাক তেরঙা ,
ভোলাক দেশের কুমীরডাঙা,
সেই যে সে এক লকডাউনে লাখো মানুষ হাঁটলো পথে,
রাজ্য এবং কেন্দ্র তাদের দায় নিলো না কোনোমতে,
দেশের ভেতর দেশের মানুষ
নাম কুড়ালো পরিযায়ী,
যদিও ভোটার আধার নথির
ফটোতে মুখ দিব্যি স্থায়ী।
কাজ ফিরেছে কয়েকজনের,
কয়েকজনে ফেরেইনি আর,
নামবিহীনে বিলীন হলো বেকার করে ভোটার আধার,
দাঁড়াক এবার বাকির পাশে
ভরসা হয়ে তিনখানা রঙ,
দেশপ্রেমের ভড়ং ছেড়ে ওদের কানে বলুক বরং,
পাল্টাবে দেশ এবার থেকে,
দেড়শো কোটি পিছে রেখে
দেড়শো লোকের ধনী হওয়া চরম ক্ষতি,
সব নাগরিক কাজে গেলে
তবেই দেশে আসতে পারে ঠিক প্রগতি।
খুলুক গিয়ে ত্রিবর্ণ সেই বাড়িতে গেট,
পেট চালাতে ডোম যেখানে পোস্টগ্র্যাজুয়েট।
টেট পাশের ওই মুক্তো ঝুটো,
করলো যাদের বছর ঠুঁটো,
তাদের পাশে ,
খুব আশ্বাসে দাঁড়াক গিয়ে তেরঙাটি,
ন্যায্য দাবীর শান্ত ভিড়ে নামে যখন পুলিশ-লাঠি,
থামাক তাদের,
লাল গেরুয়া মা মাটি নয়,
ত্রিবর্ণ আজ আস্কারা দিক শিরদাঁড়াদের।
সাড়ে সাতটা দশক ধরে, সুপারিশ আর কোটায় ভরে ,
যোগ্যতাকে করলো এ দেশ রঙতামাশা,
কাটবে এবার সেই কুয়াশা,
সেই আশাতে দিক না আওয়াজ আজ পতাকা,
তা নইলে আর কিসের জন্য
নাগরিকের আগামীতে তাকিয়ে থাকা?
দেড়শো কোটির ঘর ঘুরে সব কুশল নিলে,
তবেই তো দেশ গড়তে পারি সবাই মিলে।
তা নইলে স্রেফ ডি পি বদল কয়েকদিনই,
তারপরে সেই একই নাটক, যেমন চিনি।
পাহাড়চুড়োয় যাওয়ার দিকে লক্ষ্য হলে
মেরামতি করতে যে হয় ভুঁই-ফাটলে,
সে তথ্য তো ইতিহাসের কাছেই শেখা,
দেশ মানে এই দেড়শো কোটি, কেউ না একা।
দেখতে হবে কোথায় আছে কী নড়বড়ে,
সামনে সুযোগ, সামলে নিতে পঁচাত্তরে।
ফাটল বুজে উঠবে এ দেশ নতুন গড়ে,
ভরসা দিতে তেরঙা যাক সবার ঘরে।
--------------------------
No comments:
Post a Comment