Sunday, November 25, 2018

রাজকুমার ঘোষ



অণুগল্প -


নেলোর বিভ্রান্তি
রাজকুমার ঘোষ
 
        গুচ্ছের বিভ্রান্তি নিয়ে নেলোর মত একটা মানুষ এই জগতে থাকতে পারে, তা ওকে দেখে বোঝা যায় না  রোগা-পটকা চেহারার নেলো মনেপ্রাণে  ছুকছুক বাই গ্রস্ত পাবলিক, সেটা কিন্তু কেউ বুঝতে পারে না বা কাউকে বুঝতে দেয় না তার যে কিসের দুঃখ, কিসের হতাশা আবার তার যে আনন্দ কখন আসে সে নিজেও জানেনা । তার নাম নিলমণী পাত্র, কিন্তু বন্ধুদের সৌজন্যে সেটা নেলোতে এসে দাঁড়িয়েছে ।   
 
        এই নেলো বিভ্রান্ত লগ্নেই জন্মেছে মনে হয়, তার জীবনের প্রথম চুলকানি, দুঃখিত বিভ্রান্তি …………  সবে সে স্কুল গন্ডি পার করে কলেজে এন্ট্রি নিয়েছে,  সেখানে গিয়েই একজন মেয়েকে দেখে নেলোর চুলকানি শুরু  যেই দেখা, ব্যাস গড় গড় করে একটা লাভ লেটার লিখে প্রোপোজের জন্য বাস স্ট্যান্ডের দিকে গেছিল, মেয়েটি বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল  মেয়েটির কাছে গিয়ে নেলো নাচতে শুরু করে দিল দেখা গেলো, পকেট থেকে চিঠি বার করার বদলে বেরিয়ে এল  সালিকল মলম !  বিভ্রান্তির সেই শুরু,   মেয়েটি ঠাস করে একটা চড় কষিয়ে দিল …… পরে জানা গেল, পানুর চুলকানি শুধু মনের নয় অন্য চুলকানিও আছে যার জন্য মলমের দরকার হয় টেনশনে নাকি নেলোর দ্বিতীয়  চুলকানিটা প্রকট হয়ে যায় এবং তা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়   সেদিনও তাই হয়েছিল  টেনশনে চুলকানি শুরু আর চিঠির বদলে মলম আর সেই সাথে নাচানাচি আহারে নেলো, জ্বালার চেয়ে যন্ত্রনা বেশি, সেই বিভ্রান্তির শুরু আর কি !         
        এইরকম বিভ্রান্তির কেশ আরো আছে   ইতিহাস কোচিং- নেলোর সাথে এক সুন্দরীর আলাপ হয়েছিল, নেলো তো অস্থির না চাইলেও সে বিভিন্ন ভাবে মেয়েটিকে সাহায্য করতো , ফুচকা খাওয়াতো, সিনেমা দেখাতে নিয়ে যেত অথচ নেলো নিজের মনের কথা কিছুতেই জানাতে পারতো না, ভয় একটাই, যদি চড় খেয়ে পিরিত চটকে  যায় কিন্তু নেলো স্থির করে সে প্রোপোজ করেই ছাড়বে  একদিন  নেলো একটা চিঠি নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে, সেদিনই মেয়েটি তাকে ২টো সিনেমার টিকিট কাটতে বলে, মেঘ না চাইতেই জল…! ভীষণ বিগলিত হয়ে সে যথাসময়ে টিকিট নিয়ে হাজির মেয়েটি ওর বিভ্রান্তি বাড়িয়ে টিকিট ২টো হাতে নিয়েথ্যাঙ্ক য়্যুজানিয়ে চলে গেল পর দিন  জানতে পারলো মেয়েটি তার বিশেষ লোকের সাথে সিনেমা দেখতে গিয়েছিল নেলো কার্যতঃ খুবই হতাশ এরপরও নেলো অনেক মেয়েকে তার হৃদয়ে আশ্র্য় দেবার জন্য পিড়াপিড়ি করেছিল, কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি কেউ তাকে ভাই, কেউ দাদা বা কেউ বন্ধু বানিয়ে ফেলছে কিন্তু প্রেমিক হিসাবে কারোর মনে ধরছে না   মনের মধ্যে সেই বিভ্রান্তি নিয়েই নেলো  তার পুরো কলেজ লাইফটা কাটিয়ে দিল           
        নেলো একটা ভালো চাকরী পায় বিয়ে করার জন্য মেয়ে দেখতে থাকে কিন্তু সেখানেও শান্তি নেই, কিছুতেই মেয়েরা পছন্দ করতে চায় না বিভ্রান্তি বাড়তেই থাকে তার সাথে চুলকানিও থামেনি, বরং মিড্নাইট  ইংলিশ মুভি দেখে আরো বেড়ে গেছিল এইভাবে চলতে চলতে একদিন নেলোর চোখ চলে গেল পাড়ার বিখ্যাত হট মেয়ে টুম্পার দিকে যার হাজারখানেক বয়ফ্রেন্ড   টুম্পা নেলোর থেকে বয়ষে অনেকটাই ছোট সে যাই হোক, টুম্পাকে নেলোর সেই মিড্নাইট ইংলিশ মুভির হট নায়িকা মনে হতে লাগল যথারীতি বিয়ের প্রস্তাব টুম্পা টুম্পার পরিবারও তাতে সায় দিল বেশ ঘটা করে নেলো-টুম্পার বিয়ে হয়ে গেল বিয়ের এক বছর পর একটা ফুটফুটে মেয়ে হল   চুলকানিটা কমলেও কিন্তু নেলোর বিভ্রান্তিটা থেকেই গেল তবে এবারের কেশটা অন্যরকম নেলো ভাবতে লাগল সদ্যোজাত মেয়েটি আদৌ তার তো ?  
---------------------------------------- 
রামরাজাতলা, হাওড়া