Saturday, December 1, 2018

স্বরূপা রায়



অণুগল্প –
বিশ্বাসঘাতকতা

"কি মামা, কেমন কাটলো মায়াবী রাত?" সকালে মেসে ঢুকতেই প্রকাশকে জিজ্ঞেস করলো তনয়
প্রকাশ কোনো উত্তর না দিয়েই ফ্রেশ হতে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে এসে বসার পরে তনয় আবার জিজ্ঞেস করলো, "কি রে বললি না তো, কেমন কাটলো রাত?"
"ভালো।" সংক্ষেপে উত্তর দিল প্রকাশ
"কি হয়েছে তোর বল তো। সকালে আসার পর থেকেই দেখছি মনমরা।"
"কই কিচ্ছু না তো!"
"কিছু তো হয়েছেই। সত্যি করে বল।"
"না রে সত্যি কিচ্ছু হয়নি।"
"তাহলে তুই আমাকে বলবি না, তাই তো?"
"তোকে বলা যাবে না ভাই।" একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললো প্রকাশ
"এমন কি কথা যেটা আমাকে বলা যাবে না?" তনয় জিজ্ঞেস করলো
"কাল রাতে আমি যার সাথে ছিলাম..."
"হ্যাঁ, কে সে?"
"তুই শুনতে পারবি না নামটা।"
"তুই বল না।"
"সুচরিতা।"
"কি? তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?"
"না ভাই আমি সত্যি বলছি। সুচরিতাকে দেখে আমি নিজেই কাল হতভম্ব হয়ে গেছি।"
"তুই ওর সাথে রাত কাটালি?"
"বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডের সাথে রাত কাটাবো, এতটা ছোটলোক আমি না। আমি কাল ওকে ছুঁয়েও দেখিনি। আমরা দুজন সারা রাত বসে গল্প করেছি। আমাকে বলেছিল তোকে কিছু না জানাতে। কিন্তু বন্ধু হিসেবে সেটা আমি কিভাবে করতাম বল?"
প্রকাশ আর তনয় কলকাতা শহরে একই মেসে থাকে। দুজনেই চাকুরীজীবি। দুজনেই প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ। প্রকাশের গার্লফ্রেন্ডের নাম রিয়া, কলেজে পড়ে। আর তনয়ের গার্লফ্রেন্ড সুচরিতা, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে
তনয় আর সুচরিতার সম্পর্ক ভালো হলেও তনয়ের খুব সন্দেহবাতিক। ওদের মধ্যে এটার জন্যই মাঝেমধ্যে খুব অশান্তি হয়। আর ওদের দুজনের সম্পর্কের মধ্যমনি প্রকাশ। প্রকাশ দুজনের নালিশই শোনে, দুজনকেই বোঝায়। এভাবেই চলছে দুই বছর ধরে
এইদিকে প্রকাশের সাথে রিয়ার সেরকম ঝামেলা কখনোই হয় না। কিন্তু বিগত কিছুদিন ধরেই রিয়া প্রকাশকে একটু এড়িয়ে চলছে। আর সেটাই প্রকাশের সহ্য হচ্ছে না। আর সেই রাগেই প্রকাশ গতকাল রাতে কর্লগার্লের সাথে রাত কাটাতে গিয়েছিল
প্রকাশের থেকে সব শুনে আর তনয় মাথা ঠিক রাখতে পারলো না। ঠিক করে ফেললো যে, সুচরিতার একটা ব্যবস্থা করেই ফেলবে। তনয় তাই প্রকাশকে বললো, "আজই রাতের জন্য তুই আমাকে সুচরিতাকে কর্লগার্ল হিসেবে বুক করে দে।"
"তুই সিওর?" প্রকাশ জিজ্ঞেস করলো
"একশো শতাংশ।"

রাত নয়টা,
তনয় হোটেল রুমের দরজা খুলে ঢুকতেই রুমের আলো নিভে গেল। মুহুর্তেই একটা নারী শরীর জড়িয়ে ধরলো তনয়কে। তনয়ও জড়িয়ে ধরলো ওর প্রেমিকা সুচরিতাকে একজন কর্লগার্ল রূপে
জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে তনয় বললো, "এটা তুমি ঠিক করলে না।"
সুচরিতা কিছু জবাব দেওয়ার আগেই তনয় ওর প্যান্টের পকেট থেকে একটা ধারালো ছুড়ি বের করে বার কয়েক মারলো সুচরিতার পেটে। রক্তাক্ত অবস্থায় সুচরিতা লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। তনয় ওকে ওই অবস্থাতে ফেলেই বেরিয়ে এলো হোটেল রুম থেকে সবার আড়ালে। কারণ, রক্তের ছিটা তনয়ের শার্টেও লেগেছে
নিজের গাড়িতে উঠে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি স্টার্ট দিতেই তনয়ের ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনে ভেসে উঠলো সুচরিতার নম্বর
"আরে কি কান্ড!", "আমি তো সুচরিতাকে এখনি!", "তাহলে কি হোটেল রুমে কেউ চলে গেছে?", "ওকে ওই অবস্থায় পেয়ে আমাকে ফোন করলো?", "কিন্তু আমাকেই কেনো?", "শেষবার সুচরিতা গার্লফ্রেন্ড হিসেবে আমাকে ফোন করেছিল জন্য?", এতগুলো প্রশ্ন একসাথে তনয় নিজেকে করতে লাগলো। রিং হতে হতে ফোনটা কেটে গেল। আবার বেজে উঠলো ফোনটা, সুচরিতারই নম্বর। তনয় এবার ভয়ে ভয়ে ফোনটা ধরলো,
-হ্যালো
-কি গো ফোন তোলো না কেনো? কোথায় তুমি? আমি তোমার মেসে
"আরে এটা তো সুচরিতারই গলা! তাহলে আমি কাকে মারলাম।" মনে মনে ভাবতেই ছুটলো তনয় আবার হোটেলের রুমের দিকে
দরজা খুলতেই তনয় দেখলো, রুম অন্ধকার। বোঝা যাচ্ছে, মাটিতে একটা দেহ পড়ে আছে। সাহস করে দরজা বন্ধ করে লাইট জ্বালালো তনয়
"সর্বনাশ! আমি কি করলাম।" মাথায় হাত দিয়ে বসলো তনয়

পরেরদিন,
তনয়কে পুলিশ হোটেল রুম থেকেই গ্রেপ্তার করলো। মৃতদেহও ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হোটেল থেকেই পুলিশকে সব জানিয়েছে। সুচরিতা আর প্রকাশও এসেছে। সুচরিতার মুখোমুখি হতেই তনয় ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। সুচরিতা "ছিঃ" বলে ঘেন্নায় মুখ ফিরিয়ে নিল
"খুব খারাপ করলি প্রকাশ। তোকে ভাই ভাবতাম।" তনয় বললো প্রকাশকে
"কি করতাম আর বল! নিজের গার্লফ্রেন্ডকে কর্লগার্ল হিসেবে দেখে মাথা ঠিক ছিল না। বুকের পাটায় অত জোর নেই যে খুন করে দেবো নিজেই। কিন্তু আমি জানতাম তোর রক্ত গরম। আর তুই সুচরিতাকে সবসময়ই সন্দেহ করিস। সেই সুযোগেই তোকে দিয়ে আমার কর্লগার্ল গার্লফ্রেন্ডের খুনটা করালাম। আর তুই সুচরিতার চিন্তা করিস না। আমার সাথে ভালো থাকবে।" সমবেদনা জানানোর ভান করে জড়িয়ে ধরে কানে কানে ফিসফিস করে বললো প্রকাশ তনয়কে

1 comment: