Saturday, December 1, 2018

রাণা চ্যাটার্জী




বড়গল্প -
নিখোঁজ

"
ও বৌদি ,বৌদি জলদি দরজা খোলো"-হন্ত দন্ত হয়ে অঞ্জন হাঁকা হাঁকি করেই চলেছে সেই থেকে । একপ্রকার উদ্ভ্রান্ত ভাবে একবার এদিক আর ওদিক করে আর স্বগতোক্তির মতো "দূর বাবা ,কোথায় যে গেলো ,উঠোনে তো ভিজে জামা কাপড় মেলাই রয়েছে ,তবে !" বিপদের সময় যেনো আর মাথাটাও সঠিক কাজ করছো না ।আর করবেই বা কি করে, অকস্মাত্ এমন অনভিপ্রেত ঘটনা যেন ঝড়েরই তো পূর্বাভাস ।এখনো গরম কাল ভালো করে আসেনি ,একটু হালকা ঠান্ডার আমেজ ,কিন্তু এমন কল কল করে ঘামছে অঞ্জন ,তার ওপর এ বাড়িরও দরজা বন্ধ!

অঞ্জন এ পাড়াই ছেলে ।ওই শিব মন্দিরের পাশে ওর একটা ছোটো খাটো স্টেশনারি গুমটি আছে।খুব ভালো ও পরোপকারী হবার সুবাদে অনেকেই অঞ্জনের ওপর ভরসা করে যেকোন প্রয়োজনে ,বিপদে আপদে ।এই সূত্র ধরে ফেব্রুয়ারি হলে দুমাস হলো এই বাড়ীর দাদা বৌদিদের এক মাত্র সন্তান ক্লাস থ্রি তে পড়া "আয়ুশ "কে সামনের মোড়ে স্কুল বাসে চাপানো ,নামানোর দায়িত্বটা নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছে সে ।এই কাজটা এতো দিন ধরে আয়ুশের মা কৃষ্ণাই সামলে এসেছে।কিন্তু,গত ডিসেম্বরে ছাদের সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে , সে এমন ভাবে পড়েছে ,ডক্টর বাবু একদম দৌড় ঝাঁপ করে হাঁটাচলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন কৃষ্ণার ।বরের আসানসোলে  পোস্টিংগ হওয়ায় সে তো সকালেই নাকে মুখে গুঁজে বেরিয়ে পরে ,অগত্যা ভরসা অঞ্জন । সকালে আয়ুশ কে ঠিক নয়টা দশ মিনিটে ,স্কুল বাসে চাপিয়ে তবে অঞ্জন দোকান খোলে ।আবার দুপুরে ভাত খেতে যাবার আগে দেড়টা নাগাদ ওকে বাস থেকে নামিয়ে, সাইকেল করে গল্প করতে করতে কৃষ্ণা বৌদির হাতে সঁপে দিয়ে তবে সে নিশ্চিন্ত ।এই বিষয়টার কোনরকম হেরফের হয়নি এই দুমাস ।আর আজ, এই দৈনন্দিন ঘটনার এক পুনরাবৃত্তি না হওয়াতে অঞ্জন সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে ।

কিন্তু একটা বিষয় তার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না ,সে যখন নিজে আয়ুশকে সকালে স্কুল বাসে চাপিয়েছে ,তখন কি জন্য ও ফিরলো না ! কেনই বা বৃদ্ধ ড্রাইভার বললেন ,"আজকে ,তো ছাত্র ইস্কুলে যায় নি ,তবে আপনি কেনো দাঁড়িয়ে "!ওখানেই জোর দিয়ে অঞ্জন বলেছিল ,"যায়নি কথাটার মানে কি ,আমি নিজে চাপিয়েছি "।কন্ডাক্টর অবাক হয়ে চিন্তিত হয়ে  স্কুলে ফোন করার উপদেশ দিয়ে বাস ছাড়লে এক রাশ শূন্যতা নিয়ে টলতে টলতে অঞ্জন ফিরে আসে খবরটা জানাতে ।

অঞ্জনকে ওভাবে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে স্নান সেরে বেরিয়ে কৃষ্ণা ঠিক কোনো বিপদের আশঙ্কা হয়েছে বুঝে ব্যাকুল হয় । "আমার বাবু কই অঞ্জন !,তুমি যে একা "বলে চিত্কার করে ওঠে ! একটু বিষয় টা বুঝে নিয়েই ,জলদি স্কুলের নাম্বারে ফোন করতেই ,ক্লাস টিচার গুরপ্রীত ম্যাম অবাক  বিস্ময়ে জানালেন আজ তো আয়ুশ দত্ত স্কুলেই আসেনি "। আশে পাশে কয়েক জন গলার আওয়াজে ততক্ষণ বেরিয়ে এসেছে বাইরে ।সকলের কৌতুহলী দৃষ্টিতে কৃষ্ণা ,অঞ্জনের বুঝতে বাকি রইল না যে রহস্যে ভালোই ঘনিভূত হয়েছে ! হটাত করে এমন বিপদের কালো মেঘ ,অসহায়তা আর  কৃষ্ণার একটা চাপা আর্তনাদ পরিবেশ টাকে এক লহমায় ভারী করে করে তুলেছে !

এই পাড়াটা একদম নতুন তৈরি হয়েছে ।এখনো অনেক নতুন বাড়ি নির্মাণ হয়েই চলেছে ।এই বাস স্টপে একমাত্র আয়ুশ ওঠে,তার ফলে যাবার সময় দুই নম্বর বাস টা ওকে নিয়ে গেলেও ফেরে পাঁচ নম্বর বাসে ।অঞ্জন এই দুমাসে খেয়াল করে দেখেছে প্রায়ই এই বাসটায় কনডাকটর পাল্টায় ।আজো যেনো একজন বেঁটে কালো করে একজন ছিলো গেটে । বর্ধমান শহরেও স্কুল বাসগুলোর সব এক রঙ,হলুদ হবার পর থেকে বেশ বিভ্রান্ত হয়ে যায় অঞ্জনের ।একটার পর একটা একই রঙের ভিন্ন ভিন্ন স্কুলের বাস আসতেই থাকে অনবরত ।তাই নিয়ম করে সামনে থেকে সে বাস নম্বর ,স্কুল নাম দেখে তবেই আয়ুশের হাত ছাড়ে ।আজও এই ঘটনার অন্যথা হয়নি ,আর তার মধ্যেই এমন বিপত্তি !

প্রতিদিনই ভিড় থাকলেও আজকে যেনো একটু বেশীই ভিড়ে ঠাসা বাসের ভেতর টা ।বাসের পা দানিতে পা দিতেই কনডাকটর সবাই কে ঠেলে পিছনের দিকে এগিয়ে যেতে বলল।কিন্তু উঠে থেকেই ভীষণ আশ্চর্য লাগছে আয়ুশের ,চেনা ব্ন্ধু গুলো গেলো কোথায় আজ! একজন কেও তো চেনা লাগছে না ! এই সব ভাবতে ভাবতে ,ওর অবাক চোখ আটকে যায়, ওদের মতোই সাদা জামা কিন্তু নিচের প্যান্ট যে একদম অন্য রকম চেক কাটা ডিজাইনের ওপর !আয়ুশের বুঝতে বাকি থাকে না যে ,ভুল করে সে আজ অন্য বাসে চেপে পড়েছে !সামনের এক ছাত্র কে তাদের স্কুলের নাম জিজ্ঞেস করতেই সে এমন বোকা প্রশ্নে হেসে উঠতেই আয়ুশ চুপ করে ভিড়ের মাঝে রডে হেলান দিয়ে ভাবুক হয়ে ওঠে "এত্তো বড়ো ভুল হয়ে গেলো দেখে"!

ততক্ষণে বাস হাইওয়ে ধরে হু হু করে ছুটে চলেছে ।ওদিকে কৃষ্ণা বৌদি তো আয়ুশের সকল বন্ধুদের বাড়িতে যদি আয়ুশ গিয়ে থাকে ,আজ স্কুল গিয়ে ছিলো কিনা এসব ফোন করে করে হন্যে হয়ে গেল ।স্কুল থেকে  ইতিমধ্যে আয়ুশের বাবাকে সব কিছু বিস্তারিত জানিয়ে,পুলিশ কে জানাতে অনুরোধ করে,আর এও জানায় যে তারাও সব রকম ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে ।আয়ুশের বাড়িতে যেভাবে  কান্নার রোল ওঠেছে ,পাড়া প্রতিবেশীদের আনাগোনা বেড়েই চলেছে ।পাড়ার বয়স্ক মানুষ জন সকলেই এক বাক্যে পুলিশকে খবর দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় আর দেখতে পেলেন না ।সকলের একটাই প্রশ্ন অঞ্জন কে ,"তুমি নিজে হাতে বাচ্ছা টাকে বাসে চাপিয়েছোতো ?"এরই মধ্যে আয়ুশের বাবা থম থমে মুখ নিয়ে ফিরতেই কৃষ্ণা বুকের ওপর আছড়ে পড়ে হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলে ।এই দৃশ্য যে কতো করুন তা  ভাষায়  প্রকাশ করা মুশকিল ।

বাস টা স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়াতেই যে যারমতো লাফিয়ে নিজেদের ক্লাসে পৌঁছে গেলো ।ড্রাইভার ,কনডাকটরও নিজের মতোন চলে যেতে আয়ুশ এতটুকু ভয় না পেয়ে চুপ করে ,মা -বাবার মোবাইল নম্বর টা স্মরণ করে নিলো। যদি কাউকে সামনে পায় তো , একটু মোবাইল চেয়ে বাড়িতে একটু জানিয়ে দিতেই হবে ,এই ভেবে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে ।
স্কুলের ভেতর থেকে হটাতই,ঝক ঝকে সাদা পোশাক ,সানগ্লাস পরা এক আংকেল ,হয়তো স্যার হবেন । আয়ুশ কে একা দেখে "এই ছেলে ,তুমি এখানে কি করছো "বলে উঠলেন ।ওনাকে সংক্ষেপে বলতে গিয়ে কান্না পেয়ে গেলো আয়ুশের ।আর কতো টুকুই বা বয়স ওর ,তবুও একাই নিজেকে স্বান্তনা দিয়ে যাচ্ছে ।উনি শুনে বললেন ,"তোমার তো মডেল স্কুল ,দাঁড়াও প্রিন্সিপাল কে ফোন করি ,উনি আমার পরিচিত "! আয়ুশের সামনেই উনি ফোন করলেন ,ও প্রান্ত থেকে আদৌ কেউ রিপ্লাই দিলেন কিনা তা বুঝতে না পারা গেলেও ইনি বলে উঠলেন ,"এই রে ,আমাকেই দায়িত্ব  নিয়ে পৌঁছে দিতে হবে !আচ্ছা দেখছি কি করা যায় "বলে সামনে দাঁড়ানো বাইকে আয়ুশ কে বসিয়ে গাড়ির গতি বাড়ালেন ।

এদিকটায় কোনদিনই আসে নি আয়ুশ ।শহর ছাড়িয়ে এক ফাঁকা জায়গায় এই "হোলি মিশন স্কুল "টা ।বাবার কাছে রোজ রাতে অ্যাডভেঞ্চারের গল্পে শুনে বড়ো হওয়া আয়ুশ,তার সাথে যে এমন ঘটনা ঘটবে ভাবতেই পারেনি কোনদিন ।কখন যে মা এর কোলে শুয়ে এই সারাদিনের গল্পে গুলো  বলবে ,তা ভেবেই উদগ্রীব আর অস্থির হয়ে উঠছে সে । বাইক টা ছুটেই চলেছে কখন থেকে ,যাচ্ছে তো যাচ্ছেই কতো অচেনা সংকীর্ণ গ্রাম্য মোরাম রাস্তা ধরে ! কৌতুহলি আয়ুশ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় ,"এটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায় "শুনেই মানুষ টা কেমন যেনো পাল্টে গেলো ।এক দাবরানি দিয়ে খেঁকিয়ে চুপ করে বসতে বলতেই আয়ুশ একদম চুপসে গেলো ।

এক জনমানব শূন্য ফাঁকা জায়গাতে বাইক টা দাঁড়ালো ।নেমে হাত টা ধরে হিড় হিড় করে টেনে একটা টিনের ছাউনি বাড়িতে ঢোকাতে যেই গেছে ওমনি চিত্কার করে ওই লোক টার হাতে সজোড়ে এক কামড় দিয়ে পালাতে থাকে সে । কিন্তু কতক্ষণ ওই টুকু ছেলে শুনশান অচেনা জায়গায় ক্ষ্যাপা নেকড়ের সামনে দৌড়োয় !ওকে তুলে মাটিতে এক কাছাড় দিয়ে আবার পাঁজাকোলা করে এক বদ্ধ ঘরে ভরে দিলো কিছুক্ষণের মধ্যে ।আয়ুশের যেনো তেষ্টায় আর এমন ভাবে আছাড় খেয়ে প্রাণ বায়ু বেরিয়ে যেতে বসেছে ! সঙ্গের  স্কুল ব্যাগ থেকে,জলের বোতল টা হাত দিয়ে খেতে যাবে যেই ,এক মোটা  মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে ওই লোকটা দরজা খুলে ভেতরে এলো ।কি সব বিড় বিড় করে নির্দেশ দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো ।ওই মহিলা টা স্কুল ব্যাগ ,টিফিন ,জল সব কিছু কেড়ে নিযে একটা অন্য জলের বোতল ছুঁড়ে দিলো ।আয়ুশের আর কিছু বলার ক্ষমতা নেই ।তৃষ্ণায় তার বুক ফেটে যাওয়ায় ওই জল টা চুপ করে খেতে লাগলো  "বাপরে কি বিশ্রী একটা গন্ধ যেনো !

তারপর সেই যে ঘুমিয়েছে ,যখন ঘুম ভাঙ্গলো দ্যাখে ,গা থেকে স্কুল ড্রেসটা খুলে কেমন যেনো ছেঁড়া ফাটা গেঞ্জি ,প্যান্ট পড়ানো হয়েছে ! গোটা হাতে পায়ে এক অসহ্য যন্ত্রণা । অন্ধকার ঘরে হাতড়ে হাতড়ে দরজার কাছে এক ছোট্ট ফুটোতে চোখ রেখে সে অবাক হয়ে গেলো! আরে এ তো সেই সকালে বাসের বেঁটে কনডাকটরটা! আর একটা লোকের সাথে নিচু স্বরে  কতকিছু কথা বলছে "রাত বারোটায় এখান থেকে রওনা দিয়ে ভোরের মধ্যে ধানবাদ পৌঁছে ছেলেটাকে শর্মাজীর হাতে তুলে  দিয়ে তবে মুক্তি আসবে ! শুনে আয়ুশের বুঝতে আর বাকি রইল না যে ,এক বড়ো পাচার চক্রের ফাঁদে পরে গেছে সে ।মাথাটা খুব ঝিম ঝিম  করছে তার ,আর সেই ,'রাস্তায় বাচ্ছা গুলোর ভিক্ষা করার' চেনা ছবি তাড়া করে বেড়াতে থাকে,স্কুলে "অলরাউন্ডার পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড" পাওয়া আয়ুশ দত্তকে । নীরবে কেঁদে কেঁদে গড়িয়ে আসা চোখের জল মুছে আবার নিজের জায়গায় ফিরে আসতে ,পায়ে কি যেনো একটা কার্ডের মতো অন্ধকারে স্পর্শ করে তাকে ।কুড়িয়ে নিয়ে বুঝতে পারে ,স্কুলে ড্রেস খোলার সময় আই কার্ড টা ভুলে ফেলে গেছে ওরা ।প্যান্টের পকেটে একমাত্র পরিচয় পত্র টি সযত্নে রেখে ,বসে পড়ে হতাশ হয়ে ।

কিছুক্ষন পর আবার সেই মহিলা দরজা খুলে আসতেই চুপটি করে শুয়ে পড়লো আয়ুশ ।সে উপলব্ধি করলো, এক তীব্র টর্চের আলো তার গায়ের ওপর ফেলে সরোজমিনে দেখে ,কি যেনো একটা খাবার রেখে চলে গেলো ।মায়ের কাছে রোজ এটা ওটা আবদার করে খেতে চাওয়া সে আজ কত্ত অসহায় এটা ভেবে ,রেখে যাওয়া শুকনো বাসি একটা পাঁউরুটিতে কামড় দিলো আয়ুশ ।

ওদিকে ততক্ষণে কলকাতা পুলিশে উঁচু পদে কর্মরত আয়ুশের বড়মামা যেটুকু করার অত্যন্ত তত্পরতার সাথে করে চলেছেন ।ওপর থেকে নির্দেশ চলে যেতেই ,বর্ধমানের সকল লেভেলের পুলিশ তাদের সেরা টীম নিয়ে ইতিমধ্যে গাড়ি ধরে ধরে তল্লাশি ও কিছু সন্দেহ ভাজন ব্যক্তিকে আটকের কাজে নেমে তদন্ত শুরু করেছে ।অঞ্জন কেও পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ।তবুও যতক্ষণ না ঘরে ছেলেটা ফিরছে কেউই শান্ত হতে পারছে না ।

হটাত আচমকা গাড়ির ঝাঁকুনি আর তীব্র শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় আয়ুশের ।নিজেকে সে  আবিষ্কার করলো ,একটা ম্যাটাডরের পেছনে ত্রিপল ঢাকা নোংরা পরিবেশে হাত পা বাঁধা ,মুখে কাপড় গোঁজা অবস্থায় ।ব্রেক কষে গাড়িটা কোথায় যেনো একটা দাড়াঁলো ।পরবর্তী কিছুক্ষণ আয়ুশ ,চোখ বুজে কেবল অনুভব করে গেলো ,কারা যেনো ওকে দড়ি খুলে নামালো ।একটা গদি সিটে শুইয়ে  নিজেদের মধ্যে বললো ,'আর একে বোধহয় ইঞ্জেকশন দেবার দরকার নেই ,আগের টারই ঘোরই কাটে নি এখনো "।আয়ুশ পরে চোখ খুলে দেখলো ,সে একটা অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে আছে । শহর ছাড়িয়ে আগের গাড়িটি পাল্টিয়ে , অ্যাম্বুলেন্সটি রওনা দিলো ভীষণ বেগে হর্ণ বাজিয়ে ।রোগী না হয়েও রুগীর সিটে শুয়ে অপরাধীরা পার পেতে কতো কি যে করছে তা ভাবতে ভাবতে মা কে খুব মনে পরে গেলো আয়ুশের ।মনে পড়তে লাগলো বাবার গল্প বলা ,বন্ধুদের সাথে হই হুল্লোড় এর নানান ভিড় ।এর পর তার জীবন যে কোন দিকে যাবে ,আদৌ বেঁচে থাকবে কিনা সেটাই  বা কে জানে!

এই সব ভাবতে ভাবতে ঝিমুনি আসতেই একটা হই হই আওয়াজে চমকে উঠলো ।দেখতে পেলো প্রচুর পুলিশ রাস্তায় সব গাড়িকে চেকিং করছে ।ক্ষনিকের জন্য আয়ুশের মন যেন একটু দিশা পেলো । কিন্তু কই আর সে সুযোগ ।ওদের গাড়িটা দাঁড় করাতেই খালাসী গাড়ীর কাগজ পত্তর নিয়ে নিচে নেমে পুলিশ অফিসার কে আঙ্গুল দেখিয়ে রুগি আছে  বলে হয়তো বুঝিয়ে সবুজ সংকেত আদায় করে আবার স্টার্ট করলো ।ঠিক এই সময় হটাত্ মাথায় এক ছোট্ট বুদ্ধি খেলে যেতেই আয়ুশ ,জানালার ফাঁক দিয়ে পকেট থেকে আই কার্ড টি টুক করে ফেলে দেয় ।
ঠিক দশ মিনিটের মাথায় আবার সামনের মোড়ে ,এই থাম থাম বলে কিছু পুলিশ অ্যাম্বুলেন্স টা ঘিরে ধরে ।ড্রাইভার মাথা  বের করে চেকিং হয়ে গেছে আর সিরিয়াস রুগী আছে বলতেই এক পুলিশ অফিসার কলার ধরে হিড়হিড় করে দুজনকেই টেনে নামিয়ে আচ্ছা করে উত্তম মধ্যম দিয়ে হাতকড়া পড়িয়ে দিয়ে বললো "অনেক খেল দেখিয়েছো চাঁদু ,এবার আমাদের আতিথেয়তা নেবে চলো "! ততক্ষণে আয়ুশ কে উদ্ধার করে এক পুলিশ কাকু জড়িয়ে ধরে তার আইকার্ড ফেলে দিতেই যে এতো বড়ো পাচার চক্র টাকে ধরে ফেলা সম্ভব হলো জানিয়ে ,তার উপস্থিত বুদ্ধির তারিফ করতে থাকেন ।সঙ্গে সঙ্গে ওপর মহলে ফোনে জানিয়ে দেন "অপারেশন সাকসেশ"। একটা গাড়িতে আয়ুশ কে চাপিয়ে দুই পুলিশ বর্ধমান থানার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন ।
এখুনি আয়ুশের মা বাবাকে জানিয়ে দেওয়া হলো ,ওনারা যেনো রাতেই থানায় হাজির হয়ে তাঁদের ছেলেকে নিয়ে যান আর তাঁদের ছেলে সুস্থ আছেন ।রাতের মধ্যেই এমন  অপ্রত্যাশিত খবরে মানুষ গুলোর যেনো ধড়ে প্রাণ এলো।অঞ্জন কে রাতেই থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হলো ।পরের দিন সকালে খবর কাগজের হেডিং এ বেরুলো "স্কুল ছাত্রের অদম্য সাহসিকতা ও বুদ্ধিতে পাচার চক্রের হদিস ।"আরো বিস্তারিত ভাবে জানা গেলো কনডাকটরটি সব কিছু পরিকল্পনা করে ছিলো ওই  ভদ্রবেশি বাইক আরোহী টিকে সঙ্গী হিসাবে নিয়ে ।পুলিশ লকআপে কনডাকটরটি জেরায় জানায়,"ওদের কাছে খবর ছিলো যে ওই বাস স্টপে ছেলেটি একা ওঠে আর যিনি চাপাতে যায় সে মোবাইলে মগ্ন থাকে বেশি ।আর এই সুযোগে এই বাস স্টপ আসার আগেই ওরা আয়ুশের স্কুলের নামের একটা বোর্ড ,বাস নম্বর সব কিছু বাসের কাঁচে সামান্য সময়ের জন্য লাগিয়ে দেয় আর এতেই সফল হয় তাদের পরিকল্পনা ।"এই পাচার চক্রের সাথে যুক্ত কিছু অপরাধী এই ঘটনা সামনে আসায় পুলিশের জালে ধরা পড়ে ।শেষ অবধি মাথা ঠান্ডা রেখে আয়ুশ যেভাবে সফল হলো তার দৃষ্টান্ত হিসাবে স্কুল ও থানা উভয় জায়গা থেকেই তাকে পুরস্কৃত করা হয় । ছেলেকে বুকে জড়িয়ে কৃষ্ণা সবার সাথে প্রায় ভোর রাতে হই হই করে বাড়ি ফেরে বর্ধমান পুলিশ ও কলকাতা পুলিশে কর্মরত দাদা কে অশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে ।

1 comment:

  1. সময় উপযোগী দারুণ লেখা। বাহ

    ReplyDelete