Saturday, April 4, 2020

সম্পাদকীয় ও সূচীপত্র


আমাদের পদক্ষেপ পত্রিকার ব্লগ ম্যাগাজিন
প্রথম সংখ্যা * মার্চ, ২০২০  * থিম- ফিনিক্স
প্রকাশঃ  ০৪-০৪-২০২০
সম্পাদক - নির্মলেন্দু কুণ্ডু
সহ-সম্পাদক - রাজকুমার ঘোষ
কার্যকরী সম্পাদক - অর্চক ঘোষ
ব্লগ রূপায়নে - রাজকুমার ঘোষ


সম্পাদকীয়

একটু নাটকীয় কায়দায় বলা যায়— ''এ বড় সুখের সময় নয়" ৷ সত্যিই তো, এই বিশ্ব মহামারী বা অতিমারীর কবলে পড়ে যখন দেখে চলেছি মৃত্যুমিছিল, যখন বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক রথের চাকা স্তব্ধ, যখন মানুষের দৈনন্দিনতা প্রশ্নের মুখে, তখন কী সত্যিই ভালো থাকা যায় ? প্রতিদিন খবরের চ্যানেল ঘোরালেই লাফিয়ে বাড়ছে মৃতদেহের সংখ্যা ৷ পাওয়া যাচ্ছে না সৎকারের জায়গাটুকুও !! প্রবল প্রতাপান্বিত শাসকগোষ্ঠী, ধনবান প্রভাবশালী শ্রেণী থেকে শুরু করে আমজনতা সবার মধ্যেই একটাই চিন্তা— Who is the next.. পোপ ফাঁকা ময়দানের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়াচ্ছেন প্রথামাফিক, বহু হাজার বছর পর হয়তো এবারই প্রথম বন্ধ হবে হজ, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আজ ভক্তশূন্য, কাউকেই যেন বলতে পারছি না— "বিপদে মোরে রক্ষা কর" !

তবে সত্যিই কী আমি নিরাশাবাদী ? না, শুধু আমি কেন, আপনি  ও আপনারাও তো আশার জাল বুনছেন প্রতিনিয়ত ৷ এই পরিস্থিতিতে কেউ কেউ খুঁজে পেয়েছেন বাঁচার নতুন মানে ৷ কর্মব্যস্ত রোবোটিক জীবনে যেন নেমে এসেছে এক মানবিক অবসর ৷ House-টা যেন সত্যিই Home-এ পরিণত হচ্ছে ৷ কেউ ওল্টাছেন পুরনো স্মৃতির পাতা, কেউ বা ফিরে যাচ্ছেন বাকি রাখা টেলি-কথনে, সেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে আজ যেন সবার একটাই প্রার্থনাবিশ্বকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করো ! আজ শুধু আমি নই, আমরা প্রাধান্য পাচ্ছি ৷ আর আমাদের এই বেঁচে ওঠার পথে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠছেন আমাদেরই সহবাসী কিছু মানুষপেশাগতভাবে কেউ চিকিৎসাকর্মী, কেউ শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রক, কেউ বা প্রশাসক ৷ কোথাও যেন স্পষ্ট হচ্ছে সেই ভুলে যেতে বসা বাক্যটা— "সকলের তরে সকলে আমরা/প্রত্যেকে আমরা পরের তরে" ৷ ধ্বংসের দাবানল থেকে এই যে পুনর্জাগরণ বা পুনরুজ্জীবন এটাই তো  আজকের জিয়নকাঠি ৷ এই শাশ্বত আকাঙ্খাই তো আমার-আপনার মতো অসংখ্য মানুষকে পরিণত করেছে এক-একটা ফিনিক্সে ৷ কবির কথা বড় মনে পড়ছে— "মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও" ৷ সোস্যাল ডিসট্যান্সিং আক্ষরিক অর্থে পাশে এসে দাঁড়ানোর অনুমতি না দিলেও অপরের কল্যাণে নিজেকে ঘরবন্দি করে রাখাটাও তো আসলে অপরের পাশে দাঁড়ানোই ৷ বা ধরুন সেই সব চিকিৎসাকর্মী-শৃঙ্খলারক্ষকরা, যাঁরা আক্ষরিক অর্থেই পাশে দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের, হাতে হাত রেখে লড়াই করার শক্তি যোগাচ্ছেন, মৃত্যুর মুখ থেকেও ছিনিয়ে আনছেন জীবনকে ৷ তাঁরা সবাই তো এক-একজন ফিনিক্স ৷

আমাদের পদক্ষেপ পত্রিকার এই ব্লগ বা ওয়েব ম্যাগাজিন সংখ্যা তাই সেই সমস্ত অকুতোভয় মানুষদের নতমস্তকে অভিবাদন জানায় ৷ পরিশেষে আরো একবার অনুরোধ জানাই— "Stay Home, Stay Safe"
=======================================================================================
প্রচ্ছদের ছবিঃ Google থেকে সংগৃহীত  
===========================================================================  

লেখকসূচী

সাক্ষাৎকার
সুজন ভট্টাচার্য

কবিতা
আর্যতীর্থ
তৈমুর খান
জ্যোতির্ময় মুখোপাধ্যায়
সাত্যকি
সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়
তাপসী শতপথী পাহাড়ী
চন্দ্রকান্ত চক্রবর্তী
বিপ্লব মাহাত
অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
বাপন হাজরা
ড. রমলা মুখার্জী

গল্প
অর্ণব গরাই
সুজাতা মিশ্র (সুজান মিঠি)
কবিরুল
মানবেশ মিদ্দার
বিহির আলম
রাজকুমার ঘোষ

কবিতা
পৃথা চট্টোপাধ্যায়
আজাহার সেখ
শাহনাজ আহমদ
হিয়া সুলতানা
পারমিতা ভট্টাচার্য
সুপর্ণা সেনগুপ্ত
কুনাল গোস্বামী
দুলাল প্রামাণিক
মৌমিতা ঘোষ
সৌমেন্দ্র দত্ত ভৌমিক
ইলা কারকাট্টা

গ্রন্থ আলোচনা
হজমিগুলি, হাফপ্যান্ট আর কুলের আচারদেবব্রত ঘোষ মলয়

পত্রিকা আলোচনা
ইয়ে পত্রিকা (প্রবাদ সংখ্যা)

সুজন ভট্টাচার্য



সাক্ষাৎকার
"মেধাহীনতার বাতাবরণ ফ্যাসিবাদের উর্বর ভূমি"


"যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই / পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন"কথাটা শুনলে মনে আশার সঞ্চার হয় কিন্তু বর্তমান সামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ছাইয়ের গাদা দেখে মনে ভয়ের শিহরণই জাগছে এই ছাইয়ের উৎস কী , কীই বা এর শেষ পরিণতিতা নিয়ে অনেক তত্ত্ব, অনেক তথ্য, অনেক জল্পনা এই বিশ্বায়িত দুনিয়ায় আমাদের হাতের মুঠোয় চারিদিকের এই অবিশ্বাস হতাশার পরিবেশের মাঝে তবুও কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা সত্য, শিব সুন্দরের উপাসনা করেন, জিইয়ে রাখতে চান হাজার হাজার বছর ধরে লালিত দেশের শাশ্বত সংস্কৃতিকে খুঁজে চলেন সেই 'অমূল্য রতন' আমাদের পদক্ষেপ পত্রিকার এই বিশেষ সংখ্যায় সেই ফিনিক্সের সন্ধানে রত তেমন একজন মানুষকেই আমরা পেয়েছি, কথা বলেছি, শুনেছি ফিনিক্স খোঁজার সড়ক-সন্ধানের গল্প কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক সুজন ভট্টাচার্যের মুখোমুখি হয়েছেন পত্রিকা সম্পাদক নির্মলেন্দু কুণ্ডু

আমাদের পদক্ষেপ : আমাদের পদক্ষেপ পত্রিকাকে সময় দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাই আপনাকে প্রথমেই যে বিষয়টা জানতে চাইবো, বর্তমান পরিস্থিতিতে একজন স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আপনি কেমন আছেন ?

সুজনবাবু : ভাল নেই, ভাল অনুভব করার সামান্য প্রসঙ্গও নেই। তুমি বললে স্বাধীন নাগরিকের কথা। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বিকিয়ে দেবার তো উন্মাদ যজ্ঞ চলছে। আর গোটা দেশের যাবতীয় মানুষের নাগরিকত্বকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। যে টুকু তবু ছিল, দিল্লীর নৃশংসতা সেটাও দূর করে দিয়েছে।

আমাদের পদক্ষেপ : এই পরিস্থিতি তো কাম্য ছিল না ধর্ম নিয়ে যে উন্মাদনা, যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে, তা তো কোন ধর্মেরই আদি কথা নয় এই প্রসঙ্গেই মনে পড়ে বিশ্বাসের ভিত্তির কথা কেন লিখতে শুরু করলেন এই ম্যাগনাম ওপাস ? তখনও তো এত কঠিন অবস্থা ছিল না...

সুজনবাবু : ছিল না ঠিকই। তবে পরিবর্তন যে জোর করে টেনে আনা হচ্ছে, সেটা টের পেয়েছিলাম। বাংলাদেশে খুন হয়েছেন অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর, অনন্তবিজয়। এদেশে নিহত হয়েছেন দাভোলকর, পানেসের আর কালবুর্গি। তখনই চেষ্টা করেছিলাম ১৮ই এপ্রিল মঞ্চের ছাতায় সমমতাবলম্বীদের ঐক্যবদ্ধ করতে। আংশিক সাফল্য পেল। কিন্তু অচিরেই টের পেলাম সর্ষের মধ্যেই ভুত। তখনই বিশ্বাসের ভিত্তির কাজ শুরু।

আমাদের পদক্ষেপ : কাজ করতে গিয়ে কী দেখলেন ? এই বিভেদের উৎস আসলে কোথায় বলে মনে হয় ?

সুজনবাবু : উৎস অজ্ঞানতা আর সেই থেকেই জন্মানো গোপন দ্বেষ। প্রায় কেউই মুক্ত নয় সেই দ্বেষ থেকে। একটা কথা আমি খুব স্পষ্ট ভাষায় বুঝি। ইতিহাসের ভুলভাল গল্প খাইয়ে মানুষের মগজ ধোলাই চলছে। আর প্রায় সকলেই সেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন।

আমাদের পদক্ষেপ : আমাদের শিশু পাঠ্যপুস্তকই কী সেজন্য দায়ী বলে মনে হয় ? ছোট থেকেই যেন দাগিয়ে দেওয়া হল, অমুক বাইরে থেকে এসে দখল করেছেন ৷অথচ তার পুরো পরিচয়টা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাই দেখানো হল না !

সুজনবাবু : আমাদের সরকারি ইতিহাসচেতনা আর সাহিত্যের মধ্যেই এই প্রবণতা রয়েছে।

আমাদের পদক্ষেপ :  কিন্তু এই আধাখাপছাড়া ইতিহাসচর্চা তো আখেরে ক্ষতিই করছে আমরা না জানছি অতীত, না বুঝছি বর্তমান অবস্থায় যাঁরা 'শিক্ষার আলোয় আলোকিত', তাঁরাও কেন চুপ করে আছেন ? সরকারের নানা দোষ-ত্রুটিতে যাঁরা খড়গহস্ত হন, সমস্যার এই মূলে গিয়ে আঘাত করেন না কেন ?

সুজনবাবু :  কারণ, তারা নিজেরাও বোঝেন না। আমি বিশ্বাসের ভিত্তি লিখতে পেরেছি, কারণ আমি অ্যাকাডেমিক ইতিহাসের লোক নই। দ্বিতীয়ত এরা নিজেরাও সেই সংস্কারের বশ। ফলে যথার্থ তলিয়ে ভাবার সুযোগ এদের আর হল না।

আমাদের পদক্ষেপ : বিশ্বাসের ভিত্তি মানুষের বিশ্বাসকে কতখানি নাড়াতে পেরেছে বলে মনে হয় ?

সুজনবাবু : সম্ভবত তিলমাত্রও নয়। কারণ বইটি আয়তন বিষয়গাম্ভীর্যের কারণে সাধারণ মানুষের হাতে যাওয়া সম্ভব ছিল না। যাদের পড়া উচিত ছিল, তাদের অধিকাংশই এড়িয়ে গেছেন। কারণ আমি কোনো দলের তালিকাভুক্ত নই। আবার অনেকেই ভেবেছেন, ধুর, মালটা আবার কী লিখবে! আমাদের পাড়ার পঞ্চাদা অনেক বেশি জানে। ফলত গোটা প্রজেক্টটাই বিস্মৃতির অন্তরালে চলে গেছে। হ্যাঁ, দুচারজন পড়েছেন, ভেবেছেন। কিন্তু তারা এমনিতেও মগজ চালাতেন। ফলে বাড়তি কোনো লাভ তাদের হয়নি। এখন মনে হয় গোটাটাই পণ্ডশ্রম। একটি কাগজেও রিভিউ হয়নি। কেউ কোথাও প্রকাশ্যে একটি শব্দ উচ্চারণ করেনি। তাহলে লোকে জানবে কী করে? ফল যা হবার, তাই হয়েছে।

আমাদের পদক্ষেপ :  তারপরেও কিন্তু আপনি হতোদ্যম হননি ! বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বরং আপনার সরব উপস্থিতি ফেসবুকে অনেকেই দেখেছি এই হতাশার মাঝেও জেগে ওঠার নতুন প্রেরণা পান কোত্থেকে ?

সুজনবাবু : কারণ পৃথিবীকে শিশুদের বাসযোগ্য করে যেতেই হবে, এই দায়। হতাশা যে আসে না, কে বলল? অসংখ্য পরিচিত মুখের মুখোশ খুলে যেতে দেখেছি। কিন্তু যে, লড়াইটা ছাড়তে পারব না, তাই।

আমাদের পদক্ষেপ : গিলগামেসের মহাকাব্যের অনুবাদ কী এই লড়াইটা জারি রাখার জন্যই ?

সুজনবাবু : একদম। পৃথিবীর আদিতম লিখিত মহাকাব্যে কোনো ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ নেই, বিরাট এক যুদ্ধের কাহিনী নেই। মানুষের অমরত্বের সন্ধানের কাহিনী আছে। এই মানবিক আবেদনেই গিলগামেশ হয়ে আছে পৃথক।

আমাদের পদক্ষেপ : সেই মানবিক আবেদন কী মানবের হাতে সেভাবে পৌঁছেছে ? অমরত্বের সেই সন্ধান কী অমৃতের সন্তানরা আদৌ পেয়েছেন ? নাকি মানুষ, বা বলা ভালো পাঠক এখনও সিরিয়াস গ্রন্থপাঠে উৎসাহী নন ?

সুজনবাবু : সেটাই সত্যি। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত সিরিয়াস সাহিত্যের যে কদর ছিল, সেটা আজ মৃতপ্রায়। এখন হাল্কা প্রেমের মিষ্টি কাহিনী এবং থ্রিলারের যুগ। আর হ্যাঁ, হিন্দু ধর্মকে গ্লোরিফাই করে লেখা অনৈহাসিক উপাখ্যানের।

আমাদের পদক্ষেপ : সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে কলমকার সুজন ভট্টাচার্য কোথাও কী হারিয়ে যাচ্ছেন না ?

সুজনবাবু: আমার লড়াইটা ফালতু হয়ে যাচ্ছে, এটুকুই বলতে পারি। হ্যাঁ, আমি নিজের বিবেকের কাছে স্বচ্ছ। কিন্তু তাতে সমাজের কী যায় আসে?

আমাদের পদক্ষেপ : বর্তমান পাঠককুল পাত্তা দিচ্ছে না, নাকি দিতে দেওয়া হচ্ছে না ? কোথাও একটা আমাদের পঠন-ক্ষমতাকে সীমায়িত করা হচ্ছে, তাই নয় কি ? সামাজিক মূল্যবোধের গল্প থেকে সরে এসে শিশু-কিশোরদের জন্য রচিত হচ্ছে ভূত-গোয়েন্দা-রূপকথা, আমাদের ছোটবেলার ভালো কনটেন্টের বা সাহিত্যনির্ভর সিরিয়ালের জায়গা নিচ্ছে বস্তাপচা ইলাস্টিকওয়ালা সিরিয়াল, তেমনি প্রবন্ধ চর্চা বা প্রবন্ধ পাঠ কী সত্যিই বন্ধ ? এমন অবস্থার কারণটাই বা কী ?

সুজনবাবু : এটা, আমার ধারণা, না ধারণা নয়, বিশ্বাস, এটা জোর করে ঘটানো হচ্ছে। সুস্থ, সিরিয়াস সাহিত্যকে দম বন্ধ করে মারার জন্য একটা চক্রান্ত। এর মধ্যে অনেকেই, জেনে বা না জেনে যুক্ত। সময় সেটাই প্রমাণ করে। মেধাহীনতার বাতাবরণ ফ্যাসিবাদের উর্বর ভূমি। এবারে শুধু মেলানো।

আমাদের পদক্ষেপ : এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কী করা দরকার বলে আপনি মনে করেন ? আপনি নিজে কী সেই চেষ্টা করেছেন ?

সুজনবাবু : কোনো একক মানুষের চেষ্টায় কিছু হয় না। সে বড়জোর নিজের কাছে সৎ থাকতে পারে। সিরিয়াস সাহিত্যের পক্ষে দিনের পর দিন গলা ফাটিয়ে যাচ্ছি। দুর্ভাগ্যের হল, যারা নিজেদের লিটল ম্যাগ বলে দাবী করেন, তাদেরও অধিকাংশ এই রোগে আক্রান্ত। প্রয়োজন একটাই। যারা সহমতাবলম্বী, তাদের জোট বাঁধা।

আমাদের পদক্ষেপ :  সেই জোট বাঁধার সলতেটুকু জোড়া হয়েছে কী ?

সুজনবাবু : সম্ভবত তেমন কিছু হয়নি।

আমাদের পদক্ষেপ : আপনি ব্যক্তিগতভাবে তেমন সহযোদ্ধা খুঁজে পেয়েছেন ?

সুজনবাবু : পেয়েছি। তবে তারাও পরস্পর বিচ্ছিন্ন, ভৌগলিক অর্থে।

আমাদের পদক্ষেপ : এক্ষেত্রে আপনার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা কী হবে ? একাই বই প্রকাশ করে যাবেন ?

সুজনবাবু : আমি লড়াই থেকে যে সরব না, সেটা বলতে পারি। আমি তো শুধু কলম চালাই না, সাধ্যমত রাস্তাতেও নামি। সময় কখন কোন চেহারায় চাইবে, এত আগে বলব কী করে!

আমাদের পদক্ষেপ : ভবিষ্যৎ আপনাকে কীভাবে চিনবে ? একজন কলমকার, নাকি পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে অন্তত তার বিরুদ্ধাচরণ করবার সাহসী মুখ হিসেবে ? যেকোন বিপ্লবে দার্শনিকদের বা লেখকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, ইতিহাস তার সাক্ষী  আপনিও কী তেমন ভূমিকা পালন করতে পারবেন ?

সুজনবাবু : এত ক্ষমতা বা প্রতিভা আমার নেই, নতমস্তকে স্বীকার করে নিচ্ছি। একটা মানুষ, যে স্রোতের ঢল বেয়ে নিজেকে বিক্রি করে দেয়নি, এটুকুই অনেক।

আমাদের পদক্ষেপ : একটা শেষ প্রশ্ন করি, গল্পকার বা কবি সুজন ভট্টাচার্য কী সেই সময়ের স্রোতের টানে হারিয়ে যাবেন, নাকি ভাটার টান এলে জেগে উঠবেন বালির চরের মতো ?

সুজনবাবু : সময় যেমন চাইবে বা যেমনটা মনে হবে সময়ের চাহিদা বলে, তেমনটাই হবে। তবে আমার কবিতা-গল্প-উপন্যাসও তো সেই সন্ধান-যাত্রাই। শেষ যে প্রকাশিত উপন্যাস অর্থাৎ কালাপাহাড়, সেখানেও ১৫৬২ থেকে ১৫৭৮ পর্যন্ত ইতিহাসের মূল সূত্র ধরেই নাড়াচাড়া করেছি। এবং দায়িত্ব নিয়েই বলছি কোনো মিথ্যা তথ্য সেখানে নেই। এই প্রয়াসকে সাহিত্যিক প্রয়াস বলবে কিনা, সেটা অন্য প্রশ্ন। কিন্তু আমার সাহিত্যের সঙ্গে আমার বিশ্লেষণাত্মক লেখার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। আমি মানুষের উপর আস্থাবান। আমার সাহিত্য আর বিশ্লেষণ তাই মানুষের সন্ধানই করে এসেছে।

আমাদের পদক্ষেপ : আমাদের পদক্ষেপ পত্রিকাকে সময় দেওয়ার জন্য আবারও ধন্যবাদ জানাই আপনার এই অনুসন্ধান যেন তার সঠিক গন্তব্য খুঁজে পায়, সেজন্যও আমাদের পদক্ষেপ পরিবারের পক্ষ থেকে রইল শুভকামনা

সুজনবাবু : অনেক অনেক ধন্যবাদ এই সামান্য মানুষটার কথা এত সময় ধরে শোনার জন্য।