Monday, August 15, 2022

আমাদের পদক্ষেপ পরিবার আয়োজিত বিশেষ ইভেন্ট "স্বাধীনতা"

 


বহু রক্তক্ষয়ের পর স্বাধীনতা পেয়েছিলাম আমরা ৷ ঘটেছিল দেশ বিভাজন ৷ রাজনীতির পাশাখেলায় তারপর থেকে আমরা অর্থাৎ আম জনতা নানাভাবে পিষ্ট হতে হতে হয়তো আজ 'স্বাদহীন'ভাবে স্বাধীন রয়েছি ৷ এই স্বাধীনতা কতখানি পরাধীনতা থেকে মুক্তি আর কতখানি ক্ষমতার হস্তান্তর তা নিয়েও রয়ে গেছে বিতর্ক ৷ তবু আজকের দিনটা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ৷ তাই এই দিনটাকে উদযাপন করতে দেশজুড়ে গৃহীত হচ্ছে নানা কর্মসূচি ৷*

*আমাদের পদক্ষেপ পরিবারের পক্ষ থেকে আজকের দিনে পরিবারের সকলকে জানাই আন্তরিক শুভকামনা ৷ পূর্বঘোঘণা অনুযায়ী আজ আমাদের এই পরিবারের যৌথ দেওয়ালে আয়োজিত হবে বিশেষ ইভেন্ট— "স্বাধীনতা" ৷ ইতিমধ্যে আপনাদের পাঠানো লেখাগুলো আমরা একে একে পোস্ট করব এখানে ৷ সেই ধারাবাহিকতা যেন ক্ষুণ্ণ না হয়, সেজন্য ইভেন্ট চলাকালীন গ্রুপটি অনলি অ্যাডমিন করে রাখা হবে ৷ আপনাদের অনুরোধ, ধৈর্য রাখবেন ৷ সাথে থাকুন ৷*

----+++---

স্বাধীনতা- ৬১

তিনখানা চশমা

আর্যতীর্থ

          

তিনখানা  চশমা হারিয়ে গিয়েছে আমাদের । এখনই খুঁজে না পেলে ভীষণ বিপদ,

ঝাপসা অন্ধত্বে পাশের নিরীহ ছেলেটাকে মনে হয় আগামীর হিংস্র শ্বাপদ,

অতীতের অর্ধেক দেখা যায় না, বানানো ইতিহাস সত্যি বলে মনে হয়,

তিনখানা  চশমা হারিয়ে গিয়েছে, হয়তো বা তাই, ঠেলেঠুলে ভুল দিকে নিচ্ছে সময়। 


একটা চশমা ছিলো, পুরোপুরি গোল গোল ফ্রেম, তার সাথে সরু দুটো ডাঁটি,

চশমার পিছে দুটো ব্যথাতুর চোখ.. নোয়াখালি, বিহার, কলকাতা হেঁটে যায় অসহায় লাঠি,

হিংসারা জিতে গেছে, লাশের স্তুপের মাঝে কখনো আসছে ভেসে

ধর্ষিত রমণীর শেষ গোঙানি,

তবুও অহিংস তিনি স্বপ্ন দেখেন, ভারত নামক দেশে এক হয়ে থেকে যাবে জল আর পানি,

একটা চশমা ছিলো, শেষবার দেশ দেখে  যার মালিকের স্বরে বন্দিত হয়েছেন রঘুপতি রাম,

 গোল গোল ফ্রেম আর সরু ডাঁটিওলা, তোমরা দেখেছো কেউ, সময়ের গোলমালে কই হারালাম?


আর একটা চশমার কাঁচটা অমনই গোল, ডাঁটিটা একটু মোটা, একটু বাহারী,

ভাসা ভাসা দুই চোখে স্বপ্নের পাকা বাসা , একদিন স্বাধীনতা আনবেনই বাড়ি,

হিন্দু মুসলমান খ্রীস্টান শিখ এক , আজাদ সে ফৌজটাতে যখন  কণ্ঠে শুধু হিন্দ যায় শোনা,

সেসময় লিগ আর মহাসভা পরস্পরের প্রতি বিষ উগড়িয়ে বলে ইংরেজ প্রভুদের কিছু বলবো না,

তাদের উহ্যে রেখে চশমাধারীর ধ্যানে আর ধারণায় ধরা দেয় ধর্মের কাঁটাহীন আগামীর ছবি,

কোথায় রেখেছো দেশ সেই চশমাটা, ওটা চোখ থেকে খুলে সেই একই বিভাজনে দেখো কেন সবই?


তিন নম্বর ছিলো বেশ মোটা ফ্রেমওলা, কাঁচ পুরো গোল নয়, ওপরে কিছুটা চ্যাপ্টানো,

যাঁদেরকে ছুঁতে মানা ছিলো সে সময়ে, ছায়াকে মাড়িয়ে গেলে ব্রাহ্মণ করে নিতো স্নানও,

তাঁদেরই প্রতিভূ  সেই চশমা-মালিক। কতিপয় চিতপাবন ব্রাহ্মণ ভেবেছিলো রাখবে দলিতদের দুপায়ের নিচে,

যেমন থেকেছে তারা সহস্র বছর ধরে । চশমার অধিকারী আগলে না দাঁড়ালে জানিনা আজ দেশে হতো ঠিক কী যে,

অন্তত খাতায় কলমে আজ জাতপাত নেই। তবু গোঁফ রেখে খুন হয় 

আজকের ভারতেও দলিত তরুণ,

 অনার কিলিং ঘটা অতি বাস্তব। সংবিধানও নাকি খুঁজছেন সে চশমা, সন্ধানে নাগরিকও একটু নড়ুন।


অন্ধের কালো ওই চশমাটা সানগ্লাস নয়, ওটা শুধু দেখবার ব্যর্থতা ঢেকে রাখে,

ওটাকে ফ্যাশন ভেবে পরতে যেও না, ওতে সব কালোই দেখাবে। চেনা দেশ হারাবে সে বিলাসের  ফাঁকে।


তিনখানা চশমা দেশ থেকে হয়েছে উধাও । চুরি করে কারা তুলে রেখেছে তালা মারা  কোনো এক আলমারি তাকে।


পাল্লাটা ভেঙে ফেলে তোলপাড় করে খোঁজো। দরকার ফেরা ওরা সকলের নাকে।

----------------------

স্বাধীনতা- ৬২

স্বাধীনতার আলো

দীপ্তি চক্রবর্তী 


লবণ লবণ স্বাদে ভেসেছে বুক

হৃদয় উপুড় করলে জ্বলে আলো

দক্ষিণের জানালা নিয়ে ভাবনা

কবেই ফেলা হয়ে গেছে ওই

বুনো ঝোপের ধারে গজিয়েছে বট


স্বাধীনতা এসেছে নিজের মতো

আকাশে উড়ন্ত পাখিদের ডানায় 

কতো তাজা প্রাণের আহুতির সাথে

স্বাধীনতা আসে তোমার আমার 


আলো জ্বলেনি ওই ভাঙা কুটিরে 

আছে জেগে কোনো মা

অপার ভালোবাসা বিষ্ময় চোখে

বিনিদ্র রাত 

লজ্জাবস্ত্র সাথে যে কন্যা কাল 

ছেড়ে গেলো "নিজ" ঘরে

অগ্নিদগ্ধ সে আজ লড়াই করে

হাসপাতালের করিডোরে।

---------------------

স্বাধীনতা- ৬৩

আমরা স্বাধীন

অমরেন্দ্র কালাপাহাড়


আমি স্বাধীন        আমরা স্বাধীন

        স্বাধীন আমার এই দেশ,

 বন্দে মন্ত্র               প্রভাত ফেরি

        নেই গর্বের সে লেশ।


  স্বাধীন বলে          অপরের ধন

            অনায়াসে চুরি,

খুন ও জখম              রাহাজানি

         পাকাই হাত সে ভুরি!


 রামের ধন            শ্যামের চুরি

        রাম বলার কিছু নাই,

 শ্যাম যে আছে     দাদার ছায়ায়

       অন্যায় শোধবোধ যে তাই!


 ভোট রাজনীতি     সাতখুন সে মাপ

        খুনি খালাস বেকসুর,

 নির্দোষ পচে         জেল ঘানিতে

          এই ঘটনা ভরপুর!


 শিক্ষিতের নেই       চাকরি দাবি

         ভিক্ষাই শেষের সম্বল,

বিদেশ ব্যাংকে         ফুড়ুৎ টাকা

       হাপিত্যেশ চোখের জল!


 আমজনতার       বিবেক যে আজ

           নেতার হাতে বাঁধা,

নিত্য নতুন              যাতনা সয়

           ছালা বওয়া গাধা!


 স্বাধীনতার           কি তার মানে

         দোকানে পাওয়া যায়!?

 দেখতে কেমন         মূল্য কি তার

       খোঁজে সূঁচ খড় গাদায়!


 ফিরে এসো          হে শহীদ সব

            দূষণ ভরা এ দেশ,

যে স্বপ্নেতে            দিলে সে প্রাণ

           মেলে তা অবশেষ!

----------------

স্বাধীনতা- ৬৪

 তবুও কেন  

                সামসুজ জামান


 গঙ্গা দিয়ে যে ধারা বয়, কাবেরীও তো বয়ে চলে সেই একই জল।

 আবেগ এলে তোমার বুকের রক্তধারা উথলে উঠে নাচে যেমন,

 এই মনেতেও নেই বাধা নেই, যখন-তখন আসতে পারে সেই শুভক্ষণ।

 তেমনি ভাবেই আমার বুকেও রক্ত নাচে উত্তেজনায় ছলাৎ ছলাৎ ছল।


 আপনজনকে কাছে পেয়ে তুমি যেমন নেচে ওঠো খুশির ধারায়,

 তেমনি ভাবেই আপন জনের আবির্ভাবে আমার প্রাণেও সাড়া জাগে।

 সুর ঝংকার বেজে ওঠে গোপন বীণায় মনের তারে নতুন রাগে।

 বুক ফেটে যায় ব্যথার ভারে প্রিয়জনকে তোমার মত যখন হারাই ।


  রক্তধারা যেমন রাঙ্গা, তোমার অঙ্গে অঙ্গে যেমন প্রবহমান,

  তেমনি ভাবেই আমার শিরায় ধমনীতে নিত্য যে তার আনাগোনা,

  আমার মতই তোমার কাছেও দেশের মাটির তুলনা যেন খাঁটি সোনা ।

  রোজ প্রভাতে তোমার-আমার গাছের শাখায় পাখিরা যে গায় একই সে গান।


  হয়তো তোমার মুখের বুলি আমার থেকে একটুখানি অন্যরকম।

  তবুও তো দুঃখ-শোকের অশ্রুজলটা লবণাক্ত দুজনেরই তোমার-আমার।

  আনন্দেতে চাষিরা গায়, নেচে নেচে ফসলে ভরে গোলা, খামার।

  পায়রাগুলোও দুঃখে-সুখে করে তবু একই রকম বকম বকম।


  তবুও কেন বল এক হবো না, এখনও কেন তোমার-আমার বিভেদ করবো?

  বুঝলাম না আজও কেন সঠিকভাবে আমি-তুমি এই দেশ, মানুষ আর ধর্মের সংজ্ঞা?

  ধর্ম নিয়ে আজও কেন যখন তখন আমরা সবাই লড়াই করি, বইয়ে যে দিই রক্তগঙ্গা?

  প্রাণ-প্রিয় সেই সম্প্রীতি-মাখা তেরঙ্গা টা কবে থেকে

বিভেদ ভুলে মাথার উপর সবাই মিলে মেলে ধরবো?

---------------------

স্বাধীনতা- ৬৫

স্বাধীনতা দিবস ও আমরা...

     পারমিতা ভট্টাচার্য


আজ কিছু আবেগকে একসূত্রে গেঁথে স্বাধীনতা দিবস আমার কাছে কী তা লিপিবদ্ধ করতে বসেছি।জানি লেখায় কিংবা ভাষায় কোনটাতেই এই আবেগকে লিপিবদ্ধ করা সম্ভব নয়। যা লিখছি সবটাই আমার একান্ত নিজস্ব অনুভূতি মাত্র।


                        এক সমুদ্র রক্ত আর অদম্য জেদের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের এই স্বাধীনতা।ছিয়াত্তরতম স্বাধীনতা দিবসে মাথা নত করি দেশের সকল স্বাধীনতা সংগ্রামী মহা মানবের চরণে। অঞ্জলি দিই আমার যত মানবিক আবেগ ও শ্রদ্ধা।

আমরা 1947 সালের 15 ই আগস্ট ব্রিটিশদের নাগপাশ থেকে নিজেদের মুক্ত করে স্বাধীন হয়েছিলাম। আজ আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। অনেক কিছু পেয়েছি বটে,হারিয়েছি হয়তো তার থেকেও বেশি। আমরা তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক,যতটা চাই বাঁচার জন্য ততটা হয়তো পেয়ে উঠতে পারিনা জীবনে।তবুও আমরা সুখী।আমার দেশ মাতৃকার কোলে আশ্রয় পেয়ে জীবন কাটাতে পেরে,আমার কাদা-ধুলোর দেশে,বান-বন্যার দেশে, নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর দেশে,বাপ ঠাকুরদার নোনা ধরা পলেস্তরা খসা ভিটে বাড়ি কামড়ে পড়ে থেকেই আমরা বাঁচতে শিখেছি।এতেই আমাদের সুখ।এতেই আমাদের শান্তি।

    

                      আজ এই ডিজিটাল যুগে এসে আমাদের সামনে খুলে গেছে একটা গোটা পৃথিবীর দরজা।হাতের মুঠোয় এসেছে চাহিদা আর যোগানের সাপ লুডো খেলা। আমাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে আমরা কি আদৌ স্বাধীন? আসলে "স্বাধীনতা" কী সেটার অর্থই আমাদের কাছে স্বাধীনতার ছিয়াত্তরতম বৎসরে এসেও স্পষ্ট নয়। আমরা ভুলে যাই স্বাধীনতা মুখে মাখা কোন প্রসাধন নয়,কিংবা পকেটের ওয়েট বাড়ানোর যন্ত্র নয়।সেটা যেমন নির্ভর করেনা পাশের বাড়ির মেয়েটার রাত 1 টায় বাড়ি ফেরার মধ্যে কিংবা নিজস্ব ক্ষমতা জাহিরের মধ্যে। আমার স্বাধীনতার ব্যাস অন্যের স্বাধীনতার ব্যাসের সাথে সমান মাপেরই হতে হবে এই ধারনাটিই অত্যন্ত আপত্তিজনক।


                       স্বাধীনতা চেতনা শুধু মাত্র একটি দিবসের বলয়ে বিচার্য নয়।তেমনই নয় ইতিহাস বইয়ের একটি অধ্যায় মাত্র।এর ব্যাপকতা ও বিশালতা আমাদের জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রোথিত হয়েছে এই দেশে জন্মগ্রহণ করে। আমাদের জীবন ধন্য এই মাতৃভূমির স্পর্শে। আমার দেশের মাটির প্রতি আমার অনুভব, প্রেম, ত্যাগ, গর্ববোধ যদি না থাকে তবে শুধুমাত্র স্বাধীনতা দিবসে একটা তেরঙা পতাকা বাড়ির ছাদে কিংবা পাড়ার মোড়ে উত্তোলন করার কোন অর্থই থাকেনা।স্বাধীনতা দিবস প্রত্যেক দেশবাসীর একটা অনুভুতি,অহংকার।জাতীয় সংগীত গাইতে গিয়ে চোখ আবেগে বুজে আসার নাম ই দেশপ্রেম। আমরা যারা সন্তানের পিতা মাতা তারা সন্তানকে বড় হবার শিক্ষা দিই,ছুটে চলার শিক্ষা দিই,আকাশ ছোঁয়ার শিক্ষা দিই। এর সাথে সন্তানকে দেশের মাটি চেনাতে হবে, ছোট্ট শিকড়ে স্বাধীনতার আবেগ প্রোথিত করতে হবে, শিক্ষার পাশাপাশি তার সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে,দেশের মাটির প্রতি দেশের ইতিহাসের প্রতি শিশুমনকে শ্রদ্ধাশীল করে তুলতে হবে।এটাও অনেক বড় দেশপ্রেমের পরিচয়। এখন চারিদিকে দেখি পাড়ার কিছু ছেলে ছোকরা মুখে অশ্রাব্য বাক্য ঝরিয়ে সারা বছর নগরকেত্তন করে শুধুমাত্র এই দিনটায় বিশেষ অনুরাগীদের দলে ভিড়ে ভিড় বাড়িয়ে পতাকা উত্তোলন করে মাংস ভাত খেয়ে কাটানোকে স্বাধীনতা দিবস হিসাবেই মানে।বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এটাই হচ্ছে। এই যদি হয় আমাদের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের ঘটা তবে এটা পালন না করে নীরব থাকায় শ্রেয়।স্বাধীনতা মানেই এখন মিছিল ,সকাল থেকে ডিজের দেশাত্মবোধক গান,জমায়েত,একের পর এক আত্ম প্রচারময় বক্তৃতায় হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামী আর রাস্তায় খাবি খেতে থাকা আম জনতা ।


                      স্বাধীনতা ভোগের বস্তু নয়,স্বাধীনতা একটা অনুভূতির নাম। স্বাধীনতা দিবসে সবার একটাই প্রার্থনা হওয়া উচিত দেশ মৃত্তিকার কাছে, আমাদের জীবনে আরও ক্ষমা দাও,আরও ত্যাগ দাও, আরও সহিষ্ণুতা দাও মা। তোমার আঁচলে আমাদের সকল জড়তা,লোভ,ভয়,লজ্জা অঞ্জলি দিয়ে আমরা যেন মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠতে পারি। কাপুরুষতার করাল গ্রাসে যেন আমার চেতনা হারিয়ে না যায়।কারোর কাছে বিক্রি হবার আগে যেন শিয়রে মৃত্যু আসে। শুধু 15 ই আগস্ট নয়, তেরঙা  উড়ুক পৃথিবীর সর্বক্ষেত্রে ,সবার আগে,সবার উপরে। 


    আমার দেশ ,আমার মাটি ,আমার স্বাধীনতা মহান হোক ,বিজয়ী হোক।।

-----------------------

স্বাধীনতা- ৬৬

স্বাধীনতা হীনতায়...

সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়

 ভারতের আজ ছিয়াত্তরতম স্বাধীনতা দিবসে মানুষের দেশপ্রেম কিছুটা হঠাৎই জাগ্ৰত হয়েছে।কিছুটা সরকারি তৎপরতায়, কিছুটা আগস্ট পনেরোর ঘনঘটায় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছেন মানুষ।

কজন মনে রাখি আজ শহীদের প্রাণত্যাগ ও আত্মত্যাগের কথা?দেশের মঙ্গলের  জন্য সার্বিকভাবে কজন ভাবি?আজকের প্রজন্ম কতটুকু আগ্ৰহী স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে?ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জীবনী বলিদানের কাহিনী,দেশের সংস্কৃতির উপরে শিক্ষা দেওয়ার কোনও বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা নেই।তাই আগামী প্রজন্ম জাতীয় পতাকার সম্মান জানাতে পারে না।স্বাধীনতা দিবসের তারিখটিও ভুল করে।দায়ী কারা?

দায়ী আমরাই।সন্তানকে ভাল মানুষ করার আগেই টাকা কামানোর মেশিন বানিয়ে ফেলি।অথচ বিদেশের মাটিতে ভারতীয়রা যখন স্বাধীনতা দিবস পালন করেন আমরা শুধুই বাহ বাহ বলে দায় সারি।নিজের দেশের মাটিতে ভারতবর্ষীয় ঐতিহ্য,সংস্কৃতির পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রাখার ন্যুনতম চেষ্টা করিনা।

দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে শুরু করে সাধারণ জনগনের সুরক্ষা, দেশের সব ধর্মের জাতি-ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছে স্বাধীনতার ইতিহাসের সম্মান দেওয়া উচিত।ভারতের গৌরবময় সংস্কৃতির পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা উচিত।তবেই আজকের দিনের সার্থকতা।

-------------------

স্বাধীনতা- ৬৭

আমার স্বাধীনতা

মৌ দাশগুপ্ত


১৫ই আগস্ট, ১৯৪৭...স্বাধীনতা কে পেয়েছিল? মানুষের হাতে সীমানা এঁকে আলাদা করে নেওয়া খানিক্টা মাটি নাকি সেই সীমানার ভিতরে,সেই মাটির ওপর বেঁচে থাকা মানুষগুলো? 

মাঝে মধ্যে ভাবি, বুঝলেন, স্বাধীন দেশ হয়, নাকি দেশবাসীও স্বাধীন হয়? স্বাধীন হয়ে দেশ কি পেল, সে রাজনীতিকরা জানেন।ওখানে দাঁত ফোটাতে গেলে বড় মুশকিল। আমি বাপু অতি সাধারণ মানুষ, আরো সাধারণ আমার চিন্তাভাবনা।তাহলেও মাঝে মধ্যে জানতে ইচ্ছে করে কি পেলাম আমরা?

১। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমার দেশ। ভোট দিয়ে আম জনতা দেশের রাজনৈতিক  নেতা বাছি। আমরা স্বাধীন ভাবে ভোট দিই তো?

২। খবরের কাগজ পড়েন নিশ্চয়ই? প্রতিদিন কোন-কোন খবরগুলো খাড়া- বড়ি- থোড়, থোড় -বড়ি -খাড়ার মত নাম-ধাম, স্থান-কাল- পাত্র পালটে পালটে কমন আইটেমের মত চোখের সামনে ভেসে উঠছে তাও খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই? হ্যাঁ আমি আম মহাভারতীদের হালচাল হাল হকিকত নিয়েই বলতে চাইছি। 

স্বাধীনোত্তর ভারতেও মেয়েরা দেবী হিসাবেই আলাদা সম্মান পায় বই কি! সাক্ষাৎ  দেবী কামাখ্যার অংশ মানা হয়। একদম যোনীসর্বস্ব। তিন-মাস থেকে তিন-বছর, ত্রিশ বছর থেকে ত্রিশ দু'গুনে ষাঠ বছর, কারো ক্ষেত্রে তার ব্যাতিক্রম নেই।এত স্বাধীন ভাবনা স্বাধীন দেশ ছাড়া কোথায় পাবেন বলুন।

৩। আমি বাবা আদার ব্যাপারী, জাহাজের ব্যাপারে স্পিকটি নট।তাই ব্যাংকের সুদের হার কমা, ভল্টের নিরাপত্তার ব্যাপারে ব্যাংক কতৃপক্ষের হাত ধুয়ে ফেলা, রোজকার দরকারী জিনিষপত্রের ক্রমশ বেড়ে চলা দাম, ডিমনিটাইজেশন, কর্মবিচ্যুতি ( বাব্বা, ইঞ্জিরিতে ভাবতে গিয়েই দাঁত নড়ে গেল, বেঁচে থাক আমার বাপ-মায়ের ভাষা), পথশিশু, বাল্যশ্রম, অনাহারে মৃত্যু, পরিযায়ী শ্রমিক, প্রাদেশিকতা, এসিড ছোড়া, ডাইনিপ্রথা,চিটফান্ড, হিউম্যান ট্রাফিক, অতি পুরাতন পণপ্রথা, ভ্রূণাহত্যা, ক্রমশ বেড়ে চলা অনাথআশ্রম আর বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা, শিক্ষাজগতে রাজনীতি ও চাঁদিয়াল সমাজের দাদাগিরি, সোনার চাঁদ / সোনার টুকরো তোষণ, শ্রীবিষ্ণুর অবতারকল্পের পুনর্জাগরণ, গোমাতা ও গোমাংস নিয়ে তরজা, নীলছবির মোবাইলে মোবাইলে রমরমা ব্যাবসা, তথাকথিত রাজনীতিক বা মন্ত্রী মশাইদের কোটি কোটি টাকা গোছানো, বৃন্দাবনীয় লীলাখেলা থেকে আজকের খবরের কাগজের হেডলাইন, গরুপাচার, কয়লা পাচার, শিক্ষা জগতের নৈরাজ্য, চাকরী পাইয়ে দেবার নামে ঘুষের রমরমা, যুবমানসের অস্থিরতা,   এ সব আমার চোখেও পড়েনা, কানেও শুনতে পাইনা তাই এসব নিয়ে কিছু বলতেও যাইনা। স্বাধীন বলেই তো কি শুনব, কি দেখব, কি বলব, এ স্বাধীনতাটুকু আমার আছে।

৪। আমার এক ছাত্রের নাম ছিল স্বাধীন। ভারতও শুনেছি ব্যাকরণ মতে পুং লিঙ্গ।তাই লেটেস্ট স্বাধীনতাটি চার দেওয়ালের ভিতর দাম্পত্য বিছানায় পুরুষের ভাগ্যেই শিকে ছিঁড়েছে। বিয়ে করা বউ আর যৌনদাসীর বিভেদটা আইনানুগভাবে তুলে দেওয়া হয়েছে।তা সে রোজগেরে বউই হোক কি বেরোজগেরে।লাভ ম্যারেজ হোক কি দেখে শুনে পরখ করে বিয়ে করা বউ।

৫। পরাধীন হবার আগে,পরাধীন হবার পরে/স্বাধীন হবার আগে এবং স্বাধীন হবার পরে 'চরিত্তির' জিনিষটা একচেটিয়া এদেশের মেয়েদের জন্য পুরুষদের তরফের মনমৌজি উপহার ছিল আছে আর থাকবেও, নিজের প্রয়োজনে আগে একটা 'সু' কি 'কু' বসিয়ে কপালে সেঁটে দিলেই হল। রাত বারোটায় একটা মেয়ে অফিস ফেরত নামানুষদের হাতে আক্রান্ত হলে প্রথমেই লোকে বলে - ' এত রাতে মেয়েটার কি দরকার ছিল রাস্তায় নামার? অত রাতে অফিস? হু হু বাবা, জানা আছে। কম তো আর দেখলাম না।  মেয়েটারই দোষ। নষ্ট মেয়েছেলে। '

 রাস্তা সুরক্ষিত করা যায় নি, ওই নামানুষগুলোকে মানুষ করা যায় নি,সেটা বাদ দিয়ে এই যে চিন্তাধারা, সেটা স্বাধীন বলেই ভাবা ও বলা সম্ভব।মেয়েরা আজও 'মেয়েছেলে'/ 'মাল'/'আইটেম'/ ছম্মকছল্লো বেশী, মেয়েমানুষ কম,সেটাও কিছু মানুষের স্বাধীন চিন্তাধারার জন্যই সম্ভব।

স্বাধীনতা কি তাহলে কাগজে কলমে শুধু একটুকরো জমির?সেই জমির ওপর শ্বাস নিয়ে হেঁটেচলা মানুষের আচার ব্যাবহার, চিন্তাধারা, কাজেকর্মে কোন স্বাধীনতা দেখছি আমরা? 

সে মরুগ গে যাক। আমি বাপু স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতবর্ষের স্বাধীন নাগরিক।আজ আমার স্বাধীনতা দিবস। বছরে এই একটা দিনেই তো কেমন ফুরফুরে স্বাধীন স্বাধীন হাওয়াটা গায়ে লাগে। তায় এ বছর আবার কিনা 'আজাদী কি অমৃত মহোৎসব', নেই নেই করেও   'গণতান্ত্রিক', 'প্রজাতান্ত্রিক' উপাধি ঘাড়ে নিয়ে দীর্ঘ ৭৫ বছরের যাত্রাপথ পাড়ি দিয়ে ফেল্লো আমাদের দেশ। তাই একদিনের অমৃত মহোৎসবে আমরা জমিয়ে সেল্ফি তুলবো 'হর ঘর তেরঙ্গা' নিয়ে..তারপর একটা সার্টিফিকেট ডাউনলোড করেই সোস্যাল মিডিয়াতে লোকদেখানি দেশপ্রেমের পরাকাষ্ঠা জাহির করে ফেল্লেই কেল্লা ফতে। আপাতত এখানেই আমাদের দেশপ্রেমে দাঁড়ি। ভাগ্যিস আমাদের সেনারা যাবতীয় বিতর্ক ভুলে, সীমানায় অতন্দ্র প্রহরায়। যদিও আমার বাচ্চাদের আমি ডাক্তার/ ইঞ্জিনীয়ার/ ব্যারিস্টার /চার্টাড একাউন্টেট/ শিক্ষক, নিদেনপক্ষে কলমপেষা কেরাণী করাবো, কিন্তু সেনাবাহিনী তে? নৈবনৈব চ। পরের ঘরের ছেলেমেয়ের জন্যই ও পেশাটা বরাদ্দ থাক না। এটাও আমার ভাবনার স্বাধীনতা বই কি। স্বাধীন দেশের নাগরিকের নিজস্ব স্বাধীনতা। 

সব্বাইকে শুভ স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।

---------------------

স্বাধীনতা- ৬৮

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে বিপ্লবী মদনলাল ধিংড়া

রাজকুমার ঘোষ

ভারতের স্বাধীনতা অন্দোলনে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে কত স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম,  যারা ভারত ভূখন্ড থেকে ইংরেজদের উচ্ছেদ করার ব্রত নিয়ে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্র বসু থেকে শুরু করে মাস্টারদা সূর্য সেন, ক্ষুদিরাম বসু থেকে শুরু করে বিনয়-বাদল-দীনেশের বৈপ্লবিক কার্যকলাপ আজও ভারতবাসী তথা বাঙালী মননে গেঁথে আছে। তারই মাঝে অনেকেই আছেন যাদের বৈপ্লবিক কার্যকলাপ ভীষণভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে, কিন্তু তাদের নাম অনেকেই হয়তো জানেন না বা স্মরণ করেন না। বিপ্লবী রাসবিহারী বসু তাঁদের মধ্যেই একজন যার মহান কার্যকলাপ সম্বন্ধে অনেকেই জানেন না। তেমন ভাবে আর একজনের নাম মদনলাল ধিংড়া, যিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম বিশেষ ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী।

মদনলাল ধিংড়া ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অসামান্য বিপ্লবী ছিলেন। তিনি ইংল্যান্ডে অধ্যয়নরত ছিলেন যেখানে তিনি ব্রিটিশ কর্মকর্তা  স্যার উইলিয়াম হার্ট কার্জন উইলিকে গুলি করে হত্যা করেন। বিংশ শতাব্দীতে এই ঘটনাটি ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম ঘটনাগুলির মধ্যে একটি।  

১৮৮৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবের অমৃতসরে একটি সমৃদ্ধ হিন্দু পরিবারে মদনলাল ধিংড়া জন্মগ্রহণ করেছিলেন।এক সিভিল সার্জন পিতার সাত সন্তানের ষষ্ঠ সন্তান ছিলেন মদনলাল ধিংড়া। তিনি তাঁদের পরিবারের  ইংরেজি শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে মানুষ হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর মাতা একজন ধর্মীয় ও ভারতীয় সংস্কৃতির ভক্ত ছিলেন, যার প্রভাব তাঁর মধ্যে পড়েছিলো। তিনি ছাড়া তাঁর বাকি ভাইদের শিক্ষা ইংল্যান্ডে হয়েছিলো। মদনলাল ধিংড়া অমৃতসরের এম.বি ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ১৯০০ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। এরপর তিনি পড়াশোনার জন্য লাহোরের সরকারি কলেজের বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই সময় ছাত্ররা যে ব্লেজার পড়তো তা ইংল্যান্ড থেকে আমদানী হত। ১৯০৪ সালে ইংল্যান্ড থেকে ব্লেজারের কাপড় আমদানী করার প্রতিবাদে প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলন হয়, যে আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন মদনলাল ধিংড়া। তাঁকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সময়ে ধিংড়া মাস্টার অফ আর্টসের ছাত্র ছিলেন। তিনি জাতীয়তাবাদী স্বদেশী আন্দোলনে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি ভারতের দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষের ব্যাপক কারণগুলি নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং অনুভব করেন যে এই সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য দরকার স্বদেশী আন্দোলন। ধিংড়া এরপর ক্লার্ক হিসেবে কাজ করেছেন, তারপর সিমলাতে ব্রিটিশ পরিবারগুলির মাল পরিবহনের জন্য কলকার একটি টাঙ্গা পরিষেবায় কাজ করেছেন।  তারপর একটি কারখানার শ্রমিক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। এখানে তিনি একটি ইউনিয়ন সংগঠিত করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এরপর তিনি মুম্বাইয়ে কিছু সময়ের জন্য কাজ করেছিলেন।  তারপর তিনি তাঁর বড় ভাই ডাঃ বিহারী লালের পরামর্শে উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইংল্যান্ড যান ১৯০৬ সালে। লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে তিনি পড়াশোনা করেন। পড়াশোনার জন্য প্রথমদিকে তাঁর বড় ভাই এবং পরে ইংল্যান্ডে কিছু জাতীয়তাবাদী কর্মী তাঁকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছিলেন।

লন্ডনে মদনলাল ধিংড়ার সাথে পরিচয় হয় সেই সময়ের প্রখ্যাত বিল্পবী নেতা বিনায়ক দামোদর সাভারকর এবং শ্যামজী কৃষ্ণ বর্মার সাথে। এই দুই বিপ্লবী ধিংড়ার প্রচন্ড দেশভক্তিতে মুগ্ধ হয়েছিলেন। জানা যায়, বিনায়ক দামোদর সাভারকরই মদনলাল ধিংড়াকে 'অভিনব ভারত' নামে একটি বৈপ্লবিক সংগঠনের সদস্য করান এবং বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণ দেন। মদনলাল ধিংড়া লন্ডনের 'ইন্ডিয়া হাউস'-এ বেশি থাকতেন।  সেইসময় এই হাউস ভারতীয় বিদ্যার্থীদের রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের মূল কেন্দ্র ছিল। এই সকল বিপ্লবী বিদ্যার্থীরা সেইসময় ভারতে ক্ষুদিরাম বোস, কানাইলাল দত্ত, সতিন্দর পাল এবং কাশীরামের মত বিপ্লবীদের মৃত্যুদন্ড দেওয়ার জন্য ভীষণ রকম ভাবে ইংরেজ সরকারের ওপর ক্ষুদ্ধ ছিলেন। কিছু ইতিহাসবিদ এটাই মনে করেন এই সকল মৃত্যুদন্ডের ঘটনাগুলো সাভারকার এবং ধিংড়াকে সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বদলা নেওয়ার জন্য ইন্ধন জুগিয়েছিলো। তাঁরা সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছিলেন। 

১৯০৯ সালের ১লা জুলাই সন্ধ্যায় লন্ডনের একটি হলে ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর একটি বার্ষিক সভার আয়োজন করা হয়েছিল। যে সভায় অংশগ্রহণ করতে বেশ কিছু ভারতীয়র সাথে ইংরেজরাও একত্রিত হয়েছিলো। ঐ সভায় মদনলাল ধিংড়াও উপস্থিত হয়েছিলেন। ঐ সভায় যোগদান করতে আসার কথা ভারত সচিবের পরামর্শদাতা রূপে ব্রিটিশ কর্মকর্তা স্যার উইলিয়াম হার্ট কার্জন উইলির। সভা শেষ হওয়ার পর যখন অতিথিরা যে যার মত হল ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন ঠিক সেইসময় ধিংড়া উইলিয়াম হার্ট কার্জন উইলিকে নিশানা করে পাঁচটি গুলি করেন। যার মধ্যে চারটি গুলি সঠিক নিশানায় লাগে। এছাড়াও তাঁর গুলিতে মারা যান ডাঃ লালকাকা, যিনি একজন পার্সিয়ান ডাক্তার। এরপর ধিংড়া নিজের জন্য বরাদ্দ রাখা একটি গুলি নিজের ওপর প্রয়োগ করতে যাবেন কি তিনি ব্রিটিশ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান।   

২৩শে জুলাই ১৯০৯ সালে ধিংড়ার শুনানি হয় লন্ডনের পুরোনো বেলি কোর্টে। আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। তারপর ১৭ই আগষ্ট ১৯০৯ সালে লন্ডনের পেন্টবিলে জেলে তাঁকে ফাঁসী দেওয়া হয়। তাঁর এই মৃত্যু ব্যর্থ হয়নি। মদনলাল ধিংড়া স্বদেশী আন্দোলনের জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন। তাঁর এই আত্মবলিদান ভারতবর্ষের বৈপ্লবিক আন্দোলনে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিলো। মৃত্যুবরণ করেও মদনলাল ধিংড়া অমর হয়ে রয়েছেন। ভারতবর্ষের শহীদ বিল্পবীদের তালিকায় তাঁর নাম আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে। হয়তো অনেকেই জানেন না তাঁর এই বলিদান, কিন্তু এখনো বিপ্লবী মদনলাল ধিংড়ার স্মারক রয়েছে রাজস্থানের আজমের রেলওয়ে স্টেশনের ঠিক সামনে।

আসুন, সবাই মিলে ১৫ই আগষ্টের দিন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে শহীদ হওয়া বিপ্লবীদের সাথে বিপ্লবী মদনলাল ধিংড়াকেও জানাই আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলী। 

তথ্যসূত্রঃ গুগল এবং উইকিপিডিয়া (হিন্দী এবং ইংরাজী)

-----------------------

স্বাধীনতা-৬৯

দেশপ্রেম 

   মুকুল বিকাশ মণ্ডল 


এ প্রেম, দেশ প্রেম কিনা জানি না----

তবু, দেশ জয়ের খুশিতে মন ভরে উঠে,

দেশ গৌরবে---মন গৌরবান্বিতে উদ্বেলিত হয়-- আনন্দের ফল্গুধারায়।

পরাজয়ে --- মন কান্নায় ভারাক্রান্ত হয়ে,

ফেটে পড়ে হাহাকারের বিষণ্ণতায়----

 অস্ফুট রবে।।


আমার সোনালী -রূপালী বাংলা,

আমার ভারত -ভারতীর বাংলা,

আমি তোমায়---- ভালোবাসিইইইইইই।

চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, তোমার শোভা---

আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।

আমার রূপসী- রূপময় বাংলা,

আমার ভারতমাতা ও সোনালী বাংলা,

আমার ঋষি মনীষীর বাংলা,

আমি-- তোমায় খুব খুব খুববববববব 

ভালোবাসিইইইইইইইইই।।


তুমি, আমার হৃদয়ের শোণিত ধারায় মিশে আছো----- প্রেমের মহিমায়,

           ও

ভালোবাসা-ভালোলাগার অটুট বন্ধনে ।

তুমি, আমার আত্মায়-----

আত্মশ্লাঘায় রোণিত হও

নব নব রূপে,

মননের অমৃতলোকে।।


তুমি, আমার যৌবনের উপবন ও বার্ধক্যের বারানসী।

তুমি, আমার বেঁচে থাকার চালিকা শক্তির---- মূলমন্ত্র,

তুমি, অনন্ত ধৈর্য্য, ক্ষমা,প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসার

 সুবর্ণ দেবীময়ী আত্মা।।

--------------------- 

স্বাধীনতা-৭০

 অধিকার

আর্যতীর্থ


অধিকার স্বাধীনতার । অধিকার স্বাধীন কথার । 

অধিকার নির্বাচনের । অধিকার নির্বাধ বাচনের। 

অধিকার রোজ রুটির। অধিকার রোজগারে রুটির। 

অধিকার সমানতার। অধিকার সম মান্যতার। 


প্রথমগুলো দেওয়ার  অভিনয় জারি। দ্বিতীয়তে থিতু অন্ধকার। 


অধিকার সাক্ষর হওয়ার। অধিকার স্বাক্ষর দেওয়ার।

অধিকার ধর্ম বাছার। অধিকার ধর্ম থেকে বাঁচার। 

অধিকার ভালবাসার।  অধিকার ভালো বাসার। 

অধিকার নিজের ঘরের। অধিকার নিজের শেকড়ের।


প্রথম দেওয়ার ভানগুলো আছে। দ্বিতীয়টা পেতে দেরী আছে ঢের।


অধিকার রোগের দিনে শুশ্রূষার। অধিকার রোগহীন সুস্থতার।

অধিকার জীবনে সাথী বাছার । অধিকার স্ব- ইচ্ছেয় সাথী বাছার।

অধিকার নাগরিক নথির । অধিকার শাসকের সাথে  অসম্মতির।

অধিকার  অনুদান ভিক্ষার। অধিকার রোজগেরে  শিক্ষার। 


প্রথম সারি গণতান্ত্রিক ফাউ। দ্বিতীয় চাইবে সে সাহসী জিভ কার?


অধিকার। সংজ্ঞাটা ঠিক করে যে সময়ে গদি যার। 


রাজার বদল হলে বদলায় বোধই তার।

-------------------

স্বাধীনতা- ৭১

কোথায় আমাদের স্বাধীনতা?

চন্দ্রকান্ত চক্রবর্তী


সেন্ট জেভিয়ার্স ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক ঘটনা কি বলছে না যে আমরা এখনও মানসিক সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হতে পারিনি। আমাদের বিকলাঙ্গতার মতো পুরুষতান্ত্রিক মনোবৃত্তি এখনও কোন মানসিক স্বাধীনতার পরিচয় দিচ্ছে? যেখানে একজন মহিলা অধ্যাপকের চাকরি চলে যায়, জনসমক্ষে তাকে অপমানিত হতে হয় , ৯৯কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয় তার কাছে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনের কিছু মুহূর্তের ছবি ( পড়ুন স্যুইম স্যুট) নিজস্ব ইনস্টাগ্রাম থেকে পাবলিক হয়ে যাওয়ার দরুন, সেখানে আমরা কোন সম্মান মেয়েদের প্রতি আজ এই স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও দিতে পারছি বলতে পারেন!! 


ধিক্কার লাগে!!


এবং এর হয়ে, মানে ইউনিভার্সিটির হয়ে কথা বলার মতো লোকজনও কম নন, আজ এই ২০২২-এও আমাদের এ-দৃশ্য দেখতে হচ্ছে বইকি। তাই তখন প্রশ্ন ওঠে আমাদের যথার্থ মানসিক বিকাশ ও স্বাধীনতা নিয়ে, কোথাও আমরা এখনও সেই পুরুষতান্ত্রিক মানসিক নৈরাজ্যের কাছে দাসত্ব করছি না কি ! এবং সেটা স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও! 



স্বাধীনতা! 

তবে স্বাধীনতা দাও শব্দকে,

দাসত্ব ছাড়ো, স্তাবকতা ছাড়ো,

বন্ধ করো অন্ধ অনুগামিতা--

চাটুকার হতে গেলে স্বাধীনতা লাগে না!


স্বাধীনতা দাও শব্দকে,

যা বলতে পারোনি,

যা ঠিক জেনেও বলনি এত দিন,

সেই সোজা কথা সহজে বলে ফেলার

স্বাধীনতা অত্র তত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে --

শুধু তাকে সময়মতো তুলে নিতে শেখো নিজের করে,

তবেই না স্বাধীনতা ফুল হয়ে ফুটবে তিন রঙে সেজে,

বিকোবে না

হেলায় পড়ে থেকে

আর শুধুই অনাদর মেখে!

---------------------

স্বাধীনতা- ৭২

স্বাধীনতা

কান্তীশ


স্বাধীনতাকে বললাম ,চল কাল 

একটা মিছিল করি-

সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক ,

স্বার্থান্বেষীদের কালো হাত

ভেঙে দাও,গুঁড়িয়ে দাও ।


স্বাধীনতা খুব খুশি হয়ে বলল,

দাঁড়া,দাদাকে বলে আসি ।

--------------------- 


No comments:

Post a Comment