Tuesday, June 25, 2019

প্রণব কুমার সরকার



নিবন্ধ-

চ্যাম্পিয়ন গড়ার কারিগরি

কারিগরি টা ইংরেজি ভাষা নিয়ে।তবে সহকর্মীদের সহমর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় জেনেছি মাধ্যমিক স্তরের যে কোন বিষয়ে উপরেই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা যেতে পারে।ভাষা তো বটেই বিজ্ঞান এমনকি গণিতের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি প্রয়োগযোগ্য।তবে কিভাবে আমি তা জানি না।
মাধ্যমিক স্তরে ইংরেজি বিষয়টি বহু ছাত্র-ছাত্রী দের কাছে আতঙ্ক।কেন তা নিয়ে বহু তর্ক-বিতর্ক হয়েছে।নিটফল শূন্য।এক্ষেত্রে বিষয় শিক্ষক দের একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আছে একথা অনস্বীকার্য।সাধারণ স্কুলগুলোতে ইংরেজি ভাষাকে ছাত্র ছাত্রী দের কাছে বিশেষতঃ প্রথম প্রজন্মের বা আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা ছাত্র ছাত্রীদের কাছে তেমন গ্ৰহণযোগ্য করে তোলা যায় নি।ভাষাটিকে ঘিরে তাদের মনে কোন আকর্ষণ গড়ে তোলা যায় নি।এক্ষেত্রে শিক্ষকরা দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না।
আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি হবে সক্রিয়তা ভিত্তিক।শিক্ষার্থী শিক্ষক এক খেলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কারণ উভয়ের উদ্দেশ্য একমুখী।যেহেতু মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ভাষা গুরুত্বপূর্ণ, সাহিত্য নয়, তাই ইংরেজি ভাষাটিকে শিক্ষার্থীদের কাছে আদরণীয় করে তুলতে হবে।অবশ্যই শিক্ষক সেক্ষেত্রে একমেবাদ্বিতীয়ম aidএখন দেখা যাক কোন পদ্ধতিতে এগোলে একটু বেশি ভালো করা যায়।
পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সব ছেলে মেয়েরা খেলতে ভালোবাসে।বর্তমানে ভারতে জনপ্রিয়তম খেলা ক্রিকেট।সব ছেলে মেয়েরা দেখে শুনে খেলাটা কমবেশি বোঝে।তাই ক্রিকেট দিয়ে শ্রেণীকক্ষে একটু ইংরেজি পড়া যাক।
ধরা যাক, শ্রেণী কক্ষটি একটি খেলার মাঠ।যে দুটো বেঞ্চের সারি শিক্ষকের ডায়াসের সামনে তাতে বসা ছেলে মেয়েরা যুযুধান দুটো দল।ব্ল্যাকবোর্ড হল স্কোরবোর্ড। শিক্ষক হলেন স্কোরার এবং অবশ্যই আম্পায়ার।প্রাথমিক শর্ত হলো, দুটো দলের সদস্যরা প্রতিদিন এক দলে খেলবে।দুটো দলে দুজন অধিনায়ক/অধিনায়িকা থাকবে।তাকে এক সপ্তাহ ওই পদে রেখে পরে অন্য কাউকে ্যাপ্টেন করতে হবে।শিক্ষক হিসেবে বুঝতে হবে কার কার মধ্যে নেতৃত্ব গুণ আছে।তাদের'লিডার'বানিয়ে তুলতে হবে।মনে রাখতে হবে, শচীন টেন্ডুলকার এক নম্বর ক্রিকেটার হলেও এক নম্বর ্যাপ্টেন নন।এবার একটু এগিয়ে থাকা ছেলেদের দুটো দলে সমানভাবে ভাগ করে দিতে হবে যাতে খেলা টি উপভোগ্য হয়ে ওঠে।প্রতি বেঞ্চিতে একটা করে ভালো ছাত্র বসালে যে উপদল তৈরি হল তার সবকটি ছেলে মেয়েরা সমানভাবে খেলায় অংশ নিতে পারবে।

শিক্ষকের প্রারম্ভিক কাজ:
--------------------------------------
Text-এর যে অংশ টুকু শিক্ষক পড়াবেন তার মোট শব্দসংখ্যা মোটামুটি সমান দুভাগে ভাগ
করে নিতে হবে।কিছু objective/reflective questions, grammatical questions (textual)শিক্ষক আগেই তৈরি করে রাখবেন। Vocabulary-কে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।নিজের ডায়রিতে সেগুলো লিখে নিয়ে সঙ্গে রাখতে হবে।
শ্রেণীকক্ষের কাজ:
---------------------------
মাঠ, খেলোয়াড়, স্কোরবোর্ড সব রেডি।খেলার সময়৪০মিনিট।ডায়াস থেকে নেমে দুই অধিনায়ক কে নিয়ে টস্ করা হল।জয়ী অধিনায়ক হাত তুলে নিজের দলকে টস্ জেতার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ্যাটিং না বোলিং।

খেলা শুরু:
–--------------
্যাটিং মানে লাউড রিডিং।অধিনায়ক তার পরিকল্পনা মতো ওপেনার ব্যাটসম্যান কেব্যাট করতে(পড়তে)বললে সে দাঁড়িয়ে unit-এর প্রথম থেকে জোরে জোরে পড়তে শুরু করবে।অন্য দল ফিল্ডিং করছে অর্থাৎ চেষ্টা করছে রিডারের ভুল ধরে তাকে আউট করার।রিডার ভুল করা মাত্র বিপক্ষের যে কেউ/অনেকেই'হাউজ ্যাট'বলে চেঁচিয়ে উঠবে।তাদের মধ্যে থেকে যে কাউকে শিক্ষক জিজ্ঞাসা করবেন'হোয়াট ইজ ্যাট?'

আউটের ধরন:
---------------------
ধরা যাক, রিডার ভুল উচ্চারণ করেছে।যে ধরেছে তাকে জিজ্ঞাসা করতে সে বললো, wrong pronunciationছেলে/মেয়েটিকে সঠিক টা বলতে হবে।সে পারলো অথবা পারলো না।যদি পারে তাহলে বোর্ডে লিখতে হবে-নিতাই বো সুস্মিতা--১৭তার মানে নিতাই ১৭টি শব্দ সঠিক পড়েছে। যদি না পারে তাহলে ওই দলের অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হবে।সে পারলো।তাহলে বোর্ডে লিখতে হবে-নিতাই সুস্মিতা বো দিব্য -১৭এই ভাবে শক্ত শব্দ কায়দা করে এড়িয়ে গিয়ে ধরা পড়লে এল বি ডব্লিউ, লাইন টপকে গেলে রান আউট, শব্দ বা লাইন মিস করে পুনরায় ঠিক করতে গেলে স্ট্যাম্প আউট দেওয়া যেতে পারে।যদি রিডার কোন ভুল না করা সত্ত্বেও বিপক্ষ আবেদন করে তাহলে 'নো বল'ডাকা যেতে পারে।

খেলা চলছে:
–----------------
এবার অধিনায়কের নির্দেশ অনুযায়ী দ্বিতীয় ্যাটসম্যান১৮নং শব্দ থেকে পড়তে শুরু করবে।সে আউট হলে তৃতীয় জন নামবে।অধিনায়কে ঠিক করতে হবে কিভাবে কাকে দিয়ে ্যাটিং করালে নির্দিষ্ট সময়ে ইনিংস শেষ করা যাবে।
অর্ধেক পড়া শেষ হলে প্রথম দলের ্যাটিং শেষ।পরের অর্ধেক পড়বে দ্বিতীয় দল এবং প্রথম দল ফিল্ডিং করবে।প্রথম দল যতক্ষণ পড়বে দ্বিতীয় দলের ্যাটিং সময় ততক্ষণ।পড়া শেষ হলে দুদলের প্রথম ইনিংস শেষ।
কোন রিডার দুবার বা পরপর দুদিন/তিনদিন ্যাটিং করতে পারবে না।তবেই সবাইকে ্যাটিং, থুড়ি পড়তে বলা যাবে।রিসেস আওয়ার বা অন্য যে কোন অফ্ টাইমে অধিনায়ক টিম মিটিং করে ্যাটিং অর্ডার ঠিক করে নেবে।

সেকেন্ড ইনিংস:
–-------------------
এবার দ্বিতীয় দলকে প্রথমে ডাকা হোক।তারা প্রথম দলকে বানান,ছোট ছোট প্রশ্ন,শব্দভাণ্ডার বা ্যাকরণগত প্রশ্ন করবে সেই অংশ থেকে যেটা প্রথম দল পড়েছে।দ্বিতীয় দল এবার যতক্ষণ খেলবে, প্রথম দল ততক্ষণ ধরে প্রশ্ন ছুঁড়বে(বাউন্সার, গুগলি সমেত) দ্বিতীয় দলকে তাদের পঠিত অংশ থেকে। যেহেতু টসে ভাগ্য নির্ধারণ করা হবে সেহেতু দুটো দলকেই সমগ্ৰ পাঠটি রপ্ত করে আসতে হবে।স্কোর কি হবে বা কিভাবে হবে তা শিক্ষক ঠিক করে দেবেন।

শিক্ষকের কাজ:
-----------------------
যে কোন খেলার দিনের আগের দিন শিক্ষক মনে করলে পাঠ্য অংশটি সুন্দর ভাবে পড়ে দিতে পারেন(গ্ৰামাঞ্চলে এর প্রয়োজন বেশি)গুরুত্বপূর্ণ শব্দ নির্দেশ করে দেওয়া যেতে পারে, Activity centric questions, textual grammar(উদাহরণ হবে বাইরের)সংক্ষেপে আলোচনা করা যেতে পারে।তবে ছেলে-মেয়েদের পাঠ্য অংশ থেকেই প্রশ্ন করতে বলা হবে।
সমগ্ৰ পরিকল্পনা টিকে এভাবে ভাগ করা যেতে পারে।
টস--১মিনিট
্যাটিং--+৭মিনিট
সেকেন্ড ইনিংস--+৫মিনিট
টিম মিটিং--৫মিনিট
শিক্ষকের হাতে অবশিষ্ট থাকলো ১০মিনিট।কি করা যায়?ডায়রি খোলা যাক।খেলার মাঠে যেসব সমস্যা উঠলো না সেগুলো আলোচনা করা যাবে।যে সব ভুল ছেলেরা করে গেল কিন্তু ধরা পড়লো না সেগুলো ধরিয়ে দিতে হবে।স্লো ্যাটিং বা স্লো ফিল্ডিং এর জন্য দলের পয়েন্ট কেটে নিতে হবে।

অধিনায়কের ভূমিকা:
------------------------------
অধিনায়ক দলের সবার মধ্যে একটি সুন্দর বোঝাপড়া গড়ে তুলবে।দলের যারা ভালো রিডার, তাদের বুদ্বি করে সব বেঞ্চিতে ছড়িয়ে বসাবে যাতে তারা স্ব স্ব বেঞ্চের পিছিয়ে পড়া রিডারদের পাঠ এবং প্রশ্ন সম্পর্কে সম্যক অবহিত করতে পারে।যেহেতু প্রশ্ন ছেলেরা বাড়ি থেকে তৈরি করে আনবে, তাই সেগুলোর ভুল-ভ্রান্তি ঠিক করে দেবে।
সেকেন্ড ইনিংসের প্রশ্নকর্তা এবং উত্তরদাতা কে চিহ্নিত করবে অধিনায়ক।এইসময় সে সারির সামনে এসে দাঁড়াবে এবং ইশারায় নির্দেশ দেবে।
রোজ জিততে হবে--এই মানসিকতা নিয়ে অধিনায়ক তার গেমপ্ল্যান তৈরি করবে।সে অবশ্যই দলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করবে।
শিক্ষকের যথার্থ উপদেশ ছাড়া এটা কিন্তু সঠিক ভাবে করা প্রায় অসম্ভব।

খেলা শেষে:
----------------
সেরা ্যাটসম্যান, সেরা ফিল্ডারের পিঠ চাপড়ে দিতে হবে।বাকি দের উৎসাহিত করতে হবে আরও ভালো খেলার।যারা খুব খারাপ খেলছে তাদের কাছে টেনে তাদের সমস্যার কথা জেনে সঠিক নির্দেশ দিতে হবে।শেষে দুই অধিনায়ক কে ডায়াসে ডেকে নিয়ে স্বাস্থ্য বিধি,পরিবেশ, সমাজসেবা, বন্ধুত্ব ইত্যাদির উপর শিক্ষকের তৈরি করা ছোট ছোট মেসেজ তাদের দিয়ে পাঠ করানো গেলে খুব ভালো হয়।

শেষ কথা:
--------------
নিজেদের মধ্যে সুস্থ,সুন্দর উপযোগী প্রতিযোগিতা কিশোর-কিশোরী দের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই পরিলক্ষিত হয়।সেটাই যদি এইভাবে কাজে লাগিয়ে তাদের একটু আনন্দের সঙ্গে ইংরেজি ভাষা শেখানো যায় তাতে বোধহয় লাভ সকলের।আমার আশা, যে নতুন প্রজন্ম আজ আচার্যের বেশে শিক্ষার আঙিনায় আলো ছড়াতে এসেছেন তারা এই পদ্বতিটিকে স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী একটু প্রয়োগ করে দেখবেন।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার:অনেক দিন আগে আমার ছাত্রাবস্থায় যুগান্তর পত্রিকায় ছোটদের বিভাগে খুব ছোট একটা লেখা পড়েছিলাম।সেখানে আউটের বিষয়ে লেখা ছিল সে স্মৃতি একেবারেই অস্পষ্ট।শিরোনাম বা লেখকের নাম কিছু মনে নেই।তাই ধারণাটি আমার হলেও অনুপ্রেরণা কিন্তু সেই স্মৃতি টুকু।


No comments:

Post a Comment