Wednesday, June 26, 2019

সুজাতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়


গল্প -
                       অন্তরালে

অনন্ত সৃষ্টির পথে মহাকালের সংহার রূপ।জীবনের ছন্দময়তাকে করে প্রতিহত।এমনই এক অনুভব সারা শরীরটায় এক হিমশীতল প্রবাহ ঘটালো সেদিন জীবনে কখনো তোমার কথা ভাবিনি তেমন করে।শুধু তোমার ঐ।সিগারেট ওড়ানো ধোঁয়ার আড়ালে লুকানো মুখটাকে দেখে মনে হতো মুখোশ দেখছি না তো?তামাক পোড়ার গন্ধে ঘরের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।রাজকীয় ছন্দে পুড়তে থাকো তুমি আর তোমার সিগারেট।ধূসর মৃত্যু গুটিসুটি মেরে হামাগুড়ি দিয়ে আসছে দামাল হয়ে, তুমি ভ্রূক্ষেপও করলে না ।ভয়ংকর সে থাবা মারলো তোমার শরীরের অভ‍্যন্তরে -অন্তরালে।তুমি তখনও নির্বিকার।যৌবনের আতিশয্যে, অর্থের আতিথেয়তায় না রূপের অহমিকায় না কেবলই সংসারের পিছুটান না থাকার বৈরাগ‍্যে তা জানি না মৃত্যুকে তুমি ভয় পেতে না কোনদিনই।


আচ্ছা সুবাসদা,তোমার কি মনের মাঝে এতটুকু দুর্ভাবনা হয় না?এতটুকুও অসহায়ত্ব?না পাওয়ার কোন বেদনা?নিজের মনুষ্যত্বের অস্তিত্বের বজায় রাখতে এত পড়াশোনা সফলতা পাওয়ার লড়াই।তবুও তোমার এই জীবন নিয়ে খেলা যেন তোমাকে নেশায় মাতিয়ে রেখেছিল।যোগ্যতার প্রমাণের যে দিন বয়ে গেছে তাকে অবলীলায় পিছনে ফেলে আজকের এই ঝা চকচকে জীবনে তবে কেন ছিল এত অনীহা?নাহ্।কোন উত্তর নেই।বলা ভালো-উত্তর দেওয়ার সেই মানুষটাই আজ নেই।শুধু তার নিস্প্রাণ দেহখানি শেষ শয্যায় শায়িত, শেষ যাত্রার অপেক্ষায়।এই নিঃশব্দে চলে যাওয়া সে তো তোমার জন্য ছিল না।অথচ.....

এক জীবনের পরিসমাপ্তি তার আশেপাশের চিত্রপট বদলে দেয়।শ্মশানযাত্রীরা ফিরে গেছেন যে যার ঘরে।কেবল কাজের জন্য চরনমাসী তখনও রয়ে গেলেন তোমার শূন্য ঘরখানিতে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখার কর্তব্য করতে।দুকাপ লাল চায়ের সঙ্গে একটি ডায়েরি হাতে পেলাম তার কাছে থেকে।পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে শেষ পাতায় এসে চমকে উঠলাম।আগের রাতে তোমার শেষ কিছু কথা-"মাত্র তিন মাস আগে খেয়ে সহ‍্য করতে না পারা, ঘনঘন পেটের অসুখে ওষুধে যখন কাজ হচ্ছিল না তখন হাজার খানেক চেকআপ করার পর জানলাম আমি লিভার ক‍্যান্সারের পেশেন্ট।লাস্ট স্টেজ।

ভালোবাসা হীন জীবন মৃত্যুর নামান্তর।আমার কাছে তখন বাঁচা না বাঁচা দুই সমান।যন্ত্রণা সহ‍্য করতে পারছিলাম না।গেলাম ডাক্তার বন্ধুর কাছে।প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে বললাম, আমার তো সব শেষ।খুব সহজ কোন মৃত্যুর উপায় বলে দে।ধমকাল খুব।"

-আমি ডাক্তার।জীবন দেওয়াটাই আমার কাজ।

-এই দ‍্যাখ, আমি হাত জোড় করছি তোকে।গলায় দড়ি দেওয়ার ক্ষমতা আমার শরীরে আছে।একমুঠো বিষ বা ঘুমের ওষুধও খেতে পারি।কিন্তু ঐ মৃত্যু আমার মনঃপুত হচ্ছে না।একটু নিশ্চিন্তে, সহজভাবে যদি মরতে পারতাম!

-চুপ করবি তুই?বিমান ডাক্তারী চোখে নয় বন্ধুত্বের চোখে তাকাল আমার দিকে।দু চোখ ওর জলে ভরা।খসখস করে দু পাতা প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়ে বলল,সুগার কম করার জন্য ইনসুলিন আর যন্ত্রণা কম করার জন্য ঘুমের ওষুধ দিলাম। ইনজেকশন করতে প্রথম প্রথম আমার কম্পাউন্ডার যাবে ইনজেকশন দিতে।তুই ওর কাছে শিখে নিলেই নিজেই পারবি ।

"মিটিমিটি হেসে উঠে এলাম।পেয়ে গেলাম আমার মুক্তির পথ।"

No comments:

Post a Comment