Tuesday, June 25, 2019

স্বরূপা রায়



গল্প-
স্বপ্নপূরণ


"কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই" গানটা শেষ করে অভিমন্যু দুরুদুরু বুকে বিচারকদের দিকে তাকিয়ে থাকলো, তাদের বিচারের অপেক্ষায়।
তিনজন বিচারক অভিমন্যুর গানের খারাপ-ভালোটা বুঝিয়ে বললেন। তারপর একজন বিচারক জানালেন, "তুমি আরেকটু ভালো করে চেষ্টা করো। গানে আরেকটু স্পষ্টতা দরকার। আমি নিশ্চিত যে তুমি পরের বছর একদম পুরোপুরি তৈরি হয়ে আসবে।"
বিচারকদের সামনে নিজেকে সামলে নিলেও, মঞ্চ থেকে নেমে অভিমন্যু কান্নায় ভেঙে পড়লো। অনেক কষ্টে বাবার বিরোধিতা করে এই নিয়ে পাঁঁচবার অডিশন দিল সে এই জাতীয় সংগীতানুষ্ঠানে।
অডিশন দিতে আসার সময় ওর বাবা ওকে বারবার বলে দিয়েছিলেন, "এটাই শেষবার কিন্তু।"
অভিমন্যু মনে বিশাল আশা নিয়ে এবার ভেবেছিল যে হয়েই যাবে। কিন্তু না, এবারও হলো না। বাড়ি ফিরে অপেক্ষারত বাবা-মাকে শুধু "হয়নি" জানিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।
অভিমন্যুর মা ওকে সামলানোর জন্য এগিয়ে যেতে গেলেও ওর বাবা আটকে বললেন, "ওকে একটু একা থাকতে দাও।"
"ছেলেটা খুব ভেঙে পড়বে। এটাই ওর শেষ সুযোগ ছিল।" মন খারাপ করে অভিমন্যুর মা বললেন।
"কে বলেছে শেষ সুযোগ? সে তো আমি বলার বলেছিলাম। যতদিন পারবে, অডিশন দিয়ে যাবে। নিজের স্বপ্নপূরণের জন্য মানুষকে অনেক লড়তে হয়।"
পরেরদিন সকালে অনেক ডাকাডাকি করেও অভিমন্যুর সাড়া পাওয়া গেল না। অগত্যা ওর বাবা দরজা ভেঙে ছেলের সিলিং থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করলেন।
তাড়াতাড়ি করে অভিমন্যুর দেহ নামিয়েও শেষ রক্ষা করা গেল না। ওর নিথর দেহ পুলিশ কান্নায় ভেঙে পড়া ওর বাবা-মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য পাঁঠালো। আর ওর দেহ পর্যবেক্ষণ করে ওর পড়নের শার্টের পকেট থেকে পাওয়া গেল একটা চিরকুট। তাতে লেখা, "বাবা, আমি পরাজিত।"
দুদিন পরে,
ময়নাতদন্তের পরে অভিমন্যুর প্লাস্টিকে মোড়া দেহ ওর বাড়ির উঠোনে নিয়ে এলো পুলিশ। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ওর বাবা-মায়ের কাঁদতে কাঁদতে পাগল অবস্থা। ঘন্টাখানেক পরে ওর দেহ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন শ্মশানের দিকে। ছেলেকে হারিয়ে মেরুদন্ড বেঁকে যাওয়া অভিমন্যুর বাবা অনেক কষ্টে ছেলের মুখাগ্নি করলেন।
তারপরেই হঠাৎ একটা ফোন এলো অভিমন্যুর বাবার ফোনে। ছেলের শোকে আত্মহারা বাবা কিছু না দেখেই ফোনটা তুললেন। ফোনের ওপাশ থেকে গলা ভেসে এলো, "নমস্কার আমি জাতীয় সংগীতের মঞ্চ থেকে বলছি। অভিমন্যু দেবের ফোনে যোগাযোগ করতে না পারায় আপনার সাথে আমাদের যোগাযোগ করতে হলো। অভিমন্যুকে আমরা হোয়াইল কার্ড এন্ট্রিতে আমাদের শোতে নির্বাচন করেছি। ওকে সত্ত্বর যোগাযোগ করতে বলবেন।"
পুরো কথাটা কানে ঢোকার পরে আর কিচ্ছু বলতে পারলেন না অভিমন্যুর বাবা। ফোনটা ওনার হাত থেকে পড়ে গেল। মাটিতে বসে অঝোরে কেঁদে ফেললেন।

No comments:

Post a Comment