অথ বাহন কথা
গোবিন্দ মোদক
গণেশের বাহন ইঁদুর আস্থা-শক্তির প্রতীক,
দুর্গার সিংহ শৌর্যের প্রতীক এ-কথাটা ঠিক।
শিবের বাহন সাধন ক্ষমতার প্রতীক সেই ষাঁড়,
ধন-সম্পত্তির প্রতীক প্যাঁচা বাহন লক্ষ্মীমাতার।
বিষ্ণুর বাহন গরুড়পাখী প্রতীক দিব্যশক্তির,
রামের বাহন হনুমান
প্রতীক শ্রদ্ধা-ভক্তির।
হংসবাহন সরস্বতী জ্ঞান ও পবিত্রতায়,
কার্তিকের বাহন ময়ূর সাধন ক্ষমতাটায়।
মৃত্যুদেবীর বাহন বায়স, শীতলামায়ের গাধা,
ব্রহ্মাবাহন রাজহংস --- শ্বেত-শুভ্র-সাদা।
যমরাজের বাহন কুকুর, ইন্দ্রদেবের হাতি,
ধূমাবতীর বাহন কাক চিরকালের সাথী।
শ্রীকৃষ্ণের বাহন গরু, বনবিবির বাঘ-ই,
শনিদেবের বাহন শকুন রক্তচক্ষু রাগী।
বিশ্বকর্মার বাহন হাতি, মনসা দেবীর সাপ,
সপ্ত-অশ্বে সূর্য দেবতা ছড়ান তপন-তাপ।
বিড়াল-বাহনেই খুশি হন দেবী ষষ্ঠীমাতা,
সন্তান-সন্ততি প্রতিপালনে তিনিই পরিত্রাতা।
জগদ্ধাত্রী ও সন্তোষীমা বাঘ-বাহনেই খুশি,
দেবতাদের রাজ্যজুড়ে বাহন রাশি রাশি।
=======================
গরুড় বাহন
গৌতম চন্দ্র
বৈদিক জ্ঞানের প্রতীক
ঋষি কশ্যপ ও বিনতা মাতার পুত্র,
বিষ্ণুদেবের প্রিয় বাহন গরুড়,
গরুড় পুরাণে মেলে সূত্র।
সর্পমাতা কদ্রুর কাছে
করতে মাতা বিনতার দাসত্ব মোচন,
সর্ব শক্তি প্রয়োগে করেন
স্বর্গ থেকে অমৃত হরণ।
বিষ্ণুদেব প্রীত হয়ে
গরুড় কে করেন বর দান,
অমৃত পান ব্যতীত অমরত্ব
সঙ্গে বিষ্ণুধ্বজায় স্থান।
পুরী মন্দিরে জগন্নাথ সম্মুখে
গরুড় দেবের অধিষ্ঠান,
কৃষ্ণ বর্ণ স্তম্ভে বসে
করেন তিনি জগন্নাথ দর্শন।
ক্ষিপ্রগতি বলবান গরুড় বাহন
অন্তরীক্ষে করেন বিচরণ,
বিষ্ণুদেবের পাদপদ্মে
সমর্পিত তাঁর মন।
=======================
বাহন নামা
রতন নস্কর
বাহন ছাড়া মানব জীবন
ভাবা কী যায় বলো?
মানব চরণ দেহের বাহন
আপন মনে চলো।
জলের জন্য জাহাজ, তরী
স্থলের জন্য গাড়ি,
আকাশ পথে উড়োজাহাজ
মেঘের দেশে পাড়ি।
মরুর দেশে উটে চড়ে
সবাই ভ্রমণ করে,
সাইকেলেতে বিশ্ব ঘুরে
কেউবা ফেরে ঘরে।
সেইসব দিন কোথায় বলো
ঘোড়ার পিঠে চড়ে,
বুক ফুলিয়ে বীরের বেশে
মানুষ যেত লড়ে।
কালের স্রোতে অনেক বাহন
ইতিহাসের পাতায়,
পালকি ,ডুলি এখন আছে
স্মৃতির ছেঁড়া খাতায়।
আর দেখিনা গরুর গাড়ি
অচিনপুরের গ্রামে,
গরুর পায়ের রাঙা ধুলোয়
সন্ধ্যা এসে নামে।
অনেক কিছু রূপকথা পুর
মন জুড়ানো ছবি,
কল্পনা মন পাখনা মেলে
ডাকে শরৎ রবি।
=======================
বাহন
বিশ্বনাথ সাহা
স্থানান্তরে বাহন যে চাই
ব্যক্তি-বস্তু সবার ।
যানবাহনের অভাব হলে
চরণ যুগল সার।
দূরপাল্লা দিতে পাড়ি ভাই
বাস বা ট্রেনে করে।
পিপাসু মন পয়সা যোগায়
সারা বছর ধরে।
প্লেনে ভ্রমণ সারতে পারি
থাকলে পকেট ভারী।
বিলাসিতা ছেড়ে দিয়ে
দুঃখীজনে দিতে পারি
শরৎকালে সাদা মেঘের
খণ্ড নীলাকাশে।
উড়ে উড়ে যায় ভেসে যায়
ভেলা চড়ে বাতাসে।
আনন্দে মন ভরে দিতে
মা যে সবার তরে।
আবহাওয়াটা যেমনই হোক
আসবে বছর 'পরে।
জগদম্বা মা যে সবার
নৌকা করে আসে।
মায়ের কৃপায় জগৎবাসী
আনন্দেতে ভাসে।
কখনও বা দোলা করে
কিংবা ঘোড়া চড়ে।
দয়াময়ী মা কখনো
আসেন হাতি করে।
লক্ষ্যে স্থির ডিঙিয়ে বাধা
বাহন যে যায় আগে।
শিক্ষা সবার বাহন করো
জ্ঞানের অনুরাগে।
মনের মাঝে ভাবনা যত
থাক না ভাবে ঠাসা।
প্রকাশ পাবে ঠিক তখনই
বাহন যখন ভাষা।
আগমনে তোমার মাগো
সবার প্রাণে জ্বালো।
সম্প্রীতি, জ্ঞান, ভালবাসা
মনুষ্যত্বের আলো।
=======================
যান নাকি বাহন
সুনন্দ মন্ডল
দুর্গার বাহন সিংহ,
লক্ষ্মীর পেঁচা, সরস্বতীর হাঁস।
কার্তিকের ময়ূর, গণেশের ইঁদুর
মহিষ নিয়ে অসুর, বিরাট এক লাশ।
তোমরা চলো যে যার ভরে
দিকবিদিক নিজেদের দাবিতে।
আমরাও চলি খেয়াল খুশি
খোলা বিশ্বে, মনের চাবিতে।
তোমরা চলো বাহন নিয়ে
একেকটা বিরাট কিংবা পুচকে।
আমরা চলি শুধু পায়ের জোরে
যদিও যানের বহর দেখি আজকে।
=======================
বাহনেরা
দেবকুমার মুখোপাধ্যায়
দু পা - ই ছিল ভরসা,
যখন এলো চাকা
উল্লাসে সে নৃত্য করে,
যায় না ধরে রাখা।
জলে, স্থলে এবং শূন্যে
গতির সঙ্গে গতি
যোগ হয়ে যায়,
আর কে তাকে পায়!
চিরাচরিত বাহনেরা
দেবদেবীদের সঙ্গে
আসেন যান বছর বছর
অঙ্গ এবং বঙ্গে।
নৌকা কিংবা গজে তাঁদের যাত্রা
ঠিক করে দেয় পাঁজি,
আমরা আলোর মালা সাজাই
ফাটাই আতসবাজি।
=======================
বাহন-কথা
মাথুর দাস
বাহন নিয়ে কাহন কথা বলাই তো যায় বেশ,
কিন্তু বলো বাহন কী আর বহন করে সত্যি ?
বইতে পারে আস্ত শরীর, রাস্তা অনিঃশেষ ?
কোন কোন বাহন যে সে নিজেই এক রত্তি !
হিমালয়ের স্বর্গ থেকে অনেক নীচে মর্ত্যে
বাহন কিছু পুজোর সময় আসেই নেমে ঠিক,
হেঁটে, চলে, উড়ে, ভেসে, এবং বহন শর্তে ;
বাহন তো নয়, তারা যেন অনেক কিছুর প্রতীক ।
তেজ ক্রোধ আর ক্ষিপ্রতার প্রতীক সেজে দিব্যি
সিংহরাজ দুর্গামায়ের ওজস্বিতা বাড়ায় বহুগুণ ;
ছিন্ন ক'রে বিঘ্নজাল গণেশের ইঁদুর আনে সিদ্ধি,
ময়ূর বোঝায় কার্তিকের সৌন্দর্য, যোদ্ধাও নিপুুণ ।
মন্দ ফেলে ভালো বিদ্যা বাছতে পারে সরস্বতীর হাঁস,
পেচক রাখে অন্ধকারে গোপন ক'রে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ;
বাহনগুলি প্রতীকই তো, গুণাবলি প্রকট বারো মাস,
রুদ্ররূপী ভোলানাথের জেদি এবং একগুঁয়ে সে ষাঁড় !
=======================
বাহন
হামিদুল ইসলাম
পার্থিব বস্তুকে বহন করতেই
দ্রাবিড় সভ্যতা থেকে তৈরি হয়েছে রকমারি বাহন
মানুষ বুঝেছে বাহনের প্রয়োজন
কালক্রমে বাহন হয়েছে বন্ধু। বন্ধু হয়েছে জীবন ।
সভ্যতার প্রথম সোপান জুড়ে চাকার দখল
মানুষের অগ্রগমনে চাকা এনেছে গতি
গতিময় জীবন
সভ্যতার উন্নয়নে আজ চাকাই হয়েছে প্রকৃত বাহন ।
তারপর এসেছে গাড়ি
বুলেট ট্রেন। আকাশে পাখা মেলছে বিমান
জলে ইঞ্জিন বোট। স্টিমারে জীবন
উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিয়েছে রকমারি বাহন ।
অন্ধকারে এসেছে আলো
হাজার কুসংস্কার অজ্ঞতা অন্ধতা সরিয়ে দিয়েছে শিক্ষা
শিক্ষাই জীবনের মূল বাহন
বাহন ছাড়া জীবন অচল। বাহনহীন জীবন মৃত্যুর শামিল ।
এখন শরৎ। পুজো পুজো উৎসব
আমাদের শৈশবের রঙমাখা দিন
মণ্ডপে মণ্ডপে খড় মাটি হয়ে উঠছে প্রাণ প্রতিমা
ক্ষুদ্র বাহনও নিঃসন্দেহে ঠাঁই পেয়ে যায় অনশ্বর দেবতার চরণে ।
আমাদের বাহন হোক আরো শক্তিশালী
অজ্ঞতা কাটুক। দুয়ারে দাঁড়াক সোনালি আলোর দিনগুলি ।
=======================
কম খরচের বাহন
সঞ্জীব দত্ত
মর্ত্যবাসীদের মতন বাহন
স্বর্গরাজ্যেও আছে
তাদের বাহন জ্যান্ত হয়
যাতে অনেক বছর বাঁচে।
মর্ত্যবাসীর যন্ত্র বাহন
এড়িয়ে তারা চলে
জ্যান্ত বাহন ব্যবহার করে
খরচ কম বলে।
মা দূর্গার সিংহ থেকে
গনেশের ইঁদুর মশাই
শিকার করে খাবার খায়
খরচের চিন্তা নাই।
কার্তিকের ময়ুর হোক
কিম্বা সরস্বতীর হাঁস
প্রভুকে নিয়ে উড়ে বেড়ায়
খরচ নেই বারোমাস।
লক্ষ্মীর পেঁচা খুব লক্ষ্মী
অসুরের মহিষ নিরীহ
জ্বালানির খরচ নেই বলে
তারা প্রভুর কাছে প্রিয়।
=======================
বাহন ছাড়া
বিধান সাহা
আয় না মাগো সিংহ ছেড়ে
নতুন সাজে সেজে ;
অসুর তবে ছাড়বে মহিষ
ফুটবে না আর তেজে ।
গণেশ যদি ইঁদুর ছাড়ে
ছাড়বে পেঁচা লক্ষ্মী ;
কার্তিক সর হাঁস ময়ূরের
পোহাবে না ঝক্কি ।
বাহন ছাড়া মায়ের আসা
একটি বছর পরে ;
নতুন করে জমবে মজা
উঠবে ভুবন ভরে ।
=======================
জাহাজ
শুভজিৎ দাস
অগোছালো বারান্দায়
বিলাপের হাওয়া গিলতে গিলতে
হাবা নদীকে নোনাধরা প্রশ্ন
ছুঁড়ে মারি,
মরীয়া অনিমেষ হৃদয়ের
হাড়গিলে কান্নার আওয়াজ শুনেছি,
উত্তর খুঁজে নেবে
বাহকের মাধ্যমে
অবিরল উল্লাসের অবসরে ।
=======================
খোকার বাহন
তপতী মণ্ডল
খোকা করে বায়না ভারি
বাহন তার চাই একখানি,
মাকে নিয়ে আকাশপথে
দুইজনাতে ঘুরবে খালি।
দাদুর দেওয়া বাহন চড়ে
রওনা দিল অবশেষে--
দূর সীমানায় খোকার বাহন
ঝাপসা হল এক নিমেষে।
সোনার আলো চারিদিকে
সাদা মেঘ যাচ্ছে ভেসে,
মাকে ডেকে বললে খোকা--
ঐ দেখো মা সুয্যি হাসে।
হঠাৎ কালো মেঘের পারে
কেমন যেন আঁধার হল,
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমে
খোকার বাহন ভিজে গেল।
কড়্ কড়্ কড়্ পড়ল বাজ
খোকার বাহন বিকল আজ;
এদিক ওদিক হাত-পা নেড়েও
পারছে না যে নামতে আর।
খোকা ওঠ্, চল্ তাড়াতাড়ি,
বানের তোড়ে বাঁধ ভেঙেছে —
ঘরবাড়ি সব যাচ্ছে ভেসে,
এখনই ছাড়তে হবে বাড়ি।
মায়ের গলার আওয়াজ শুনে
উঠল খোকা ধড়ফড়িয়ে —
হাতে নিয়ে বাহন খানি
চলল খোকা স্কুলবাড়ি।।
=======================
কার পিঠে কে ?
লাবণী পাল
পুরাণ-গাথা , মজার কথা
পড়তে লাগে ভালো।
আজব প্রাণী, গজব করে
ছড়ায় খুশির আলো।
ছোট্ট ইঁদুর, শক্তি বেজায়
গণেশ বসেন পিঠে।
সিংহ একাই একশো জেনো
আসেন মাকে নিতে।
ষণ্ড আছেন, আছেন ময়ূর
নয়তো কেউই কম।
হংস, প্যাঁচা, গাধাও আছে
গুণতে লাগে দম।
এদের ছেড়ে তাকাও যদি
অন্য দেশের দিকে,
মজার অনেক গল্প পাবে
লোকগাথার থেকে।
থরের ছাগল, ফ্রেয়ার বিড়াল
নর্স গল্পে আছে।
আইরিশে বাস ফ্লাইডেইজ
হরিণ রাখে কাছে।
চীনের ঠাকুর, ড্রাগন প্রিয়
আগুন ঝরায় মুখে।
পসাইডনের সিন্ধুঘোটক
সাগর থেকে ওঠে।
আজব গাথা , পুরাণ-কথা
এমন অনেক পাবে।
জানতে পেলে জানিয়ে রেখো,
আড্ডা জমাট হবে।
=======================
No comments:
Post a Comment