Thursday, September 30, 2021

কবিতা-১

বোন আর দাদার বাহন যথাক্রমে পেঁচা ও ইঁদুর।  তবু কেন পেঁচা বলে, ধরা যাক দু'একটা ইঁদুর এ'বার…

অশাস্ত্রীয়

অরুণাচল দত্ত চৌধুরী

পেঁচাটি ইঁদুর খায়, রাত ঘন হলে।

বাহন ইঁদুর কাঁদে, হে প্রভু গণেশ

এক মঞ্চে সেজেগুজে বসে থাকো বেশ

লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা, দাও তাঁকে বলে। 

একই অসুরের সঙ্গে ঘোষিত লড়াই

কেন ইঁদুরেরা তবু খুন হয়ে যাই?


হাস্যমুখ দশভুজা সিংহটি বাহন

লক্ষ্মী ও গণেশের তিনি যে মা হন!

পঁচাত্তর পঁচিশের সতর্ক হিসেবে

বলেছেন চালকলা ভাগ করে নেবে।


উচ্ছিষ্ট উদ্বৃত্তটুকু ঢেলে দাও প্লেটে

পাড়ায় পাড়ায় ক্লাবে আর সিন্ডিকেটে

বাহনেরও ভাগে জোটে, কিছু ছিটেফোঁটা। 

মদের ভাঁটির পাশে চিকেন পরোটা।


দেবতার মেলামেশা ওপরের ভাঁজে

কিছু নীচে একই মঞ্চে পেঁচা ও ইঁদুর 

বালির খাদানে, গরু পাচারের কাজে

ব্যস্ত থাকে। মৃত্যু আসে... বেদনা বিধুর।


চুক্তি সম্পাদিত আজ লক্ষ্মী ও গণেশে!

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ইঁদুরেরা মরে যায় শেষে।

=======================

অমর প্রতীতি

বন্ধন পাল

বাহন বহন করে তোমাকে আমাকে, সৃষ্টি আর লয়ে...

আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সমূহ দানা বাঁধে,

সমন্বয় থেকে শেষে ক্ষয়ে কিংবা জয়ে!

তেজ থেকে আলোকরশ্মির মতো জেগেছে যাদের

বিপুল বিক্রম— সিংহের মতন ক্ষিপ্র

কিংবা ষড়যন্ত্রে আটকে রয়েছে জালে সিদ্ধিলাভ

মূষিকের দাঁত জাল কেটে দিয়ে অশুভ প্রভাব

কুরে কুরে ভেঙে দেয়,এত সে ধারালো তীব্র;

ময়ূরে মেরেছে সাপ, রূপস সুদক্ষ সেনাপতি - দেবতার 

এমন দুর্জয় সে বাহন— সব‌ই তো বহন করে চলে 

অন্তর্বর্তী রূপ— আধ্যাত্মিক প্রতীকী আকার!

অন্তরীক্ষ, স্থলে আর জলে।


আমাদেরও বাহনেরা শুভ মুহূর্তের প্রতিনিধি

টেনে নিয়ে বয়ে নিয়ে যায় কৃতকর্মের আধার।

ওরাও চেতক হয়ে স্মরণ করিয়ে দেয় নিবিষ্ট উপসংহার—

আমরা বাহিত হ‌ই,রেখে যাই বাহনের অমর প্রতীতি।

=======================

বিশবাও গভীরে ঘুম ঘুম কবিতা সংলাপ

স্বদেশ রঞ্জন মন্ডল

বিশবাও গভীরে দাঁড়িয়ে 

সঠিক ঘূর্ণির মতো আমিও আদতে লড়াই জারি রাখি সীমিত নিজের সঙ্গে 

এখন তো জলের উঠোন জুড়ে রোজ রোজ দিশাহীন সংলাপ বিচ্ছিন্ন কথাদের ভিড় নেই কোনো দূরায়ত বসন্ত জেগে থাকা অমরার বাসস্থান... 


যে মায়ের চোখ-আয়নায় নিজের মুখ বারবার দেখেছি যে চোখে গঙ্গার উপবাস জলজ ঈশ্বর প্রেম 

মায়ের কথায় 

সেইসব প্রাচীন মাটি উৎসব মানুষের ঠোঁটে ঠোঁটে ধামসার ঢেউ মাদলের কীর্তনে 

আর 

দিনলিপি পিওনের চিঠি-চাপাটি উড়ে যাওয়া আশ্বিনে মেঘ 

এখনও টের পাই আমার বুকের অববাহিকায় অন্তমিল উল্লাস ভেবে... 


তথাপি আমিও আদতে লড়াই জারি রাখি সীমিত নিজের সঙ্গে 


এই সারাদিন যত গল্পর উঠবোস মানুষের ঠিকানা সম্ভাবনার ভিতর আগুনে পুড়ে যায় করোটির লিখন 

অভ্যাস বসত কিছু যন্ত্রনা বয়ে নিয়ে যাই মাকড়সার সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে 

আর 

কিছু লিখে রাখি নষ্ট জীবনের ঘুম ঘুম কবিতা সংলাপে...

=======================

মায়ারোদ

রবীন বসু 

এত শব্দ কোথা থেকে আসেএই যে ধ্বনির ব্যঞ্জনা

বাহন-বাহিত হয়ে কতদূর যেতে পারে শেষাবধি?

উচাটন সময় তির্যক গতিভঙ্গি নিয়ে উদাসীন

পাথরের ফাটলে জলের দাগপ্রাচীন ফসিল

সভ্যতা বয়েই চলে একতারা হাতে বাহন সময়।

 

কালচক্র ঘুরে মরে অন্ধকার আবর্ত অস্থির

আমাদের পলিজন্মআমাদের ফিনিক্স জীবন

রূপকথা-মোড়া অসম্ভব ডানার কাঁপন

রাত্রিদিন জেগে থাকে অলৌকিক বিভার সাঁতার

তাকেও বাহিত করে মায়ারোদ আর মহাকাল !

=======================

বাহক

তৈমুর খান

আমরা বাহক হইয়া জন্মাইতেছি

 বহন করিবার বস্তু যাহাই হইবে হউক:

 অন্ধকার হইতে আলো, পার্থিব হইতে অপার্থিব

 সুন্দর হইতে কুৎসিত, সরল হইতে জটিল

 সভ্যতা হইতে অসভ্যতা, আনন্দ হইতে দুঃখ

 বাঁচা হইতে মৃত্যু, ভালোবাসা হইতে ঘৃণা

 বহন করিতে করিতে আমরা বৃদ্ধ হইতেছি।

 আমাদের কোলাহল থামিয়া যাইতেছে

 আমাদের প্রাণ নিষ্প্রাণ হইয়া ঘুমাইয়া পড়িতেছে।


 কাহাকে ডাকিব এবং কাহাকে ডাকিব না

 কাহার মধ্যে সামঞ্জস্য রহিয়াছে এবং কে অসামঞ্জস্য

 তাহা ভাবিয়া ব্যাকুল হইতেছি।

 আমাদের আকাঙ্ক্ষা পুড়িতেছে

 আমাদের বিশ্বাস ভাঙিয়া যাইতেছে

 আমাদের হৃদয় বিগলিত হইয়া

 জ্যোৎস্নার মতো প্লাবিত হইতে চাহিতেছে।

 তবু আমরা বাহক

 অন্ধকার বহন করিয়া রাত্রির গহন অরণ্যের দিকে

ধাবিত হইতেছি।

 আলো-অন্ধকারের পাঠশালায় আমাদের অধ্যাত্মবিদ্যার স্ফুরণ ঘটিতেছে।

 আমাদের সমস্ত জীবনভর সভ্যতা বাহিত হইয়া চলিয়াছে।

=======================

বাঁশি

সবর্ণা চট্টোপাধ্যায় 

ছিন্ন হতে হতে হাওয়ার সম্মুখে বসি

বেঁধেছিল যারা ঘরনিঃস্ব কেন আকাশের বুক?

শিরশিরে ব্যথা ওঠেকেঁপে ওঠে পাঁজর থেকে থেকে

তবে কি ব্যথারাও গান লেখে চুপিচুপি?

একটা ফুঁয়ের জোরে যে ঢেউ জেগে ওঠে

গভীর বড়ো গভীর

মায়াবী আলোর মতো বিদীর্ণ করে চোখ

আঙুলে সে বিদুৎ খেলে

খেলে লুকোচুরি

এই তো সময় ব্যথাদের বলি, "ভালো আছো"?

নাম দিয়েছি বাঁশিসুরের ভেতর এক নদী আছে জানো?

ভাসিয়ে দেয় ধূসর আব্দার

শুধু এক ধুলোমাখা বাড়িছাদের ওপর যেন কিশোরী রোদ লাফিয়ে বেড়ায় একমনে

আমি তাকে ডাকনামে ডাকি

প্রতিবার সাড়া দেয় গোপনে গোপনে।

=======================

হাঁস

অমিত কাশ‍্যপ

শহরের মাথায় এখন বিকেলের রং

যানবাহনও এখন অনেক কম

সেই দ্রুতগামী শহর এখন ভীষণ অচেনা

কেমন এক শরৎ ঋতুর আশ্চর্য গন্ধ

নীল আকাশের গায়ে সাদা মেঘের দোলা

 

এখন শহর আর আগের মতো নয়

মণ্ডপনগরীআলোয় সেজে আছে সুন্দর শহর

দেবী বসে আছেন সবাহনা সংসার নিয়ে

খুলে যাচ্ছে শহরের শরীরে খুশির হাওয়া

দশভুজা দেবী দশদিক আলো করে এখন

 

ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলতেনহাঁসের মতো থাকবি

হাঁস যেমন দুধটুকু তুলে নেয়ওই হচ্ছে

কর্ম জ্ঞান ভক্তিজলটুকু অসারষড়রিপু

অহং পরিহার করে হাঁস হওসরস্বতীর বাহন

সবই অবিদ‍্যা বন্ধনদেখ বিদ‍্যার দেবী সারদাকে ৷

=======================

ভালোবাসার বাহন প্রকৃতি

 দেবাশিস সাহা

খুব ছোট বেলায় বাতাসে দুগগা পুজোর গন্ধ এলে

বাহন-এর কথা মনে পড়ত।ভোর হলেই পাড়ার বারোয়ারী মন্দিরে গিয়ে দেখতাম মহিষের শিং কতটা বাঁকানো বা সিংহের হা-মুখ। ইঁদুর, ময়ুর, হাঁস বা পেঁচা নজর এড়াত না।


পরে মনের বয়স বাড়লে জানলাম 

যে বহন করে সেই বাহন, সেই বাহক।

পত্রবাহক, বার্তা বাহক।

ম্যালেরিয়ার বাহক মশা।প্লেগ>ইঁদুর। 


আচ্ছা নীলু, তুমি বলো

নদী গ্রাম থেকে, শহর থেকে কত মানুষের যাপন, দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ সুখ, পাপের পলি বয়ে নিয়ে যায়

সাগরের দিকে তবে সে কিসের বাহক? 

কার বাহন?


আমি মনে করি

নদ-নদী,গাছপালা, ফুল,পাখি

এই যে বিশাল প্রকৃতি হল ভালোবাসার বাহন।

এরা দিবানিশি ভালোবাসা বহন করে বেড়ায়।

এদের মাধ্যমে ভালোবাসা ছড়িয়ে যায়।

নিঃস্বার্থভাবে, নিঃশব্দে, নিঃশর্তে 

দেশ বিদেশে, গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে 

ভালোবাসার বীজ বয়ে নিয়ে বেড়ায়।


আমাদের সুখ বহন করে এক শ্রেণির মানুষ। তাঁরা 

মানুষ রঙের জীবনের আরামের জন্য নিজেকে পুড়িয়ে, নিজেকে ক্ষয় করে সুখ বহন করে।

এঁরা  সেইসব রঙিন মানুষের বাহন।


অর্থবল, লোকবল, বাহুবল থাকলে

মানুষের মতো দেখতে কারো কারো

নানা ধরনের বাহনের শখ হয়।কাউকে যন্ত্রণা দিয়ে

নিজের সুখ অনুভব এটাও কারো কারো খেয়াল। 


আমরা জিনগত ভাবে বংশপরম্পরায় বহন করি

ঐতিহ্য। ভালো ও বদগুন জিন বহন করে চলে।

জীবন আলোয় অভ্যস্ত হলে আগামী প্রজন্ম সুগন্ধ

বহন করবে সে সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই।


আমাদের অভ্যাসে সু আসুক।আমরা যেন জন্ম থেকে জন্মান্তর বহন করি মানুষের কল্যাণের জন্য সুকামনা।

=======================

দেখা হত 

মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় রায়

বেসামাল টালমাটাল গাড়িটা ফুটপাতে উঠে গেলে

ঘুমন্ত কম দামি কয়েকটা প্রাণ চিরতরে ঘুমিয়ে যায়।

বড়লোকের মদ্যপ বাহনের কোনো শাস্তি হয় না ।

বাহন পাল্টে যায় আবার ফুর্তি থাকে চলমান।


দেখতে দেখতে পুজো এসে যায় ।

ছেলের হাত ধরে চলে প্যান্ডেল হপিং ।

হাজার গণ্ডা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলে নিরন্তর ।

মা দুর্গা সিংহের উপর দাঁড়িয়ে অর্থাৎ সিংহ বাহন।

লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা , সরস্বতীর বাহন হাঁস, গণেশের ইঁদুর, কার্তিকের ময়ূর । 

ইঁদুর আর ময়ুরের কথা আসলেই সেই গজমতি হারের কথা মনে পড়ে।

ছেলের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হিমশিম খেতে হয়। 

সব বাহন যখন আমিষভোজী তখন ঠাকুর কেন নিরামিষ খায় ?

তখন মনে মনে বলি, "সত্য সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ "!

উত্তর জানা নেই তাই কোনোরকমে প্রসঙ্গ পাল্টে আবার ঠাকুর দেখতে চলি।


শরতের মেঘ উড়ে উড়ে পৌঁছে যায় দিকশূন্যপুরে। 

মেঘের সাথে আকাশের বুক চিড়ে যে ফ্লাইট রওনা দিয়েছিল

নির্দিষ্ট গতিবেগে।

এ টি সি টাওয়ারে খবর আসে পাইলটের বুকে ব্যথা ।

কো-পাইলট পরিস্থিতি সামলে কাছের রানওয়েতে ফ্লাইট 

অবতরণ করে অনেক প্রাণ বাঁচিয়ে দেয়।

ওই ফ্লাইটের বাহন-পাইলট সম্মানিত হয় ।

পালকি বেয়ারা , গরুর গাড়ির গাড়োয়ান, রিকশাওয়ালা, ড্রাইভার, ট্রেন চালক, জাহাজের ক্যাপ্টেন, নৌকার মাঝি সব বাহনেরই রকমফের যাত্রা, রকমফের পরিচিতি হলেও আসলে শেষমেশ দেখা হত গন্তব্যে ।

মাস্টারি করতে যাওয়া , বাজার যাওয়া ওই একটা ভাঙা সাইকেল ছিল বাবার বাহন।

ওই বাহনে  দেখা হত মাইল কে মাইল।

এই স্বপ্নময় পৃথিবীতে এই রকমফের বাহন আজও কত সুখের দিশা দেখায়।

দেখা হত তোমার সাথে।

=======================

বিষাক্ত বাহনে জয় রাইড

স্বরূপ ভঞ্জ 

    (এই ছোটপদ্যটি ঐতিহ্যর অজুহাতে মান্ধাতার বাষ্পচালিত ইঞ্জিন দ্বারা ট্রেন

চালিয়ে, স্রেফ মানুষের বিনোদনের জন্যে পাহাড়ের সবুজ প্রকৃতিকে কলুষিত করার একটি বড়ো মানবীয় মূর্খতা প্রসঙ্গে...)

 পাহাড়ের ঢালে সর্পিল বাষ্প শকট

           নিয়ে ধাতব নাদ বিকট

ঘন শ্যামল নিভৃত পথের

যাবতীয় নীরবতা ভেঙে দেয়

শুদ্ধ মেঘরাজ্যে বিষ ওগরায়

          নিকষ কালো বায়বীয় বিষ

          বিনা প্রয়োজনে

          কেবল মানবের মনোরঞ্জনে;

যা নাকি সারা যেত বিকল্প ব্যবস্থায়

           স্বল্প শব্দ, অল্প ধোঁয়ায়!

 

তবে কেন এই নির্যাতন কারণ বিনা ?

 

         নিরুত্তর তকমাধারী

                  প্রকৃতি পেয়ারী ;

                           হেরিটেজ কিনা!

=======================

শবযাত্রা

অয়ন বিশ্বাস

ভাবি যদি এমন হত...পৃথিবীতে শুধু মৃত্যুই থাকত---তবে তো পৃথিবীতে শুধু মৃত্যুই থাকত, থেকে যেত শেষ পর্যন্ত। তারপর একদিন মৃত্যুর মরণ---যার কোনও বাহন নেই। অগত্যা পড়ে থাকত---সৎকারবিহীন দেহ অনন্তকাল ধরে!

তাই তো দুজনে কোনও দিন একসঙ্গে গেয়ে উঠতে পারিনি জগৎসংসার ভুলে আত্মভোলা কোনও গান; তাই তো জীবনকে ভালোবেসে, নিজেদের একান্ত ভালোবাসাকে ভালোবেসে কখনও ভরন্ত চাঁদের নিচে হাঁটিনি পাশাপাশি...

শুধু আমাদের এ জীবন্ত কাঁধে মৃতদেহ বয়ে বেড়িয়েছি শুভদিনের। মাঠপারের কবরখোলায় তাদের মাটিচাপা দিয়ে ফিরে এলে মাটির রসে ভিজে পচেছে তার হাড়, মাংস, মজ্জা, কঙ্কাল।

নিত্যদিন নিয়ে গেছি নতুন নতুন ঠাণ্ডা মৃত দিন। প্রতিটি দিনের মৃত্যুদিনের শবযাত্রায় আমরা এ ঘামঝরা রক্তগরম কাঁধে বয়েছি আর বয়েছি বিভিন্ন বয়সের দিন----ধনী-গরিব, শাদা চামড়া-কালো চামড়ার। দিনে দিনে নিজেরা আরও বুড়িয়ে গিয়েছি শতগুণ, এগিয়ে গিয়েছি একান্ত নিজস্বতম মৃত্যুর দিকে।

তারপর একদিন আমার বুকের গভীরে, পাতালের কাছাকাছি অন্ধকার গুমঘরে শ্বাসরুদ্ধ তুমি মরে গেলে, আমি মরে গেলাম---চণ্ডীদাস, রজকিনী।

একদিন যেখানে ছিল আমাদের নিত্য যাতায়াত, আজ সেখানে আমাদের কে নিয়ে যাবে? কে বইবে অপাংক্তেয় আমাদের শব? কে বয় শববাহকের মৃতদেহ---জীবনের শেষতম আগুনের শ্মশান পর্যন্ত?=======================

বাহন

 কার্ত্তিক চন্দ্র হালদার

করোনায় পাহাড় সমান কঙ্কালের কি স্তূপ! 

সৎকার অভাবে অভ্রঙ্কষ প্রেতাত্মার দৌরাত্ম্য

রাজনীতি ও দুর্নীতি সহোদর বহাল তবিয়তে

সুয়ো রাণিতে হয় না, দুয়ো রাণিতেও অতৃপ্ত

বিবেকের মোড়ে দাঁড়ালে মায়ের কান্না শুনি

ধ্যানস্থ ঋষির ধ্যান ভাঙে শ্মশান বীভৎসতায

"বুলবুল আমফান ইয়াসে বাঁচার কি লড়াই! 

শেষ সম্বল দরিয়ায় মানুষ মৃত্যুর অপেক্ষায়!"


তৃতীয় ঢেউ আগত প্রায় বাটি হাতে দাঁড়াবে

অলিগলিতে মানবাত্মার আর্তনাদে ঘুম ভাঙে

এগুলোকে বাহন ক'রে ঐন্দ্রি এবার আসছে

সব সমাধান তাঁর হাতে তিনি একমাত্র ভরসা

বাঁচার শেষ আর্তি সবাই প্রাণ খুলে জানাবো

মায়ের বা কি করার আছে সবই যে কর্মফল

"দেবতা হয়েও যমুনায় রাম ব্যাধের হাতে কৃষ্ণ

হবেই,হবে-মায়েরই হাতে এ বাহন সব শূন্য!"

=======================

নিশাচর

সুজান মিঠি 

জন্মান্ধ লক্ষ্মীকে ভালোবেসেছিল মেহের আলি।


পথের ধুলোয় পড়ে থাকতে থাকতেই সে ভালোবাসা

বুঝতে পারত মেহের।

বুকের ভিতর কেমন যেন হয়ে যেত, রাগ বরফ হয়ে যেত তার লক্ষ্মীকে দেখলেই।


জন্মান্ধ লক্ষ্মী লাঠি হাতে রাস্তা পার হতে গিয়ে পড়ে

গেলে মেহের আলি দুহাতে নিজের বুক চাপড়াতো।


একদিন মেহেরের সেই আওয়াজে কান পাতল

লক্ষ্মী...

ছুটে এসে তার ময়লা শরীরে হাত ছুঁল।

মেহের আলি চিৎকার করল, সরে যাও! সরে যাও!

আমি ধুলো!

লক্ষ্মী তার মাথায় মুখে হাত বুলিয়ে বলল, এই দেখ

আমার চোখেও। উইয়ে খেয়ে একেবারে মাটি

করে রেখে গেছে। 

কেমন মজা! তুমি আমি দুজনেই ধুলো!


মেহের এখন ধুলো ছেড়ে উঠে এসেছে। কুঁড়ে বানিয়েছে। তার হৃদয়ের গভীরে যে নদী আছে,

যে পাহাড় আছে, যে অরণ্য আছে ...

তা চিনিয়েছে লক্ষ্মী তাকে।


মেহের জিজ্ঞেস করে, দেখতে তো পাও না,

তবে এ পৃথিবী চিনলে কেমন করে?

লক্ষ্মী হেসেছে, বা রে! চোখে মাটি, জল

দুই তো আছে, চিনতে তো হবেই!


মেহের আলি তার লক্ষ্মীকে বুকে আগলে রাস্তা পার করে…

লক্ষ্মী ঘুমায়, মেহের জেগে পাহারা দেয়

কুঁড়ের ভাঙা দরজায়।

চমকে উঠে লক্ষ্মী ডাকে, কেন মেহের! কেন ঘুমাবে না?

মেহের আলির চোখে হাসি… লক্ষ্মীর বাহন নিশাচর,

জানো না বুঝি? 

=======================

1 comment:

  1. শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টানটান কবিতা। উত্তেজনায় ভরপুর।

    ReplyDelete