Monday, September 24, 2018

ঋভু চট্টোপাধ্যায়



গল্প -
জাঙ্গিয়া ও ফুলের গল্প
ঋভু চট্টোপাধ্যায়

-তোর জাঙ্গিয়াটা মেঘ পরে নিয়েছে।
 দুতলার রায়বাবুর কথাগুলো শুনেই পল্লবের মাথার চুলগুলো চড়াং করে দাঁড়িয়ে গেল।এটা কোনো কথা!একে তো সকাল থেকেই যাত্রা খারাপ।কাল রাতে রুমে ঢুকে জিনিসপত্র রেখে বাথরুমে গেছিল।তারপর জামাকাপড় গুলো কেচে রুমের সামনের দড়িতে সব কিছু মেলে ঘুমিয়ে গেছিল।সকালে উঠে অন্যসব কিছু পেলেও জাঙ্গিয়া মিসিং।কোথায় গেল?এতো রীতিমত ভূতুরে ব্যাপার।তাড়াতাড়িতে কি জাঙ্গিয়া মেলতে ভুলে ভুলে গেছে।এই একটাই যা পরে এসেছে।কিন্তু গেল কোথায়?
-জাঙ্গিয়া!তোমার জাঙ্গিয়া আবার কে নেবে?কেউ কি অন্যের জাঙ্গিয়া পরে নেয়?দেখো নিচে পড়ে গেছে কিনা!পাশের রুমের একজন শুনেই বলল।
নিচে পড়তে পারে! প্রথমে কার্নিশ থেকে ঘাড় নামিয়ে তারপর সোজা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে চারদিকটা খুঁজতে লাগল।পল্লবের ওরকম উদভ্রান্তের মত অবস্থা দেখে একজন মেসে ঢুকতে ঢুকতে জিঙ্জেস করল্, কি ব্রাদার কি খবর?তুমি তো গত কালই এসেছ?’
-হ্যাঁ।আর বলবেন না, আমার জাঙ্গিয়া হারিয়ে গেছে!
-তোমার জাঙ্গিয়া!কিভাবে?
-কিভাবে জানলে কি আর হারাতে দিতাম।
কথাগুলো বলা গেল না।বদলে দাঁত বের করে গতরাতে রুমে ঢোকা থেকে কেচে জাঁঙ্গিয়া মেলা পর্যন্ত লম্বা ফর্দ টাঙিয়ে আবার সিঁড়িতেই পা রাখল।ততক্ষণে মেসের সবাই জেনে গেছে নতুন ছেলেটার জাঙ্গিয়া হারিয়ে গেছে।মেসের সবথেকে পুরানো অনাথদা সোজা এসে পল্লবের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠল,‘ভাই খুব সাবধান।তুমি এক্ষুণি তোমার পরা একটা পোশাকে থুতু দিয়ে বাইরে ফেলে দাও।কে এখন তুকতাক করে দেবে, শেষ কালে শরীর নিয়ে লেটাপেটা খাবে।
-তুমি রাখ তো, তুকতাক!
খেঁকিয়ে উঠল দুতলার চার নম্বর ঘরের বিশুদা।পল্লবের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,‘ভাইটি কি রঙের ছিল বল তো?’
-হলুদ, তবে দুদিকে দুটো ফুলের ছাপ আছে।
-ফুল ছাপের জাঙ্গিয়া!বউএরটা পরে চলে এসেছ?
একতলার দুনম্বর ঘরের মানসদা ততক্ষণে অফিস যাওয়ার জন্য রেডি।পল্লবের কাছে এসে  বেশ রসিয়ে কথাগুলো বলল।পাশের থেকে তমাল কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল।পল্লব থামিয়ে বলে উঠল,‘ফুল মানে বর্ডারে একটা বা দুটো।
-ও!তা ভাইএর কি আর নেই নাকি, অন্য আরেকটা পরে নাও, পরে খুঁজে নিও আমরাও সবাই মিলে দেখছি।
চারতলার এই ভদ্রলোক আবার সরকারি অফিসার।নিজেই বললেন সে সব কথা।কিছুসময় পরেই নিচের থেকে এক ভদ্রলোক উঠে এসে ঐ কথাগুলো বলেই চায়ের কাপে আওয়াজ তুলে চুমুক দিতে লাগলেন।পাশের একজন বললেন,‘এই যে আঁতেলদা চলে এল।এবার সব খ্যাপা খ্যাপা কথা হবে।
-খ্যাপা কথা!হাও ফানি আমি সব বিমূর্ত কনভারসেশনে কথা বলি
-রাখো তোমার বিমূর্ত।কর তো ঢপের নাটক।না কেউ শোনে না দেখে।রাখো সব।
আবহাওয়া আচমকা উত্তপ্ত হয়ে উঠল।আঁতেল লোকটির সাথে আরেকজনের কার একটা ঝগড়া হচ্ছে।সেদিকে চোখ কান না দিয়ে আস্তে আস্তে নিজের রুমের দিকে পা রাখতেই পিছন থেকে কে যেন বলে উঠল,‘ভাই তোমারটা হলুদ না গেরুয়া ছিল।মানে আমাদের এখানে অনেকের স্যাফ্রো-ফোবিয়া আছে।একবার আমার একটা গেরুয়া রুমাল কেউ নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল।পরে গেটের বাইরে আধপোড়া পড়ে থাকতে দেখি।
-হ্যাঁ স্যাফ্রো ফোবিয়া!ভারি নেতা, দুটো শিবিরে গিয়ে নাচলেই নেতা হওয়া যায় না।
-বোকো না তো, তোমাদের পার্টি কি করছে বল তো, টিভি খুললেই তো.......
শেষের জন একটু আগে নিচে ব্যায়াম করছিলেন।প্রথমজন বিশ্বাসদা।পল্লবের সাথে আগেই আলাপ হয়েছিল।
পল্লব কারোর কথাতেই কোন জবাব না দিয়ে এগিয়ে যেতেই কেউ একজন পিছনে বলে উঠল,‘ভাই শুধু প্যান্ট পরেই চলে যাও।সুবিধা হবে।গরম পড়ে গেছে।
-না না, একদম না।জলদৈর্ঘ্য হয়ে যাবে, তা ছাড়া চেনের সাথেও লেগে যেতে পারে।
কে বলল কে জানে।পল্লব কোন উত্তর না দিয়ে রুমের ভিতর গিয়ে বসে পড়ল।মহা মুশকিল হল তো।এভাবে তো কোনদিন কিছু হারায় না।হারাবেই বা কি ভাবে।প্রয়োজনের থেকে জিনিস কম থাকলে হারায় কম।এখন প্রথম মাসের মাইনে না পাওযা পর্যন্ত অসুবিধা হবে, টিউসনের সব টাকা তো আসবার সময় মায়ের হাতে দিয়ে দিয়েছে।দেখা যাক পরশু থেকে জয়েনিং।তার আগে তো কিছু করবার নেই।তার মাঝে এই হারানো কেশ।
রুমে বসে থাকতে থাকতেই চোখের সামনে নীল আকাশটা জাঙ্গিয়ার মেঘে ঢেকে গেল।নিচের সবাই ছুটতে লাগল।একি সবাই জাঙ্গিয়া পরে আছে কেন?স্কুলের হেডস্যার, সুমন্ত স্যার, পণ্ডিতস্যার, বেশ অদ্ভুত ব্যাপার ঐ যে একটা মিছিল যাচ্ছে।ওখানেও সবাই জাঙ্গিয়া পরে আছে।কেউ একজন খুলে আমাকে দিয়ে দে না, দে দে।
-এই ভাই, এই অবেলায় ঘুমালে নাকি।ঐ দ্যাখো, তোমার জাঙ্গিয়া মোড়ের মাথার সুরজ ধোপা তোমার পাশের রায়বাবুর জামাকাপড়ের সাথে নিয়ে চলে গেছিল।রায়বাবুই নিয়ে এসেছেন, দড়িতে মেলা আছে।
-পল্লব চোখদুটো অর্ধেক খুলতেই দরজাতে চোখ পড়ল।ওপাশে মস্ত আকাশ, হাল্কা রোদের সাথে নীলের বুটিক।তার গায়ে দড়িতে ঝুলছে জাঙ্গিয়াটা।ঘরের ভিতর টেবিলে রাখা হলুদ জাঙ্গিয়া, বর্ডারে নীল ফুল।
 ---------------------------------------------------------------------
Durgapur-Bardhaman Paschim,

2 comments: