গল্প -
ফালতু রতু
দুই পাড়ার চিরকালীন বিবাদ । সেই বিবাদ শুধুমাত্র ঝগড়াতেই আটকে থাকত তা নয়, সেটা মারামারি, কাটাকাটি পর্যায়ে চলে যেত । এই বিবাদের কারণ হল দুই পাড়ার মাঝে অবস্থিত একটি আমগাছ । গ্রীষ্মকালে এই আমগাছে প্রচুর আম হত, তো সেই আম কে বেশি বা কম পাবে তাই নিয়েই তুলকালাম হত । দুই পাড়ার নাগরিক কমিটির মাতব্বররা অবশেষে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসে । সে থেকেই শুরু হয়েছিল এই আম পাওয়া নিয়ে দুই পাড়ার মধ্যে বাৎসরিক ক্যুইজ প্রতিযোগিতা । যে পাড়া জিতবে সেই ৯০ ভাগ আম পেয়ে যাবে । তা তেজিপুর প্রত্যেক বছরই ৯০ ভাগ আম নিয়ে চলে যেত, আর ফেতিপুর কোনভাবেই কিছু করতে পারত না, তাই তারা এ বছর ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় নামতে নারাজ । পাড়ার বিশিষ্ট মাতব্বর ফটকে পাল বলে উঠল, "ফুটবল ম্যাচ হোক, যে জিতবে সব আম তার" । তেজিপুর তাতে রাজি হয়ে গেল । ঠিক হল সামনে মাসের প্রথম সপ্তাহে বিকেল ৩টেয় নিরপেক্ষ মাঠ রণক্ষেত্রতে এই ম্যাচ হবে । দেখতে দেখতে দিনটি চলে এল আর এই চরম উত্তেজনার খেলাটি দেখতে পাড়ার সবাই হাজির । ফেতিপুরের কাছে খবর যে তেজিপুরের প্লেয়াররা রেফারি ভোম্বলকে জিলিপি খাইয়ে নিজেদের দলে টেনে নিয়েছে । গোদের ওপর বিষফোড়া হল ফেতিপুরের বেস্ট প্লেয়ার বিজুর পায়ে চোট । বিকল্প হিসাবে এই ম্যাচে যাকেই বলে খেলার কথা সেই পিছিয়ে যায় । তাদের ধারণা যে ম্যাচ হেরে গেলে তেজিপুরের সবাই প্যাঁক দেবে । অনেক কান্ড করে পাড়ার সবচেয়ে ফালতু প্লেয়ার রতুকে দলে নেওয়া হল । পাড়ার সিনিয়র কাকাদের কাছে শোনা যায় রতু নাকি আগে বল কুড়াতো । সেভাবে খেলার সুযোগ পেতো না । কিন্তু আজ পরিস্থিতি রতুকে দলে সুযোগ দিয়েছে । রেফারির বাঁশি বাজানোর সাথে সাথেই খেলা শুরু হয়ে গেল । প্রথম ধাপে ফেতিপুরের প্লেয়াররা কেউই সেভাবে বল পেলনা । তারই মাঝে তেজিপুর দুটি গোল করে এগিয়ে গেছে । হাফটাইমের ঠিক আগে ফেতিপুরের নাটুদা একটা গোল করে দিয়েছে । ফলে হাফ-টাইমের পর স্কোর দাঁড়াল ১-২ এ ।
দ্বিতীয় ধাপে খেলা শুরু হতেই ফেতিপুরের দল বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে খেলতে লাগল আর সুযোগ বুঝেই ছোটন ঝড়ের গতিতে একটা গোল করে দিয়ে স্কোর সমান সমান করে দিলো । খেলা শেষ হবার ২ মিনিট আগে পর্যন্ত্য স্কোর একই ছিলো । খেলা পেনাল্টির দিকে যাবে ধরে নেওয়া হল ঠিক তখনই খেলার প্রায় শেষদিকে ফেতিপুরের মিডফিল্ডার রাকেশকাকা বলটা বাইকিক মেরে পাঠিয়ে
দিলেন তেজিপুরের পেনাল্টি বক্সে, যেখানে ওদের ৫ জনের ভীড়ে ছিল গোলদাতা ছোটন ও ফালতু রতু । ছোটনকে ঘিরে রয়েছে দু’জন আর রতুকে ঘিরে রয়েছে তিনজন । বল আসার সাথেই ছোটন হেড করল, বলটি গোলকিপারের হাতে লেগে বেশ উচ্চতা নিয়ে ফিরে এলো। ঠিক সেই সময় পেনাল্টি বক্সের ভেতরে ওদের তিনজনের ভীড়ে হঠাৎই রতুকে হেড দিতে দেখা গেল । পরের দৃশ্যটা ঠিক পরিস্কার নয় । দেখা গেল বলটা অত ভীড়ের মাঝে ওদের গোলের ভিতরে ঢুকে গেল । সঙ্গে সঙ্গেই রেফারির বাশি আর খেলা শেষ । আর ফেতিপুর প্লেয়ারদের জয়োল্লাস ও আনন্দে আত্মহারা ।
খেলা শেষে রাতে সেলিব্রেশন পার্টি, সেখানে সবাই ফালতু রতুকে ঘিরে রয়েছে । আজতো ওই নায়ক । মাতব্বর ফটকে পাল চেল্লিয়ে বলল, “সাব্বাশ রতু...” । কিন্তু তারই ফাঁকে গোলকিপার প্যাংলা বলে উঠল, “আরে রতু, তুই গোলটা কিভাবে করলি ?” খানিক চুপ থাকার পর রতু জানাল, সবাই যখন লাফ দিচ্ছে হেড দেবার জন্য, তখন সে ভীড়ের মাঝে হেড দেবার ভান করে হাত দিয়ে বলটাকে ঠেলে দেয় । ...হৈ চৈ এর মাঝে সবাই চুপ । কারোর মুখে কথা নেই । প্যাংলা তখনই বলল, “মারাদোনা যে হাত দিয়ে গোল করেছিল তার বেলা সারাবিশ্ব সেই হাতকে ‘হ্যান্ড অফ গড’ নামে জানে, তা আমরা আজ রতুর এই গোলটাকে ‘হ্যান্ড অফ ফালতু রতু’ নামেই জানবো .........”
No comments:
Post a Comment