Tuesday, June 25, 2019

রাজকুমার ঘোষ




গল্প -
লাট্টু দাদু

ইডেনে আজ ভারত পাকিস্তানের দিন-রাতের খেলা। তাই স্কুল থেকে ফিরেই হোমওয়ার্কটা করে নিতে হবে। তারপর সারাক্ষণ শুধু টিভি আর টিভি। আজ আর দাদু ওর সাথে বেশি ঝামেলা করতে পারবে না, কাল দাদুকে যা শিক্ষা দিয়েছে, লাট্টু ক্লাসে বসে সেই সব ভাবছে আর হাসছে।  কিন্তু কখন যে বিভুতিবাবু ওর পেছনে এসে দাড়িয়েছেন সে খেয়াল করেনি একটা হুঙ্কারে লাট্টু ওর ক্লাস রুমে ফিরে এল, সে দেখল লাল দুটি চোখ, যেন সাক্ষাৎ যমরাজ। বিভুতিবাবুর সারা পিরিয়ডটাতে লাট্টু কিছু পড়া শোনেনি, সেটা ধরা পড়ল যখন বিভুতিবাবু কি পড়িয়েছেন জানতে চাইলেন, ওকে ক্লাসের বাইরে বের করে দিলেন। কান ধরে, নিল ডাউন হয়ে রইল সে ক্লাসের বাইরে। সব ছেলেরা তার সামনে দিয়ে আসছে যাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। পর পর তিনটে পিরিয়ড সে অবস্থায় রইল। কিন্তু তাতে তার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই, সে গতকাল রাতের কান্ডকারখানা ভাবছে আর মজায় রয়েছে, মনে মনে বিড়বিড় করে যাচ্ছে, “কাল দাদুকে বেশ জব্দ করেছি”...  
গতকাল রাতে লাট্টু টিভিতে ডোরেমন দেখছিল, সেই সময় তার দাদুও খবর দেখবে আর বাড়িতে একটাই টিভি। ব্যাস! শুরু হয়ে গেল দক্ষ-যজ্ঞ। দুজনেই চিৎকার করতে শুরু করে। অবশেষে লাট্টুর মা এসে লাট্টুর গালে একটা চড় কষিয়ে দেয়। লাট্টুর চোখ দুটো ছলছল করে উঠলেও সে কাঁদেনি। চুপচাপ নিজের ঘরে চলে এসেছিল। রাতে সে খেয়ে উঠে না ঘুমিয়ে অপেক্ষায় ছিল কখন দাদু তার বাঁধানো দাঁতটি খুলে রেখে ঘুমোতে যাবে... তার আগে সে কালমেঘ পাতা আর লঙ্কা-গুঁড়োর ব্যবস্থা করে রেখেছিল, রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল, তখন ওর মিশন শুরু... সে একটা ছোট টর্চ নিয়ে দাদুর ঘরে যায়। দাদু যখন নাইট ল্যাম্পের আলোয় গভীর ঘুমে মগ্ন তখন সে দাদুর বাঁধানো দাঁতে ভালো করে লঙ্কা-গুড়ো কালমেঘ পাতা চটকে মাখিয়ে দেয়। কাজ শেষ করে সে বাথরুমে গিয়ে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে চলে যায় নিজের ঘরে, তারপর সে শুয়ে পড়ে। সে জানত সকালে তার দাদু উঠার আগে সে স্কুলে চলে যাবে...
এই ভেবে সে বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করে, ভাবে কি মহান কাজই না করেছে হাফটাইমেই ওর স্কুলের ছুটি হয়ে যায় সারাক্ষণ নিলডাউন থাকার ব্যাপারটাও ওর মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে, আনন্দে সে বাড়িতে চলে যায়, বাড়িতে ঢুকে... একি... দেখে ওর মা এসে দাঁড়িয়ে আছে, হাতে দাদুর লাঠিটাও আছে... যেতেই সেটা দিয়ে ওকে বেধরক পেটাতে লাগল আর বলল, “শয়তান ছেলে, একটুও শান্তিতে থাকতে দেবে না... রাতে তোর বাবা আসুক, তোর ব্যবস্থা করছি”... একপ্রস্থ মার খাবার পর দেখল দাদু মাথায় গামছা দিয়ে বসে আছে আর ওকে দেখেই দাঁত ভেঙছে তেড়ে আসছে... সেদিন রাতে ওর বাবার কাছেও এমন মার খেল যে জীবনে  টিভিতে কার্টুন আর ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট খেলা দেখার সখ মিটে গেছে সেদিনের পর লাট্টু আর টিভিমুখো হয়নি এমন কি দাদুর কাছেও যায়নি ...     
সপ্তাহ খানেক বাদে, ঘরে পড়ছে... দাদু ডাকছে, “লাট্টু... লাট্টু কি করছিস বাবা”... ঘরে ঢুকেই দাদু তাকে জড়িয়ে ধরেছে। আমার সাথে কথা বলবি না ঠিক করেছিস...! আমাকে কে দাদু বলে ডাকবে, কে ঝগড়া করবে... কে লড়াই করবে...? তোর যা ইচ্ছা হবে টিভিতে দেখবি, ডোরেমন, ছোটাভীম সব... শুধু একবার আমাকে দাদু বলে ডাক সোনা”... দাদু বাচ্চাদের মত কাঁদতে লাগল...  লাট্টুও দাদুকে জড়িয়ে হাউ-হাউ করে কাঁদতে লাগল......... এদিকে দাদু-নাতির এই মিলন দৃশ্য দেখে ঘরের বাইরেও ওর বাবা-মার চোখ ছলছল করে উঠল...

No comments:

Post a Comment