মুক্তগদ্য -
মানুষ যখন খেলোয়াড়
খেলার কথা বললেই নষ্টালজিয়ায় আক্রান্ত হই। মনে পড়ে কলাবাগানে সবাই মিলে রান্নাবাটি খেলা। জঙ্গল থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন পাতা রান্নার উপাদান। গোল হয়ে বসে কলাপাতায় খাওয়া খাওয়া খেলা। বিকেলে মাঠে কিতকিত, গোল্লাছুট ,টিপ্পি,
ডাঙ্গুলি। সে এক আনন্দময় জীবন। বৃষ্টির দিনে ঘড়ে বসে পুতুল খেলা। আমাদের শৈশব কেটেছে এভাবেই। এখন শিশুরা এই স্বাদ থেকে বঞ্চিত। শৈশব থেকেই তারা যন্ত্রের সাথে বাস করে যান্ত্রিকতায় আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা বড়রা অসহায়। আমরা প্রকৃতির কোলে বেড়ে উঠেছি। তাদের প্রকৃতি বলতে মায়ের পেট। না আছে বড় পুকুরের পাশে সামান্য ঝোপঝাড়, না আছে দিগন্তবিস্তৃত চোখজুড়ানো মাঠ। তারা বোকাবাক্সে বন্দী। বিকেলে কখনও খানিক মাঠে যায় বটে। সেখানেও নানা বাঁধনে বাঁধা। বিদ্যালয়ে পঠনপাঠনেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেখানেও খেলা নিস্ফলের হতাশার দলে। ফলে কেউ বলে না খেলোয়াড় হবো। কোনো ছাত্র ছাত্রীর ইচ্ছে থাকলেও অভিভাবকরা উৎসাহ দেয় না ।
আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় খেলাকে সেভাবে মান্যতা দেওয়া হয়না। এতো বড় দেশ আমাদের, এতো মানবসম্পদ কিন্তু তাকে মর্যাদা দেওয়া হয় না। কতো সম্ভাবনা অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়। রাষ্ট্র আমাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতাকে প্রশ্রয় দেয়, যার ফল চিরাচরিত খেলা থেকে ক্রিকেট, ফুটবল খেলাকে উৎসাহ দেওয়া। আমরা ভুলতে বসেছি কাবাডি, হাডুডু আরো কতো খেলা। ক্রিকেট নিয়ে দেশের মধ্যে অসুস্থ বাতাবরণ তৈরী হয়। ক্রিকেট ধনীর খেলা। তাই কমছেলেই খেলতে পারে, ঐ ব্যাটবল একটু নাড়াচাড়া করে আর বোকা বাক্স দেখে শখ মেটায়।
প্রকৃতিকে নিয়ে শুরু হয়েছে, এক বিপদজনক খেলা যা জীবজগতের পক্ষে ভয়ংকর, যার স্বাদ আমরা আস্বাদন করতে শুরু করেছি। তথাকথিত সভ্যতার নামে বৃক্ষছেদন, জলাশয় বুজিয়ে দেওয়া, বড়ো জলাধার নির্মাণ করে নদীর গতিপথ বদলানো,অতিরিক্ত ভৌমজল তোলা ও সর্বোপরি ব্যবসায়ীদের জল তুলতে দেওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া। প্রকৃতির সৃষ্টি জল নিয়ে এই খেলা আমাদের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে।
তাই খেলা শব্দটির মধ্যে আনন্দ থাকলেও সরকারি ব্যবস্থায় তা নিরানন্দ হয়ে পড়েছে।
No comments:
Post a Comment