গল্প-
একান্তে জন্মদিন পালন
ঈশ্বর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে, সময় যেন গড়াচ্ছেই না। তা যেন থমকে দাঁড়িয়ে আছে। ধীরে ধীরে ঘড়ির কাঁটা বারোটা পেরোল। এখন মাঝরাত, ঈশ্বর এবার ফোন দেখছে বার বার কোনো এস. এম. এস ফটো বা ভিডিও এসেছে কি না , কিন্তু কিছু আসেনি দেখে সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল, কখন একটা পেরিয়ে গেছে, এতক্ষণ ধরে সময় কাটছিল না,এত তাড়াতাড়ি একটা বেজে গেছে। ফোনটা রেখে সে ঘুমোনোর চেষ্টা করল, না কিছুতেই তার ঘুম আসছে না বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে রাত আড়াইটা নাগাদ সে ঘুমিয়ে পরল। অতোক্ষণ রাত জাগার পরও ঠিক সকাল ছ'টায় তার ঘুম ভাঙ্গলো। সকালে আবার সে ফোনটা দেখল 'গুডমর্নিং' ছাড়া আর কিছু আসেনি। মুখ ধুয়ে ভেজানো ছোলা খাবার পর আর কিছুই খাবার ইচ্ছা হল না ঈশ্বরের। দুপুরের দিকে সে সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল, তারপর কেকের দোকান থেকে একটা জন্মদিনের কেক নিয়ে ব্যাগে ভরল। পাশেই রেল স্টেশন, সাইকেল গ্যারেজে রেখে সে স্টেশনে চলে গেল। সে মনে করেই রেখেছিল যে যেদিকের ট্রেন আসবে সেদিকেই যাবে, কিছুক্ষণ পর একটা ট্রেন আসতেই সে উঠে পড়ল। উঠল বটে এবার যাবে কোথায় , না সেটাও সে জানে না, যেখানে হোক নেমে পড়ব এই মনে করে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগল । বেশ কয়েকটি স্টেশন পার হবার পর একটা বড় স্টেশনে সে নামল। এখানে সুন্দর পার্ক আছে বলে সে শুনেছে। স্টেশন থেকে বেরিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর সে পার্কটা দেখতে পেল, তার ভিতরে ঢুকতেই সে মুগ্ধ হয়ে গেল, খুব সুন্দর জায়গাটা, নানারকম ফুল গাছের মাঝে থাকা ঝাউ গাছ পার্কের শোভা বাড়িয়ে তুলছিল এছাড়া নানান ফুলের গন্ধ পরিবেশটাকে মধুর করে তুলেছিল। ঈশ্বর একটা নির্জন জায়গা দেখে বসল, না আশেপাশে কেউ নেই , তারপর ব্যাগ থেকে কেকটা বার করে সামনে রাখল। আজ তার "জন্মদিন।"
সে মনে করেছিল সবার মনে আছে তাই কাউকে কিছু জানায়নি, কিন্তু সে ভুল ভেবেছিল তার বাড়িতে কারো মনে নেই এমনকি তার বন্ধুরাও ভুলে গেছে। তাই সে কাউকে কিছু না জানিয়ে একাই এসেছে। ঈশ্বরের নিজেকে কেমন যেন নিঃসঙ্গ মনে হচ্ছিল, সে ভাবতেই পারছিলনা সবাই থাকতেও তাকে এই ভাবে একা নির্জনে তার জন্মদিন পালন করতে হবে। সে মনে করেছিল হয়তো কেউ একজন বলবেই তবে তা হয়নি। সে নিজেই নিজেকে শান্তনা দিয়ে বলল কেউ বলেনি তো কি হয়েছে সে তার জন্মদিন নিজেই পালন করবে। কেকটা ভালো করে সাজিয়ে প্লাস্টিকের ছুরিটা সে হাত নিল, কেন জানি তার হাতটা থরথর করে কাঁপছিলো। তার মনে হলো ওই হাল্কা ছুরিটা কত ভারী, কাঁপা হাতে ছুরিটা সে কেকের উপর যেই বসিয়েছে অমনি তার মনে হল ছুরিটা যেন তার হৃদয়ে বসেছে, এক্ষুনি সব ফালা ফালা করে দেবে। কোনোমতে সে কেকের এক ছোট্ট অংশ কাটলো আর কাটার সাথে সাথেই তার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল পড়ল তৃষ্ণার্ত মাটির উপর, শেষ কবে এভাবে তার চোখ থেকে জল পড়ছে তার সে মনে করতে পারল না। সারা শরীর তার থর থর করে কাঁপছে , চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে আর কাঁপা কাঁপা গলায় সে নিজেই নিজেকে বলল " হ্যাপি বার্থডে।"
তখন এক দমকা হাওয়ায় গাছগুলো মড়মড় করে উঠলো, পাখিরা কিচির মিচির শব্দ করতে লাগলো তখন ঈশ্বরের মনে হলো প্রকৃতি তাকে তার ভাষায় জন্ম দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে দিল। কেকের কাটা অংশটি একটু খানি খেয়ে বাকিটা সে রেখে দিল, তবে বাকি অংশটুকু সে কি করবে বুঝতে পারছিলো না, বাড়ি নিয়ে যাবে! না , ফেলে দেবে তবুও বাড়ি নিয়ে যাবে না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে এবার তার ফেরার সময় হয়েছে, স্টেশনে এসে সে যখন ওভার ব্রিজের উপর দিয়ে পার হচ্ছে তখন এক বৃদ্ধাকে ভিক্ষা করতে দেখল সে, তখন তার কী মনে হল কেকটা তাকে দিয়ে দিল, সেটা দেওয়ার পর সে তার মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি অনুভাব করল, যা এর আগে সে কখনো উপলব্ধি করতে পারেনি। মনে একরাশ বেদনা চেপে রেখে না ঝরা অশ্রু চোখে নিয়ে পড়ন্ত বিকেলের সোনালী রোদে হেসে ওঠা প্রকৃতির দৃশ্য আর পাখিদের বাসায় ফেরার ব্যস্ততার ছবি দেখতে দেখতে সে যখন বাড়ি ফিরল তখন সূর্য ডুবে গেছে।
সত্যি জীবন এমন খেলাও খেলে।
Nice Vai
ReplyDelete