Tuesday, August 14, 2018

আজিজা_নাসরিন


অণুগল্প-  
স্বাধীনতা

চারদিকে এখনো অন্ধকার সরেনি, কিছুক্ষণ পরেই ভোরের আলো ফুটে উঠবে|স্নান সেরে এসে সাদা লালপাড় শাড়ীটায় নিজেকে জড়িয়ে দেখল সে, তার মনে হল যেন সেই গ্রামের আধভাঙ্গা ঘরের সামনের উঠোনে খেলায় মত্ত বছর সাতেকের পূর্ণিমা, বহুদিন পর নিজের নাম টা তার মনে এলো,এই ছবির সাথে কোলকাতার প্রসিদ্ধ বাইজী রুমকির কোন মিল নাই | বহুবছর আগেই পূর্ণিমা কখন যেন রুমকি হয়ে গেছে | গল্পটা সেই একইরকম, পুরানো, বড্ড ক্লিশে কিন্তু যন্ত্রণাদায়ক | কন্যাদায়গ্রস্ত বাবা মেয়েকে পার করেই খালাস, মেয়ে যে ততক্ষণে হাতে হাতে বিক্রি হয়ে গেছে সেদিকে দেখার বিন্দুমাত্র সময় বা ইচ্ছা বা প্রবৃত্তি কোনোটাই তার নেই, কেননা তাকে আবার পরেরটার কথা ভাবতে হয় সাথে সাথে | "স্বাধীনতা" শব্দটার সাথে পরিচয় কিছুদিন আগে, একটা ছেলে, বাড়ির সামনের চায়ের দোকানে থাকে, সেদিন চিৎকার করে বলেছিল "আমরা স্বাধীনতা পাবো" , নিজের ঘরে থাকা রুমকির কানে এসে লেগেছিল কথাটা খুব | পরে তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিল স্বাধীনতা কি?  
ছেলেটা খুব অবাক হয়েছিল | ভুরু কুঁচকে বলেছিল, "তুমি জানো না? এই স্বাধীনতার জন্যই সারা দেশ লড়ে যাচ্ছে, কত রক্তপাত কত ত্যাগ, কত কস্ট... সেই দুশো বছর ধরে, আমরা ইংরেজমুক্ত দেশ চাই, যেখানে আমরা থাকব আমাদের মত শুধু আমাদের মত, কোনো দাসত্ব নেই কারো প্রতি,...." রুমকি কতকটা বুঝেছিল, আবার কতকটা বোঝেনি, তার দৌড় তো নিজের ঘর থেকে গানের মজলিশ পর্যন্ত তার মাঝে কেউ তাকে কখনও বোঝায়নি তারা পরাধীন, তাকে কেউ বোঝায় নি স্বাধীনতা কি!! তারপর সে বলেছিল "তাহলে স্বাধীনতা মানে কি শুধুই নিজের মত থাকা" ?
ছেলেটা বুকে হাত দিয়ে একটা বড় শ্বাস নিয়ে চোখ বুজে ধীরে ধীরে নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলেছিল "স্বাধীনতা মানে স্বাধীনতা, অনুভব করো শুধু, সব বুঝতে পারবে |"
পরে রুমকি ঘরে এসে বুকে হাত দিয়ে ছেলেটার কথাটার সত্যতা যাচাই করেছিল, কি যে শান্তি এসেছিল মনে, তাই তো সে আজ জীবনে এই প্রথম নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে চলেছে |আজ ১৯৪৭ এর ১৫ অগাস্ট, রুমকিও স্বাধীন হবে, ভোর হতে আর একটু বাকি, কিছুক্ষণ পরেই দারোয়ান রামলাল চুপি চুপি গেট পার করে দেবে তাকে, সে মিশে যাবে শহরের মানুষের দলে আর রামলাল চলে যাবে নিজের ঘরে, বিহারের এক প্রত্যন্ত গ্রামে |বাড়িতে তার বউ আর একটা মেয়ে আছে বছর দশেকের, পেটের দায়ে এখানে পড়ে থাকা | কিন্তু আজকের পর থেকে সে গ্রামে গিয়ে চাষবাস করে খাবে তবুও ভালো, এখানে আর নয় | চারদিকে এবার যেন মানুষের উল্লাস ভেসে আসছে, আসছে আনন্দের চিৎকার | রামলাল নীচে থেকে রুমকির বারান্দার দিকে হাত নাড়ল | রুমকি ধীরে পায়ে পিছনের গেট দিয়ে নীচে আসল | রামলালের হাতে কচিকলা পাতা রঙ্গের সবথেকে প্রিয় শাড়ীটা দিয়ে বলল "মেয়েকে বলো, পিসি দিয়েছে |" রামলাল শাড়ী নিয়ে একটা প্রণাম ঠুকে বলল "এত দামী শাড়ী তার গায়ে মানাবে না মাইজী"
-পিসির শাড়ী ভাইঝির গায়ে খুব মানাবে রামলাল, এটা ছাড়া আমার নিজের কিছুই যে নাই তাকে দেওয়ার মত |
..........
রামলালের চোখ হয়ত চিক চিক করে উঠল, | সামনে একটা মানুষের ঢল এগিয়ে আসছে,মানুষের হাসি, চিৎকার আনন্দে মুখরিত চারদিক, রুমকি তাদেরই মাঝে মিশে গেল | পায়ে পায়ে এগিয়ে যেতে থাকল সবার সাথে, কেউ একজন পাশে থেকে একটা ছড়ি এগিয়ে দিয়ে বলল "মা এটা ধরো" | ছড়ির আগায় বাঁধা তেরঙ্গা পতাকা নিয়ে এগিয়ে চলল রুমকি নয় পূর্ণিমা | কোন মন্ত্র আছে ওই পতাকায় যে তার রোম খাঁড়া হয়ে উঠছে বার বার, বুকের মধ্যে অসম্ভব শান্তি, আশ্রয়ের কোন নিশ্চয়তা নাই, খাবার কোন ঠিক নাই, হয়ত দিনের পর দিন অনাহারে কাটবে, তবুও স্বাধীনতা বড় বিষমবস্তু, তার যে বড় স্বাধীন হতে ইচ্ছা করে, খুব খুব | মাথার উপর ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পতাকা....সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, হাতে অফুরন্ত স্বাধীনতা ,,,,,,,যাই না এগিয়ে সামনে, দেখি কি আছে |
------------------------------------- 
Address : Name: Aziza Nasrin, C/O - Earsad Ali Malitya, Vill+PO = Amtala, Nasib Bakery Road
Pin - 742121, Murshidabad, West Bengal 

No comments:

Post a Comment