Monday, January 14, 2019

আর্যতীর্থ



ভিন্নভূতের ছড়া -  
আধুনিক ভূত

ভূত ছিলো একানড়ে ভূত ছিলো মামদো
লিস্টি তো কটা মোটে নামে গিয়ে থামতো
ব্রহ্মদত্যি ভূত, বেলগাছে বাস তার,
আলেয়া গুলিয়ে দিতো দিক সব রাস্তার
গন্নাকাটাকে চেনা লোক ছিলো কম খুব
মেছোভূতে মাছ নিয়ে ঝুপ করে জলে ডুব,
কারিয়া পিরেত কথা কয় খোনা বাংলায়
কে জানে কন্ধকাটা কাদেরকে হামলায়,
গুটিদুই মোটে আছে এই দেশে ভূত্নি
শাঁকচুন্নির সাথে শুধু আছে পেত্নি
এই কটি বাসিন্দা মোটে ভূতরাজ্যে
এযুগে এদের দিয়ে হচ্ছে না কাজ যে।
আজকে বলবো কথা বাকি সব ভূতেদের
প্রেতের ব্যাটন বওয়া আধুনিক দূতেদের।
এই কথা শুনে যারা খুক খুক কাশছো,
দেখবো এ লিস্ট শেষে তারা কে কে হাসছো।

সোর্সভূত

এই  ভূত বসে থাকে খবরের সোর্সে,
বুঝে নেয় কোনদিকে হাওয়া দেয় জোরসে।
ইয়া বড় নাক তার খালি হাওয়া শুঁকছে,
জনমত টি আর পি কোনদিকে ঝুঁকছে।
যেই জানে লোকে খাবে খুব এই বাজারে
ভূত বলে রিপোর্টার , খবরটা সাজা রে।
ডাহা মিছে হতে পারে বা আধাসত্যি,
সিকি জানা কাঠামোয় ষোলোআনা গত্তি।
ডানা মেলা আজগুবি, কল্পনাপ্রসূত,
সোর্সভূত দিয়ে যায় চুপিচুপি সে গুঁতো।
পরিবেশনাটি থাকে বিনা কোনো খুঁত রে,
অদৃশ্য হাতে লেখে বিশ্বস্ত সুত্রে

ভোটভূত

ভোট এলে তবে জাগে ঘুম থেকে ভোটভূত
কত শত অবতারে লীলা তার অদ্ভূত।
হুশ করে বুথ ঘুরে দিয়ে যায় ছাপ্পা,
আসল ভোটার দেখে খেয়ে গেছে ধাপ্পা।
ভোটকর্তারা যদি নথি টথি চেয়েছেন,
নির্ঘাত ভৌতিক রদ্দাটি খেয়েছেন।
বিরোধী ভোটার শোনে কড়া নাড়ে ওই কে,
ভোটভূত হুমকিও দেয় চেপে বাইকে।
কোমরেতে পিস্তল, মুখ বাঁধা রুমালে,
ব্যালটবাক্স হাওয়া যেই তুমি ঘুমালে।
প্রতি ভোটে ভোটভূত মাঠে অবতীর্ণ,
পুলিশ পায়না খুঁজে জেনো তার চিহ্ন।

ধর্মভূত

করে দেখো রামনাম, ডাকো হরি আল্লাহ,
পারবে না দিতে কেউ এর সাথে পাল্লা।
ফিসফিস কানে বিষ, মধু দেওয়া ছদ্মে
বিভেদের ছুরি চলে জনতার মধ্যে।
ধর্মরা আজ নাকি হয়েছে বিপন্ন,
ভূত খালি দোষ দেয় এটা তোরই জন্য
জেহাদের ডাক আসে  ভৌতিক মেসেজে,
ধর্মের বাঁশ পড়ে মুঠোফোনে এসে যে।
ভূত করে পুশ খুব একরঙা পৃথিবী,
বলে খুন করলেই স্বর্গটা ফ্রী নিবি।
মুঠোফোনে ভেসে আসে উসকানি কথারা,
ভূত দেখে কজনকে করা যায় পথহারা।

লোকভূত

কারা যেন বিরোধীকে দিয়ে গেছে পেঁদিয়ে
পড়বে না কেউ ধরা লোকভূত যদি এ।
পতাকার ভুল রঙে যেই কেউ গুমখুন,
ঠিকরঙা নেতা দাগে লোকভূত হারপুন।
শোনা যায় এলাকার ছিলো নাকি ত্রাস সে
( বিরোধীকে বলো আর কে বা ভালোবাসছে)
জনরোষে যেই যুবা খেয়ে গেছে পিট্টি
জেনো ওকে লোকভূতে দিয়েছে কুদৃষ্টি।
এ ভূতের মুখ নেই আছে পদ হস্ত,
ভালোবাসে খেতে ভারী মানুষের গোস্ত।
শাসকের পোয়া বারো বিরোধীর যমদূত,
জিভ দেখে ছিপ ফেলে ভয়ানক লোকভূত।

দোষভূত

ব্যাংকের থেকে টাকা কারা মারে বলোতো?
মানুষ কেউ না তারা, দোষভূত মূলত।
নেতা যদি ফেঁসে যান কেলো কোনো স্ক্যামেতে,
কার কাঁধে বন্দুক রেখে রন ঘ্যামেতে?
দোষভূতে দোষ নেয়, খোলা থাকে জেব তার,
সাধ্য কি চোর দায়ে হবে নেতা গ্রেপ্তার?
কিভাবে পেয়েছে টাকা নীরব বা মাল্য?
কেউ দায়ী নয় বাবা, দোষভূতই ঝাড়লো।
শাসক বলেন শুনি দোষভূত তার নয়,
আগেকার সরকার জানে তাঁর পরিচয়।
আগের শাসক বলে ঠোঁট হাত উল্টে,
দিচ্ছে শাসক দেখো কত বড় গুল সে।
জনতার টাকা যায় , ফেরত কি আসে আর,
দোষভূতে নিয়ে গেছে , করবে কি সরকার।

স্বপ্নভূত

এই ভূত বাস করে নেতাদের বাক্যে,
ফোঁটা মধু দিয়ে ঢাকে গোটা মৌচাককে।
মধু যায় নেতাবাড়ি, যতটা বরাদ্দ,
ভূত করে ভোটশেষে স্বপ্নের শ্রাদ্ধ।
ভূত এসে বলে বাছা, দিয়ে দেখো ভোটটা,
স্টার্ট দিয়ে রাখা আছে প্রগতির বোটটা।
ভটভট ভোট শেষে বোট ভারী বেগবান,
জনতা দাঁড়িয়ে তীরে দেখে ওই নেতা যান।
এ ভূতের নেই কোনো কভারেজ খবরে,
আস্তানা গেঁড়ে থাকে আশাদের কবরে।
ওই শোনো ওই শোনো, বক্তৃতা চলছে,
ভৌতিক স্বপ্নকে কোনো নেতা বলছে।

মামদো কারিয়াপ্রেত, ব্রেহ্ম কবন্ধ,
মান্ধাতা আমলের, গল্পরা বন্ধ।
আধুনিক ভূত নিয়ে আমাদের বাস তো,
দেখি দেখি, এইবারে কারা বসে হাসছো?

1 comment:

  1. আমি তো হাসছি। এক কথায় দুর্দান্ত

    ReplyDelete