অণুগল্প -
অতুলের প্রেমিকা
স্বরূপা রায়
"এই অপদার্থ, ওঠো, ওঠো বলছি।" রিংকি ওর ঘুমন্ত স্বামী অতুলকে
ধাক্কা দিয়ে বললো।
"ধুর! আজ তো ঘুমোতে দাও।
আজ তো রবিবার।" উপুড় হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থেকেই অতুল বললো।
"তো? রবিবার জন্য কি সারাদিন কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমোবে?"
"তোমার কি তাতে?"
এবার অতুল রেগে উঠে বসে জিজ্ঞেস করলো।
"আজকের বাজার কে করবে?
আমি?"
"তোমাকে বিয়ে করে একটা
দিন আমি শান্তিতে কাটাতে পারিনি।"
"তো আমাকে বিয়ে করতে
বলেছিল কে?"
"সেটাই! নেহাত তোমার বাবা
আমাকে বলেছিলেন তাই।"
"উহহহ! বাবা বলেছিল?
কয়েকবার খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েও তো কোনো মেয়ের খোঁজ আসেনি৷
তারপর ঘটকও তো মেয়ে পাচ্ছিলো না। শেষে কোন কুক্ষণে যে আমার বাবা তোমাকে খুঁজে পেল
জানিনা।"
"ওটাই তো! আমার ভাগ্যটাই
খারাপ।"
"তোমার চোদ্দপুরুষের
ভাগ্য যে তুমি আমাকে স্ত্রী হিসেবে পেয়েছো। ভাগ্য তো আমার খারাপ।"
"তোমার মতো হাতিকেই বা কে
বিয়ে করতো আমি না করলে?
"তুমিই বা কোথাকার সালমান
খান?
"শোনো, আমার পেছনে এখনো মেয়েরা পাগল।"
রিংকি হাসতে হাসতে পেট ব্যথা করে
বললো, "আমাকে বলেছো, ঠিক
আছে। আর কাউকে বলো না। যার বিয়ের বয়সে মেয়ে জুটছিল না। তার কিনা চল্লিশে এসে মেয়ে
জুটবে।"
"ফেসবুকে কত মেয়ের সাথে
আমার কথা হয় জানো?"
"ফেসবুকে তোমার থোবরা
দেখিয়েছো"
"অবশ্যই! আমার রূপ দেখেই
তো সবাই প্রেমে পড়ে যায়।"
"উফ আর পারিনা! যাও তো,
আর বাজে না বকে ওঠো এবার।"
"একদিন তুমি দেখবে,
জ্বলবে আর লুচির মতো ফুলবে। তোমার সামনেই আমি প্রেমিকা নিয়ে
ঘুরবো।"
"প্লিজ নিয়ে আসো! আর
আমাকে রেহাই দাও।"
"আজই একটা মেয়ে বলেছে
দেখা করতে বিকেলবেলা।"
"ঠিক আছে যেও। তার আগে
বাবানকে ক্রিকেট কোচিং থেকে নিয়ে এসো।"
"তোমার জ্বলন হচ্ছে না?"
"জ্বলন? আমি বাঁচি কোনো মেয়ে তোমাকে নিয়ে গেলে। আমি তো মেয়েটার কাছে চির কৃতজ্ঞ
থাকবো।"
"দেখবো, দেখবো।"
"দেখো, মল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্তই।"
"মানে?"
"কিছুনা। তুমি ওঠো,
আমি বাবানকে ডাকি গিয়ে।" বলে রিংকি চলে গেল।
বিকেলবেলা বাবানকে ক্রিকেট কোচিং
থেকে বাড়ি নিয়ে এলো অতুল। তারপর জিন্স প্যান্টে শার্ট গুজে পড়ে তৈরি হলো। চুল সেট
করে, বডিস্প্রে লাগিয়ে বেরুনোর সময় রিংকিকে বললো,
"আমি চললাম। রাতে বাইরেই খেয়ে আসবো। তাই তুমি আমার অপেক্ষা করো
না।"
"ঠিক আছে, সাবধানে যেও। আর অল দ্য বেস্ট।" রিংকি বললো টিভি দেখতে দেখতে।
অতুল মুখটা ভেংচি দিয়ে জুতো পড়ে
বাইক নিয়ে বেড়িয়ে গেল।
রিয়া নামের একটা মেয়ের সাথে মাস
তিনেক হলো অতুলের ফেসবুকে কথা হয়। মেয়েটার ফেসবুকে কোনো ছবি নেই। ওর নাকি দাদা বকা
দেবে, তাই ছবি দিতে পারেনা। অতুল বলেছিল ওকে
মেসেজ বক্সে ছবি দিতে। হাত, পা, চোখ,
ঠোঁটের ছবি পাঠালেও মুখ দেখায়নি। অতুল বেশি জোর করনি।
অতুল বলেনি রিয়াকে যে ও বিবাহিত।
বলেছে যে, বাড়ির দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে বিয়ে করতে
পারেনি। এখন ইচ্ছে আছে বিয়ে করার। আরোও অনেক কথা বলেই অতুল চেষ্টা করেছে রিয়াকে
পটানোর।
রিয়া মোটামুটিভাবে পটেও গেছে। কারণ, দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক না থাকলেও, অল্পস্বল্প ঘনিষ্ঠ কথাবার্তা হয়। মেসেজে আই লাভ ইউ বলা, চুম্বনের স্মাইলি পাঠানো, টুকটাক আমিষ কথাবার্তা
চলে।
রিংকির কথা ভেবে মাঝে মাঝে অতুল ভয়
পায়। কিন্তু তারপর আবার রিংকিকে দেখানোর জন্য যে ওউ মেয়ে পটাতে পারে, ভয়কে সরিয়ে এগিয়ে যায়।
আজই অতুল আর রিয়ার সামনাসামনি দেখা
হওয়ার কথা। রিয়া অতুলকে চিনলেও, অতুল রিয়াকে চেনে
না। রিয়া বলেছে ও চিনে নেবে।
পূর্বে ঠিক করা কথামতো, অতুল বাজারের মোড়ে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে শুরু করলো
রিয়ার জন্য। সন্ধ্যা সাতটায় সময় ঠিক করেছিল দুজনে। সাতটা পাড় হয়ে, সাড়ে সাত বেজে গেল।
"মেয়েদের তো সাজতেই এক
ঘন্টা লাগে।" বলে নিজেকে বুঝিয়ে বাইকে বসেই অতুল ফোন ঘাটতে লাগলো।
সাড়ে সাত থেকে আটটা..সাড়ে আটটা..
"উফ না! আর অপেক্ষা করা
যাচ্ছে না।" নিজের মনে মনেই বলে অতুল ফেসবুকের মেসেজ বক্স খুললো। ওদের আগে
ফোনে কথা হয়নি, আর নম্বরও নেই। তাই মেসেজই ভরসা।
"কোথায় তুমি? আমি সাতটা থেকে অপেক্ষা করছি।" টাইপ করলো অতুল।
কিছু একটু ভেবে, "আমি সাতটা থেকে অপেক্ষা করছি।" কেটে শুধু
"কোথায় তুমি?" মেসেজটা পাঠালো।
"এই তো এসে গেছি।"
রিপ্লাই এলো রিয়ার কাছ থেকে।
"আচ্ছা এসো।"
দশ মিনিট পরে হঠাৎ রিংকি অতুলের
সামনে এসে দাঁড়ালো।
অতুল রিংকিকে দেখে অবাক হয়ে বাইক
থেকে নেমে জিজ্ঞেস করলো, "তুমি এখানে?"
"তোমার রিয়া কোথায়?"
রিংকি জিজ্ঞেস করলো।
"আসছে।" অতুল বললো।
পরক্ষণেই একটু ভেবে জিজ্ঞেস করলো, "তুমি রিয়ার নাম কিভাবে জানলে?"
রিংকি এবার নিজের ফেসবুক মেসেজ
বক্স থেকে একটা মেসেজ করলো অতুলকে, "তোমায় আজ দারুন লাগছে।"
অতুলের ফোনে মেসেজ ঢুকলো। রিয়ার
ফেসবুক থেকে মেসেজ, "তোমায় আজ দারুন
লাগছে।"
"তার মানে তুমিই রিয়া?"
অতুল হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
"আজ্ঞে হ্যাঁ, পতিদেব।"
"এটা কি হলো?"
"সকালে বলেছিলাম না যে,
মল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত! ওটার মানে এটাই ছিল। তোমার কপালে আমি
ছাড়া আর কেউ নেই।"
"হায় আমার কপাল!"
"এবার চলো, রাতের খাওয়ারটা তো বাইরে খাওয়ারই কথা আছে। বাবানকে আমি মায়ের কাছে
রেখেএসেছি।"
অতুল আর কিছু না বলে বাইকে উঠে
বসলো। রিংকিও ওর পেছনে বাইকে উঠে বসলো। হেলমেট পড়ার আগে পেছনে ঘুরে রিংকির গালে
একটা চুম্বন করে অতুল বললো, "রিয়া খুব রোম্যান্টিক!
আমার ওকেই পছন্দ। আর এই চুমুটা ওর জন্যই ছিল।"
"বদমাশ!" বলে রিংকি
হেসে অতুলের পিঠে একটা চাপড় মারলো।
---------------------------------------------------------
উত্তর ভারতনগর, শিলিগুড়ি
রোম্যান্টিক ৷ মিষ্টি..
ReplyDeleteরোম্যান্টিক ৷ মিষ্টি..
ReplyDelete