কথোপকথন (একাঙ্কিকা)-
বাঙ্গালীর_বিশ্বকাপ
অভিজিৎ দত্ত
রানাঘাট লোকালে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি
করা যাত্রীদের মধ্যে প্রতিদিন যাওয়া আসার মধ্যেই গঢ়ে ওঠে বন্ধুত্ব আর বাঙ্গালীর
বন্ধুত্ব মানেই তর্ক আর তর্ক থেকে তর্কাতর্কি এবং তা থেকে ঝগড়া । এদিকে বাঙ্গালী
জানে না এ ধরণের কিছু বিশ্ব সংসারে থাকবার প্রশ্নই ওঠে না। এটা অবশ্য তাদের ট্রেনে
বসে সময় কাটানোর একটা টেকনিকও হতে পারে । সঠিক জানি না। আর আপাতত জমজমাট বিশ্বকাপের আসরে আমাদের তর্কের বিষয় 'বাঙ্গালীর ফুটবল' অর্থাৎ ওই বিশ্বকাপ ছাড়া অন্য কিছু
হতে পারে কি ?
তিনজন যাত্রী রমেশবাবু (রম), বিরিঞ্চি হালদার (বিরি) এবং সবজান্তা অনিমেষের (অনি) মধ্যে
সেদিন শুরু হয়ে গেল বাকযুদ্ধ । তখনও সেমিফাইনাল শুরু হয় নাই । সাথে এদিক ওদিক থেকে
টিপ্পনী দুয়েকটাও অবশ্য ভেসে আসছে ।
বিরি :: কি যে অইত্যাছে বিশ্বকাপে
কওনই মুশকিল ।
অনি :: আজকাল জ্যেঠু এইরকমই । আমি
আগেই জানতাম আপসেট হবে । টেকনোলজিই পাল্টে গেছে যে ।
বিরি :: আমাগো সময়ে একা পেলেই ত্রিভুবন কাঁপাইয়া দিত। হেই
ব্রাজিল কিনা বগের ঠ্যাঙ বেলজিয়ামের আয়নায় নিজেরে দেইখ্যা হেই কাঁচে পা কাইট্যা
লগে লগেই কাইন্দ্যা কাইন্দ্যা মাঠ ছাড়ে ।
অনি :: আরে জ্যেঠু তোমাদের
প্রাগৈতিহাসিক যুগের কথা ছাড়ান দাও। মানছি পেলে এককালে কিছু মাল ছিল তবে এখন তো
তোমার ভাষায় খাড়াইতেও পারে না।
জনৈক যাত্রী :: তবুও পেলে ইজ পেলে।
তখন দূরদর্শন ছিল না । আর তাই কখনও সেভাবে দেখি নাই যদিও ।
অনি : আমি তো ভাবতেই পারছি না তখন
টিভি ছাড়া আপনাদের দিন কাটত কেমন করে ?
রম :: আরে তখন আমরা মাঠে গিয়ে লাইভ
ফুটবল দেখতাম ।
বিরি :: হ বলরাম, সমাজপতি, অরুণ ঘোষ
রম :: চূণী, পি কে এঁদের নামও বলুন।
অনি :: তা যাই হোক এবার আমি বলে
দিচ্ছি বেলজিয়ামই চ্যাম্পিয়ন হবে।
বিরিঞ্চি :: ধুর পোলা। তুই কি বোঝস্ খেলাধুলা । তগো জ্ঞান তো টিভি
দ্যাখা আর কানে মোবাইল । আরে রমেশবাবু আপনি
চুপটি কইরা রইলেন ক্যান গো ?
র :: আমি মুখ খুললে তো আপনারই
মুশকিল । সেদিন আর্জেন্টিনা হেরে যাওয়ার পর মেসি কে আপনি খেলা ভুলে গিয়েছে পর্যন্ত
বলেছেন।
অনি :: না কাকু মেসি যে পারবে না
আগেই জানতাম । আমি বলে দিচ্ছি এই বেলজিয়ামই এবার কাপ ঘরে তুলবে।
বিরিঞ্চি: হ ! থইয়া দাও তুমাগো
বেলজিয়াম । এখনও সামনে ফ্রান্স রইছে ।
জনৈক যাত্রী :: এবার ইংল্যান্ড যা খেলছে অপূর্ব ।
রম :: বাচ্চাগুলো ভাগ্যবলে উঠেছে
সেমিতে ।
বিরি :: হ হ এহন তো তা কইবেনই।
রম :: কেন ? কি আবার বললাম আমি ?
বিরি :: টিমডারে তো আপনেগো মেসিদাদার বড়ভাই এককালে হাত লাগাইয়া
গোল দিয়া জিতছিল ।
অনি :: তবে মারাদোনা আলাদা ক্লাস
এটা জ্যেঠু মানতেই হবে।
রম :: তাছাড়া উনি কিন্তু পরেও
অস্বীকার করেন নাই কথাটা।
অনি :: আর জ্যেঠুর নেইমার এবার যা
করল !! ছিঃ ছিঃ । এরপর ব্রাজিলের খেলা দেখতে ঘেন্না লাগবে।
বিরি :: আরে নেইমার করছে তো
ব্রাজিলের কি দোষ। তগো ইংল্যান্ড যে ১৯৯০ সালে পেলেরে .......
রম :: দুত্তোর । আপনার বড্ড পুরোনো
কথা ঘাঁটা অভ্যাস ।
অনি :: হ্যা কাকু আপনারা দুজনেই
-----
বিরি :: তুই থামত ছ্যামড়া। নাক
টিপলে দুধ গলে আবার চ্যাটাঙ চ্যাটাঙ কথা ।
রম :: খেলার কথা বাদ দিয়ে আমরা
কিন্তু ঝগড়া করে যাচ্ছি সমানে । লোকে কি বলবে !
যাত্রীবৃন্দ সমস্বরে :: আরে মশাই
বলার কিছু বাকি থাকলে তো বলব।
১ম যাত্রী :: আপনারা তিন দ্বিগ্বজ যে রেটে চালিয়ে যাচ্ছেন আপনারা
তাতে আমরা বিমোহিত ।
২য় যাত্রী :: বাকিটা আপনারাই শেষ
করুন । শেয়ালদা পৌঁছে গিয়েছি তো।
৩য় যাত্রী :: আপনারা এবার বাকিটা
স্থির করুন আমরা নেমে যাচ্ছি । কালকে শুনে নেব ।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মুকুন্দপুর, কলকাতা
এরকম মানুষদের আশেপাশে রোজই দেখি ৷ রিলেট করতে পারলাম ৷
ReplyDeleteখুব মজা লাগলো গল্পটা পড়ে কারন আমি একসময় প্রাত্যহিক ট্রেন যাত্রী ছিলাম।এরকম দ্বিগ্বজ তখনও ছিল।
ReplyDelete