Monday, February 18, 2019

মহঃ রাফিউল আলম



মুক্তগদ্য -
ভেজা_কাশফুল

এই তো সেই আম গাছ,পুকুরঘাট,সেই ভাঙা বাড়ি,কত কি.......এই তো সেই পুঁচকি মেয়েটা,নাকে নোলক,পায়ে নুপুর.......এই তো সেই পুঁচকে ছেলেটা,কেতাদুরস্ত চালচলন,বাড়ির দরজায় বারবার রাস্তা মেপে চলেছে.......কার যেন আসার প্রতিক্ষা,বাল্যপ্রেমের স্বর্গীয় অনুভূতি,পুঁচকি মেয়েটাও কম যায় না.......বাড়ির কাছে টিউবয়েল থাকতেও সে ওই দুরের টিউবয়েলটাতেই জল আনতে আসবে.......কিন্তু কখন?এই তো নুপুরের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে.......পুকুর পাড়ের ওপারের আরো একটা পুঁচকি মেয়েকে এপার থেকে অকারণ ডেকেই চলেছে......কার যেন দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা......এই তো পুঁচকি মেয়েটা এবার জল ভরবে.......কোন কারন ছাড়ায় কলসের সব জল সে আবার ফেলে দেবে.......আবার ভরবে,আবার ফেলবে.......এবার পুকুরঘাটে নামবে ছেলেটা কোন কারন ছাড়ায়,চোখে জল দেবে,মুখে জল দেবে কিন্তু তার তো হাত নোংরা নেই.......পুকুরপাড়েই টিউবয়েল,এবার পুঁচকি মেয়েটা কে কেউ না কেউ ঠিক হাঁক দিতে দিতে আসবে......জল আনতে কতক্ষণ লাগে?ছেলে মেয়ে দুটোর বয়স মাত্র দশ বারো......
দিনে অন্তত একবার সাইকেলের চেইন পড়বেই সেই পুচকে ছেলেটার ঠিক পুচকি মেয়েটার বাড়ির সামনে।কাকতালীয়ভাবে পুচকি মেয়েটা তখনই দাঁড়িয়ে থাকবে বাড়ির ছাদে।
পাশের বাড়ির আর একটা পুচকি ঠিক লক্ষ্য করবে কী কী ঘটছে পুঙ্খানুপুঙ্খ।বিকেলবেলায় খেলার সময় সবার কানে কানে পৌঁছে যাবে সেই পুঁচকে আর পুঁচকির অমর প্রেমগাথা।লজ্জায় লাল হয়ে গেছে ততক্ষণে দুটো বোকা মুখ।তারা যেন বিশাল বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছে।এবার বর-বউ খেলা শুরু হবে।একদিকে বরপক্ষ একদিকে কনে পক্ষ।সবার প্রস্তাবে কনে হবে পুঁচকি তাহলে বর কে হতে পারে বলার অপেক্ষা রাখে না।কোনো কোনোদিন তারা আবার লাঠি খেলে।একজন ছুড়ে দেবে অনেকগুলো লাঠি-----সেই লাঠিগুলো দৌড়াতে দৌড়াতে কুড়িয়ে আনতে যতক্ষন ততক্ষনে যে লাঠিগুলো ছুড়েছিলো সে তার লাঠিটাকে লুকিয়ে ফেলবে কোনো গোপন জায়গায়।এবার খোঁজাখুঁজির পালা।যখন সেই পুঁচকেটার লাঠি ছোড়ার পালা তখন কিভাবে যে আঙুলের কৌশলে সবার লাঠি দূরে গিয়ে পড়লেও পুঁচকির লাঠিটা একটু কাছেই পড়ে সে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না।
তারপর পুঁচকি একদিন বড় হয়ে উঠবে ঠিকই।পুঁচকেটাও তারই সমবয়স্ক।বঙ্কিমবাবু তাই হয়তো বলেছিলেন---"বাল্যপ্রেম অভিশপ্ত।"
পুঁচকি আজ বেলা বোস।পুঁচকেটাও অনেক পরিণত।তারপর অনেকটা সময় কেটে যাবে।পৃথিবীটা গোল।তারপর একদিন ঠিকই দেখা হয়ে যাবে দুজনের কোনো বাসস্ট্যান্ডে কিংবা রেল স্টেশনে।স্লিমতনু পুঁচকি  স্থূলাঙ্গী গৃহবধূ।ছোটো বাচ্চাটা বলবে এই লোকটা কে মা?পুঁচকির নির্লিপ্ত উত্তর বাবু-- এটা তোমার মামা।যে পুঁচকে ছেলেটার এতদিন ধারণা ছিল চাঁদটা আসলে মেয়ে এবার সে পরিষ্কার বুঝতে পারবে চাঁদটা মেয়ে নয়;চাঁদটা আসলে ছেলে।তারপর দুই একটা সৌজন্যমূলক কথা।সকলের অজান্তে দুটো দীর্ঘশ্বাসের ছোটগল্প।
    সোনালী শৈশব----শারদীয় কাশফুল----- সদ্য পা দেওয়া কৈশোর---সাদা কুয়াশার অন্ধকারে হাঁতরে মরবে একটা নস্ট্যালজিক সময়।তারপর আবার যেন সবকিছু স্বাভাবিক।কিছুক্ষন আগেও যে সুমাত্রা উপকূলে আছড়ে পড়েছিল সুনামির ঢেউ তাদেকে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই।এমনিভাবেই শৈশবের কিংবা কৈশোরের বাল্যপ্রেমকথাগুলো বেঁচে থাকে মনের কোনো গভীর কোণে।স্মৃতিকথাগুলো হয়ে থাকে আবছা পিরামিড অক্ষর।শৈশব লালিত হয় আমাদের মনের অজান্তে।কৈশোরের লজ্জা অতিক্রম করতে পারিনা সময়ের সাথে।তবু আমরা বড় হয়ে যায় কালের অমোঘ নিয়মে।

No comments:

Post a Comment