Saturday, April 4, 2020

বিহির আলম



অণুগল্প -
চুপকথা

গাড়ি থেকে নেমে সোজা রুমে গেলেন ডাক্তারবাবু।
সেখানে ড্রেস পড়ে নিয়ে সোজা চললেন ওটিতে।রাত ১টা প্রায় কিন্ত,ইমারজেন্সি কল ছিলো,তাই বিলম্বন না করে চলে এলেন। সহকারী ডাক্তার নার্সরা অপেক্ষায় আছেন।
ডাক্তার গম্ভীরমুখে ওটিতে ঢোকার মুহুর্তে দেখেন  একজন ভদ্রলোক ওটির দরজার সামনে পায়চারি করছে। তাকে পেয়ে প্রায় তেড়ে এসে বলা শুরু করলো
-"এতক্ষনে আসার সময় হলো আপনার,নার্সিংহোমে পয়সা কামানোর পদ্ধতিটা ভালোই জানেন"

-"দেখুন,আমি ফোন পেয়েই চলে এসেছি,অযথা টেনশন করবেন না,আপনার ছেলের কিছু ক্ষতি হবে না, কথা দিচ্ছি"

-"নিকুচি করি আপনার কথার,আমার ছেলে মৃত্যুমুখে আর আপনারা আরামে ঘুমাচ্ছেন এসি রুমে"

আরো রাগ আর গলা বাড়ে ভদ্রলোকের,
--"শুনে রাখুন ডাক্তারবাবু, আমার একমাত্র ছেলের যদি কিছু হয়ে যায় না,আপনার পুরো পরিবারের কাউকে শান্তিতে থাকতে দিবো না বলে দিলাম"!


--"কারো সন্তান মারা গেলে আপনাদের কি? আপনারা তো শুধু দেখেন টাকা"।বলে লোকটা রাগে কাঁপতে থাকেন।

--"দেখুন শান্ত হয়ে বসুন আর ঈশ্বরকে ডাকুন,আমি দেখছি",বলে ডাক্তারবাবু এগিয়ে গেলেন

কিন্ত, রাস্তা আটকালো লোকটা, আবার বলা শুরু করলো-
"নিজে দেরিতে এসে এখন ঈশ্বরকে ডাকতে বলছেন?যদি সন্তানটা আপনার হত এত কি গড়মসি করতেন বলুন?"
ডাক্তারবাবু কথা না বাড়িয়ে ওটিতে গেলেন,প্রায় মিনিট তিরিশ পর, সফল অস্ত্রোপচার করে ডাক্তার বাবু হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে চলে গেলেন।
এর পর সহকারী ডাক্তার বাইরে এলেই লোকটা বললেন আচ্ছা এই ডাক্তারবাবু এত নির্মম ক্যানো?
ইনিকি শুধু টাকাই চেনেন? দু'চারটি কথা বললে কি এমন হত!

সহকারী ডাক্তার বললেন -"দেখুন ডাক্তারবাবুর একমাত্র ছেলে আজ দুপুরে হোস্টেল থেকে বাড়ি আসার পথে রাস্তায় দাঙ্গাকারীদের হাতে মারা যায়,আর,তার সৎকারের ব্যাবস্থা করবেন কিন্ত এখান থেকে ফোন পাওয়ার পর ছেলের মৃতদেহ রেখে ছুটে এসেছেন। আবার, এখান থেকে সোজা শশ্মানে যাচ্ছেন উনি ছেলে মুখাগ্নি করতে।আর,একটা কথা, এইযে আপনার ছেলের কিডনি দাতা কিন্ত ওনার ছেলে।
বসুন,বিশ্রাম নিন আমি আসি", বলে সহকারী ডাক্তার বাবু চলে গেলেন।

2 comments: