দু'টো কবিতা -
সত্যের জন্ম হয় ফিনিক্সের ডানায়
তোমাকে আর মনে পড়ে না সেভাবে
সেটা ছিল ২০১৩ সাল, তোমরা গেলে মুম্বাইয়ে,
যদিও খুব বেশিদিনের জন্য না,
তবু ঝড় বয়ে গেল এখানে আমার ওপর দিয়ে
লিখেছিলাম তখনই--
পশ্চিম আরব সাগর থেকে বয়ে আসা গ্রীষ্মবাতাস
তোমার শরীরের ঘ্রাণ হয়ে,
তুমি সমুদ্রস্নানে গেলে
তোমার গলার লকেট ছুঁয়ে আসা লোনাজল দুপুরের সূর্যালোক হয়ে
আমার কবিতা লেখার কক্ষখানি জুড়ে
বিন্দু বিন্দু ঘামের মধ্যে আমার কপাল জুড়ে
এই নদী-শহরমুখী আমার দক্ষিণের বারান্দার রঙিন মেঝে, কারুকার্য করা লোহার রেলিং, বাহারি ফুলের টব, বারান্দায় শুকোতে দেওয়া জামাকাপড় আর আমার বসার পুরোনো ডেক চেয়ারটি জুড়ে
আমাকে ঘিরে থাকে।
একথা জানার পরও যে তুমি নিবিষ্ট সেখানে আপনজনে।
লিখেছিলাম এখানকার গ্রীষ্ম বাতাসে
যেন তোমার সুদূর স্পর্শ;
আমার দীর্ঘনিশ্বাস ছুঁয়ে যায়
মুখের ওপর বিন্দু বিন্দু ঘাম,
পশ্চিমের মুম্বাই শহর,
আরব সাগরের বুকে প্রশস্ত বর্ণালি বিকেল
ও কয়েকটি সূর্যাস্ত
আমার গভীর দীর্ঘশ্বাসের পথ ধরে
ঠোঁট ও চিবুক ছুঁয়ে যেন
এই নদী-শহর ঘেঁষা দক্ষিণী বারান্দায়
আমার চোখের সামনে !
এরপর হঠাৎই স্বপ্ন ভেসে আসতো
একবুক উচ্ছ্বাস নিয়ে
কারণ বিকেল শেষ হতে চলা সূর্যাস্তে
মনে রক্তিম আভা ছড়িয়ে
হাতঘামে রাখা আমার দূরাভাষ যন্ত্রে
আসতো তোমার সন্দেশ,
গ্রীষ্মবাতাস যেন শেষমেশ খুঁজে পেতো
তার জুড়োবার পথনির্দেশ।
যদিও জানা ছিল ভালোই তুমি নিবিষ্ট আছো সেথা আপনজনে। মনস্তত্ত্ববিদগণ একে বলতেন ওসিডি।
এরপর এতোকিছু ঘটেছিল হয়তো কিছু ঘটারই ছিল বলে--
তাই কোনো এক ঝড়ে সবকিছু এদিক-ওদিক হয়ে গেলে, বলা ভালো যার যেদিকে থাকার তাকে সেদিকেই পাঠিয়ে দিয়েছিল সেই ঝড়;
তোমাকে আর আমাকে!
এখন আর তাই তোমাকে সেইভাবে মনে পড়ে না আমার। মনস্তত্ত্ববিদগণ আগে এই মনে পড়াটাকে বলতেন ওসিডি।
ধ্বংসের ছাইগাদা থেকে সত্যি জন্ম নেয় ফিনিক্স পাখি, আসলে যা কখনই সত্য ছিল না, এক ঝড়ে তা-ই এদিক ও ওদিক হয়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল তারপর....
তারপর সত্যের জন্ম হয়েছিল
ফিনিক্সের ডানায়
সেই ধ্বংসের ছাইগাদা থেকে।
তাই তোমাকে আজ মনে থাকলেও
সেইভাবে আর মনে পড়ে না আমার ।।
--------------------------------------------------------------------------
আমার দু:খেরা, কবিতা ও প্রেয়সীর ধূসর মুখ
জানিনা অতীত কেন দূরে চলে যায়
এতো তাড়াতাড়ি
জানিনা রোদ কেন তবু আজ
আমার উঠোনে খেলা করে
জানিনা আর কেন ফিরে আসে না
তবে সেই সব ছেলেবেলা !
তবু.....
তবু প্রেয়সীর মুখ ধূসর হতে হতে
ফিরে আসে কোনো এক মধ্যরাতে
তিলোত্তমা কলকাতা উজ্জয়িনী নারীর মতো
ঠায় তখনো দাঁড়িয়ে!
এই সন্ধিক্ষণে তবু তুলে আনা যায়
পুরোনো দু:খের দলা এক দঙ্গল,
এতোদিনে জেনে গিয়েছি
কোনো কোনো বিশেষ মুহূর্তে
দু:খেরা দলা পাকানো ছেড়ে কবিতা হয়ে ঝরে পড়ে ডায়েরির পাতায়।
আমার মধ্যরাত, উজ্জয়িনী নারী
আর আচম্বিতে
প্রেয়সীর ধূসর হতে হতে ফিরে আসা মুখ,
না হয় কবিতাই স্থায়ী হোক
এতোকিছুর আনাগোনা মাঝে ।।
ভালো লাগলো ।
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ।
Deleteউফফ এই লেখা পাগল করে দ্যায়,
ReplyDelete*পশ্চিম আরব সাগর থেকে বয়ে আসা গ্রীষ্মবাতাস
তোমার শরীরের ঘ্রাণ হয়ে*
*তারপর সত্যের জন্ম হয়েছিল
ফিনিক্সের ডানায়
সেই ধ্বংসের ছাইগাদা থেকে।*
এই দুটো লাইন পড়ে গায়ে কাঁটা দিচ্ছিলো! কে বলেছে, হিপ্নোটাইজ শুধু মনস্তত্ববিদ করতে পারে? ডক্টর চক্রবর্তীর লেখাও করতে পারে।
*প্রেয়সীর ধূসর হতে হতে ফিরে আসা মুখ,
না হয় কবিতাই স্থায়ী হোক* উফফ, জাস্ট দারুন। এই লাইনটার প্যাশন টাই আলাদা!
অসংখ্য ধন্যবাদ সৌম্যদীপ আপনাকে, আপনি নিজে মনোবিদ বলেই বোধ হয় কবি মনস্তত্ত্ব বুঝতে পারেন এত ভালো করে। ভালো থাকুন আপনি, কারণ মানুষকে ভালো রাখাই আপনার কাজ।
ReplyDeleteতোমার লেখার যে ঘরানা , সেটা আমার অত্যন্ত প্রিয় , এত ভালো লেখা... পড়া শেষ হলেও রেষ থাকছে বহুক্ষণ !!
ReplyDeleteভালো থাকো .. ভালো লেখো। শুভেচ্ছা।
অনেক ধন্যবাদ । ভালো থেকো ।
Delete