হজমিগুলি, হাফপ্যান্ট আর কুলের আচার
দেবব্রত ঘোষ
মলয়
পূর্ণ প্রতিমা প্রকাশনী
জানুয়ারি ২০১৯
৬০/-
আলোচক : নির্মলেন্দু কুণ্ডু
কিছু কিছু গল্প পড়লে মনটা চলে যায় সুদূরপানে ৷ চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে একটা সময়পর্ব ৷ খুব চেনা লাগে আদতে অচেনা এক পরিমন্ডলকে ৷ তেমনই এক অনুভূতি জাগলো দেবব্রত ঘোষ মলয়ের উপন্যাসিকা "হজমিগুলি, হাফপ্যান্ট আর কুলের আচার" পড়ে ৷
তিন ছেলে—ঋভু, ঋজু আর ঋতম, তাদের বেড়ে ওঠার পথে নানা বাঁক, তাদের জগৎ নিয়ে গড়ে উঠেছে এই কাহিনী ৷ মূলত ঋজুর চোখ দিয়েই দেখানো হয়েছে গোটা ঘটনাকে ৷ তাদের বাবা নির্বিবাদী রাসবিহারী, মা কল্যাণী, প্রতিবেশী গোপালবাবু ও তাঁর পরিবার, কোলাঘাটের মামার বাড়ি, শোভাবাজারের মামার বাড়ি, বেহালার আলোকময় দুনিয়া ছেড়ে বাকসাড়ার অন্ধকারের জগৎ, সেখান থেকে আবার আলোতে আসা, জীবনের কিছু অমীমাংসিত ফলাফল, রূপনারায়ণের ভয়াবহ বন্যা—দু' মলাটের মধ্যে অসংখ্য ঘটনা, আর তার মাঝেই ঋজুদের বড় হয়ে ওঠা ৷ ছোট ছোট ঘটনার মধ্যে দিয়ে সেই সময়ের জীবনযাপনের একটা খন্ড চিত্র ফুটে উঠেছে সমগ্র লেখাটায় ৷ পরিবারের সকলের মমত্ব, পাড়ায় বন্ধুদের সাথেই বড় হয়ে ওঠা, বন্যায় ভেঙে পড়া পরিবারের শোকার্ত নিস্তব্ধতা—পরতে পরতে ঘটনার ঘনঘটা ৷ ঋজুদের সঙ্গেও আমিও বড় হয়ে উঠলাম ৷ বাকসাড়ার আঁধার পেরিয়ে আলোর সন্ধান পেলাম ৷ সবথেকে বড় কথা, স্বাদ পেলাম হজমিগুলি আর কুলের আচারের ৷ বয়সে অনেকটাই তরুণ আমার কাছে কিছু কিছু ঘটনা অপরিচিত হলেও কখন যেন আমিও ঐ হাফপ্যান্ট-পরা ঋজু হয়ে গেছিলাম—এ' উপন্যাসিকার শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ সেখানেই ৷
আলোচক : রাজকুমার ঘোষ
করোনার
প্রভাবে সারা দেশ নিস্তব্ধ। কিভাবে যে দিন কাটবে সেই নিয়েই ভেবে চলেছি। একটা কঠিন
পরীক্ষার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। তারই মাঝে দেবব্রতদার এই সৃষ্টি 'হজমিগুলি, হাফপ্যান্ট
আর কুলের আচার' যেন
অক্সিজেনের সঞ্চার করলো প্রাণের মাঝে। এই উপনাসের বিস্তারিত নির্মলেন্দু বলেই
দিয়েছে। নতুন করে আমার বলার কিছু নেই। ছোট বেলার অনেক স্মৃতি যেন ফিরে পেলাম আমি।
পুরো দিনটাই যেন আমার সঙ্গী হয়ে উঠলো। অজানা এক আশঙ্কা মনের মধ্যে গ্রাস করেছিল।
গোটা দিন সেই আশঙ্কাকে ম্লান করে দিলো। ফিরে গিয়েছিলাম আমি আমার মা'র হাত ধরে
দুই ভাই মিলে ডোমজুর দফরপুর অঞ্চলে,
সেই গ্রাম্য পরিবেশে আমার মামার বাড়ি। চারিদিকে গাছের মেলা, ধানের ক্ষেত,
পুকুর৷ সেই পরিবেশে মুক্ত হস্তে খেলে বেড়ানো। পুকুরে স্নান করা, ছোট বড় সব
ভাই-বোনদের সাথে কত মজা। সর্বোপরি দাদু-দিদার আদর। পুরো নস্টালজিয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে
ছিলাম। একদিনে পুরো উপন্যাস শেষ করার পর মনটা উদাস হয়ে গেলো। মনে হলো আরও কিছু যদি
থাকতো, তাহলে
আরও কিছুদিন এই ফ্রেস অক্সিজেন নিয়েই পড়ে থাকতাম। আবারও লকডাউন আর করোনা আতঙ্কে
ঘরের মধ্যে বন্দী হয়ে থাকা। এর চেয়ে ঢের ভালো হত, যদি টাইম মেশিনে সেই দিন গুলোতে ফিরে যেতে পারতাম।
No comments:
Post a Comment