অণুগল্প-
ভয়ার্ত যামিনী
রাতের
বেলা আমার কেন যেন বেশ ভয় লাগে আজকাল । বয়স যতো
বাড়ছে ভয়ের মাত্রাটাও ততোটাই বেড়ে চলেছে । কোথায় রাতে আরামসে নাক ডাকিয়ে ঘুমোব।
নয়ত ঘুমের ঘোরে সুন্দরী সুন্দরী সব নারীদের স্বপ্ন দেখব। কিন্তু ওই যে বলেছি ।
আমার ভাগ্যে ওসব স্বপ্ন জুটলে তো !
অথচ
দেখ। সবাই কি সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখছে এবং কেউ আবার দেখাচ্ছেও । কেউ বলছে অচ্ছে দিন
আনেওয়ালা হ্যায় । কেউ
আবার বলছে গরিবী হটাও আর না পারলে গরিবদের হটাও। কেউ বা কোটি টাকায় নিজের ছবি
বিক্রি করে (যেটা হয়তো দশটাকা বকশিশ দিলেও কেউ কিনত না) বলছেন দুর্নীতি করেছ কি মরেছ। আবার কিছু কিছু হৃদয় বিদারক এবং মর্মান্তিক ।
যেমন দিল্লিতে নির্ভয়া বাঙ্গালোরে শ্রুতি বা আমাদের কোলকাতার সেই ক্রিশ্চান মহিলাটি (দেখুন
অলরেডি ওনার নাম ভুলে গেছি) বা খাগড়াগড়ে বাজির ধামাকা অথবা একেবারে এই সেদিন
ভূপালে ভাঙ্ রে লৌহকপাট। কিন্তু নাহ্, আগেই বলেছি, মুশকিল হলো আমার স্বপ্নগুলো কেমন যেন একটু বিদঘুটে
টাইপের। এইতো গতকাল কালীপুজোর রাত্তিরে। বাজির শব্দ যদিও এবার অপেক্ষাকৃত ভাবে কম তবু
মাঝরাতেও ঘুম ভেঙে যাচ্ছিল বারে বারে । এর মধ্যে হঠাৎই মনে হলো কে বা কারা আমাকে জোর করে বিছানা থেকে তুলে
হাওয়ায় ভাসিয়ে দিল। ভয়ে আমার সারা গা ঘেমে উঠেছে । কিন্তু হাত পা গুলো অসার হয়ে পরেছে । চীৎকার করে ওঁকে ডাকতে গেলাম। দেখি গলা দিয়ে
স্বর বেরুচ্ছে না। চারদিকে ঘোর অন্ধকার । ভাবলাম
নির্ঘাত আমি মারা গিয়েছি। হয়তো পরলোকগমন
করলে এরকমই এক অনুভূতি হয় । কিন্তু কথা হলো তাহলে এতো জোরে ওপরের দিকে উঠছি কেন? আমার তো স্বর্গে যাবার কথা ছিলো
না। যতো পাপ সারাজীবনে করেছি, আমার তো নীচের দিকে অর্থাৎ নির্ঘাত নরকে যাওয়া উচিত ছিল । তাহলে........... ?
এর
মধ্যে কতক্ষণ বা কতদিন কেটে গেছে মনে নেই । হঠাৎ দেখি একদঙ্গল গাছ গাছ চেহারার
কিছু লোক আমার দিকে এগিয়ে এল। ভয়ে কাঁপতে শুরু
করেছিলাম। কিন্তু, হঠাৎই
মনে হলো আমি তো মরেই গিয়েছি । আর ভয়ের কিছু
আছে কি ? আর
তো আমাকে এরা মারতেও পারবে না। তাহলে? এরা কাঁরা, এঁরা নিশ্চয়ই যমদূত । কিন্তু ওঁনাদের তো শুনেছি কালো কালো
মুস্কো মতন চেহারা হয়। আর এঁদের তো মাথাই নেই। কতগুলো পাতাভর্তি ডালপালা রয়েছে মাথার জায়গায়। তবে এঁরা কারা ?????
তারমধ্যেই
হঠাৎ দেখলাম গাছ গাছ চেহারার লোকগুলো কথা বলছে। একজন বলল "ভয় পেও না অভিজিৎ । আমরা তোমায় মারিনি এখনো। মারার
কোন ইচ্ছেও আমাদের নেই । শুধু তোমাকে আমাদের আর্ত কলরব শোনানোর জন্যেই
এখানে নিয়ে এসেছি। তুমি বা তোমার সহযোগী বৃন্দ তোমাদের নিজেদের পৃথিবী থেকে
উতখাৎ করার যে ষড়যন্ত্র রচনা করেছ তার থেকে উদ্ধার পাবার উদ্দেশ্যেই তোমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে পনবন্দী
করে । তুমি কি বুঝতে পারছ আমরা কি করতে পারি? এই কথাটা জান কি, যে আমরা না থাকলে তোমরাও কেউ থাকবে না বা থাকতে পার
না। কারণ তখন পৃথিবীতে কেউ আর তোমাদের আর অম্লজান (oxygen) সরবরাহ করবে না। তুমি তো শুনেছি
ক্লাসে অনেকদিন বড়ো বড়ো লেকচার দিয়ে নাম কিনেছ
যে গাছ কে নাকি বুঝতে হয় । ওরাও নাকি কথা বলে। যেমন একটি শিশুর মনের কথা ওর মা ঠিক
বুঝতে পারে, তেমনি
ভাবে বুঝতে হবে ওঁদের কথা। ইত্যাদি । তাহলে?"
আমি
ভয়ার্ত কণ্ঠে বললাম "বুঝিনি মানে? হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি । কিন্তু এবারে আমাকে ছেড়ে দাও ভাই আমি বাড়ি গিয়ে
সবাইকে এসব কথা জানাব ।" আর ঠিক সেইমূহূর্তে
হঠাৎই আমি গলদ্ঘর্ম হয়ে জেগে উঠে দেখি 'কোলকাতা রয়েছে কোলকাতাতেই।'
আমার ধর্মসঙ্গিনী আমাকে ধাক্কা মেরে মেরে বলছে "কি হলো? মাঝরাতে তোমার ভীমরতি ধরল নাকি ?" যাক বাবা। তাহলে আরও কিছুদিন এই
পৃথিবীতে বসবাসের চান্স রয়েছে ।
কিন্তু আজ সকাল থেকে একটা কথা এখনও ভেবে চলেছি। গাছ আমরা তো
ইচ্ছামতো কেটে শেষ করছি। আর এভাবেই কি আমরা আমাদের শেষের দিনটাকেও ত্বরান্বিত করে
ফেলছি?
তোমরা
কি বল ?
***
দারুন লাগল দাদা । অনেক অনেক ভালোবাসা রইল আপনার জন্য । সুস্থ থাকুন , সঙ্গে থাকুন ।
ReplyDeleteদারুন লাগল দাদা । অনেক অনেক ভালোবাসা রইল আপনার জন্য । সুস্থ থাকুন , সঙ্গে থাকুন ।
ReplyDeleteসত্যি তাই। খুব ভালো লাগলো
ReplyDelete