গল্প -
মুখোশ রহস্য
১
পুজোর ছুটি পরতে এখনও
ঢের দেরী । সকাল হতে না হতেই বাড়ীর কলিং বেল খিটখিটে কণ্ঠে ডেকে উঠতেই রান্না ঘর
থেকে আওয়াজ ভেসে আসল – “ দ্যাখ তো কে এই সময়ে ।” অগত্যা লেখা ছেড়ে দরজা খুলতেই
বিস্ময় , “ টুটুন !” অপরপ্রান্তেও দুষ্টু মিষ্টি অভিব্যাক্তি । “ আয় রে আমার টুটুন
কুমার “ , মামার ভালবাসার ডাক । মামা আজকাল টুটুনের সাথে লেজুর হিসাবে কুমারটা
জুড়ে দেয় মাঝেমধ্যে । টুটুন আপত্তি করাতে মামা গতবার বলেছিল , “ বুঝলি না , এই
কুমার শব্দ বড়ই রহস্যময় ।” এবার টুটুন একা আসে নি , ঠিক পাশেই ফুটফুটে ফাটা জিন্স
পরা এক ইয়াং লেডী । টুটুনের কলেজ ফ্রেন্ড । ঘরে ঢুকেই “মা...” ডাক ।
“ শুভাঙ্গী মানে রিতমা
আমার সাথেই পুনেতে পড়ে ।” “ হুম সে না হয় বুঝলাম কিন্তু এমন সময়ে ! কীরে শরীর ঠিক
আছে তো ?” মায়ের উৎকণ্ঠা আর কি । আসলে ব্যাপারটা সত্যিই অন্যরকম নইলে কলেজ কামাই
করার পাত্র টুটুন নয় । মা আর মামা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ।
মা রান্নাঘরে জলখাবারের
ব্যাবস্থা করতে যেতেই মামা টুটুনকে হাল্কা করে কনুইয়ের খোঁচা দিয়ে গলা ঝেড়ে বললে,
“ তা বান্ধবীর সাথে লঙ জার্নির মজাই আলাদা তাই না বল ?” “ ধ্যার কী যে বল ।” রিতমা মোটামুটি বাংলা বোঝে । আসলে ওর জন্ম থেকে বেড়ে
ওঠা পুনেতেই ।
২
লুচি তরকারি খেতে খেতে
টুটুন অন্যমনস্ক । আদরের ভাগ্নের এ হেন হাল দেখে মামা সকলকে অবাক করিয়ে দিয়ে বলে
ওঠে “ টিম প্রবলেম , এ এক বড় প্রবলেম ।” টুটুন আর রিতমা দুজনেই অবাক । “ তুমি কি করে
বুঝলে ?” “ আরে কয়েকদিন আগেই তো বলেছিলি অয়াটশঅ্যাপে কি যেন ড্রামার রিহেরসাল
চলছে...।” টুটুন মামাকে বিলক্ষণ চেনে তাই বলেই ফেলল “ মামা মুখোশ অন্তর্ধান ।” “
অন্তর্ধান মানে!” গলায় বিস্ময় প্রকাশ । “ আরে তোমাকে চ্যলেঞ্জ করেছে রিতু... ”
লুচিতে আরেক কামড় বসিয়ে টুটুন বলে । টুটুন অবশ্য রিতমার নাম নিয়ে নানারকম মজা করে
। অবশেষে থাকতে না পেরে রিতমা বলে ওঠে “ মামাজী আপনার কাজের আমি ফ্যান , টুটুন সব
কটা অ্যাডভেঞ্চারের স্টোরি বলেছে ।” মামা হাসতে থাকে । শুভাঙ্গী ওরফে রিতমা ছটফটে
মেয়ে । খাওয়া বন্ধ করে একটা ছোট্ট চিরকুট মামার হাতে ধরিয়ে বলল , “ দুদিন আগে
রাক্ষস রাজার মুকুট গায়েব হয় আমাদের কলেজের গ্রিনরুম থেকে আর সেখানে পাওয়া যায় এই
ধাঁধাটি ।
নাকে রিডিং গ্লাস গলিয়ে
জোরে জোরে পরতে শুরু করে -
“যন্ত্র নগর কেবল অভিনয়
,
এক নয় শূন্য শূন্য করে-
মুখোশ পরে নাগরিক জয় ।
ওদেরই ঘরে ও যে আটকে মরে,
অঙ্গ পরে হিয়া লাগি রয় –
মুখোশহীন জীবনে ভালবাসা
হয় ।”
“ বাব্বা এ যে রীতিমত
কাব্যি রে টুটুন তবে কাঁচা আছে এখন ” মামা হাসতে হাসতে বলে খাবার টেবিল থেকে উঠে
যায় । ইতিমধ্যে মা মামার জন্য গরমাগরম চা নিয়ে হাজির । প্রশ্ন করে , “ তা এখন
করণীয় ?” “ নাথিং আন্টি চোর ধরে দিতে হবে মামাজীকে ।” সুড়ুত করে গরম চা গলায় ঢেলে
মামা বলে “জো হুকুম ম্যাডামজী ।”
৩
টুটুন আর শুভাঙ্গী পরশুর
ট্রেনেই রওনা দেবে । পরদিন সকালে পূজা সংখ্যার লেখা মাথায় তুলে রেখে মামা হো হো
করে হেসে টুটুনকে জড়িয়ে ধরে বলে “ মেরে লাল পাকড় লিয়া ।” “ মানে মুখোশ রহস্য আর চোর ধরা পরে গেল এরই মধ্যে !! বল কী
!” টুটুনের থেকেও রিতমার চোখেমুখে স্পষ্ট অবিশ্বাসের ছাপ ।
মামা বিড়িখড় । এক মুখ
বিড়ির ধোঁয়া ছেড়ে বলল “ ও মেয়ে তোর পেটে পেটে এই বিদ্যে!” “ মানে !” “ তুমি তো
হোস্টেলে থাকো , তাই না ? রিতমা পুতুলের মত ঘাড় দোলাতেই মামা খানিকটা ধমকের সুরে
বলে , “ তা মুখোশ চুরি করতে গেলে কেন ?” ঘরের মধ্যে যেন বীনা মেঘে বজ্রপাত । টুটুন
কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু মামার হাতের ইশারাতে চুপ করে যায় । রিতমা মাথা নীচু করেই
বলে “ লেকেন মামাজী আমি চুরি করেছি তার প্রমাণ ?”
মামার মুখে হাল্কা হাসি
দেখেই টুটুন ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে “ নৌটঙ্কি না করে বল্ ।” এই বয়সে আত্মসম্মানটা একটু
বেশীই থাকে তার উপর রিতমা ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড ।
“ ভাগ্নেরে প্রেমে মুখোশ
পরতে নেই আর রিতমার রুম নাম্বার ১৯০ আর সেখানেই আছে রাক্ষস রাজার মুখোশ – কী বেটা
ঠিক বললাম তো ? ”
রিতমা আগের মতই হেট
মস্তক হয়ে উত্তর দিল “ একদম সহি । আসলে আপনার কথা এত শুনেছি তাই লোভ সামলাতে
পারলাম না । লেকিন মামাজী ধরলেন কী ভাবে ?”
মামা চোখ বুঝেই বলল , “
ভাবো ভাবো । পুনে মানে কী জা্নো ? যন্ত্র নগর... আর বাকীটা তোমরাই মাথা ঘামাও ,
অনেক লেখা পেন্ডিং পরে আছে ।” যেতে যেতে মামা পিছন ফিরে বললে – “ টুটুন ও ভালই
বাংলা শিখছে , এক নয় শুন্য শুন্য একটু যা জ্বালাচ্ছিল । মনে হয় প্রথম শুন্যের পর
কমা বসত । ও হ্যাঁ অঙ্গ পরে হিয়া
লাগি রয় – দারুন বুঝলি টুটুন , চালিয়ে যা ।।”
বেস্ট লেখা
ReplyDelete