অণুগল্প-
অজানা আশঙ্কা
আমি গ্রামের ছেলে। আমাদের গ্রামের নাম
বড় পুরুলিয়া। বাবার চাকুরী সূত্রে হাওড়া জেলার লিলুয়ায় তিরিশ বছর কেটেছে। এখন
গ্রামের একটা হাই স্কুলে শিক্ষকতা করি। সকালে একদিন পায়চারী করছি মাঠে । কত রকমের
গাছ, পাখির ডাক ভোরবেলাকে মনোরম করে তুলেছে ।হঠাৎ
একটা পনের ষোলো বছরের ছেলে বাঁচাও বাঁচাও বলে চেঁচাতে চেঁচাতে আমার কাছে এসে চেতনা
হারিয়ে ফেললো । আমি সামনের পুকুর থেকে গামছা ভিজিয়ে এনে ছেলেটির চোখে মুখে জল
ছিটিয়ে দিলাম । কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলেটির চেতনা ফিরে এলো । আমি তাকে জিজ্ঞাসা
করলাম------কি রে কি হয়েছে । ভূত দেখার মতো ভয় পেয়ে গেলি কেন?
----- কাকু ভূতের থেকেও ভয়ংকর প্রাণী ।
-------- বলিস কি,কেমন দেখতে?
-------অজগর সাপের মতো ।
আমি ছেলেটিকে অভয় দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম ।
পরের দিন রাতে দুজন লোক বোধহয় মল ত্যাগ
করতে বনের ভিতর গিয়েছিল তাদের অবস্থাও একই রকম । খবর নিতে গিয়ে দেখি মহা গন্ডগোল ।
সবাই লোক দুটিকে বকাবকি করছে বনে কুকর্ম করার জন্য। আমি লোক দুটিকে বললাম----দেখছো
না সাইনবোর্ডে লেখা আছে, মাঠে ঘাটে পায়খানা, মৃত্যুর. পরোয়ানা । যাও আর কখনও কুকর্ম কোরো না । তারাও ভয়ে ভয়ে
বর্ণনা করলো----- কি বিরাট এক জানোয়ার দেখলাম । একবার লাল হচ্ছে, আর একবার লীল ।
আমি বুঝলাম সর্দার পাড়ার জঙ্গলে কোনও
এক প্রাণী এই ভয়ের কারণ। যথারীতি ফোন করা হয়ে গেলো ।।আমাদের অনেকটা সাহস বাড়লো ।
তারা আগামী কাল আসবেন ।
গ্রামে উত্তেজনা চরম । একটা রহস্য ছায়া
সবাই কে চুপ করিয়ে রেখেছে। কি আছে এই সর্দার পাড়ার জঙ্গলে ।
সকালবেলা সবাই কালীতলায় হাজির । ঠিক
হলো ওনাদের আনার জন্য গাড়ী যাবে কাটোয়ায় । ওনারা থাকবেন আমার বাড়িতে । খুবই
আনন্দ হচ্ছে । বুক ঢিপঢিপ চাঁদের পাহাড় । কখন আসবে সেই অপেক্ষার মুহূর্ত ।
ঠিক দুপুর একটা নাগাদ ওনারা চলে এলেন ।
খাওয়া দাওয়া করে একটু বিশ্রাম নিলেন ।অশোকদা কে সমস্ত কথা খুলে বর্ণনা করা হলো
।দাদা বললেন ----- আমরা সবাই বিকাল চারটের সময় সর্দার পাড়ার জঙ্গলে যাবো । অশোকদা
সম্মত হলেন ।
ঠিক চার টের সময় লাঠি হাতে সাহসী
গ্রামবাসী ও আমরা তিনজন রওনা হলাম জঙ্গলের
দিকে ।
অশোকদা বললেন, কেউ চিৎকার
চেঁচামেচি করবেন না ।আপনারা সবাই দাঁড়ান ।সুদীপ বাবু আসুন।
আমি ভয়ে ভয়ে ওনাদের পিছনে ।জঙ্গলের
ভিতর ঢুকে জয়ন্ত দা বললেন, দেখুন দেখুন কি সুন্দর প্রাণী । পাড়ার
হৈমন্তী দি জাল আনতে বললেন । ভাদু জেলে
সঙ্গে সঙ্গে জাল ফেলতে লাগলো । একটার পর একটা জালে জর্জরিত হয়ে প্রাণী টি কাহিল
হয়ে পরলো । অশোকদা একটা ঘুম পাড়ানি গুলিতে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন প্রাণী টিকে ।পনের
কুড়িজন টানতে টানতে নিয়ে এলো কালীতলায় । সবাই অবাক । এবার পরিবেশ নিয়ে কথা বলার জন্য পাড়ার শিক্ষিকা হৈমন্তীদি
সবাইকে চুপ করে বসতে বললেন । তিনি বললেন, ওড়িশার সুন্দর
গড় জেলার বোনাই ফরেস্টে এই প্রাণীদের বাস
। এরা গিরগিটি প্রজাতির। ওজন সত্তর কেজি থেকে দুই কুইন্টাল হতে পারে। ছোটো হরিণ
এদের প্রিয় খাদ্য । দেহ অজগর সাপের মত।
সামনে পিছনে পা আছে ।এরা নিজেদের রং পাল্টা তে পারে ।বড় বন্যা হলে এরা
ভেসে অনেক দূরে চলে যায়। ক্ষিদের সময় খাবার না পেলে এরা নর খাদক হয়ে যায়। আমরা
প্রাণী টিকে বন দপ্তরে পাঠিয়ে দেব । আপনারা এখন বাড়ি চলে যান।
অশোকদা বললেন, এর ঘুম ভাঙতে এখন বারো ঘন্টা লাগবে। চলুন একটু ফাঁকা মাঠে ঘুরে আসি।
মোটামুটি লাগলো।
ReplyDelete