অণুগল্প -
নকলনবিস
সাত
বছরের সুকু দরজাটা ঠেলতেই থতমত খেয়ে উঠল সৌমেন। তড়িঘড়ি করে বিস্রস্ত কাগজপত্রের
উপরে খবরের কাগজটা টেনে নিতেই সুকু বলল, ‘ওহ্! তুমি চুপিচুপি হাতের কাজ করছিলে, তাইতো?’
সৌমেন
সুকুর কথার উত্তর না দিয়ে চেয়ার ছেড়ে এক পা এগিয়ে কোলে তুলে নিল সুকুকে। বলল,
‘তুমি তো
দেখছি একদম রেডি স্কুলের জন্যে।‘’
-হ্যাঁ,
রেডিই তো।
গাড়িকাকু আসলেই হলো। তাই তো তোমাকে ‘বাই’ বলার
জন্যে উপরে এলাম।
-বাহ্!
বেশ করেছো। এবার যাও। নীচে গাড়িকাকু এসে গেছে হয়তো।
‘হ্যাঁ,
যাবো। তার
আগে দেখি তুমি কত সই করলে’,বলেই
টেবিলের কাছে গিয়ে খবরের কাগজ সরিয়ে উঁকি দিতে লাগল জিজ্ঞাসু চোখ।
সৌমেন
বোঝে এই বয়সের ছোটদের কৌতূহল কতটা। নির্লিপ্ত থাকল কিছুক্ষণ। সুকু কাগজ টেনে দেখতে
দেখতে বলল, ‘তার
মানে আজকে তুমি ডক্টর ডি. রয়, তাই
তো?’
মেয়েকে
মিথ্যে বলেনা সৌমেন। এখন নিশ্চুপ। হঠাৎ নীচে স্কুল গাড়ির হর্নের শব্দে উৎকর্ণ হ’লো সুকু। বলল, ‘ ওই , এসে গেছে। যাই তাড়াতাড়ি।’
সুকু
দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই সৌমেন জোর গলায় বলল, ‘আজ তিনটে গুড্ হবে তো?’
‘একদম।
তিন পিরিয়ডে তিনটেই পাবো।’ যেতে
যেতে উত্তর দিল সুকু।
সুকু
ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই সৌমেন আবার তার হাতের কাজ নিয়ে বসলো। পাঁচশ প্যাডে ডক্টর ডি.
রয়ের সই করতে হবে। নকল। সৌমেনের পার্ট-টাইম জব। ওপেন সিক্রেট। সরকারি হাসপাতাল
সংলগ্ন যত প্যাথলজিক্যাল সেন্টার, এক্সরে,
স্ক্যান
সেন্টার আছে তারা সকলেই সৌমেনের ক্লায়েন্ট। এই সব সেন্টারগুলোতে মূলত কাজ করেন
টেকনিশিয়ানরা। ডাক্তারবাবুরা অনৈতিক ভাবে ব্লাঙ্ক প্যাডে সই করে দিয়ে যান। যত সই
তত টাকা। এরই মধ্যে সৌমেনের নকল সইতে এইসব প্রতিষ্ঠানগুলো ডাক্তারবাবুদেরও ফাঁকি
দিয়ে মুনাফা লোটে আরও বেশি। মাঝে পার্ট টাইম জব হিসেবে বেশ রোজগারও হয় সৌমেনের।
***
সারাদিন
বিভিন্ন কাজ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে আজ বেশ দেরীই হয়েছে সৌমেনের। ঘরে ঢুকে দেখে সুকু
সোফায় হেলান দিয়ে কার্টুন দেখছে একমনে। বেশিরভাগ দিন সেই বাড়ি ফেরে সুকু স্কুল
থেকে ফেরার অনেক আগেই।
শার্টের
বোতাম খুলতে খুলতে সৌমেন জিজ্ঞাসা করে, ‘হ্যাঁরে স্কুলে ক্লাসে আজ গুড্ পেলি ক’টা?’
সুকু
টিভির থেকে মুখ না সরিয়ে বলে, ‘বলেই
গিয়েছিলাম তো, তিনটে
হবে।’
‘তাই!
হয়েছে, তিন
পিরিয়ডে তিনটেই! কই দেখি।’ উৎসাহিত
হয়ে ওঠে সৌমেন।
‘এক্ষুনি?’,
আধোআধো
গলায় জিজ্ঞাসা করে সুকু।
-হ্যাঁ,
এক্ষুনিই।
বুঝতে পারছো না, আই
অ্যাম এক্সাইটেড। যাও। নিয়ে এসো স্কুলের খাতা। আমাকে দেখাও।
অগত্যা,
বাধ্য
মেয়ের মতো সোফা ছেড়ে স্কুল ব্যাগ থেকে ধীরেধীরে খাতা বের করে আনে সুকু। মেলে ধরে
বাবার সামনে। খাতা হাতে নিয়ে নির্বাক সৌমেন। স্কুল- বোর্ডের টাস্ক খাতায় তোলা।
অসংখ্য ভুল। তবুও খাতার নীচে স্কুলের ম্যামের সইয়ের নকল করে বাঁকাচোরা সই। তলায় লেখা
‘গুড্’। তাও স্পষ্টতই সুকুর হাতেই।
-------সমাপ্ত-------
চমৎকার
ReplyDelete