স্মৃতিচারণা -
হিসেব মেলেনি
আমি প্রথম
চাকরিতে জয়েন
করি মালদা
জেলার সামসীতে।
বাড়ি থেকে
অনেকটা দূর
তাই স্বাভাবিকভাবেই
আমাকে ভাড়া
বাড়িতে থাকতে
হয়।
মেয়ে যখন
ক্লাস থ্রীতে
পড়ে মেয়ের
পড়াশোনার জন্যই
কম্পিউটার কিনতে
হয়। মেয়ের
লেখা পড়া,
মাঝে মধ্যে
গেম, ছবি
সংরক্ষণ, গান
শোনা মাল্টি
পারপাসে ব্যবহৃত
হতে থাকল
কম্পিউটারটি।
কয়েক বছর
পর একটা
নতুন বাড়িতে
শিফট করি,
মেয়ে তখন
ক্লাস এইটে
পড়ে।
এ
বাড়িতে বাড়িওয়ালা
থাকতেন না...
তিনটে ফ্লোরে
তিনটে ভাড়াটিয়া।
আমার অংশে
দুটো বেডরুম,
একটা ডাইনিং,
সামনে বারান্দা,
রান্নাঘর ও
বাথরুম।
নতুন বাড়িতে
আসবার কয়দিন
পর একদিন
রাতে সমস্ত
লাইটের ও
প্লাগের সুইচ
বন্ধ করে
ঘুমোতে গেলাম।
সকালে ঘুম
থেকে উঠে
দেখি পাশের
ঘরে আমার
কম্পিউটারটা চলছে।
একটু অবাকই
হলাম। তবে
কি কাল
রাতে আমি
কম্পিউটার টা
বন্ধ করিনি?
কম্পিউটার টা
বন্ধ করে
চা খেয়ে,
রান্না করে
খেয়ে স্কুলে
চলে গেলাম।
বাড়ি ফিরে
যথারীতি মেয়েকে
পড়ানো, রান্না
বান্না সেরে
সবকিছু বন্ধ
করে ঘুমালাম।
পরদিন সকালে
আবার আমার
কম্পিউটার চলছে।
এবার আমার
মনটাই এটা
কেমন যেন
মনে হলো।
এটা কি
করে সম্ভব?
পর পর
দুই দিন
আমি কম্পিউটার
বন্ধ না
করে ঘুমিয়ে
পড়লাম? বাড়িতে
আমরা তো
দুজনই, তবে
পাশের ঘরে
কম্পিউটার চলছে
কি করে?
মেয়ে আর
আমি তো
একই সাথে
ঘুমোয়।
স্কুলে গেলাম,
ক্লাস নিচ্ছি,
কিন্তু মনটা
শুধু ওই
একই ঘটনায়
চলে যাচ্ছে।তবু
কাউকে বললাম
না। আজ
পরীক্ষা করে
দেখব। রাতের
অপেক্ষা.... শোবার
সময় এসে
গেল নিজে
গিয়ে ভালো
করে দেখে
কম্পিউটার বন্ধ
করলাম। ফ্যান,
লাইট সব
কিছুর সুইচ
বন্ধ করলাম
...এসে বিছানায়
শুলাম। ঘুম
আসেনা কিছুতেই
অনেকটা সময়
পার হয়ে
গেছে, হঠাৎ
কম্পিউটার চালু
হলে যেমন
আওয়াজ হয়
সে শব্দ
আমার কানে
এল। দৌড়ে
গেলাম পাশের
ঘরে, দেখলাম
কম্পিউটার টা
চালু হয়ে
গেছে... রাত
বারোটা বেজে
পাঁচ মিনিট।
গোটা শরীরে
একটা শিহরণ
ছড়িয়ে গেল।
কি জানি
কি হচ্ছে।
কম্পিউটার টা
বন্ধ করে
ঘরে এলাম,
কিন্তু ঘুম
এলো না
রাতে। না
সারারাতে আর
কম্পিউটারটা চালু
হয়নি।
সকালে বাড়িতে
জানালাম। বাবা
বললেন, বাড়িতে
একটা পুজো
দিতে হবে।
আমি কাল
আসছি। আর
সবার বক্তব্য,
হয়তো কম্পিউটার
এ কোন
টাইমার সেট
হয়ে গিয়েছে।
স্কুলে গিয়ে
সকলকে বললাম,
প্রথমে ব্যাপারটা
সবাই হেসেই
উড়িয়ে দিল।
কেউ বললো...'কোথাও
ভুল হচ্ছে
তোর।'
কেউ
বললো...'কোনভাবে
টাইমার সেট
হয় নি
তো? একটা
মেকানিক ডেকে
নিয়ে যা
আজ।'
কেউ
বললো...' কোথাও
একটা ভুল
তো হচ্ছেই,
নিশ্চয় সুইচ
বন্ধ করতে
ভুলে গিয়েছিলি।'
কেউ
বললো,...'বাড়িটা
চেঞ্জ করে
নে'
সবাই
জানে তথাকথিত
ভয়টা আমার
কম। তাই
এর বেশি
আর কিছু
বলল না।
আসার সময়
সাবধানে থাকার
পরামর্শ দিল।
সেদিন মঙ্গলবার,
ওখানে বাজার
বন্ধ। তাই
মেকানিক পেলাম
না। আমার
এক বন্ধু
চাঁচল এ
থাকত, আমার
কথায় সে
এসে কম্পিউটারের
সব সেটিংস
দেখলো। কোন
টাইমার, কোন
অসঙ্গতি খুঁজে
পেল না।
এ বিষয়ে
আমার বন্ধুর
দক্ষতা একটু
বেশিই। যাবার
সময় বলল...ঘরটা
কি চেঞ্জ
করবি?
আমি
বললাম...কি?
আমার
বলার দৃঢ়তায়
ও যেটা
বলতে চেয়েছিল
সেটা চেপে
গেল।
এত দিন
যেটা সাবলীল
চলছিল এমন
কি হলো?
প্রশ্নটা আমাকে
কুঁড়ে কুঁড়ে
খেতে থাকল।
আজ আর
ঘুমাবো না।
কম্পিউটারের সামনে
চুপ করে
বসে থাকবো
দেখবো কিভাবে
এটা হয়?
মেয়েকে বলিনি,
ভয় পাবে
তাই।
কম্পিউটার শাটডাউন
করে গিয়ে
শুলাম।কিছুক্ষন পর
মেয়ের পাশ
থেকে উঠে
এলাম পাশের
ঘরে। আমি
কম্পিউটারের সামনে
বসে। ফোনে
আমার সেই
কম্পিউটার জানা
বন্ধু... ঠিক
বারোটা...একটা
শব্দ... চালু
হয়ে গেল
কম্পিউটার। সে
শব্দ ফোনের
ওপারে তার
কানেও পৌঁছেছে।
বলল... সন্ধ্যেবেলাতেই
কোন এক্সপেরিমেন্ট
করতে নিষেধ
করেছিলাম। এবার
কম্পিউটারটা বন্ধ
করে ঘরে
একটা ধূপ
জ্বালিয়ে পাশের
ঘরে এসে
শুয়ে পর।
আমি বললাম...
তুই সায়েন্সের
ছেলে হয়ে
একথা বলছিস?
বললো... যেটা
বলছি সেটা
কর। দরজা
লাগিয়ে মেয়ের
পাশে শুয়ে
পর।
তাই করলাম।
সবার কথা
মত কম্পিউটারের
মেকানিক ডাকলাম,
তন্নতন্ন করে
সমস্ত সেটিংস
দেখেও রাত্রি
বারোটায় কম্পিউটার
চালু হওয়ার
কোনো কারণ
তিনি খুঁজে
পেলেন না।
বললেন... 'এক
কাজ করুন।দোকানে
পাঠিয়ে দিন।
আমি সব
পার্টস খুলে
দেখি। কিন্তু
এমন তো
হবার কথা
নয়!!...বিস্ময়
তার গলা
থেকে ঝরে
পড়ল।
আমি
বললাম... না
না, আমি
ওটাতে কাজ
করি। ওটা
দোকানে পাঠালে
হবে না।
স্কুলে
গেলাম। স্কুলের
সবাই বলল....বাড়িটা
চেঞ্জ করে
নে। নিশ্চয়
বাড়িতে কিছু
আছে। আর
নইলে মেকানিকের
কথা মত
দোকানে পাঠিয়ে
দে।
মেয়েও জেনে
গিয়েছে। বার
বার প্রশ্ন
করছে, মা
কি হয়েছে?
কেন রাত
বারোটায় কম্পিউটার
চালু হয়ে
যায়? বাড়িটা
কি চেঞ্জ
করে দেবে?
এমন দ্বিধা
আমার জীবনে
কোনদিন আসেনি।
কিছুতেই ভেবে
পেলাম না
যদি সত্যি
কিছু থেকে
থাকে, তবে
কোনদিন আমাদের
দুজনের কোন
ক্ষতি তো
করেনি কেন?
কেন শুধু
কম্পিউটার টা
চালু হয়ে
যায় মাত্র?
কেন??? অনেক
কেনর কোন
উত্তর পাই
নি আমি।
সেদিনই রাত্রে
বাবা মা
আমার কাছে
এলেন। আর
ওই কম্পিউটার
সে রাত্রেই
দোকান ঘরে
চলে গেল।
পরের দিন
বাড়িতে পূজা
দেওয়া হলো।
পুজোপাঠ যজ্ঞ
...সব শেষ।
সবকিছু শেষে
আমি বাবা
মাকে বললাম...আমরা
সবাই মিলে
আজ রাত
বারোটায় ...কিন্তু
বাবা সেই
সুযোগ দিলেন
না।
সব কিছু
নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট
করতে নেই...সবার
এই বক্তব্য
মেনে কম্পিউটার
তাড়াতে বাধ্য
হলাম আমি।
কিন্তু তার
পরেও প্রায়
এক- দেড়
বছর আমি
ওই বাড়িতে
মেয়েকে নিয়েই
কাটিয়েছি ...সত্যি
কথা কোন
কিছুর অস্তিত্ব
পাইনি কখনো।
কোনো অসুবিধা
হয়নি আমাদের।
শুধু হিসেব
মেলেনি আজও...
রাত বারোটার
কম্পিউটার চালু
হওয়ার ব্যাপারটা।
কোন কোন
জিনিসের হিসাব
মেলে না
হয়তো। মেলাতেও
নেই।
নিজের লেখা এমন ভাবে দেখতে পেয়ে খুব আনন্দিত।
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো
ReplyDelete