অণুগল্প -
অঘোরনাথের
ঘোর
বেঁচে থাকতে জীবনে এত খ্যাতির বিড়ম্বনা বোধ করেনি অঘোরনাথ। অথচ মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে এত মাতামাতি, এত হৈ হৈ...
ভাবতেই শিহরিত সে। স্বলজ্জিত। আরক্তিম। ‘আহা!
ভূতকূলে যে এত সম্মান আসবে এত প্রাপ্তি...আগে যদি জানতাম!’
ভাবতে ভাবতে নরম সজনে গাছের ডালে পা দোলাতে দোলাতে পলকা সজনের লতি কানে দিয়ে চুলকাতে লাগলো আপন মনে।
অঘোরনাথ সেন। মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে স্রেফ জ্যান্ত ভূত দর্শনে ভড়কে গিয়ে গঙ্গা প্রাপ্তি। যদিও তাঁর দৈহিক মৃত্যুর পর গণেশ ডাক্তার পরীক্ষানিরীক্ষা করে বলেছিল, সিভিয়ার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। কিন্তু ভূতকূলে সে এখন রীতিমতো সেলিব্রেটি অধিপতি। অঘোরনাথের আগে যিনি ভূতকূলে অধিপতির আসনে ছিলেন তিনি মাসাধিককাল হলো পাঁচ বছর ভূতকূলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর পুনর্জন্ম লাভ করেছেন। ফলত, সে আসন ফাঁকা হয়েই ছিল। তাঁর হঠাৎ ভূতাদেশে আগমনের ফলে সেই আসন পূর্ণ আজি। ভূতেদের মধ্যে তাই যেন উৎসবের আবহ। সর্বত্র সেলিব্রেশন। এই আসনে থাকা মানে অন্তত পাঁচ বছরের জন্যে সুরক্ষা। তার সাথে প্রথম শ্রেণীর নাগরিকত্ব।
আজকাল যতক্ষণ জেগে থাকে ততক্ষণ নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ জানায় সে। তার হঠাৎ মৃত্যুতে সে ভীষণ খুশি। তা না হলে যে মানুষটাকে পড়শিরা পর্যন্ত মানতে চাইতো না, ঋণের দায়ে প্রায়ই মুখ লুকিয়ে বেড়াতে হতো,
ফন্দিফিকির ছিল যার নিত্য সময়ের ভাবনা
– সে কিনা আজ ভূতাধিপতি!
ভাবা যায়!
এসব কথা ভাবতে ভাবতে সজনেফুলের গন্ধে আর কানে সুড়সুড়ি দিতে দিতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল অঘোরনাথ তা তাঁর খেয়ালই নেই। হঠাৎ গরম ছ্যাঁকা গায়ে লাগতেই সজনের ডালে তড়াক করে লাফ দিয়ে ওঠে অঘোরনাথ। তাকিয়ে দেখে,
নীচে একগাদা জ্যান্ত ছেলেপুলে সজনেগাছের গায়ে শুঁয়োপোকা মারার নিমিত্তে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বেশ করে। সবকিছু বুঝে ওঠার আগেই আঘোরনাথ ডাল ভেঙে মট-মট-মট—সোজা মাটিতে।
মাটিতে পড়েই সম্বিৎ ফেরে তার। সে এখনো দিব্যি জ্যান্ত!
মেলার থেকে কেনা চারপায়ার চৌকীটা ভেঙে চুরে মাটির মেঝেয় শায়িত। মনে পড়ল,
কাল রাত্রে শোয়ার সময় পার্টির শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে আসন্ন ভোটের প্রার্থী হওয়ার জন্যে জোরাজুরি করেছিল বেশ করে।
সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হলো,
মশামারা ধূপের জ্বলন্ত কয়েলটা তার পিছনের অংশে ছ্যাঁকা দিয়েছে বেশ!
No comments:
Post a Comment