দুই ভূতের গল্প-
ভূতের
গল্প-১
ছোটোবেলায়
মাধ্যমিক দেবো সবে।গ্রামের দিকে বাঁশঝাড়
বেশী দেখা যায়। বড় বড় গাছ ও
থাকে। আমি স্কুল থেকে এক রিলেটিভের বাড়ি
যাচ্ছিলাম। একা সাইকেল চালিয়ে ফাঁকা বাঁশঝাড়ের ভিতর দিয়ে রাস্তা, পড়ন্ত দুপুর। দেখলাম
এক জায়গায় বনভোজন হচ্ছে, গানবাজনা হচ্ছে, বাচ্চারা হইহই করে আনন্দ করছে। ঠিক এক খালের পাড়ে বাঁশঝাড় পেরিয়ে কিছুটা দূরে, আমার
ইচ্ছে হল পিকনিকে যোগ দেওয়ার। সেখানে গেলাম। একটা আশ্চর্য ব্যাপার
দেখলাম সব বুড়ো বুড়িরাই আছেন। ভাবলাম
এই গ্রামে কি যুবক যুবতি মধ্যবয়স্কাগন উবে গেছে?
তাজ্জব! থালায় দেখি আলুভাজা চাটনি মাংস
পাপড় ঘন্ট। আমাকে দেখে অচেনা
বুড়িগুলো এতো আদর আপ্যায়ন করল, আমি ভেবে
কূল পেলাম না মানুষ এতো সুন্দর
ব্যবহার করতে পারে। আমি কিছুটা থতমত
খেয়ে গেলাম। যাক আপন জনের কাছে এতো
ভালোবাসা পাওয়া যাবে না। মা ঠাকুমা কেউ
নেই তো!হঠাৎ এতো আদর খাতির দেখে
আমিও গলে গেলাম। সাইকেলটা বড় অট্টালিকার
মধ্যে রেখে খেতে বসলাম।দারুন
খাওয়া দাওয়া শোবার ঘর। সব কিছুই জমজমাট।
কখন ঘুমিয়ে পড়লাম হুঁশ নেই। জেগে দেখি বিকেল থেকে সকাল হয়ে গেছে। আর আমি ভাঙাচোরা
বাড়ির এককোনে শুয়ে।পাশে সব কঙ্কাল হাড়। ভয়ে শিউরে উঠলাম। কোনরকম
সাইকেল নিয়ে জোরে দৌড়---- যাক ভূতেদের আদর আপ্যায়ন তো পেলাম। যাক এরকম
খাওয়া মনে হয় কোন মানুষ খাওয়াবে না! পিসি বাড়ি যেতে যেতে আকাশের দিকে তাকালাম, ভয়ের থেকে কেমন যেন চাপা আনন্দ অনুভব করলাম। মনে হল
পৃথিবীতে সবই আছে ভগবান কখন কোন ফিলিংস দেবে কোন আনন্দ ঝুলিতে দেবে সেটা
তাঁর হাতে ই থাকে। আমরা “দর্শক” মাত্র! নীল আকাশের চলাফেরাগুলো যেন মাথার উপর আশির্বাদ করছিল?
ভূতের
গল্প -২
রবি শ্মশানের উপর থেকে একটা সোনার আংটি চুরে করে আনছিল। সে
কখনো ভাবে নি যে সেই সোনার আংটির জেরে জীবন জর্জরিত হয়ে উঠবে।
রবি ট্যাক্সি ড্রাইভার, এক শ্মশানের কাছ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে
যাচ্ছিলেন। দিনের বেলায় জায়গাটা দেখেই তাঁর কেমন গা-টা ছমছম করে উঠল। তবু সে
সাহস করে গাড়ি থামাল ভাবল একটু রেস্ট নেওয়া যাক। দূরে কিছু চকচক করতে
দেখে কাছে গেল। দেখল সদ্য পোড়ানো এক মড়ার হাতের সোনার আংটি পড়ে রয়েছে। সে
জীবনে কোনদিন লোভ করেনি। সেদিন কিজানি মনে হল, আংটি হাতে নিয়ে
নড়েচেড়ে পকেটে পুরে নিল। খানিকটা খুশি খুশি লাগছিল তাঁকে কিন্তু কেমন যেন
মনের মধ্যে অশান্তি ও ভয়ভয় লাগছিল।
যাইহোক আংটিটা বাড়ি নিয়ে এল। সংগে বয়ে নিয়ে এল
এক ভূতের আত্মাকে। যেখানেই যায় আংটির চারিদিকে অদ্ভুদ সব আচরন
লক্ষ্য করা যায়। কখনো চেয়ার নড়ছে, কখনো কাটা মাথা হাসছে, কখনো ভাতের
থালা উপরে উঠে যাচ্ছে, কখনো বাথরুমে ফোয়ারায় জল পড়ছে, জলের রক্ত
পড়তেও দেখা যাচ্ছে। চুল খোলা থাকলে কেউ যেন ছায়ার মতো তাঁর চারিদিকে ঘুরছে।
এইসব কান্ডকারখানা রবির বাড়ি জুড়ে চলতে থাকল। একদিন যা ঘটল রবি নিজেকে
ঠিক রাখতে পারল না। ভয়ে একেবারে অজ্ঞান!
রবি বাড়িতে একা ছিল। একটু রাতের দিকে দেখল কেউ যেন ছাদে
দাঁড়িয়ে কাঁদছে। রবি ভাবল কেউ একজন হবে, মা বা বৌ। পাশে গিয়ে দেখল এক
বিদঘুটে রমনী বিকট দাঁতে হাহা করে অট্টহাস্যে হেসে যাচ্ছে। রবিকে দেখেই বলল---“ তোর এতো বড় সাহস তুই আমার আংটি ব্যবহার করিস”----আমার
আংটি রেখে আয় আগে আমার জিনিস আমি কাউকে দেব না।”----রবি
তো ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল
আর প্রতিশ্রুতি করল সে কালকেই আংটি
শ্মশানে রেখে আসবে¡
রবি কোনরকম সকাল হতেই আংটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। প্রকৃতির চারিদিক যেন নিঝুম। দিনের বেলা ভূতেরা যেন ঘুমোচ্ছে। রবি তখনো সেই ভূতনীর
হাসি ভুলতে পারে নি। কানে যেন বেজেই যাচ্ছে। শ্মশানের কাছে এসেই
সংগেসংগে আংটিটি যেখান থেকে নিয়েছিল সেখানে ছুঁড়ে মারল! তারপর একদন্ড
সেখানে দাঁড়াল না। ঘুরেও দেখল না। ভয়ে সারা রাত ঘুমোতে পারে নি। শরীরটা ও
কেমন খারাপ লাগছিল। সকাল থেকে একবিন্দু জলও পেটে পড়ে নি। যাইহোক এবারে সে
নিশ্চিন্ত ,
এক ছুটে ট্যাক্সি করে বাড়ি। আজ আর কাজে
যেতে ইচ্ছে করল না। টেনে ঘুম
দিল। সকাল দশটা থেকে প্রায় পরের দিন ভোর
ছটায় উঠল। মনে হল প্রকৃতি যেন
তাঁর চোখে অনেকটা শান্ত স্নিগ্ধ!!!!
No comments:
Post a Comment