বড়গল্প-
রাত বারোটা
পাঁচ
টিং টং!টিং টং!টিং টং!টিং টং!
হঠাৎ মাঝরাতে ঘুমটা ভেঙে গেল।
ধুত্তেরি!আর ভাল লাগেনা।এত রাতে আবার কে এল?কলিং বেলটা আরও বার কতক বাজার পর লেপকাথা থেকে নিজেকে বার
করলাম।মাঘ মাসের শীতে মাঝরাতে যদি লেপকাথা ত্যাগ করে দরজা খুলে বাইরে যেতে হয়,তবে কেমন বিশ্রী অবস্থা হয় ভাবতে গেলেই চোখে জল চলে
আসে।মেঘা তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।নাঃ, ওকে এত রাতে আর জাগাব না।আমিই উঠে গিয়ে দরজা খুললাম।
দরজা খুলেই চমক!দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে অমর।আমার কলেজের
প্রিয়বন্ধু অমরেশ বসু।আমি তো অবাক!কিছুক্ষণ হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে থাকলাম।তারপর চটকা
ভাঙলে তাড়াতাড়ি ওকে ঘরের ভিতর ঢুকিয়ে নিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম।ড্রয়িংরুমে
বসালাম ওকে।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত তখন বারোটা পাঁচ বাজে।ও বলল-"চিনতে পেরেছিস
তাহলে?"
আমি বললাম-"চিনব না মানে!পাঁচ বছর একসাথে পড়েছি।প্রথমে
ইংরাজীতে অনার্স নিয়ে প্রেসিডেন্সি,আর তারপর এম.এ তে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি।আমাদের বন্ধুত্ব
দেখে সবাই আমাদের মানিকজোড় বলত।সেসব দিনের মধুর স্মৃতি কি কেউ ভুলতে পারে।"
-"যাক,আস্বস্ত হওয়া গেল যে পুরোন বন্ধুকে তবে পুরোপুরি ভুলে
যাসনি।"
-"কিন্তু এম.এ পাশ করার আগেই আমি পুলিশে চান্স পেয়ে
গেলাম।পরে অবশ্য আবার পড়ে পাশ করি।আর তুই এম.এ কমপ্লিট করলি।তারপর কি হল বলতো?কোথায় চলে গিয়েছিলি?"
-"কোথায় আবার,বর্ধমানে আমার নেটিভ ভিলেজে।তোকে কিছুই জানাতে পারিনি
শিবু।সরি,কিছু মনে
করিস না।"
-"একটা ফোন,বা চিঠি কিছুই তো দিলি না. কোন যোগাযোগই রাখিসনি।"
কথা বলার ফাঁকে অমর উঠে গিয়ে একটা জানালার কাছে গিয়ে
দাঁড়াল।জানালা খুলে দিল।আমি বাঁধা দিয়ে বললাম-"করছিস কি অমর।এত শীতে করছিস কি?শালা নিজেও মরবি আর আমাদেরও মারবি!"
-"নারে।আমি চলে গেলে আবার লাগিয়ে নিস।"
এবার ওকে দেখে একটু চোখ কুঁচকে গেল আমার।মহা গপ্পোবাজ অমরকে
কোনদিন চুপ করে থাকতে বা হতাশাজনক মুখ নিয়ে বসে থাকতে দেখিনি।মনে কেমন একটা সন্দেহ
হল।আমি বললাম-
"কি হয়েছে তোর অমর?তোকে কেমন একটু অস্বাভাবিক লাগছে বলে মনে হচ্ছে!কি হয়েছে বল
আমায়।"
ও ঠিক একই ভাবে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল।আমি ওকে
এককাপ কফি আর কিছু মিষ্টি,পকোড়া
ইত্যাদি দিলাম।কফি ফ্লাস্কে থাকে সবসময় আর বাকি জিনিসগুলো ফ্রিজেই ছিল।পেটুকঠাকুর
অমর এসবের দিকে না তাকিয়ে সেই একইভাবে বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল-"তোর নীলিমাকে
মনে আছে?"
-"হ্যাঁ,কেন মনে থাকবে না।তোর ফিয়নসে ছিল।কেন নীলিমার আবার কি হল?কি হয়েছে,একটু খোলসা করে ঝেড়ে কাসোনা ভাই।"
-"আমরা পালিয়ে যাব বলে ঠিক করেছিলাম।কারণ,ওরা ছিল ব্রাহ্মণ।তাই ওদের বাড়ী থেকে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে
গভীর আপত্তি ছিল।তারপর তুই আমাদের কি সব উপদেশ দিয়ে পালাতে বারণ করেছিলি।বলেছিলি
পালায় ভীতুরা।আমরা যদি পরস্পরকে প্রকৃত ভালোবাসি তবে পালিয়ে পরিবারের মুখে চুনকালি
লাগাবো না।যদি না মানে তবে ওদের অমতে বিয়ে করব।ওদের আশেপাশেই থাকব।তাবলে মূর্খের
মত পালাব না।"
-"তারপর ওরা মানেনি বলে কালিঘাটে গিয়ে আমি নিজে তোদের
বিয়ে দিয়েছিলাম।ঘর ভাড়া করে দিয়েছিলাম,টিউশনিও দেখে দিয়েছিলাম।পার্টটাইম কাজও জুটিয়ে দিয়েছিলাম...আরে
এগুলোতো সবাই জানে।তাতে কি হয়েছে।"
-"তাতেই তো সব ভাই।নীলিমা আর নেই শিবু!"
কি সব যাতা বলছে ও!ওর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি।কিন্তু
ওর কথায় আর ব্যবহারে মাথা খারাপ বা পাগলামির কোন লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে না তো।ও
বলল-"আমাদের ওবাড়ী থেকেও কেউ মেনে নেয়নি।আমি হঠাৎ বর্ধমানে ফিরে গিয়েছিলাম
তার কারণ হল বাবার অকস্মাৎ মৃত্যু।আসলে এই শক নিতে পারেনি।বাবার মৃত্যুর পর আর
বাড়ীতে স্থান হয়নি আমার।আবার কোলকাতা চলে আসি।জুটমিলে কাজ শুরু করি।অভাবের সংসার
কোনরকমভাবে চলতে থাকে।কিন্তু নীলিমা আমায় সত্যি সত্যিই ভালোবাসত।তাই এই অভাবকে
হাসিমুখে মেনে নিয়েছিল।তাই তোকে আর জ্বালাতন করিনি।ওই আমায় বারণ করেছিল।এতকিছু
করেছিস আমাদের জন্য।"
-"কি সব বলছিস?নীলিমা মারা গেল কি করে?"
-"যখন সুখের মুখ একটু দেখতে শুরু করেছি,মিলে প্রমোশন পেয়ে পারচেজ ডিপার্টমেন্টে গিয়েছি ঠিক তখনই
থ্রম্বোসিসে মারা যায় নীলিমা।প্রথমে কেউ কিছুই বুঝতে পারিনি।যখন ধরা পড়ে তখন ওকে
বাঁচানোর সবরকম চেষ্টা করি।গ্রামে গিয়ে সকলের হাতে পায় ধরি।কিন্তু কারও মনে কোনরকম
দয়ার উদয় হয়নি।ফিরে এসে দেখি সব শেষ।আমার সব সম্বলটুকু বিক্রি করেও ওকে বাঁচাতে
পারিনি।তবে একটু খারাপ কাজ তখন আমি করে ফেলি।গ্রাম থেকে আসার সময় মায়ের আর রুমকি
দিদির গয়নার বাক্স আমি চুরি করে নিয়ে আসি।কিন্তু কোন কাজে লাগেনি।আর এখন আমার যা
অবস্থা তাতে এগুলো আমার কাছে মূল্যহীন।তাছাড়া কাঁকড়াবিছের মত হুল ফোঁটাচ্ছে
প্রতিনিয়ত।কি অসহ্য যন্ত্রণা তা তোকে বলে বোঝাতে অপারগ আমি শিবু।"
ওর কথায় আমি খুবই দুঃখ পেলাম।ছেলেটা কি ভয়ানক মানসিক
পরিস্থিতির মধ্যে আছে তা ভাবতে গেলেও গা শিউরে ওঠে আমার।
-"তা এতরাতে এইগল্প শোনাতে হয়ত আসিসনি আমায়।কোন জরুরী
কাজ আছে নাকি?বল আমায়,আমি যতটা সম্ভব তোকে সাহায্য করার চেষ্টা করব।"
-"না না,তোকে তেমন একটা কষ্ট দেবনা।শুধু একটা অনুরোধ।তুই এই গয়নার
বাক্সটা যদি মাকে ফিরিয়ে দিয়ে আসিস তবে খুব উপকার হয়।আমি খবর নিয়ে দেখেছি,বাবার মৃত্যুর পর আমাদের পরিবারের অবস্থার শোচনীয়ভাবে অবনতি
ঘটেছে।রুমকি দিদির বিয়েটা পর্যন্ত দিতে পারছেনা।এতে লাখ পাঁচেক টাকার মত গয়না
আছে।ওদের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।এই উপকারটুকু করবি ভাই?"
-"কেন করব না।নিশ্চয়ই করব।আমি আর তোর বৌদি মেঘা আগামী
সপ্তাহে বর্ধমান যাচ্ছি।ওখানে ওর মামাবাড়ি।মামাতো বোনের বিয়েতে।তোর ঠিকান দে,আমি নিজে হাতে করে দিয়ে আসব।কিন্তু তুই নিজে হাতে
দিলে..."
কথাটা শেষ করার আগেই দেখলাম ও একটু চমকে উঠল।তারপর বলল-
"না না,আমি যাব কোন মুখে বল।একেতো পরিবারের মুখে চুনকালি দিয়েছি,তার ওপর গয়না চুরি।কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াব।তার থেকে তুই দিয়ে
আয়।আর যদি না দিতে চাস তো থাক।আমি জোর করব না।"
ও মুখটা নীচু করে রইল।
ওকে আজ যতটা বিমর্ষ লাগছে ততটা আর কোনদিন লেগেছে কিনা
সন্দেহ।ওকে দেখে আমার মনের ভাবটা কেমন যেন হয়ে গেল।কিছু একটা তো হয়েছে,নাহলে...
ও একটা গয়নার বাক্স কাঁধের ব্যাগ থেকে বার করে খাটের ওপর
রাখল।তারপর হঠাৎ আমার দুহাত নিজের দুহাতের মধ্যে টেনে নিল।দুচোখে গভীর অনুতাপের
ছায়া।কিন্তু তা আমার তখন খেয়াল হচ্ছিল না,কারণ ও যখন আমার দুহাত নিজের দুহাতের মধ্যে নিল তখন
অস্বাভাবিক শৈত্যে আমার পুরো শরীর কম্পিত হতে লাগল।যেন একটা বরফের চাঙড়ের গর্তের
মধ্যে বরফের কিছু ছুরির ওপর হাত রেখেছি।ও আনন্দিত হয়ে কি সব বকছে তা আমি একেবারেই
বেমালুম ভুলে গেলাম।ঠকঠক করে কাঁপছি তখনও।
শেষে "থ্যাঙ্ক ইউ" বলে দরজা খুলে হনহন করে
রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল।আমি তখনও বিহ্বলিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।কিছুই বুঝতে পারছিনা।খাটের
ওপর গয়নার বাক্সটা তখনও পড়ে আছে।আমি সম্বিত ফিরে পেতেই হতভম্ব হয়ে গেলাম।অমরের নাম
ধরে ডাকতে ডাকতে বাইরে বেরিয়ে এলাম।চারিদিক শুনশান।কিছু নেড়িকুকুর কেবলমাত্র শুয়ে
আছে এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিশৃঙ্খলভাবে।কুয়াশায় ব্যাপ্ত চতুর্দিক।কেউ কোত্থাও
নেই কোনদিকে!
কাঁপা কাঁপা
হাতে দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকলাম।গয়নার বাক্সটা দেরাজে রেখে বেড রুমে গিয়ে লেপের
মধ্যে ঢুকে পড়লাম।তখনও ঠকঠক করে কাঁপছি।হঠাৎ মেঘার ঘুম ভেঙে গেল।'ওমা!কি ঠাণ্ডা!' বলে লেপ ঠেলে খাটের ওপর উঠে বসল।আমি তখন কাঁপছি।ও কিছু একটা
ভেবে বলল-
"ও,তোমার হাত এত ঠাণ্ডা!তা এত রাতে এই মরা ঠাণ্ডায় কোথায়
বেরিয়েছিলে।"
আমি আমতা আমতা করে অমরেশের ব্যাপারটা সব খুলে বললাম
ওকে।মেঘা শিক্ষিতা আধুনিক মনস্কা মেয়ে।আমি একটু বেশী ভাবছি বলে আমাকে একটু বকা
দিল।তারপর লেপের মধ্যে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরল।আমিও দুহাতে গভীরভাবে আলিঙ্গন করলাম
ওকে।ও বলল-
"বর্ধমানে যাই আমরা আগে,তারপর ভাবব কি করা যায়।"
আমি তখন একটু ধাতস্ত হয়েছি।আরও কাছে টেনে নিলাম মেঘাকে।ও
কোন প্রতিবাদ করল না।বরং আমার আদরে সাড়া দিয়ে শীতল দেহমনকে উষ্ণ করে তুলল।শুধু
বলল-
"কিছু ভেবোনা গো।সব ঠিক হয়ে যাবে।"
কিন্তু কামের উন্মাদনা ও উত্তেজনা তো সাময়িক।কিছু সময় পরে ও
ঘুমিয়ে পড়ল।আমার কিন্তু ঘুম আসছিল না।কি হয়েছে অমরের।তখন হঠাৎ একটা কথা মনে পড়তেই
বুকের মধ্যে হাতুড়ি পিটতে শুরু হল।ওর চোখ!ওই নিষ্পলক দুচোখ!যতক্ষণ ও ছিল চোখের পলক
পড়তে দেখিনি,আর চোখের
চাহনি ছিল নিষ্পৃহ।সাধারণ মানুষের পক্ষে...
যাইহোক,এখন ভেবে লাভ নেই।মেঘা ঘুমিয়ে পড়লেও আমাকে তখনও অজগরের মত
আলিঙ্গন করে আছে।আর আমিও বুকে জড়িয়ে আছি।
এক সপ্তাহ পর।
বর্ধমানের হরিহরপুর গ্রামে অমরের নেটিভ ভিলেজ।অমরের বাবা
পৃঁথ্বীশ বসুর বাড়ী খুঁজে বার করতে তেমন বেগ পেতে হলনা।সকলে চেনেন দেখলাম ওদের।
একটা পুকুরপাড় পেরিয়ে বামদিকে মুড়তেই দেখতে পেলাম অমরদের
ছোট একটা একতলা বাড়ী।মেঘা বলল-"এই কি তোমার বন্ধু অমর বাবুর বাড়ী?"
ওকে আমি সেদিন রাতের ঘটনাটা বলেছিলাম।প্রথমে একপশলা ধমক
শুনিয়ে দিল।তারপর একটু বুঝিয়ে বলতেই শান্ত হয়েছিল।অমর যে ওকে জাগাতে বারণ করেছিল
তা বলতেই এমন একটা রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল যে ভষ্ম করতে পারত হয়ত করত।পাঁচিল
দিয়ে ঘেরা ওদের বাড়ী।তবে বাড়ীতে একটু বেশীই জীর্ণতার ছাপ পড়ে গেছে।গেটটায় মরচে
পড়েছে,বাড়ীর
বাইরের রং এর জৌলুস আর নেই।চুন,বালি খসে খসে পড়ছে।কার্ণিসে বট,অশ্বত্থ,আগাছা ইত্যাদি জন্মেছে।গেটটা একটু ঠেলতেই একটা দীর্ঘ
ক্যা-অ্যা-অ্যা-চ্-চ্ শব্দ করে খুলে গেল।গেট থেকে পাথরকুচি বিছানো পথের শেষে
বাড়ীতে প্রবেশের প্রধান দরজা।আমি এগিয়ে গিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দেখি কলিং বেল
নেই।দরজার কড়া নেড়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম।মেঘা বলল-"বোদহয় বাড়ীতে কেউ
আর..."
আমরা পিছনঘুরেছি ফিরে আসার জন্য,হঠাৎ খুট্ শব্দে দরজা খুলে গেল।আমরা আবার পিছন ফিরে
দাঁড়ালাম।একজন বিধবা ভদ্রমহিলা দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন-"কাকে
চাই?"
আমরা একে একে তাঁকে প্রণাম করলাম।তারপর নিজের পরিচয় দিতেই
উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।বললেন-"বাবা শিবু,তোমার কথা কত শুনেছি অমরের হাতে।কিন্তু..."
তারপর হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন।তার কান্না শুনে একজন
রোগা ভদ্রমহিলা বাইরে বেরিয়ে এলেন।বুঝলাম ইনি রুমকি দিদি।কোলকাতায় তার সাথে আলাপ
করিয়েছিল অমর।তিনি আমাদের সকলকে সাদরে অভ্যর্থনা করে ভিতরে নিয়ে গেলেন।মেঘা রীতিমত
লজ্জা পাচ্ছে।তাকে বৌমা বৌমা করছে আর কেঁদে ভাসাচ্ছে অমরের মা।সাথে রুমকি দিদি মুখ
টিপে কান্না ঢাকার ব্যর্থ প্রয়াস করছে।
আমি আর বেশী ভনিতা বা সময় নষ্ট না করে সরাসরি আসল কথায় চলে
এলাম।আমি বললাম-
"গয়নার বাক্সের ঘটনাটা আমি জানি রুমকি দিদি।আমিও
জানতাম না,জেনেই ছুটে
এসেছি।"
রুমকি দিদি একটু বিমর্ষ মুখে বললেন-"আর ওসবে কি হবে
ভাই...যা হবার তাতো..."
বুঝলাম অমরের বিচ্ছেদ এর জন্য এইসব কথা তাদের মনে দাগ কেঁটে
বসে গেছে।আমি তখন মেঘার ব্যাগে রাখা গয়নার বাক্সটা বার করে রুমকি দিদির হাতে
দিলাম।সেটা হাতে দিতেই এক মুহূর্তে রুমকি দিদি আর মাসিমার চাহনিতে এক অবিশ্বাস্য
পরিবর্তন দেখলাম।ভীষণ অবাক হয়ে মাসিমা জিজ্ঞাসা করলেন-
"এ তুমি কোথা থেকে পেলে বাবা?ও তো এটা নিয়ে গিয়েছিল!"
আমি বললাম-"ও গত সপ্তাহে রাতে এসেছিল।"
তারপর আমি আনুপূর্বিক সব বলে গেলাম।শুনেই চমকে উঠলেন
ওনারা।মাসিমা কাঁদতে কাঁদতে কিছুই বলতে পারলেন না।রুমকি দিদি জিজ্ঞাসা
করলেন-"সে কি করে সম্ভব ভাই?"
-"সম্ভব নয় কেন দিদিভাই?"প্রশ্নটা করল মেঘা।
-"ও যেদিন গয়নার বাক্সটা নিয়ে যাচ্ছিল সেদিন মোটর
অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়।এখানেই ওর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।পরে জানতে পারি ওর
স্ত্রীও..."
আমি অনুভব করলাম মেঘা আমার হাত চেপে ধরেছে।আমার হাল একবার
ভাবলেই বোঝা যাবে কি অবস্থা হয়েছিল আমার।
এও কি সম্ভব!যে মারা গিয়েছিল সে কি করে কোলকাতায় এসে আমার
সাথে দেখা করতে পারে!আর গয়নার বাক্স?সেটা তো স্বপ্ন নয়।রুমকি দিদি আমাদের বললেন-"এদিকে এসো
একবার।"
আমরা পাশের ঘরে গিয়ে দাঁড়ালাম।একটা দেওয়ালের দিকে আঙুল
নির্দেশ করে বললেন-"ওই দ্যাখ।"
দেখি একটা ফটো ফ্রেমে অমরের ছবি বাঁধানো।আর তাতে সদ্য পরানো
হয়েছে একটা রজনীগন্ধার মালা!
No comments:
Post a Comment