Monday, January 14, 2019

অভিজিৎ কর



অণুগল্প-
ভুতুড়ে প্রেম

সন্দীপ খুব ভালো ছেলে, শুধু ভালো বললেও অনেক কম বলা হবে; আমার স্বামী জয়ের সাথে আমার বিয়ের একবছরের মাথায় ডিভোর্সের পর খুব একা হয়ে গেছলাম। বাড়ির অমোতে বিয়ে করেছিলাম বলে বাপের বাড়িও যেতে পারছিলাম না। এমন সময় সন্দীপের সাথে আমার দেখা হয়, ওকে সবকিছু খুলে বলি। সব শুনে আমাকে তার সাথে নিজের বাসায় নিয়ে যেতে চায়, বলে ওর বাড়িতে কেও থাকে না, তাই আমি অনায়াসেই সেখানে থাকতে পারি। সন্দীপ আর আমি একসাথে কলেজে পড়তাম, আমরা খুব ভালো বন্ধুও ছিলাম; আর অন্য কোনো উপায় হাতে না থাকায় সন্দীপের সাথে তার বাড়িতে থাকতে রাজি হয়ে গেলাম।

দুই:

 
সন্দীপের বাড়িটা শহর ছাড়িয়ে একটু দূরে ফাঁকা মাঠের মধ্যে দোতলা বাড়ি। পাশাপাশি কোনো বাড়িঘর নেই। এরকম ফাঁকা জায়গায় বাড়ি কেনার কারণ জিজ্ঞেস করতে বলেছিল সস্তায় পেয়েছে তাই কিনে নিয়েছে আর শহরের মধ্যে বাড়ি কেনার মতো ওতো টাকাও তার কাছে নেই। নীচের ফ্লোরে রান্নাঘর, খাবার জায়গা এইসব আছে আর শোবার ব্যবস্থা উপরতলায়; ওখানে তিনটে রুম আছে একদম ধারের রুমটায় সন্দীপ থাকেমাঝের রুমটা ফাঁকা আর এপাশের ধারের রুমটা আমার জন্য। বাড়িতে কোনো কাজের লোক না থাকায় রান্নাবান্না থেকে ঘর গোছানো সবকিছু আমাকেই করতে হতো। সন্দীপ তো সকাল হলে বেরিয়ে যেতো আর বাড়ি ফিরতো সন্ধের পর। সাত মাস হয়ে গেল সন্দীপের সাথে আছি কিন্তু কোনোদিন আমার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি। ও চাইলে আমার অসহয়তার সুযোগ নিয়ে আমার সাথে সবধরনের শারীরিক সম্পর্ক করতে পারতো; কিন্তু সেসব তো দূরের কথা, আমার দিকে খারাপ নজরে তাকায়নি পর্যন্ত কোনোদিন। তবে একটা কথা আমার খটকা লাগতো; আমি বাজারে যাবার কথা বললেই ও কেমন যেত রেগে যেত। ও বলতো বাইরে গিয়ে কি করবি ,তোর যা কিছু লাগবে সব আমি এখানেই এনে দেবো; অগত্যা আমাকে বাড়ির মধ্যেই সময় কাটাতে হতো; আশেপাশে কোনো প্রতিবেশীর বাড়িও নেই যাদের কাছে গিয়ে আড্ডা দেবো।

তিন:

একদিন সকালে মনটা কেমন যেন খারাপ লাগছিল, তাই বাড়ি থেকে বাজারে যাবার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। তখন মোবাইলের ব্যবহার শুরু হয়নি, নাহলে ম্যাপ দেখে খুঁজে খুঁজে বাজারে যেতে পারতাম। যাই হোক বেরিয়ে পড়লাম; কিছুদূর এগোবার পর দেখলাম সামনে থেকে একটা বাইক আসছে; আমার কাছে এসে বাইকটা থেমে গেলো, আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম খুব কি জানি কি হবে এবার! মাথার থেকে হেলমেট টা খুলতেই চিনতে পারলাম এ তো তাপস; আমি সন্দীপ, তাপস আমরা খুব ভালো বন্ধু ছিলাম, একসাথে কতো মজা করেছি আমরা; আরো হয়তো সেই দিনগুলোর মতো তিনজনে একসাথে আড্ডা দেবার কথা ভাবতেই মনের মধ্যে একটা হাসি ফুটে উঠলো। তাপসকে জিজ্ঞেস করলাম সে এখানে কি করছে, তাপস বলে, ও এখন ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে কাজ করে; পাশের জঙ্গলেই ওর ডিউটি। আর আমি এই ফাঁকা জায়গায় একা কি করছি জিজ্ঞেস করায়, ওকে সবকিছু বললাম। সন্দীপের নাম শোনা মাত্র ওর মুখে একটা ভয়ের ছাপ দেখা গেলো। আমাকে সঙ্গে সঙ্গে ওর বাইকে বসতে বলে। তারপর প্রায় ঝড়ের গতিতে বাইক চালিয়ে একঘন্টা পরে একটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়; বাড়িতে ঢুকেই দেওয়ালে টাঙানো মালা পরিহিতো একটা ছবির দিকে তাকাতে বলেআমি তো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না; এটা তো সন্দীপের ছবি, আর ছবিতে মালা কেন দিয়েছে! তাহলে আমি যার সাথে এতদিন ধরে আছি সেই বা কে তাহলে!! আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তাপস বলে সন্দীপ আমাকে মনে খুব ভালোবাসতো কিন্তু বন্ধুত্ব নষ্ট হবার ভয়ে কোনোদিন মুখ ফুটে কিছু বলেনি। ও যেদিন শুনলো আমি জয় নামে একটা ছেলের সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছি সেইদিন থেকেই ও কেমন যেন মনমরা হয়ে রইতো, তার একমাসের মাথায় হঠাৎ একদিন রাত্রে সন্দীপ সুইসাইড করে; যাবার আগে একটা সুইসাইড নোটে লিখে যায়,"আমি তোকে অন্যকারো হতে দেবো না"।

No comments:

Post a Comment