গল্প
-
প্রেমের গোলাপ
সাতটায় অ্যালার্ম বাজতেই ঘুম থেকে উঠে পড়লো প্রাঞ্জল। নিজে ফ্রেশ
হয়ে ঘর ঝাড়ু দিলো। তারপর নিজের আর মেয়ের জন্য রান্না করলো। তারপর স্নান করে পূজা দিল।
সাড়ে আটটা বাজতেই মেয়েকে ঘুম থেকে তুললো প্রাঞ্জল। তারপর ওকে
স্নান করিয়ে,
খাইয়ে স্কুলের বাসে তুলে দিল।
এবার প্রাঞ্জল তৈরি হয়ে নিল হলুদ শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়ে।
বডি স্প্রে লাগিয়ে,
চুল ঠিক করে, হাতে ঘড়ি পড়ে, চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে বেরিয়ে পড়লো। গাড়ি চালিয়ে প্রথমে গিয়েই দাঁড়ালো একটা
ফুলের দোকানে। দোকানদার ওকে দেখেই এক গাল হেসে জিজ্ঞেস করলো, "ভালো আছেন দাদা?"
"হ্যাঁ ভালো আছি। তুমি কেমন?"
"আমিও ভালো। আজ কয়টা যেন?"
"পনেরোটা।"
"বাহঃ! দেখতে দেখতে পনেরো হয়ে গেল?"
"হ্যাঁ হয়ে গেল আর কি!"
দোকানদারকে পনেরোটা গোলাপ ফুল গোছাতে দেখে প্রাঞ্জলের মনে পড়তে
লাগলো চোদ্দ বছর আগের সেই দিনটার কথা।
চোদ্দ বছর আগে,
প্রাঞ্জল আর দ্বীতিপ্রিয়া, একই কলেজে পড়তো। প্রাঞ্জল অংক
অনার্স। আর দ্বীতিপ্রিয়া ছিল ইংরেজি অনার্সে। ওরা দুজন কলেজের প্রথম দিনেই বন্ধু হয়ে
গিয়েছিল। ওই বছর ওরা ছিল তৃতীয় বর্ষে। সেইসময় ওরা বেস্টফ্রেন্ড।
পুরো কলেজ জানতো যে, প্রাঞ্জল আর দ্বীতিপ্রিয়া,
একে অপরকে চোখে হারায়। দুজনের বাড়ি থেকেও জানতো ওদের গভীর বন্ধুত্বের
কথা।
কিন্তু এই গভীর বন্ধুত্বই প্রাঞ্জল আর দ্বীতিপ্রিয়ার মধ্যে ভালোবাসা
সৃষ্টি করেছিল। প্রাঞ্জল জানতো না যে দ্বীতিপ্রিয়া ওকে ভালোবাসে। আর দ্বীতিপ্রিয়াও
জানতো না যে,
প্রাঞ্জল ওকে ভালোবাসে। বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে প্রথমে কেউ মুখে ফুটে বলেওনি।
অবশেষে প্রাঞ্জলই সেই বছর ভ্যালেন্টাইন ডের দিন একটা গোলাপ নিয়ে
গিয়ে কলেজে সবার সামনে হাঁটু গেড়ে দ্বীতিপ্রিয়াকে জিজ্ঞেস করেছিল, "আমার
বউ হবি?"
দ্বীতিপ্রিয়া খুব অবাক হয়ে গিয়েছিল। সাথে পুরো কলেজ যখন হাততালিতে
ফেটে পড়েছিল,
তখন খুব লজ্জাও পেয়ে গিয়েছিল। পাশ থেকে সবাই শুধু বলে যাচ্ছিলো,
"সে ইয়েস।"
অবশেষে দ্বীতিপ্রিয়া "হ্যাঁ" বলে গোলাপটা নিয়ে নেয়। খুশিতে আত্মহারা হয়ে সবার সামনেই প্রাঞ্জল জড়িয়ে ধরেছিল
ওকে। সেই থেকে শুরু ওদের প্রেম।
হ্যাঁ, সেই প্রেমের চোদ্দ বছর কেটে গেছে। তারপরের বছর
এই দিনে প্রাঞ্জল ওকে দুটো, তারপরের বছর তিনটা গোলাপ দিয়েছে।
যত বছর হয় ওদের সম্পর্কের, তার থেকে একটা গোলাপ বেশি দেয় আগামী
বছরের উদ্দেশ্যে। এইবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চোদ্দ বছর হয়ে গেছে ওদের ভালোবাসার সম্পর্কের।
তাই এবার পনেরোটা গোলাপ।
গোলাপের গুচ্ছটা নিয়ে প্রাঞ্জল গাড়িতে উঠলো। তারপর গাড়ি চালিয়ে
পৌঁছালো নিজের গন্তব্যে। শহরের একটা বড় নার্সিংহোমে। এখন দ্বীতিপ্রিয়া এখানেই আছে।
ও ব্লাডক্যান্সারে আক্রান্ত। কেমোথেরাপি চলছে। দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছে ও এই রোগের সাথে।
আর প্রতি মুহুর্তে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে প্রাঞ্জল।
পাঁচ বছর প্রেমের সম্পর্কের পরে প্রাঞ্জল আর দ্বীতিপ্রিয়া বিয়ে
করেছিল। বিয়ের দুই বছর পরে ওদের কোল জুড়ে জন্ম নেয় এক কন্যাসন্তান। খুব সুন্দর ভাবেই
সব চলছিল। হঠাৎ দুই বছর আগে ওদের জীবনে ক্যান্সার নামক ঝড় নেমে এলো। কিন্তু দ্বীতিপ্রিয়া
কখনোই ভেঙে পড়েনি। আর প্রাঞ্জলকেও ভেঙে পড়তে দেয়নি।
যে প্রাঞ্জল এক গ্লাস জল ভরে খেত না। আজ সে ঘরে-বাইরে সব সামলায়।
তার সাথে একা হাতে মেয়েকেও মানুষ করছে।
প্রাঞ্জল দ্বীতিপ্রিয়ার বেডের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে আবার আজ জিজ্ঞেস
করলো,
"পরের জন্মেও আমার বউ হবি?"
দ্বীতিপ্রিয়ার চোখে জল। হেসে জিজ্ঞেস করলো, "এইবারও
বাদ গেল না?"
"কেনো বাদ যাবে? এইবার কি এমন বদলেছে শুনি?"
"পাগল!"
"উত্তরটা তো দে। কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবো?"
"সব জন্মে আমি তোরই বউ হবো পাগল।"
"আই লাভ ইউ।"
"আই লাভ ইউ টু।" বলে গোলাপ গুচ্ছটা হাতে নিল দ্বীতিপ্রিয়া।
একটু বাদে দ্বীতিপ্রিয়ার হাত থেকে গোলাপ গুচ্ছটা নিয়ে নার্স
ওর মাথার কাছের টেবিলে একটা ফুলদানিতে রেখে দিল।
"এবারও হলুদ আর কালো?" দ্বীতিপ্রিয়া জিজ্ঞেস করলো।
"হ্যাঁ অনেক খুঁজে পেয়েছি।"
"আমি প্রতি বছর সেই চোদ্দ বছর আগের দিনটাকে আবার অনুভব করি জানিস। সেই হলুদ
শার্ট, কালো প্যান্ট, হাতে ঘড়ি আর গোলাপ।
বডি স্প্রের গন্ধটাও একই থেকে গেল।"
"তুই আমার কাছে যে সেই দ্বীতিই চিরকাল থাকবি। আমার বেস্টফ্রেন্ড। খুব ভালোবাসি
রে তোকে। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে বাড়িতে চল। বাড়িটা তোকে ছাড়া খাঁ খাঁ করে।"
"আমার ঘরদোর পরিষ্কার রাখছিস তো?"
"গিয়ে দেখবেন ম্যাডাম।"
"আচ্ছা। তুই প্রতিবার যে জিনিসটা বলতে ভুলে যাস। এইবারও সেটা বলতে ভুলে গেছিস।"
"কি রে?"
"হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে হাজবেন্ড।"
"ওহ হ্যাঁ! হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে ওয়াইফ।"
No comments:
Post a Comment