অণুগল্প-
বই, পেন
আর চকোলেট
বেসরকারি হাসপাতালের ফ্রন্ট ডেস্ক এক্সিকিউটিভ মেয়েটির
সামনে ঈষৎ ঝুঁকে দাঁড়াল সুবিনয়। মেয়েটির বুকের কাছে নীল স্ট্রাপে আটকে থাকা আই
কার্ডে নাম ঝুলছে অদিতি রায়। সামনে রাখা দুটো ফোনের একটা, কাঁধ আর কানের মাঝখানে স্থিত। বাঁ-হাতে পাতা
খোলা ডক্টরস ফাইল। ডান হাতের তর্জনী দিয়ে স্ক্রলিং করিয়ে যাচ্ছে মাউস। চোখ আটকে
আছে কম্পিউটার মনিটরের পর্দায়। স্পষ্টত অতি ব্যস্ত সে। সুবিনয় চতুর্দিকে চোখ
বুলিয়ে নিল। যে যার কাজে নিমগ্ন। ‘এক্সকিউজ
মি’, সুবিনয়ের ভারিক্কি গলার
শব্দে চোখ তুলে তাকালো মেয়েটি। চোখের ইঙ্গিতেই অদিতি রায় বোঝালো, একটু দাঁড়ান।
‘নো থ্যাংকস!’, এটা আপনার জন্যে। বলেই পশ্চাদগামী হল সুবিনয়।
গেট থেকে বের হয়ে লম্বা করিডর দিয়ে হাঁটতে লাগলো দীর্ঘ পদক্ষেপে।
-এই
যে শুনছেন। এক্সকিউজ মি, এই যে...আপনাকেই বলছি...
সুবিনয় ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো অদিতি রায়, ফ্রন্ট অফিসের সেই মেয়েটি। হাতে ধরা মার্বেল
পেপারে মোড়া গিফটি- গত সন্ধ্যায় কেনা কবিতার বই, পেন
আর চকোলেট। প্রায় দৌড়ে আসায় মেয়েটি স্পষ্ট হাঁপাচ্ছে। ‘এগুলো আমার মানে? আমি তো আপনাকে চিনি-ই না। তাছাড়া এভাবে এখানে
কোনো কিছু নেওয়া এবং রাখা আনএথিক্যাল টু রুলস। প্লিজ ধরুন।’
‘ওহ্ শ্যুওর!’ স্মার্ট উত্তর সুবিনয়ের। ‘বাট্, এটা
আমি আপনার জন্যেই এনেছিলাম ম্যাম্। ইনফ্যাক্ট আপনার জন্যে ঠিক তা নয়। ওই চেয়ারে
যিনি বসেন তাকেই আমি প্রতিবছর এই দিনে এমন কিছু দিয়ে থাকি। ইনডিড, ইউ আর দ্য সিম্বল অফ সামওয়ান এলস্।
‘নাহ্! কিচ্ছু মাথামুণ্ডু
বুঝতে পারলাম না স্যার। প্লিজ হোল্ড ইট। আই অ্যাম অন ডিউটি।’ একথা বলে গিফটি বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে তখনো মেয়েটি।
-আপনি রাখুন। ওটাতে এমন কিছু নেই যা আপনাকে আগামিতে
বিড়ম্বনায় ফেলবে। মোস্ট অফ দ্য স্টাফ নো এবাউট ইট। ইউ মে শেয়ার দিজ উইথ ইয়োর
কলিগস্। উইদাউট হেজিটেশন।’ বলেই আবার দীর্ঘ
পশ্চাদগামী পদক্ষেপ সুবিনয়ের। স্থবির অদিতি রায়।
হঠাৎ কাঁধে অন্য হাতের ছোঁয়ায় চমকে ওঠে অদিতি। ঘাড় ঘুরিয়ে
তাকিয়ে দেখে অপর্ণাদি। ওর থেকে এক বছরের সিনিয়র।
-চল।
‘চল মানে?’ এগুলো নিয়ে যাবো?’ অবাক চোখে প্রশ্ন অদিতির।
-হ্যাঁ। গত বছর আমি তোর টেবিলে ছিলাম। আমি সব জানি। ওই
গিফটি- বই, পেন আর চকোলেট। কবিতার বই।
পড়িস। ভালো লাগবে।
একটু অনিচ্ছা সত্তেও অদিতি বলে, ‘বেশ। বলছ যখন রাখছি।’ সাথেসাথে কৌতুহলী হয়ে বলে ‘খুলবো এখন?’
-হ্যাঁ। নিশ্চয়।
মার্বেল পেপারের মোড়ক খুলে ব্লার্বে নজর পড়তেই চোখেমুখে
অবাক বিষ্ময় অদিতির। মুহূর্ত কাল আগে চলে যাওয়া সেই মুখ। কবি সুবিনয় রায়। অতি
অদ্ভুত কবিতার বইয়ের নামটাও—‘ফ্রন্ট অফিসের সেই
মেয়েটিকে’।
এতক্ষণে বই, পেন
আর চকোলেটের উপর যেন কেমন অধিকার বোধ অনুভব করতে শুরু করে সে।
No comments:
Post a Comment