অণুগল্প-
বিধান
—"না,না,তুমি যা বলছো,তা কিছুতেই সম্ভব
নয়৷"
—"কেন সম্ভব
নয় অর্চিতা!আমার প্রতি তোমার কী কোন ফিলিংস নেই?"
—"আছে,তবে সেটা নিখাদ বন্ধুত্বের৷"
—"শুধুই
কী বন্ধুত্বের?তাহলে আমি আঘাত পেলে তোমার অত কষ্ট হয় কেন?জ্বর হলে কেন বুবাইকে নিয়ে আমার বাড়িতে এসে সময় কাটাও?কেন মন্দিরে আমার নামে পুজো দাও?কেন আমার লেখা কবিতার
বই তোমার বালিশের নিচে পাওয়া যায়?"
—"উফ্
,থামো সুপর্ণ,থামো....আমি
আর শুনতে পারছি না৷"
—"সত্যি
কথা বলেই কী এত তীক্ষ্ণ লাগছে,অর্চিতা?বুকে
হাত দিয়ে বলো তো,তোমার মনে আমার কোন জায়গা নেই৷"
—"আমি....আমি জানি না....এ সম্ভব নয়...লোক
কী বলবে?সমাজ....সমাজ এসব মেনে নেয় না এখনো!"
—"লোক....সমাজ...!তুমি এরপরেও এসবের পরোয়া করো?অভিজ্ঞানের হঠাৎ চলে যাওয়ায় তোমার তো কোন হাত ছিল না৷তবে কেন ওরা তোমায় বাড়িছাড়া
করলো?কেন তোমাকে তোমার বাড়িতেই শত লজ্জা নিয়ে থাকতে হয়?কেন কোন আনন্দ অনুষ্ঠানে পাড়ার কেউ তোমাকে ডাকে না?"
—"এসব তো
সমাজেরই বিধান..."
—"কীসের
বিধান?সমাজ গড়ে মানুষ৷যে বিধান মানুষকে মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন
করতে চায়,সে বিধানটাই তো অসামাজিক৷"
—"তুমি
বুঝছো না...এটা পাগলামি হচ্ছে"
—"পাগলামি!তবে তাই....তোমাকে যখন প্রথম দেখেছিলাম পাড়ায়,সেদিন থেকেই পাগলামির শুরু৷আমাকেও তো তোমার ভালো লাগত৷তারপর ভাগ্যের ফেরে হলে
অভিজ্ঞানের ঘরণী৷কিন্তু এখন,ওর চলে যাওয়ার পর,তুমি তো একা৷গোটা জীবন তুমি কাটাবে কী নিয়ে?অভিজ্ঞানের
প্রতি আমার কোন ঘৃণা বা রাগ নেই,কিন্তু তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাটা
আছে....নিখাদ,নিষ্কলঙ্ক৷কোন কিছু পাওয়ার
আশায় আমি তোমার দিকে হাত বাড়াইনি৷আমি শুধু চেয়েছি তোমায়,আমার
মিষ্টি অর্চিকে...."
—"সুপর্ণ!!এ কোন্ বাঁধনে জড়াচ্ছো আমায়?জানি না,এর পরিণাম কী হবে?"
—"সব ঠিক
হয়ে যাবে,দেখো৷"
কথাটা জানাজানি হতে অবশ্য দেরি
হল না৷সমাজপতিরা হামলে পড়লেন দুজনের ওপর৷গাঁয়ের চন্ডীমন্ডপে বসলো বিচারসভা৷বলা হতে
লাগলো নানা রসালো কিসসা৷দুজনের অভিভাবককেই হতে হল চরম হেনস্থা৷দুই পরিবারকে একঘরে করে
এক লাখ টাকা করে জরিমানা ধার্য করা হল৷পাশেই পুলিশ ফাঁড়ি৷তাই ইচ্ছা থাকলেও ছেলে-মেয়েটার আর
কোন ক্ষতি ওরা করতে পারলো না৷
এরপর ব্যাপারটা থিতিয়ে গেল
আস্তে আস্তে৷অর্চিতা হয়ে পড়লো ঘরবন্দি৷যাওয়ার মধ্যে শুধু মন্দিরটুকু৷সেখানেও জুটল প্রাত্যহিক
লাঞ্ছনা৷সুপর্ণকে পাঠিয়ে দেওয়া হল কলকাতায়,কাজে৷হঠাৎ একদিন শোরগোল উঠল—অর্চিতাকে পাওয়া যাচ্ছে না৷খোঁজ-খোঁজ রবের মধ্যেই কেউ
একজন কলকাতায় অফিসে ফোন করে জানতে পারলো সুপর্ণ দু'দিন থেকে নিখোঁজ৷হিংস্র
শ্বাপদের মতো সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লো গাঁয়ের আনাচে-কানাচে৷এবার চরম
শাস্তি৷কিন্তু নাঃ,কোথাও পাওয়া গেল না দুজনকে৷
একদিন পর দেখা গেল,পাশের ভুবনডাঙা
স্টেশনের কাছে রেললাইনের পাশে দুটো লাশ,হাত ধরাধরি করে,যেন এক্ষুনি হেঁটে যাবে ওদের গন্তব্যে,দিকশূন্যপুরে.....
No comments:
Post a Comment