Monday, May 4, 2020

পার্থ বিশ্বাস



কবিতা -    

খেয়ালী....

তার অন্নপ্রাশনে তিনশো লোক
খেয়েছিল পাত পেরে;
মায়ের মুখে
একথা শুনেছে সে অনেকবার ।
বাড়িতে স্যাকরা ডেকে
বাবা বানিয়ে দিয়েছিল
রূপোর কোমর বিছে;
পাখী গোয়ালিনী কাছে
একপো দুধের রোজ--
সব জানে সে ।
সোনা না হলেও
টিনের চামচ মুখে নিয়ে যে জন্মেছে সে--
একথা বলাই যায় ।
যদিও, সম্বল বলতে কাঠা দশেক
এক ফসলী ধানী জমি ।

কেমন যেন খেয়ালী হয়ে গেল ছেলেটা;
বড় হতে হতে ।
দুদিকে হাত মেলে ছুটে বেড়াত
মেঠো আল পথে--
ঠিক ফড়িংয়ের মতো ।
অবাক চোখে আলোর ঝিকিমিকি দেখতো
সদ্য সেচ দেওয়া জমিতে ।
ঘুড়ি ওড়াতে খুব ভালোবাসতো ।
আকাশের সাথে কতটা সখ্যতা হল ঘুড়ির--
বোঝার চেষ্টা করতো একমনে তাকিয়ে।
কখন যে ঘুড়ির সুতো কেটে দিত নিজেই
খেয়াল হয়নি কোনও দিন।

বেলীফুলের গন্ধে উদাসী মনটা
ছুটে যেতো রূপকথার দেশে--
রাজপুত্তুর জিওনকাঠি ছুঁইয়ে যে রাজকন্যেকে উদ্ধার করে এনেছিল,
রাক্ষসদের হাত থেকে ।
তার গায়ের গন্ধের সঙ্গে মিল পেত কোথাও ।
যেদিন দু'কানে বেলীফুল গুঁজে
বাড়ি এসেছিল--
মা বলেছিল,
"বড় হচ্ছিস তুই!! এসব ছাড় এবার। "

ছেড়ে দেব ????
বিকেলে পশ্চিম আকাশে মেঘেদের বালিয়াড়ি,
এক পশলা বৃষ্টির পর
জল জমা ঘাসে পা ধোওয়ার সুখ,
পানকৌড়ির ডুব।
সবকিছু ????

পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হলে
বাবা বলেছিল,
"সব স্বপ্ন ভেঙে গেল। "

সব স্বপ্ন ভেঙে গেল ????
ঐন্দ্রিলাকে একদিন বলেছিল,
"চল না হাত ধরে
দেখে আসি কি আছে দিগন্তের ওপারে।"
রাজি হয়নি ঐন্দ্রিলা।
পাঁজর কাঠির ঠোকাঠুকিতে
চিনচিন করে উঠেছিল বুকটা।
নুইয়ে পড়া বাঁশের মাথায়
বাসা বেঁধেছিল যে ঘুঘুটা;
খুব ইচ্ছে ছিল--
তার বাচ্চার কিচিরমিচির শোনে।
কালবৈশাখীর পর
কেবল দুটো ডিমের খোলা পড়েছিল বাঁশ বাগানে।
ঘুঘুর সেই জ্বলজ্বলে, গোল চোখ
আজও প্রতিচ্ছবি হয়
অন্ধকার দেওয়ালে।
আর, ঘোষবৌ যখন
চৈ-চৈ হাঁসগুলোকে
তাড়িয়ে বাড়ি নিয়ে যেত;
মনে হতো--
আরেকটু খেলুক না ওরা !!

**********

মেঘলা আকাশ,
মন খারাপের বিকেল।
সে একলা
এসে বসে গাবতলার মাঠে।
ছেলের দল খেলা করছে ধুলো মেখে--
কেউ আকাশ,
কেউ ঘুড়ি,
কেউ পানকৌড়ি,
ঐযে ঠিক মাঝখানে একঝাঁক চৈ-চৈ হাঁস;
আর ঘুঘুটা, এখনও তাকিয়ে আছে
হতভম্ভের মতো।

চমক ভাঙে কড়কড়ে আওয়াজে--
বামুন পাড়ার দিকে বাজ পড়লো কোথাও।
হাত ঝাড়তে ঝাড়তে ঠিক করে--
এবার থেকে এখানেই কাটাবে বিকেল গুলো;
রোজ....

No comments:

Post a Comment