মুক্তগদ্য -
স্বাধীনতা এবং বিপ্লব
দুটি পরস্পরবিরোধী রেখা যখন এক
মাত্রিক থেকে বহু মাত্রিকের দিকে যায় তখনই সম্ভবত বিপ্লব এবং স্বাধীনতা এই শব্দ
দুটি জন্ম নেয় বহুদিনের পরাধীনতার আবর্তের প্রথমে একটু একটু করে ক্ষয়ে তারপর সেই
ক্ষয়ে যাওয়া অস্তিত্বের পুনরায় জমাট বাঁধা ক্ষোভের গর্ভে। আমরা
আমাদের অর্থসামাজিক পরিস্থিতির বিপক্ষে রুখে দাঁড়াই। আমরা রুখে দাঁড়াই আমাদের
পরবর্তী প্রজন্মের মুখে দুটি সন্মানের ভাত আর গৌরবের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য।
যেখানে স্বাধীনতা কখনও সামাজিক, কখনও রাজনৈতিক কখনও বা আর্থিক। বিপ্লব পরম্পরার
দিকে তাকিয়ে দেখি তো আমাদের সামনে ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব থেকে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন হয়ে নকশালবাড়ি
পর্যন্ত একটি ঐতিহ্য আমাদের মাথা নত করতে শেখায়। কিন্তু কেন, কেন বার বার বিপ্লব।
জীবন কি এতটাই রুঢ়, নেতিবাচক, শিল্প হীন। তবে স্বাধীনতা কোথায়, সে কি নিজের দেশ
নিজেদের মানুষের হাতে তুলে দিয়ে সার্বিক উন্নতির দিকে এগিয়ে যায়না।
১৯৪৭ এর ১৫ ই আগস্ট স্বাধীনতা কি
শুধু মাত্র একটি বাঁশের উপর পত পত করে উড়তে থাকা পতাকা।
স্বাধীনতা মানে কি ঘণ্টার পর
ঘণ্টা শান্তির ঘুম, উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়ানো।
স্বাধীনতা মানে কি বিপ্লবের
পরিসমাপ্তি।
অনেক বছর আগে যখন ছোট ছিলাম তখনও
ঘরে টি.ভি. আসেনি। পাড়ায় এক বা দু’জনের বাড়িতে তখন সার্ডার দেওয়া টি.ভি. চলে। আমরা
দূর থেকে দেখতাম। সালটা ১৯৮৫ তখন সরকারি ভাবে একটি প্রচার বার বার দেওয়া হত, আমার
এখনও মনে পড়ে, কতগুলো স্টিল ছবি দেখাতো আর পিছন থেকে হিন্দিতে বলতো। প্রথমেই
দেখাতো কিছু মানুষ রাস্তার বেঞ্চির উপর চুপচাপ বসে আছে, কিছু মানুষ দিনের বেলায়
ঘুমাচ্ছে, আর পিছন থেকে বলতো স্বাধীনতা মানে চুপচাপ বসে থাকা নয়। স্বাধীনতা মানে
ইচ্ছা মতো ঘুমানো নয়। স্বাধীনতা মানে একটা সুযোগ, কাজ করার সুযোগ, দেশকে এগিয়ে
নিয়ে যাওয়ার সুযোগ।
আমরা বাস্তবিক কতটা পারি বা করি
সে সুযোগের ব্যবহার করতে।
তবে ৪৭ আমাদের কতটা স্বাধীন
করেছে।
আমরা কি সবাই পায়ে পা রেখে এগিয়ে
যেতে পেরেছি।
দেশ তো কখনও বলেনি তোমাকে কখন ঘুম
থেকে উঠতে হবে, তোমাকে কি খেতে হবে, কি খেতে পারবে না, তোমাকে কি পোশাক পরতে হবে,
কোন ধর্মে বিশ্বাস রাখতে হবে। তুমি ভারতের যেকোনো যায়গায় যেতে পার, যেকোনো
প্রফেশনে থাকতে পার। যেকোনো মানুষকে বিয়ে করতে পার। তবে বিপ্লব কি তার পরম্পরা
থেকে সরে যাচ্ছে। তার কি মৃত্যু হচ্ছে আমাদের ৪৭ এ।
আসলে আমরা সেই পরস্পর বিরোধী
রেখার উপর দাঁড়িয়ে আছি যেখানে আমার দেশ আমাকে অধিকার দিচ্ছে আর সেই অধিকার থেকেই
জন্ম হচ্ছে শোষণের।
আমি সেদিনই পরাধীন হব যেদিন
রাষ্ট্র আমাকে বলবে তুমি এটা করতে পারবেনা, ও কথা বলতে পারবে না। ও লেখা লিখতে
পারবেনা। আর তুমি বিপ্লব করতে পারবেনা।
রবীন্দ্রনাথ যেখানে লিখছেন ‘আগাগোড়া
সকল মানুষকে সমান ভাবে জাগিয়ে তোলা’ সেখানে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ। আমাকে বার বার করে এগিয়ে নিয়ে যায় কখনও ইংরেজ শাসক, কখনও দেশিও
পুঁজিবাদের বিপক্ষে।
আমি আমার স্বাধীনতার জন্য জেগে
উঠি ভিতরে ভিতরে।
........................................................................
দেবনাথ সুকান্ত, সি
২/১৪
বিদ্যাসাগর পল্লী, দুর্গাপুর ১৩
No comments:
Post a Comment