Tuesday, August 14, 2018

স্বরূপা রায়



অণুগল্প -

স্বাধীনতা

আজ স্বাধীনতা দিবস। আমাদের সংসারের ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের আজ স্বাধীন একটা দিন কাটবে। রোজকার মতো একঘেয়েমি থাকবেনা আজকের জীবনে।
আজ বাড়ির বড় কর্তা অর্থাৎ সুধীরবাবুর ব্যবসা বন্ধ। রোজ ভোরবেলা উঠে স্নান-খাওয়া সেড়ে নিজের দোকানে দৌড়ানো সুধীরবাবু আজ বেলা করে ঘুম থেকে উঠবেন। সময়মাফিক খাওয়া-দাওয়া করা লোকটা আজ সবকিছুতে আলসেমি করবে।
বাড়ির একমাত্র ছেলে অর্থাৎ সুনিলের আজ টিকিও পাওয়া যাবেনা। রোজ সকালে উঠে নাকেমুখে খেয়ে দৌড়ানো ছেলেটাও আজ সকালে দেড়িতে উঠে বেড়িয়ে যাবে আড্ডা মারতে। কখন ফিরবে, কখন স্নান-খাওয়া করবে তার ঠিক নেই।
বাড়ির একমাত্র মেয়ে সুমিরও আজ কলেজ বন্ধ। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে খেয়েদেয়েই কলেজ যাওয়া মেয়েটা আজ বেড়িয়ে যাবে সেজেগুজে বান্ধবীদের সাথে সিনেমা দেখতে।
বাড়ির একমাত্র ছেলের বউ দেবিকারও আজ অফিস ছুটি। ঘরের আজ কোনোদিনই কিছু না করলেও অফিসের কাজটা ভালোই সামলায়। আজ তো সেটাও ছুটি।
এইদিকে দেবিকার ছেলের সুভানেরও আজ স্কুল বন্ধ। স্কুলে ভোরবেলা তাও যেতে হবে প্রোগ্রামের জন্য। দেবিকাই ছেলেকে ভোরবেলা স্কুলে নিয়ে যাবে। বাড়ি ফিরে মা-বেটা আরেকটা ঘুম দেবে।
তারপর দেবিকা ঘুম থেকে উঠে ছেলেকে খাইয়ে, তৈরি করে নিজেও খেয়ে তৈরি হয়ে বেড়িয়ে যাবে পুরোনো প্ল্যানকে সফল করতে। প্ল্যান হলো সুভানের সব স্কুলের বন্ধু-বান্ধবী আর তাদের মায়েরা মিলে ঘুরতে যাওয়া।
কিন্তু এইসবের মাঝে একটা মানুষেরই কোনো স্বাধীনতা দিবস বলে কিচ্ছু নেই। মানুষটা আজও রোজকার মতোই সকালে উঠে ঘর পরিষ্কার করা, পূজা দেওয়া, রান্না করা, সবার মুখে খাওয়ার তুলে দেওয়ার কাজটা করবেই। সেই মানুষটা হলো বাড়ির বড় গিন্নি তিলোত্তমাদেবী। ইনি সুধীরবাবুর স্ত্রী, সুনিল আর সুমির মা, দেবিকার শাশুড়ি আর সুভানের ঠাম্মা। এই মানুষটা বছরের ৩৬৪ দিনের মতোই আজও একাই কাটাবেন। আজও তার অধিকার নেই স্বাধীনভাবে শ্বাস নেওয়ার।
--------------------------------------------
নামঃ স্বরূপা রায়
ঠিকানাঃ উত্তর ভারতনগর, শিলিগুড়ি

No comments:

Post a Comment