মুক্তগদ্য -
স্বাধীনতা
স্বাধীনতা বলতে গেলেই মনে পড়ে আমার সেই সোহাগী মেয়েবেলা,ফুলছাপ ফ্রক, রঙিন রিবনের সতর্ক দেখভালে টিপটপ দু'বেনী ,হাতে রিনরিনে কাঁচের চুড়ি । তারসাথে বৃষ্টিভেজা শ্যাওলাসবুজ উঠানের সোঁদা গন্ধ, পা ভেজানো তিরতিরে ছোট্ট নদী, জলছাপ সবুজ ক্ষেত,আহা, সেই পুটুস ফুলের মত নরম,কচুপাতায় জমে থাকা জলের মত উজ্জ্বল, কপালের টিপের সাথে আটকে থাকা মায়ের চুমুর মত আদরের স্বাধীনতা। সেখানে কোন গ্রীষ্মবিলাসী আব্রু ছিল না, বর্ষামুখী বিষণ্ণতা ছিল না, ছিল না শরতের পিছুটান বা হেমন্তের ধূমল রহস্য, এনকি পায়েসগন্ধী শীতের আলসেমি বা বসন্তের কোকিলের ঘরছাড়া ডাকও ছিলনা।আটপৌরে সংসারে সম্বৎসরের অতিথি হয়ে, মায়ের জলবিলাসী শাঁখাপলাটির মুদৃ সোহাগী পরশখানির মত আলতো করে ছুঁয়ে থাকত স্বাধীনতা।
তারপর, রাজপথের হাতছানিতে চিরচেনা আলপথটির পাশে আগোছালো ফেলে আসি সেই ধোঁয়াওঠা ভাতের থালা, মায়ের হাতের পৌষপার্বনের পাটিসাপটা কমলাভোগ ,বিনিঠাকুমার হরির লুঠের ভাঙা বাতাসা, কলাপাতায় মোড়া দুপুরের টকঝাল আচার, ঝুলনমেলার নাগরদোলা, গরমের ছুটির আমআঁটির ভেঁপু, এদোঁ ঝিলের ভাঙা রোয়াকের এলোমেলো বন্ধুলী প্রলাপ। পথের বাঁকে ইতিউতি লুকিয়ে থাকে শতাব্দীপ্রাচীন বুড়োবটের ঝুরিদোল খেলা, পদ্মবিলের অপার শীতলতা, ঘোষবাড়ির জন্মষ্টমী উৎসব আর সেই হলুদ সর্ষেক্ষেতে উড়ে বেড়নো প্রজাপতি আনন্দ। সেইসব মসৃণ দিনের ফুরফুরে রোজনামচা থেকে কি অনায়াসেই না নিজেকে গুছিয়ে নিই শহুরে স্থাবরজঙ্গমের অবধারিত প্রাত্যহিকতায়।নিজের হাতে গিঁটের পর গিঁট খুলে মেলে দিই মাদুরবোনা মেয়েলী অভিমান।নিরুচ্চারে অজস্র স্বপ্নের ভাঁজে সন্তর্পনে গুছিয়ে রাখি যত বিষণ্ণ সঙ্গীতের রেশ।নিরসক্ত চোখে দেখি শুকিয়ে যাচ্ছে একের পর এক সম্পর্কের আরোহীমুল, সমস্ত নান্দনিক চাওয়া-পাওয়াকে মলাটবন্দী করে প্রচ্ছদে সেজে উঠছে যোনিফুল, স্ফীতোদর গর্ভাশয় আর অঙ্কুরোদ্গমের বর্ণময় কোলাজ। সাবালিকার সংসারমঞ্চে একের পর এক অবতার মুখোশে নিত্যনতুন নামভুমিকায় অভিনয় ।
তারপর, ক্যালেন্ডারের ৩৬৫ দিনের রোজনামচার মাঝে কোনও একটা বিশেষ দিনে থমকে দাঁড়ায় আমার সময়বিলাসী অবসর। জলফড়িং গতির সফরনামায় ১৫ই আগস্ট অবেশেষে এক লালরঙে ছোপানো দিন, কিছু লুকিয়ে পড়া ইতিহাস অথবা গল্প আর কবিতার করুণ অকরুণ অক্ষরমালাকে সঙ্গী করে এক কখনো শেষ না হওয়া গল্পের উপক্রমনিকা ছাড়িয়ে মাঝ অধ্যায়ে ঢুকে পড়ে। শরীরে মেঠোগন্ধ জড়িয়ে একফালি ঝকঝকে রোদে শ্রাবণী হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দেয় তিনরঙা এক টুকরো কাপড়। অহেতুক আনন্দে হাওয়ার হিল্লোলে নাচন জাগে, তবু সুতোকাটা ঘুড়ির মত আকাশ ছুঁতে পারেনা।দুরে কোথাও গুড়োগুড়ো রোদ্দুর পালকে মেখে উড়ে যায় সোনালী ডানার আত্মপ্রত্যয়ী চিল।আমার স্বাধীনতা বাক্সবন্দী তেরঙ্গা থেকে এক আশ্চর্য অগাধ বিশ্বাসে উড়ন্ত চিলের ডানায় অকাতরে ঘুমিয়ে পড়ে।
-------------------------------------------
Dr. Mahuya Dasgupta
Adak, Dr.M.Dasgupta Adak, B-332 Samdariya City, (Behind Parth Health Club), Madhabnagar, Katni, Madhyapradesh 483501
Khub Bhalo lekha ta.
ReplyDeleteantorik dhonyobad
Delete