বড়্গল্প -
সুখের খোঁজে
২০শে মার্চ, ২০২০, কলকাতা
-“তুমি তাহলে কাল যাবে?”
অফিস থেকে ফিরে ল্যাপটপে একটা কাজ করছিল
কৌশিক। তানিয়ার প্রশ্নে একটু বিরক্ত হল। প্রশ্নটা আগেও ওকে করেছে তানিয়া। কৌশিক
জানিয়েছে যে ও যাবে, তাও আবার জিজ্ঞাসা করার পেছনে কী কারণ জানে
না কৌশিক।
-“হ্যাঁ যাবো।” বিরক্তি লুকিয়ে অল্প কথায় উত্তর দিল কৌশিক।
-“এতদিন বাদে দেশের বাড়ীতে যাওয়ার কী হল হঠাৎ?”
তানিয়ার এই কথাতে কৌশিক বুঝলো কথা বাড়াতে
চাইছে তানিয়া।
-“হঠাৎ কেন হবে? সেজকাকীর কাজ আছে তো কাল। বাড়ীর বড় ছেলে
হিসেবে আমার যাওয়াটা দরকার।”
-“না এর আগে কখনো দরকার মনে করনি কিনা!
সেজকাকুর কাজের সময় এই সেজকাকীই তো কত করে যেতে বলেছিলেন! তখন তো যাওনি?”
কৌশিক দেখেছে এই যে আগের কোনো ঘটনার সাথে
লিঙ্ক করার ব্যাপারটা তানিয়া খুব ভালো পারে। কোনো একটা কাজ আগে হয়ত করেনি আর এখন
সেই একই ধরনের কাজ কেন করতে চাইছে সেই এক্সপ্ল্যানেশন চাওয়ার জন্য মোক্ষম হাতিয়ার
এটা।
-“সেইসময় অফিসের কাজে বাইরে গিয়ে আটকে গেছিলাম
তুমি জানো তো। যেতে না পারার জন্য খুব খারাপ লেগেছিল যদিও। তুমি গেলেও তাও চলত!
বুয়া আর ঋষি একটু জোর পেত। বুয়া তো তোমাকে খুব ভালোবাসে।” হাল্কা করে অভিযোগের দিকটা তানিয়ার দিকে
ঘুরিয়ে দিতে চাইলো কৌশিক।
-“ওসব ভালোবাসা আমার জানা আছে। বড়লোক দাদা, বৌদির থেকে বড়সড় দাঁও মারার ফিকির। দেখা হলেই
যে বাড়ীতে খোঁটা দিয়ে কথা শুরু হয় সেখানে আমি মরে গেলেও যাবো না।” কৌশিক জানে তানিয়ার আপত্তির কারণ। ব্যাপারটা
খুব সেনসিটিভও বটে। দেশের বাড়ীতে বেশ কয়েকবার আপত্তিজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে
হয়েছে তানিয়াকে। খুব অপমানিত বোধ করে তানিয়া। শহুরে মেয়ে তানিয়া। গ্রাম্য পরিবেশ, কথাবার্তার সাথে মানিয়ে চলা ওর পক্ষে মুশকিল।
গ্রাম্য লোকেদের কোন কথা সহজভাবে বলা আর কোন কথার পেছনে প্যাঁচ আছে সেটা বুঝতে
পারতো না। একটা সময়ের পরে তানিয়ার মনে হত সব কথাতেই ওকে ছোট করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
-“আমি জানি সোনা। তোমার কাছে আমাদের বাড়ীর
স্মৃতি মোটেই সুখের না। তোমাকে তাই একবারও যেতে বলিনি আমি। কিন্তু আমিও যদি না যাই
সেটা ঠিক হবে না। যখন সুযোগ আছে এবারে।” তানিয়ার কাছে এসে ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরল কৌশিক। ওর যাওয়ার
ব্যাপারটা তানিয়া একদমই পছন্দ করছে না। তানিয়ার দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে বিচার করলে হয়ত
ঠিকই। কৌশিককেও আত্মীয়স্বজনের কাছে অপ্রীতিকর কিছু কথা কাল শুনতে হতে পারে। তবু
কৌশিক কাল যাবে। কোনো কোনো সময় জীবনে কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। বাবা-মা
মারা যাওয়ার পরে দেশের বাড়ীর সাথে যোগসূত্র পুরোটাই ছিন্ন এখন। আগে দেশের বাড়ীর
থেকে কলকাতায় কেউ এলে এটা ওটা দিয়ে যেত। এছাড়া বাৎসরিক খান দুয়েক চিঠিতে যোগাযোগ
হত, নববর্ষে আর বিজয়া দশমীতে। ফোনের ব্যাপক
ব্যবহার চালু হতে চিঠি লেখাও বন্ধ হয়ে গেল। ফোনে খবরাখবর নেওয়া চলত। তবে অনেকদিন
হয়ে গেল দুপক্ষের থেকেই ফোন করা বন্ধ প্রায়। কোনো সুখবর দেওয়ার থাকলেও না হয় ফোন
করে বলা যায়। আর কাজের ক্ষেত্র ছাড়া কৌশিকের আর কোনো সুখবর দেওয়ার অবকাশ হয়ে ওঠেনি
এই কবছরে।
-“কিছু বলার নেই আমার। কে কত আত্মার আত্মীয়
তুমি কবে বুঝবে জানি না! কাল ফিরতে বেশী দেরী করো না। রাতের আগেই ফিরো। পরশু তো
আবার জনতা কার্ফিউ।” তানিয়ার থেকে সরে এসে দীর্ঘশ্বাস গোপন করল
কৌশিক। তানিয়া সুন্দরী, শিক্ষিতা, বুদ্ধিমতী। কৌশিকের জীবন পরিপূর্ণ তানিয়াকে পেয়ে। শুধু
তানিয়াকে পূর্ণতা দিলেন না ভগবান। মা হওয়ার সৌভাগ্য থেকে ওকে বঞ্চিতই রেখেছেন। বেশ
কয়েকবার মিস ক্যারেজ হওয়ার পর এখন আশাই ছেড়ে দিয়েছে তানিয়া। কৃত্রিম উপায়ে আরো
কিছুদিন চেষ্টা চালিয়ে যেতে চেয়েছিল কৌশিক। কিন্তু তানিয়া আর পারছে না।
-“হ্যাঁ, কাজকর্ম মিটিয়ে ওখান থেকে ছটার ট্রেনটা ধরতে পারবো আশা
করছি। তাহলে নটার আশেপাশে পৌঁছে যাবো।”
-“ট্রেনে যাবে কেন? গাড়ী নিয়ে যাও। এতটা রাস্তা, পাবলিক ট্র্যান্সপোর্ট অ্যাভয়েড করতে পারলেই
ভালো।”
-“সেইজন্য তো গাড়ীটা রেখে যাচ্ছি। তুমি শপিং
করতে বা বাবার কাছে গেলে গাড়ীতে যেও। আমার কোনো অসুবিধা হবে না। বরং ট্রেনে
যাতায়াতে সময় কম লাগে।”
২১শে মার্চ, ২০২০
বেশ সকালে বাড়ী থেকে বেরিয়েছে কৌশিক। শিয়ালদা অব্ধি গাড়ীতে
ছেড়ে দিয়েছে তানিয়া। টিকিট কেটে প্ল্যাটফর্মে এগিয়ে যাওয়ার আগে তানিয়াকে হাগ
করেছিল কৌশিক। ছাড়িয়ে নেওয়ার সময় দেখল তানিয়ার মুখে হাসি।
-“সেও আসবে নিশ্চয় কাজে? তোমাদের এত প্রিয়জন যখন!” তানিয়া কথাটাতে তোমাদের বললেও কৌশিক বুঝলো
খোঁচাটা ওকেই দিয়েছে। কিছুদিন আগে বুয়ার ফেসবুক ওয়ালের একটা গ্রুপ ছবিতে শর্বাকে
দেখা গিয়েছিল। ছবিটা একটু একটু বেশী সময় নিয়ে দেখছিল কৌশিক। তানিয়া দেখে রীতিমত
অশান্তি বাঁধিয়েছিল।
-“সেটা আমি কী করে জানবো?”
-“হুম, তাহলে দেশের বাড়ীতে যাওয়ার এত আগ্রহের কারণটা বোঝা গেল।
একটা পুরো দিন ভালোবাসার লোকের সাথে কাটানোর সৌভাগ্য তো আর চট করে আসে না!” কৌশিক প্রমাদ গুনছিল। এখন স্টেশনে যদি তানিয়া
আবার শুরু করে। ঠিক সেই মুহূর্তে ট্রেনের ঘোষণা বাঁচিয়ে দিল অনিভপ্রেত পরিস্থিতির
হাত থেকে।
সকালের ট্রেন, তায় কৌশিকের গন্তব্য ভীড়ের উলটো গতিপথে। ফাঁকা ট্রেন।
জানালার ধারের আসনে বেশ আরাম করে বসতেই স্মৃতির ঘেরাটোপে বন্দী হয়ে গেল কৌশিক।
ছোটবেলায় দেশের বাড়ী থেকে কলকাতায় মামাবাড়ী, মাসীর বাড়ীতে আসার সময় জানালার ধারের আসনে বসার জন্য বায়না
করত সে। জানালা দিয়ে দিগন্ত বিস্তৃত ধানের ক্ষেত দেখত, ব্রিজের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় নীচে নদীর দিকে
অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতো। ভয়ও পেত। যদি ব্রিজ ভেঙে ট্রেন নীচে পড়ে যায়। সেই কথা
শুনে মায়ের কী হাসি! বাবাকে বলছেন, “শোনো তোমার ছেলের কথা।” এদিকে কৌশিক তো কিছুতেই বলতে দেবে না। বাবা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে
আছে হাওয়া খাবে বলে। উঁচু গলায় মা কথাটা বললে ট্রেন শুদ্ধ লোক জেনে যাবে। সরল মনে
ব্রিজ ভেঙে ট্রেন পড়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তার কথাটা মাকে বলে ফেলেছিল। এখন মায়ের হাসি
দেখে মনে হচ্ছে কথাটা খুব বোকার মত বলা হয়েছে।
-“হাসির কিছু নেই বৌদি। খোকার কথাটা ভাবার মতই।
এইসব ব্রিজের আয়ু কত কেউ জানে না।” মায়ের পাশে বসা এক ভদ্রলোক বলে উঠেছিলেন। কৌশিকের মনে আছে
লোকটার কথা শুনে বেশ একটু গর্বভাব জেগেছিল ওর মনে।
ট্রেনে হকার উঠছে একে একে। কৌশিকের স্মৃতিও তাজা হচ্ছে।
ছোটবেলায় বহুবার দেখেছে ট্রেনে সন্দেশ বিক্রি হতে। সন্দেশ ভর্তি ডেকচি নিয়ে নিয়ে
প্রথমে একজন হকার উঠতো ট্রেনে। সে প্যাসেঞ্জারদের তার সন্দেশের দাম আর গুণাবলী
সম্পর্কে বলতে না বলতেই আরেকজন হকার এসে উঠতো সেই একই কামড়াতে। এরও বক্তব্য স্বাদে, গুনে তার সন্দেশই এক নম্বর। এবারে শুরু হত
খদ্দের ধরার প্রতিযোগিতা। দুজনে একে অপরকে টেক্কা দিতে প্রথমে হাঁকা দামের অর্ধেক
দামে অব্ধি সন্দেশ দিয়ে দিত ট্রেনের যাত্রীদেরকে। ব্যাপারটা বেশ মজার ছিল। একই
ঘটনা রোজ ঘটলেও যাত্রীরা বোর হত না। বরং একজন হকার উঠলে আরেকজনের জন্য অপেক্ষা করত
সকলে। টাকায় চারটে সন্দেশের জায়গায় আটটা সন্দেশ পাওয়ার লোভ সামলাতে পারেনি কৌশিক।
একদিন কিনে নিয়ে খেতে গিয়ে দেখে বেশীরভাগ সন্দেশই বাসি। সারাদিনে বিক্রি না হওয়া
সন্দেশ কমদামে বেচে দেওয়ার এটা হকারদের একটা টেকনিক ছিল। ট্রেনের যাত্রীরাও বুঝতো
তবু তারা কিনতো। পরিশ্রমী মিষ্টি বিক্রেতাদের পাশে দাঁড়ানোর মত মন ছিল সেইসময়কার মানুষদের!
চার ভাইয়ের মধ্যে কৌশিকের বাবা হলেন সবার বড়। মা বাড়ীর বড়বৌ
হলেও সংসারে বেশী সময় দিতে পারতেন না। স্থানীয় মেয়েদের স্কুলের অ্যাসিস্ট্যান্ট
হেড-মিস্ট্রেস ছিলেন। মেজভাইয়ের বৌও চাকরি করতেন, সরকারি হাসপাতালে নার্স ছিলেন। বাবার পরের
ভাইকে কৌশিক বড়কাকু ডাকলেও সেজ আর ছোটভাইকে সেজকাকু আর ছোটকাকু ডাকতো। এখন কেউই
বেঁচে নেই। চারভাইই মারা গেছেন, প্রথমে কৌশিকের বাবা তারপরে বড়কাকু, ছোটকাকু এবং সবশেষে সেজকাকু। বাবার এক দিদি
আর এক বোন বেঁচে আছেন এখনো।
বুয়া সেজকাকার মেয়ে। শর্বা বুয়ার সাথে এক ক্লাসে পড়ত, মায়ের স্কুলে। ছোটবেলা থেকেই কৌশিকদের বাড়ীতে
অবাধ যাতায়াত শর্বার। প্রথমদিকে কৌশিকের সেরকমভাবে চোখেই পড়েনি। কৈশোর পার করে
যৌবনে পদার্পনের দিনগুলোয় কৌশিকের দুনিয়া জুড়ে ছিল ওর স্বপ্ন। গ্রামের চৌহদ্দি
থেকে বেরিয়ে বৃহত্তর দুনিয়ায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন। তাই পড়াশোনায় খুবই মন
ছিল কৌশিকের, মেধাও ছিল। খেলাধুলোও করত, বিশেষ করে সাঁতার খুবই প্রিয় ছিল কৌশিকের।
পুকুরে বা নদীতে নামলেই হল। জল তোলপাড় করে ফেলত কৌশিক সাথে ওর পাড়ার এক বন্ধু
পার্থ। সাঁতারে দুজনেই এক্সপার্ট, টেক্কা দিত একে অপরকে। বাজি ধরে ভরা বর্ষাতে নদী পারাপার
করত দুজনে।
ভরা নদীতে পার্থর সাথে ওর সাঁতারের বাজি দেখতে এলাকাতে ভীড়
জমে যেত। কখনো কৌশিক তো কখনো পার্থ জিততো। তবে প্রচুর ঝুঁকি নিত ওরা। লোকে সেই
ঝুঁকি দেখতেই ভালোবাসতো। তবে চিন্তাতেও থাকতো কেউ। কৌশিকের মা, কাকীমারা ছাড়াও আরো একজন ছিল। সে কোনোদিন
সাঁতারের ওখানে থাকতো না। কৌশিক বুয়ার কাছে শুনেছিল শর্বার কোনোদিন ওর সাঁতারের
কেরামতি দেখতে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ ছিল না।
-“কেন? দেখতে ভালো লাগে না?” পরে নিবিড় সম্পর্কের দিনে কৌশিক একদিন জিজ্ঞাসা করেছিল
শর্বাকে।
-“ভালো লাগবে কী! ভয় হয় না? যদি কিছু হয়ে যায়? কতজনে তলিয়ে গেছে জানো ওই জলে!” শর্বার মুখে ভয়ের অভিব্যক্তি দেখে মজা
পেয়েছিল কৌশিক। এমনভাবে বলেছিল কৌশিক যেন এখনই ডুবে যাচ্ছে জলে।
-“এ বাবা ভীতু কোথাকার। সবাই তো দেখতে যায় আর
তুই কী করিস তখন?”
-“ওই সময়টায় আমি বুড়ো বাবার থানে হত্যে দিয়ে
পড়ে থাকি। বাবাকে ডাকি মনেপ্রাণে। কোনো ক্ষতি হতে দিও না বাবা।”
-“কী পাগল রে তুই!”
-“তোমার জন্য রন্টুদা।”
ট্রেনটা এক বড় জংশনে এসে দাঁড়িয়েছে। পুরোনো দিনের স্মৃতিতে
মশগুল কৌশিকের সম্বিৎ ফিরল চা-ওলার ডাকে। এখানে ট্রেন কিছুক্ষণ দাঁড়াবে জানে
কৌশিক। চা তেষ্টা পাচ্ছিল, জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বড় ভাঁড়ে চা নিল।
জংশন স্টেশনটা ভালো করে দেখছিল কৌশিক। কিছু পরিবর্তন হলেও মোটামুটি একইরকম আছে
এখনো। ওর গন্তব্য স্টেশন এখান থেকে আর আধঘন্টার রাস্তা।
ট্রেনের হকারদের লক্ষ্য করছিল কৌশিক। নানারকম পসরা সাজিয়ে
বেচাকেনা চলছে। কিন্তু সেই সন্দেশ ফিরি করতে কাউকে দেখলো না। এখন আর কেউ করে না
বোধয়।
-“ম্যাজিক দেখবেন?”
জংশন ছাড়ার জন্য ট্রেন দুলে উঠতেই কামড়ায়
একজন হকার ঢুকলো। কাঁধে একটা ঝোলা। এক হাতে কিছু বই আর আর এক হাত মুঠো করে মুখের
কাছে নিয়ে এসে কথা বলছে। দাড়ি গোঁফে ভর্তি মুখ আর শরীর জুড়ে দারিদ্রের ছাপ অথচ
চোখটা বেশ উজ্জ্বল, হাল্কা হাসির ছোঁয়া রয়েছে তাতে। লোকটাকে এত
মনোযোগ দেওয়ার কিছু ছিল না কৌশিকের। কিন্তু কামড়াতে ঢোকার পরে লোকটার ওই কথা শুনে
ওর দিকে নজর গিয়েছিল কৌশিক। লোকটা হেসে আবার জিজ্ঞাসা করল,
“দেখবেন ম্যাজিক?”
লোকটা ট্রেনের সবার উদ্দেশ্যে কথাটা বলছে নাকি শুধু ওকে।
কৌশিক বুঝতে পারছিল না। হকার যখন সবাইয়ের উদ্দেশ্যেই কথাটা ছুঁড়েছে নিশ্চয়। তাহলে
ওর দিকেই তাকিয়ে আছে কেন? নাকি কৌশিকের দেখার ভুল। ব্যাপারটা নিয়ে কিছু
ভাবার আগেই কৌশিকের কানে ভেসে এল, “রন্টুদা না?” অদ্ভুত সুরেলা এই কন্ঠস্বরের উৎসের দিকে তাকিয়ে থমকে গেল
কৌশিক। শর্বা! এত বছর বাদেও ওকে দেখে ঠিক চিনতে পেরেছে! কোনো কারণ নেই তবু শর্বাকে
দেখে কৌশিকের হৃদয়ে সেই পুরোনো দিনের মত দামামা বাজছে যেন। তানিয়া ঠিকই অনুমান
করেছিল। মূলত শর্বার জন্যেই আজ দেশের বাড়ীতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৌশিক।
প্রেমে ভরপুর সেই দিনগুলোতে হঠাতই ওর জীবন থেকে সরে গিয়েছিল শর্বা। কষ্ট পেয়েছিল
কৌশিক, খুব কষ্ট। বারবার শর্বার কাছে ছুটে গেছে
জানতে চেয়ে। কী এমন হল যে যার দুনিয়াই ছিল কৌশিককে ঘিরে, সেই শর্বা আর ওর সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় না।
কিন্তু কোনো সদুত্তর পায়নি সে। পুরো ভেঙে পড়েছিল। ক্রমে নিজেকে সামলে নিয়ে
কেরিয়ারে মন দেয়। পড়শোনা, বড় চাকরি, বিয়ে আর এখন ব্যবসা। ধাপে ধাপে নিজেকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে
গেছে কৌশিক। শুনেছিল শর্বা নিজের পছন্দের কোনো পাত্রকে বিয়ে করে চলে গেছে ওই জায়গা
ছেড়ে। সময়ের সাথে সাথে স্মৃতি থেকে শর্বার অস্তিত্ব একপ্রকার মুছেই গিয়েছিল।
কিন্তু সেইদিন বুয়ার সাথে ওই ছবিটাতে শর্বাকে দেখার পর থেকেই শর্বার সাথে জীবনে
অন্তত একবার সামনাসামনি হওয়ার ইচ্ছেটা প্রবল হয় কৌশিকের।
সেই ইচ্ছেই পূরণ হওয়ার সময় মুখ থেকে কথা সরছে না কৌশিকের।
শর্বাকে একদম সামনে থেকে দেখে কৌশিক যাকে বলে স্পেলবাউণ্ড হয়ে গেছে। তাকিয়েই আছে
শর্বার দিকে, অন্য কোনোদিকে কোনো খেয়াল নেই। নাহলে ওর নজরে
আসত ম্যাজিকের বই হাতে সেই হকারটাও ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
২১শে মার্চ, ২০২০, বিকেল সাড়ে পাঁচটা
শ্রাদ্ধের কাজকর্ম সব হয়ে গিয়ে খাওয়াদাওয়াও মিটেছে এইমাত্র।
কৌশিকদের বড় পরিবার। আত্মীয়স্বজন তাই বেশ ভালোই এসেছে। দুই পিসি, তাঁদের বাড়ীর সবাই এসেছেন। সেজকাকার ছোট ছেলে
ঋষি বেশ নিষ্ঠার সাথেই কাজ করেছে। কৌশিক শুরু থেকেই সাথে ছিল। কাকীমা মারা যাওয়ার
পর কলকাতায় থাকলেও এই কদিন অশৌচের যাবতীয় নয়ম পালন করেছে সেও। কৌশিকদের জেনারেশনে
ওদের বংশের দুই ছেলেই বর্তমান, ও আর ঋষি। পিসিরা আক্ষেপ করছিল, বংশের ছেলেদের আয়ু কম। কৌশিকের বাবা, কাকারা কম বয়সেই চলে গেছেন, পঞ্চাশের আশেপাশেই সব। মেজকাকার ছেলেটা মাত্র
ষোল বছর বয়সে চলে গেল রেললাইনে কাটা পড়ে। আর সেজকাকার বড়ছেলে বিয়ের দুবছরের মাথায়
জণ্ডিসে ভুগে শেষ।
-“নিয়মভঙ্গের কাজটা অব্ধি রয়ে যা রন্টু। এই তো
কালকের দিনটাই।” কথাটা বলতে গিয়ে বড়দি কৌশিকের দিকে তাকিয়েছিল
আশা নিয়ে। বাবার বড়দিদিকে রন্টু বড়পিসি না ডেকে বড়দিই ডাকে ছোট থেকেই।
-“না গো আজই ফিরে যাই। কাল আবার জনতা কার্ফু
আছে, ওর মধ্যে ফেরা যাবে কিনা ঠিক নেই।”
-“না ফিরতে পারলে থেকে যাবি রাতে। তোরই তো বাড়ী
এটা। কাল রাতে থেকে পরশু সকালে চলে যাবি না হয়।” বুয়া সহজ সমাধান বাতলে দিল।
ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠার দিনগুলোর অজস্র স্মৃতি বিজড়িত
নিজেদেরই বাড়ী। থাকার ইচ্ছে যে কৌশিকের হচ্ছিল না তা নয়। সকালে পাড়ায় ঢোকার সময়
চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়া কয়েকজনকে দেখে চিনতে পেরেছে কৌশিক। একসময় কত খেলেছে এদের
সাথে। ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডি কিছুই বাদ থাকতো না। বিল্টু আর শিবকে দেখে খুব খুশি
হয়েছে কৌশিক। টেন অব্ধি স্কুলে একই স্কুলে পড়েছে এই দুজনের সাথে।
রন্টু, বিল্টু, শিব আর পার্থ। ওদেরকে চারমূর্তি বলত পাড়ার বড়রা। কৌশিকের মা
মজা করে বলতেন, “তোরা তো দেখছি
টেনিদার গল্পের চার মূর্তিমানের মত। সব জায়গাতে একসাথে থাকিস। দুষ্টুমিতেও কোনো
জুড়ি নেই। তোদের মধ্যে টেনিদা কোন জন?”
এই প্রশ্নে একমাত্র পার্থ ছাড়া সবার চোখ ঘুরত ওর দিকে।
পার্থ বয়সে একটু বড় ছিল বাকিদের থেকে। পড়াশোনায় অষ্টরম্ভা পার্থ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে
পাশ করত। চেহারাতে বড়সড়, হাবেভাবেও তাই। চারজনের গ্রুপে পার্থ একটু
বেশী গুরুত্ব পেত বাকিদের থেকে, সেটা উপভোগই করত সে।
আজ পার্থর সাথেও দেখা হয়ে গেলে একেবারে সোনায় সোহাগা হত
কৌশিকের জন্য। মানুষ তো স্মৃতির সরণি বেয়ে এগিয়ে চলে সুখের খোঁজে। ছোটবেলার
বন্ধুদের মুখগুলো সেই সুখের সন্ধান দেয়।
ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় বাবা মারা যায় পার্থর। ওদের পাড়াতে
ভাড়া থাকতো পার্থরা। ফাইনাল পরীক্ষার পরে মা ভাড়া বাড়ী ছেড়ে দিয়ে ওকে নিয়ে চলে
যায়। পার্থ বলেছিল ওরা মামাবাড়ীতে চলে যাচ্ছে। এখন থেকে ওখানেই থাকবে। তবে
রেজাল্টের দিন স্কুলে আসবে। কিন্তু পার্থ পাশ করতে পারেনি সেবারে। পার্থ রেজাল্ট
নিতেও আসেনি। এরপরে পার্থর কোনো খবরই আর পাওয়া যায়নি।
ট্রেন ধরতে বাড়ী থেকে বেরোলো কৌশিক। ওর সাথে সাথে শর্বাকেও
বেরিয়ে আসতে দেখে কৌশিক অবাকই হল। সকালে দেখা হওয়ার পর ট্রেনে বাকি রাস্তাটা
স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়েছিল ওদের মধ্যে। শর্বা ওর শ্বশুরবাড়ীর স্টেশন থেকে ট্রেনে
উঠে যাচ্ছিল ওদের বাড়ীতেই। সেজকাকী শর্বাকে খুব ভালোবাসতেন। তাই কাকীর কাজে ও যাবে
সেটাই তো স্বাভাবিক। কথায় কথায় ওর রন্টুদার খুঁটিনাটি জেনে নিলেও নিজের ব্যাপারে
অল্পই জানিয়েছে। শর্বা একটা প্রাথমিক স্কুলে চাকরি করে, প্যারা টিচার। এক ছেলে, সে পড়াশোনায় ভালো। মাধ্যমিক দিয়েছে এবারে।
শর্বার ছেলেও আসবে সেজকাকীর কাজে, পরে। তবে শর্বার বর আসবে না। নিজের বরের ব্যাপারে সেরকম
কিছু বলেনি শর্বা। ওর বরের রোজগার ভালো না, সংসারে অভাব নিয়েই চলতে হয়। এটুকুই ব্যস।
বাড়ীতে ঢোকার পর থেকে একবারও কৌশিকের কাছে আসেনি শর্বা।
এমনকি ওর ছেলের সাথে পরিচয়ও করায়নি। কয়েকটা কমবয়সী ছেলে পুরো কাজটাতে খুব হেল্প
করেছে। কৌশিকের ভালো লেগেছে দেখে। কলকাতায় এরকম আন্তরিকতার ছোঁয়া কমই দেখা যায়
আজকাল। ওই ছেলেগুলোর মধ্যে একজন শর্বার ছেলে সেটা অনুমান করেছে কৌশিক, কিন্তু কোনটা বুঝতে পারেনি। ওদের কারো সাথে
শর্বাকে খুব একটা কথাও বলতে দেখল না তাই দুয়ে দুয়ে চার মেলানো হয়ে ওঠেনি আর।
-“বাড়ীতে ঢুকে যে আর চিনতেই পারলি না যে?”
একটু যে অভিমান হয়েছে সেটা গোপন করল না
কৌশিক।
-“ওই বাড়ীতে কথা বলতে চাইনি। এই তো চলে এলাম
তোমার সাথে কথা বলব বলেই।”
-“স্টেশন এসে গেলে তো আমি চলে যাবো। আর কথাই
হবে না।”
-“এখনও সময় আছে রন্টুদা। বলো আর কি জানতে চাও?”
-“তোর ছেলের সাথে আলাপ করালি না তো!”
-“ছেলে স্টেশনেই আছে, দেখা হবে। তবে শ্রাদ্ধ বাড়ীতে ও বুয়ার ছেলের
বন্ধু হিসেবে নিমন্ত্রিত ছিল। ও যে আমার ছেলে সেটা ওই বাড়ীর কেউ জানে না। আমিও তাই
ওখানে পরিচয় করাতে চাইনি।”
-“কী বলছিস! বুয়াও জানে না হতে পারে? তোরা এত বন্ধু ছিলিস!”
-“না গো, বুয়ার সাথে সেই সম্পর্কটা কবেই নষ্ট হয়ে গেছে। তোমাকে ছেড়ে
দিলাম বলে ও আমার সাথে কথাই বলত না অনেকদিন। ইদানীং বলছে। তবে আজকে বুয়া বা ঋষি
কেউ আমাকে আসতে বলেনি।”
-“তাহলে এলি যে?”
-“কাকীমার কাছে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি একসময়।
তাই দূরে থাকতে পারিনি, মারা যাওয়ার দিনও এসেছিলাম। আজ আসার অন্য
কারণও আছে অবশ্য। ভেবেছিলাম তুমি আসবে। তোমার সাথে দেখা হল, কথা হল। শুধু একটা কাজই বাকি আছে আর।”
-“কী?” স্খলিতস্বরে জানতে চাইলো কৌশিক। এই বাড়ীর সাথে শর্বার
সম্পর্ক এতটাই খারাপ হয়ে গেছে জানতোই না সে। শর্বার কত সুখ স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই
বাড়ীতে। ওকে কাকীমারা কত ভালোবাসতো দেখেছে কৌশিক। তবে ওর মার ছেলের বৌ হিসেবে
শর্বাকে পছন্দ ছিল না। কিন্তু সেজকাকীর খুব উৎসাহ ছিল ওদের সম্পর্কে। শর্বাকে বলেছিল,
“এ বাড়ীর বড়বৌ হয়ে আসবি তুই। আমি তোকে বরণ
করব।” অথচ সেজকাকীর কাজে আজ অনাহূতর মত শর্বাকে
আসতে হল এ বাড়ীতে। কৌশিককে জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল বলে। কেন সরিয়ে দিয়েছিলি
শর্বা? কেন আমায় এত কষ্ট দিলি আর নিজেও পেলি!
-“বাবাই এদিকে আয়। এই সেই রন্টুদা, যার কথা তোকে বলেছি।” শর্বার ডাকে একটা ষোল সতেরো বছরের ছেলে এগিয়ে
এল ওদের দিকে। স্টেশন কাছেই, প্ল্যাটফর্ম দেখা যাচ্ছে এখান থেকে। ছটার ট্রেনের ঘোষনাও হল
মাইকে। কিন্তু কৌশিক এগোতে পারছে না। ওর পা থেমে গেছে। কাকে দেখছে ওর সামনে! ওর মা
বেঁচে থাকলে বলতেন, “রন্টু, এ তোর বাপকেই তো দেখছি চোখের সামনে।”
শর্বার ছেলে বাবাইয়ের হাঁটা চলা, শরীর, স্বাস্থ্য অনেক কিছুতেই কৌশিকের বাবা তথা ওর সাথে মিল। তার
মানে! কৌশিকের মনে পড়ল অনেক বছর আগের এক বিজয়া দশমীর বিকেলের কথা। বাড়ীর সবাই
বিজয়া সারতে বড়দির বাড়ীতে গিয়েছিল, শুধু কৌশিক একা ছিল বাড়ীতে। শর্বা এসেছিল ওদের বাড়ী।
প্রেমের জোয়ারে ভেসে গেছিল দুজনে। বড়দির বাড়ী থেকে মা সেদিন ফিরে আসেন সবার আগে।
দরজাতে কড়া নাড়ার শব্দ পেয়ে বুদ্ধি করে কৌশিক পেছনের দরজা দিয়ে শর্বাকে বের করে
দিয়েছিল। ওরা দুজনেই নিশ্চিন্ত ছিল কেউ দেখতে পায়নি।
-“তোমার মা দেখে ফেলেছিলেন আমাকে। অনেকদিন
থেকেই উনি কিছু আঁচ করেছিলেন। সেদিনের পরে ওঁর বুঝতে কিছু বাকি রইল না।”
-“তারপরে? আমায় তো এসব কিছুই বলিসনি?”
-“উনি আমাকে তোমার জীবন থেকে দূরে চলে যেতে
বলেছিলেন। কাউকে কিছু না জানিয়েই। পুত্রবধূ হিসেবে গ্রাম্য মেয়ের থেকে শহুরে
আধুনিকা মেয়েই ছিল ওঁর পছন্দ।”
-“তুমি মেনে নিলে কেন?”
-“না মেনে নিলে তোমাকে আদৌ পেতাম কিনা জানি না, কিন্তু বাবাইকে হারাতে হত চিরকালের জন্য।”
-“কেন?”
-“মেজকাকীর নার্সিংহোমে তোমার মার নির্দেশে
আমার অ্যাবরশন করানোর ব্যবস্থা হয়ে গেছিল। আমিই জিদ ধরে বাচ্চাটা নষ্ট হতে দিইনি।
আমার সুখস্মৃতির এই নিদর্শনটাকে আমি বুক দিয়ে আগলে রেখেছি। আমার একান্ত অনুরোধে
শেষমেশ বাচ্চা রাখতে আপত্তি করেননি তোমার মা। তবে শর্ত ছিল তোমাকে কোনোদিন জানাতে
পারবো না।”
-“বাবাই...মানে ও তো আমারো...”
-“না, ও শুধুই আমার। তবে মনে হল তোমার কাছে ওর পরিচয়টা আর গোপন
রাখার কোনো দরকার নেই। যাদের কথা দিয়েছিলাম, তাঁদের কেউই তো বেঁচে নেই আজ। বাবাই প্রণাম করো এঁকে। আমি
বাবাইয়ের কাছে কিছুই লোকাইনি। ও এখন বড় হয়েছে, হয়ত বুঝবে আমাকে।”
চোখের সামনে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেখছে কৌশিক, যে ওর আত্মজ। ঝাপসা হয়ে আসছে ওর দুই চোখ।
ভেতরে আবেগের আগ্নেয়গিরি ফেটে উদ্গত লাভার মত বেরিয়ে আসতে চাইছে অপত্যপ্রেম। এরই
মধ্যে শুনলো শর্বা বলছে, “আমার বরকেও দেখেছো
আজ। ও ট্রেনের হকার। ম্যাজিকের বই বিক্রি করে। আজ জংশন থেকে আমরা একসাথেই ট্রেনে
উঠেছিলাম। তাছাড়া ও তোমার পূর্ব পরিচিতও। তোমাদের সেই চারমূর্তীর টেনিদা, পার্থ। পেটে বাচ্চা নিয়ে আমাকে বিয়ে করার
জন্য পাত্র জুটতো না হয়ত। তোমার মা নিজে উদ্যোগী হয়ে অকর্মণ্য পার্থদার সাথে আমার
জীবন জুড়ে দিয়েছিলেন। নিজের ছেলের জন্য সুখী জীবনের খোঁজে আমার জীবন থেকে সমস্ত
সুখ কেড়ে নিলেন তিনি।”
শর্বা বাবাইকে নিয়ে চলে গেছে। ছটার ট্রেনটাও প্ল্যাটফর্ম
ছেড়ে বেরিয়ে গেল। ফাঁকা প্ল্যাটফর্মে কৌশিক অতীত আর বর্তমানের এক অদ্ভুত
সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। স্মৃতির সরণিতে সুখের খোঁজে এসে যে জীবনের এতবড় একটা সত্যর
মুখোমুখি হতে হবে সেটা দিনের শুরুতে কৌশিকের কল্পনাতেও ছিল না।
No comments:
Post a Comment