পত্রিকা আলোচনা-
বই কথা কও
(দ্বিমাসিক কচিপাতা নিবেদিত)
বইমেলা ১৪২৬
সম্পাদক : দীপাঞ্জন দাস
১৫০/-
আলোচক : নির্মলেন্দু কুণ্ডু
বাংলা সাহিত্যের মহীরুহে সবুজপত্রগুলি যেন নতুন প্রাণবায়ু সঞ্চার করে ৷ তেমনই
এক সবুজপত্র 'কচিপাতা' ৷ দ্বিমাসিক এই
সবুজপত্র বইমেলা ১৪২৬-কে কেন্দ্র করে প্রকাশ করেছিল 'বই কথা কও' ৷ ২০৮ পাতার এই বইয়ে
রয়েছে বিবিধ সম্ভার—
নিবন্ধ, কবিতা, গুচ্ছ কবিতা, অণুগল্প, গল্প, উপন্যাসিকা, সাক্ষাৎকার, ভ্রমণকাহিনী
ও সিনেমা পর্যালোচনা ৷সব মিলিয়ে এক জমজমাট পটবয়লার ৷
সাক্ষাৎকার পর্বে আমরা দেখতে পাব বিশিষ্ট লেখক স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর সাথে
কথোপকথন ৷ তবে এই অংশটাকে আমাকে হতাশ করেছে ৷ নিতান্ত সাধারণ কিছু প্রশ্নোত্তরেই
সীমাবদ্ধ থাকলো সাক্ষাৎকার ৷ আরো কিছু জানতে পারলে, লেখকের লেখার জগতের অভ্যন্তরে প্রবেশের চাবিকাঠি পেলে আমার মতো বহু সাধারণ
পাঠকই উপকৃত হতেন ৷ প্রবন্ধ বিভাগে (যদিও আমার মতে, এগুলি নিবন্ধ) বিভিন্ন ধারার লেখা স্থান পেয়েছে ৷ তার মধ্যে মানস শেঠের
পটশিল্প বিষয়ক লেখাটি,
সুজয় ঘোষালের বসোয়া গ্রামের দুর্গাপুজো বিষয়ক লেখাটি, সৌম্যদীপ্ত বোস বীরভূমের মনসামঙ্গল গান বিষয়ক লেখাটি, নিত্যানন্দ খাঁর 'পরিবেশবিদ
মহাত্মা গান্ধী'
ও অলোক বিশ্বাসের 'লিটল
ম্যাগাজিন কেমন বাণিজ্য করে' বিশেষভাবে ভালো লাগল
৷ অলোকবাবুর লেখাটি একজন লিটল ম্যাগাজিন কর্মী হিসেবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ লাগলো ৷
তবে তূর্য মুখার্জীর লেখাটি যথেষ্ট কঠিন ভাষায় লেখা ৷ কবিতা বিভাগে কৃষ্ণা বসু, ঋজুরেখ চক্রবর্তী, তৈমুর খান, জ্যোতির্ময় মুখার্জী, হরিৎ
বন্দ্যোপাধ্যায়,
এলা বসু, অমৃতা রায়চৌধুরী, কাকলী দাস ঘোষ,প্রভাত মণ্ডল, আবদুস সালাম, প্রণয়
সর্বজ্ঞ,
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, নাসির ওয়াদেন
এবং গুচ্ছ কবিতা বিভাগে আকাশ সাহা, মৃন্ময় ভৌমিক, দীপাঞ্জন দাস ও সৌরভ বর্ধন তাঁদের নামের প্রতি সুবিচার
করেছেন ৷ তবে অভিজিৎ ব্যানার্জীর লেখা 'সম্প্রীতি' কবিতাটিকে প্রাচীন ধারার পন্থী বলে মনে হল ৷ কয়েকটি কবিতা
মোটামুটি লাগলো ৷ আসলে অনেকগুলো ভালো লেখা পড়লে তার মাঝে একটু কম ভালো লেখাকেও
জোলো বলে মনে হয় ৷ অণুগল্প বিভাগে অল্প শব্দে একটা বড় ছবি আঁকার প্রচেষ্টায়
আনন্দময়ী মুখোপাধ্যায়,
সাত্বকী (নাকি সাত্যকি) বসুর কলম আঁচড় কেটেছে মনে ৷ তবে
কিরণময় নন্দীর লেখাটি বোধগম্য হল না ৷ এত কঠিন শব্দের প্রয়োগে লেখাটি তার
চলচ্ছক্তি হারিয়েছে বলে মনে হল ৷ অর্ণব ভৌমিকের 'তুমি যাকে ভালোবাসো'
এককথায় দুরন্ত, মেদহীন
৷অজিতেশ নাগ,
মহুয়া মল্লিক, রুমকি রায়
দত্ত ও পবিত্র চক্রবর্তী যেন বলছেন "আ দেখে জারা/কিসমে কিতনা হে দম" ৷
পৌষালির গল্পটি আরও শব্দ দাবি করছিল ৷দেবশ্রী চক্রবর্তীর উপন্যাসিকাটি ১৯৪৬-র
প্রেক্ষিতে লেখা,
যখন দাঙ্গাবিধ্বস্ত নোয়াখালি ৷ তবে দাঙ্গার বিস্তৃত বিবরণ
উপন্যাসিকাটিকে ইতিহাসের বিবরণ করে তুলেছে ৷ বারংবার একইরকম তথ্যের অবতারণা ও
বীভৎসতার বর্ণনা উপন্যাসিকাটির গতি শ্লথ করেছে ৷ অন্বয় গুপ্ত নেতাজীর অন্তর্ধান
বিষয়ে বিশেষত গুমনামী বাবা বা ভগবানজী সম্পর্কে নানা তথ্য দিয়েছেন ৷ আমি ফিরে দেখলাম
সেসব ৷ অনেকের কাছেই ভালো লাগবে তথ্যগুলো ৷ তবে সিনেমার রিভিউয়ে এত বিস্তৃত তথ্যের
অবতারণা কেন বুঝলাম না ৷ সিনেমা সংক্রান্ত তেমন কোন দিকই কিন্তু লেখাটায় উঠে আসেনি
৷ পত্রিকাটি শেষ হয়েছে প্রয়াত লেখিকা নবনীতা দেবসেনকে নিয়ে লেখা কবি আর্যতীর্থের
কবিতা দিয়ে ৷
সব মিলিয়ে এ'
বই সত্যিই কথা কইতে পারে, সচেতন পাঠকের কথা ফোটাতেও পারে ৷ আগামী দিনগুলোর জন্য আমাদের পদক্ষেপ পরিবারের
পক্ষ থেকে রইল এক আকাশ শুভেচ্ছা ৷
No comments:
Post a Comment