গল্প -
সোহাগী আদর
দুজনেরই বয়স বেড়েছে । সত্তর- একাত্তর তো হবেই। একজনের বয়সের
তখনই ছিল না কোন লেখা-জোখা । সে আজকের এই পৃথিবী । অন্যজনের নয়-দশ । এখন সে অশীতিপর
। ভর -সংসারে গল্প তার অনেক । নব্যতার । এক্সপ্রেস ওয়ের । বিমানযাত্রার । মনখারাপেরও।
পৃথিবীর সবুজ আজ ফিকে । জল কচুর পাতায় । বাস্তু আকাশে ।
চিলের সোনালি ডানায় সভ্যতার কার্বন । ইন্টারনেটের স্কাইপ ।
অথচ সত্তর-একাত্তর বছর আগে । দুজনের এক-জনকেও । নিজেদের
দেখতে । স্লাইডিং জানালাটা খুলতে হত না । সুখ ছিল সেদিন । উভয়ের বিস্তর । দুজনের সামনেই
। ছিল না তখন ব্ল্যাকআউটের আকাশ । হিরোসিমার লজ্জা । ডাস্টবিনে ক্ষুধা- কাতর কুকুরের
ক্রুদ্ধ গর্জন । করোনার ভাইরাস । আরো অনেক কিছুই ।
দরমার বেড়া টিনের চালের মাথায় ছিল । সবুজের ছড়াছড়ি । বলত
পড়শীর কথা । এক টুকরো লাউ বা চালকুমড়োর । কয়েকটা সিম-বরবটির । দু-চারটে লাউ-পুঁইয়ের
লকলকে ডগার ধ্রুপদী হস্তা- ন্তরে ।
পাশেই নদী । শুকায়নি । পাল্টয়নি তখনও । গুয়া-সুপারির দেশ
উজানি আসাম থেকে আসত ।
গঙ্গা-পদ্মা-ব্রহ্মপুত্রের কত কত ঘাট পেরিয়ে । বাঁশ- ব্যাপারিরা
সব । ছেলেটার ঘাটে । বাঁশের চালান নিয়ে । নিজেদের চালানের সঙ্গে থাকা নৌকায় । রাঁধত
ওরা ভাত আর শুঁটকি ।
দুজনই । পৃথিবী আর ছেলেটা । গন্ধ পেত আদা -পেয়াজ- রসুনের
। পৃথিবী বাঁশের চালানের উপর তক্তায় শোয়া ব্যাপারিদের ঘুম পাড়াত । নিজের জলো বাতাসের
সোহাগী আদরে ।
ছেলেটা কুড়াত তখন চিংড়ি আর কাঁকড়া । বাঁশের চালান থেকে
। উলঙ্গবেলার সঙ্গীদের সাথে ।
অনেক ঘরেই মায়েরা রাঁধত সেদিন লাউ-চিংড়ির সোহাগী পদ । ছেলেগুলির
মায়ের পাতেই সেদিন কম পড়ত ভাত । গত সত্তর-একাত্তর বছরে । দুজনেরই সোহাগী আদর হারিয়ে
গেছে ।
দুজনই যে বৃদ্ধাশ্রমে এখন ।
No comments:
Post a Comment