Monday, May 4, 2020

দিলীপ কুমার দাস



গল্প -   

সোহাগী আদর

দুজনেরই বয়স বেড়েছে । সত্তর- একাত্তর তো হবেই। একজনের বয়সের তখনই ছিল না কোন লেখা-জোখা । সে আজকের এই পৃথিবী । অন্যজনের নয়-দশ । এখন সে অশীতিপর । ভর -সংসারে গল্প তার অনেক । নব্যতার । এক্সপ্রেস ওয়ের । বিমানযাত্রার । মনখারাপেরও।
পৃথিবীর সবুজ আজ ফিকে । জল কচুর পাতায় । বাস্তু আকাশে । চিলের সোনালি ডানায় সভ্যতার কার্বন । ইন্টারনেটের স্কাইপ ।
অথচ সত্তর-একাত্তর বছর আগে । দুজনের এক-জনকেও । নিজেদের দেখতে । স্লাইডিং জানালাটা খুলতে হত না । সুখ ছিল সেদিন । উভয়ের বিস্তর । দুজনের সামনেই । ছিল না তখন ব্ল্যাকআউটের আকাশ । হিরোসিমার লজ্জা । ডাস্টবিনে ক্ষুধা- কাতর কুকুরের ক্রুদ্ধ গর্জন । করোনার ভাইরাস । আরো অনেক কিছুই ।
দরমার বেড়া টিনের চালের মাথায় ছিল । সবুজের ছড়াছড়ি । বলত পড়শীর কথা । এক টুকরো লাউ বা চালকুমড়োর । কয়েকটা সিম-বরবটির । দু-চারটে লাউ-পুঁইয়ের লকলকে ডগার ধ্রুপদী হস্তা- ন্তরে ।
পাশেই নদী । শুকায়নি । পাল্টয়নি তখনও । গুয়া-সুপারির দেশ উজানি আসাম থেকে আসত ।
গঙ্গা-পদ্মা-ব্রহ্মপুত্রের কত কত ঘাট পেরিয়ে । বাঁশ- ব্যাপারিরা সব । ছেলেটার ঘাটে । বাঁশের চালান নিয়ে । নিজেদের চালানের সঙ্গে থাকা নৌকায় । রাঁধত ওরা ভাত আর শুঁটকি ।
দুজনই । পৃথিবী আর ছেলেটা । গন্ধ পেত আদা -পেয়াজ- রসুনের । পৃথিবী বাঁশের চালানের উপর তক্তায় শোয়া ব্যাপারিদের ঘুম পাড়াত । নিজের জলো বাতাসের সোহাগী আদরে ।
ছেলেটা কুড়াত তখন চিংড়ি আর কাঁকড়া । বাঁশের চালান থেকে । উলঙ্গবেলার সঙ্গীদের সাথে ।
অনেক ঘরেই মায়েরা রাঁধত সেদিন লাউ-চিংড়ির সোহাগী পদ । ছেলেগুলির মায়ের পাতেই সেদিন কম পড়ত ভাত । গত সত্তর-একাত্তর বছরে । দুজনেরই সোহাগী আদর হারিয়ে গেছে ।
দুজনই যে বৃদ্ধাশ্রমে এখন ।

No comments:

Post a Comment