Monday, May 4, 2020

অমৃতা



কবিতা-  

প্রথম প্রেমের রোম্যান্টিসিজম
           

সারা কলকাতা যখন অন্ধকার হয়
মোমের আলোয় আমি তখন রোম্যান্টিসিজম খুঁজি

খাতা পেন নিয়ে
প্রথম প্রেমিকের আসার অপেক্ষার দিনগুলিতে ফিরি...

কেরোসিনের বাতি
ছোট্ট বেডরুম
আমি আর তিনি

আমি তখন ছাত্রী
তিনি আমার শিক্ষক
তাঁর ব্যবহারে মনে হত
আমিই তাঁর দিদিমণি
যে অঙ্কটা কষে উঠতে পারতাম না
তিনি হেসে বলতেন-
'দেখ ঠিক পারবে।'
আমি অবাক হতাম, লজ্জা পেতাম
পারছি না তো!
তিনি নিশ্চিত -
'তুমি পারবে।'
সঙ্কোচে তাকাতাম তাঁর দিকে
সত্যিই তিনি আমায় দিয়ে সেই অঙ্ক কষিয়েছেন।

ইংরিজির যে প্যারাগ্রাফটা পারতাম না
তাও আমায় দিয়েই করাতেন।

কি জানি কতটা ঠিক হত-
তবে এটা জানতাম সামনের জনের কাছে
তাই অনবদ্য!

রসায়নে ছিল আমার মাথাটা নীরেট।
ওঁর জন্যই একবার একশোয় ঊনসত্তর পেয়েছিলাম।

কি জানি তখন সব কিছুই তাঁর জন্য সহজ হয়ে যেত।

তাঁর চোখে আমি ছিলাম অনন্যা!

যেদিন আসতেন না
কত প্রতীক্ষা
বাইরে পাতার খসখসানি
বুকে পাথর ভেঙ্গেছে!
যখন দুষ্টুমী করে পেন নেওয়ার ফাঁকে আমায় ছুঁয়ে দিতেন,
সেই শিহরণ আঙ্গুল বেয়ে সমস্ত শরীরে পৌঁছাত!
তাঁর জন্য কত কবিতা, কত চিঠি..
কত না বলা কথায় ডায়েরি ভরিয়েছি
তিনিই একসময় স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন
আমার সঙ্গে সমুদ্রে যাবেন
মুখে নয় ছোট্ট চিরকূটে
সেই থেকে সমুদ্রের স্বপ্ন আমার শিরায় শিরায়
আমি ওই চিরকূটেই লিখতাম - হ্যাঁ
চোখ বুঁজিয়ে স্বপ্নে বিভোর হতাম
উনি দুষ্টুমী করে দাঁত দিয়ে নিজের গোলাপী ঠোঁট কাটতেন।
আমি আরও গভীরে ডুবতাম।

এভাবেই মাস ছ'য়েক চলল
আমি আর আমার প্রেম!
তারপর তিনি ডুব দিতে শুরু করলেন।
মাঝেমাঝেই আসতেন না।
শ্বাস রোধ করে তাঁর সাইকেলের ঘন্টি শোনার অপেক্ষায় থাকতাম!
ক্রমে তিনদিন থেকে দু'দিন
তারপর একদিন.
শেষে সবটাই ফাঁকি
তিনি আর এলেন না-

বুকে, মুখে বালিশ চাপা দিয়ে কেঁদেছি
পাছে কেউ বুঝে ফেলেন!

তাঁকে ভোলার জন্য আশেপাশের শিশুরা আমার সঙ্গী হল।

কিছুদিন পর,
আমার এক বান্ধবীর কাছে জানতে পারলাম-
আমার স্যার এখন তাদের পাড়ায়
অন্য এক ছাত্রীকে পড়ান।

কিভাবে জানিনা কষ্টটা আমার কমল!

একটু মুচকি হাসলাম।

এ ক'দিনের না মেলা হিসেবটা
কেমন যেন অনায়াসে মিলে গেল।।

No comments:

Post a Comment